Home » , , , , » বান্দরবানের বুদ্ধধাতু জাদি মন্দির স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন

বান্দরবানের বুদ্ধধাতু জাদি মন্দির স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন

Written By Unknown on Wednesday, January 19, 2011 | 2:47 AM

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম স্পট হিসেবে বুদ্ধ ধাতু জাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় হিসেবে গড়ে তোলা হলেও এখন এটি স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু (ভান্তে) উচহ্লা ভান্তে কতর্ৃক প্রতিষ্ঠিত এই বুদ্ধ ধাতু জাদি এখন লোকজনের মুখে মুখে স্বর্ণ জাদি বা স্বর্ণ মন্দির হিসেবে সমধিক পরিচিতি পেয়েছে। জাদিটির মূল অংশ অর্থাৎ যেখানে বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও উচহ্লা ভান্তের অনুসারীরা উপাসনা করে, সেখানে বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে সেই মূল অংশটি স্বর্ণাবরণে তৈরি বলে এটি স্বর্ণ জাদি বা স্বর্ণ মন্দির হিসেবে বেশি পরিচিত।

এ জাদি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কের বালাঘাটা পুলপাড়ায় অবস্থিত। এই জাদিটি এখন বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের তীর্থস্থানই কেবল নয়, এটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্পটে পরিণত হয়েছে। অপূর্ব নির্মাণ শৈলী ও নানা কারুকার্য খচিত এ জাদি দেখে মনে হবে যেন আপনি অন্য দেশে অবস্থান করছেন।

শহরের বালাঘাটা পেরিয়ে অল্প কিছুদূর গিয়ে সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের পুলপাড়ায় প্রায় ৪০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় চোখে পড়বে সোনালী কারুকার্যখচিত এই জাদি। এ বুদ্ধ ধাতু জাদি যেন এক মনোরম দর্শনীয় স্থান। পার্বত্য বান্দরবানে গড়ে ওঠা এ জাদি শুধু বাংলাদেশে নয় বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে।

বুদ্ধ ধাতু জাদিটি নানা কারণে অত্যন্ত সুনাম ও পরিচিতি পেয়েছে। ইতিমধ্যে এ জাদি পরিদর্শন করে গেছেন মিয়ানমারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খিন নিউন্ত ও মন্ত্রী পরিষদবর্গ, ভারতের হাই কমিশনারসহ বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক। এর নির্মাণশৈলী দেখে অভিভূত হয়েছেন তারা। মিয়ানমারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এই স্বর্ণ জাদির জন্য ৪০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন।

বান্দরবানের উলেস্নখযোগ্য কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বুদ্ধ ধাতু জাদি অন্যতম। মিয়ানমার ও চীনের বৌদ্ধ তীর্থস্থান বা প্যাগোডার আদলে ২০০০ সালে প্রায় ৪শ' ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় বিহারাধ্যক্ষ উপঞা জোতথেরো (প্রকাশ উচহ্লা ভান্তে) এই বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। জানা গেছে, মিয়ানমারের শোয়েডাগং প্যাগোডা, সুলে প্যাগোডা, শোয়েডং নিয়াত প্যাগোডাসহ ৫টি প্যাগোডার অনুকরণে বান্দরবানে বুদ্ধ জাদিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণের পর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ বুদ্ধ নর-নারী পুণ্য লাভের আশায় প্রতি বছর বুদ্ধ ধাতু জাদি পরিদর্শন ও উপাসনা করতে আসেন। শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ বৌদ্ধ প্রধান রাষ্ট্রগুলোতেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় সেসব দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও এই বুদ্ধ ধাতু জাদি পরিদর্শন করতে আগমন করেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে এ জাদি প্রাঙ্গণে বসে ৩ দিনব্যাপী ধমর্ীয় মেলা। এতে অংশ নেয় হাজার হাজার পুণ্যাথর্ী ও দেশ- বিদেশের পর্যটক।

মিয়ানমারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এই ধাতু জাদিটি দেখতেই বান্দরবানে আগমন করেছিলেন। মিয়ানমারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খিন নিউন্ত মিয়ানমারের সেক্রেটারী-১ থাকাকালীন বান্দরবান বুদ্ধ ধাতু জাদিটির জন্য ব্যক্তিগতভাবে ৫ লাখ কিয়েট অনুদান প্রদান করেন। বিহারটিতে ভিক্ষু শ্রমন মিলে মোট ২০ জন অনাথ রয়েছে। মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী খিন নিউন্ত জাদির উন্নয়নে যে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন তা দিয়ে নির্মিত হয়েছে লাইব্রেরী, মিউজিয়াম ও অন্যান্য স্থাপনা। এছাড়া ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ নর-নারী ও উচহ্লা ভান্তের অনুসারীরাও ব্যক্তিগতভাবে এই জাদির উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে।

বুদ্ধ জাদিটির মূল অংশে আরোহণ করতে কিছুটা বেগ পেতেই হয়। দীর্ঘ পাহাড়ি পথ ও ১৭০ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয় সেখানে। তবে কষ্ট স্বীকার করে উঠতে পারলেই জাদির চারিদিকের আকর্ষণীয় দৃশ্য পাহাড়ে ওঠার ক্লান্তি মস্নান করে দেবে। এর মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকেই প্রথমে চোখে পড়বে বৌদ্ধ মিউজিয়াম। মিউজিয়ামে থরে থরে সাজানো রয়েছে গৌতম বুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জির বাহারি মূর্তি। এসব মূর্তির নির্মাণ কাজে রয়েছে অভিজ্ঞতার ছাপ। মিয়ানমারের বিখ্যাত সব কারিগরদের নিপূণ হাতের ছোঁয়া রয়েছে প্রতিটি কাজে। মিউজিয়াম পেরুলেই জাদির মূল অংশ, যেখানে ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ প্রার্থনা করে। জাদির শীর্ষে আরোহণ করলে চোখে পড়বে শহরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। এর চূড়ায় বাতাসের দোলায় টুংটাং করে বাজতে থাকা ঘন্টার ধ্বনি যে কাউকেই অন্যরকম আবেশে মোহিত করে। এ চূড়া থেকেই চোখে পড়বে জাদির পাশেই গড়ে উঠা দেবনাগ রাজ পুকুর (দেবতা পুকুর)সহ জাদির অন্যান্য স্থাপত্য কলা। এই দেবতা পুকুরটি সাড়ে ৩শ' ফুট উঁচুতে হলেও সব মওসুমেই সেখানে পানি থাকে। বৌদ্ধ ভান্তেদের মতে এটা দেবতার পুকুর, তাই এখানে সব সময় পানি থাকে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু