Home » , , , , » সমুদ্রের ভাঙ্গন ছোট হচ্ছে কক্সবাজার সৈকত

সমুদ্রের ভাঙ্গন ছোট হচ্ছে কক্সবাজার সৈকত

Written By Unknown on Friday, January 14, 2011 | 11:09 PM

লছে সমুদ্রের ভাঙ্গন, ছোট হয়ে আসছে সমুদ্র সৈকত। ভাঙ্গছে পাড়, বাড়ছে পানির স্তর। বিশ বছরের মধ্যে এই জানুয়ারিতেই সব থেকে উপরে উঠেছে পানি। সৈকত হারাচ্ছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। সমুদ্র সীমানা বাড়ছে, কমেছে স্থলভাগ। পৃথিবীর বৃহত্তম অভঙ্গুর প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের অবস্থা এখন এমনই।
সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন স্পষ্ট। কদিন আগেও সেখানে ঝাউবাগান ছিল। ছিল বালুময় প্রান্তর। এখন থৈ থৈ পানি। ঝাউগাছের অস্তিত্ব খুঁজে নিতে হয়। আছে বালি। পাশেই সাগরের গর্জন, ঢেউের পরে ঢেউ। থেটিস সাগরে জেগে ওঠা কোটি বছরের বদ্বীপকে যেন সে আবার নিয়ে নিতে চায়। পলি থেকে জন্ম নেয়া বদ্বীপকে যেন আবার ফিরিয়ে নিতে চায় নিজের মধ্যে। এমনই মনে হয় সমুদ্রের ভাঙ্গন দেখলে। পানি উঠা নামার সম্পর্ক চাঁদের সাথে। চাঁদ ওঠার চার থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত মরা কটাল। এসময় সমুদ্রের পানি বাড়েও কম, আবার নামেও কম। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সময় ভরা কটাল। এসময় পানি বাড়ে বেশি, কমেও বেশি। এই ভরা কটালে নেমে যাওয়ার সময়ও সমুদ্রের পানি এখন আগের থেকে বেশি থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নে যে বরফ গলছে তারই অন্যতম প্রভাব এটি। সমুদ্রের পানি স্তর উচ্চ হওয়ার সাথে সাথে আঘাত হানছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও। এর ফলে গত ২০ বছরে বঙ্গোপসাগরের পানি বেড়েছে প্রায় ২০ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি। সার্ক মেট্রোলজিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (এসএমআরসি) হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর কক্সবাজারে ৭.৮ মিলিমিটার করে পানি বাড়ছে। এছাড়া হিরন পয়েন্টে বছরে পানি বাড়ছে চার মিলিমিটার এবং চর চঙ্গায় বাড়ছে ছয় মিলিমিটার করে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কতর্ৃপক্ষের (বিআইডবিস্নউটিএ) হিসাব অনুযায়ী বঙ্গোপসাগর ও কক্সবাজারের বাকখালী নদীর মোহনায় গত ২০ বছরে পানি স্তর বেড়েছে প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার। বাকখালী নদীতে ৫ জানুয়ারি সব থেকে উপরে উঠেছে পানি। শীতের সময় এমন পানি কখনো বাড়েনি। এদিনে পানির জোয়ারের উচ্চতা ছিল পাঁচ মিটার যা গত ২০ বছরে কখনো হয়নি। সমুদ্র লাগোয়া এই নদীতে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পানির উচ্চস্তর ছিল তিন দশমিক ৩৯ মিটার। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই উচ্চস্তর ছিল তিন দশমিক ৪৩। একই ভাবে এর পাঁচ বছর পর ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল তিন দশমিক ৭৭, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিন দশমিক ৫৩ এবং ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিন দশমিক ৮৮ মিটার।

সাগর পাড়ে ভাঙ্গন

সরজমিন কক্সবাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কক্সবাজারের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে একেবারে ইনানী পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন স্থানে সাগর পাড়ে ভাঙ্গন হচ্ছে। একই সাথে কমে যাচ্ছে সৈকত। কক্সবাজার সৈকতের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত আগে হেঁটে যাওয়া যেত। ১২৫ কিলোমিটার লম্বা এই সৈকত পাড়ি দেয়া যেত জিপ গাড়ি নিয়েও। কিন্তু এখন আর তা যাওয়া যায় না। এমনকি হেঁটেও নয়। জোয়ারের সময় তো নয়ই, ভাটার সময়ও অনেক স্থানে পানির উপর দিয়ে যেতে হয়। ভাটার সময়ও পুরো সৈকত হেঁটে পাড়ি দেয়া যায় না। জোয়ারের সময় পানি এসে তলিয়ে দিয়ে যে পানি চলে যেত, এখন আর সে পানি চলে যায় না। জোয়ার শেষ হয়ে ভাটায়ও একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত পানির অবস্থান স্থায়ী হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলেই সাগরের পাড় ভাংছে। ঘনঘন জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে সাগর সংলগ্ন পাহাড়, জনপদ। নানা উদ্যোগেও পাড় রক্ষা করা যাচ্ছে না। চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কতদূর নিয়ে যাওয়া যাবে তা নিয়ে সন্দিহান সংশিস্নষ্টরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজারসহ আশপাশে প্রায় ৫০ স্থানে সাগর পাড় ভাঙ্গছে। এর মধ্যে কিছু এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এলাকাবাসী বলছেন, বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোন সামুদ্রিক বিপদ সংকেত থাকলে এই এলাকায় বরাবরই পানি এসে তলিয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু সে পানি আবার চলে যায় তার নির্দিষ্ট সীমানায়। কিন্তু গত কয়েক বছর একটু একটু করে সৈকত কমে যাওয়ায় বিষয়টি সাধারণ চোখেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গনের মতো সাগর পাড়ের ঘরও ভাংতে শুরু করেছে। কয়েক বছরে প্রায় ৩০০ ফুট পিছিয়ে আসতে হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি সকল এলাকায় নয়।

গত সোম ও মঙ্গলবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রায় ২০ কিলোমিটার (ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে ইনানী পেচাদ্বীপ পর্যন্ত) পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি স্থানের পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ সংযোগ সড়কটি এখন হুমকির মুখে। ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে চরপাড়া পর্যন্ত ঝাউগাছ ছিল। এখন আর নেই। অল্প কিছু যা আছে তার গোড়ায় মাটি নেই । বর্ষায় ৭/৮ ফুট উচ্চতায় পানি আসে। ডায়াবেটিক পয়েন্টে এসে দেখা গেল শেকড় বের হওয়া ঝাউগাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। কোন গাছের গোড়ায় মাটি নেই। শেষ শীতের পাতাঝরা গাছের মতো ঝাউগাছের গুল্মগুলো। পানিতে সব মাটি ধুয়ে গেছে। এখানে ইট দিয়ে একটি পাকা ঘাট করা হয়েছিল। কিন্তু পানির ধাক্কায় ভেঙ্গে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, যে পরিমাণ ঝাউগাছ এখানে আছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি ছিল। আগামী বর্ষায় অবশিষ্ট গাছগুলোর কি হবে বলা মুশকিল। বর্ষায় বিমানবন্দর পর্যন্ত পানি চলে আসে। পানির এই গতি থাকলে কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হুমকির মুখে পড়বে।

কলাতলীতে এসে দেখলাম সৈকত বলে কিছু নেই। ] শীতেই এই অবস্থা। বর্ষায়তো কথাই নেই। সমুদ্রের পানি একেবারে তীরে এসে ঠেকেছে। এখানে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার রাস্তা ছিল 'মেরিন ড্রাইভ রোড'। যে রাস্তায় গাড়ি চলতো সে রাস্তার কোন চিহ্ন নেই। শুধু রাস্তা নয়, রাস্তার পাশে যে ঘরগুলো ছিল তাও নেই। এখন গেলে কেউ বুঝবে না এখানে আগে সৈকত ছিল।

কলাতলীতে বসবাস করেন হুসনে আরা। পরিবারসহ তার ২০ বছর এখানে বাস। বৈশাখী ঝড়ঝঞ্ঝা ছাড়া শান্তিতেই ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছর সে শান্তি আর নেই। তাকে শুধুই পিছিয়ে আসতে হচ্ছে। কোনরকম টিনের ঘর করে তিনি এখন পরিবারের অন্য সদস্যসহ থাকেন। সতর্ক সংকেত থাকলে চালের উপরে পানি ওঠে। হুসনে আরা জানালেন, 'আমার বাড়িঘর সবই সমুদ্রের পানিতে চলে গেছে। তিনবার ঘর ভেঙ্গেছে। তিনবার পিছিয়ে আসতে হয়েছে। কিন্তু এখন আর পিছানোর জায়গা নেই। থাকছি অন্যের ব্যক্তি মালিকানার জমিতে। সাগর প্রায় ৫০০ ফুট ভেতরে ঢুকে গেছে। গত দুই বছর সাগরের পানি বেশি চলে এসেছে। আর পরিবর্তনটা চোখে ঠেকছে গত কয়েক বছর। আগে এমন ছিল না। আরো ৮/১০টা পরিবার এখানে এখনো বসবাস করছে। অনেকে চলে গেছে এই এলাকা থেকে। একই মন্তব্য করলেন তীরের বাসিন্দা দিনমজুর আলী হোসেনও। সমুদ্রে ভেঙ্গে যাওয়া পাড়ে ' কিং ফিসার কক্স বে রিসোর্ট ' নামে খাওয়ার হোটেল করা হয়েছে। পাশেই বড় বড় হোটেল হচ্ছে। এসব হোটেল কতর্ৃপক্ষ ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু এলাকায় পাকা বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করছে।

এ পথে সোজা সৈকত দিয়ে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পানি পারাতে হবে। তাছাড়া গাড়ি যাওয়ার তো রাস্তাই নেই। তাই ঘুরেই গেলাম। কিছুটা দূরে কলাতলী মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার। সাইক্লোন সেন্টার নিজেই ভেঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ফেটে গেছে এই দোতলা ভবন। এটি তৈরি করা হয়েছিল সমুদ্র থেকে অনেকটা দূরে। সৈকত ছাড়িয়ে সমতলে। এখন এর অবস্থান সমুদ্র থেকে দূরে নয়। একেবারে পানিঘেঁষা। জোয়ারের সময় পানি এসে ভাঙ্গা ভবনে ধাক্কা দেয়। এর সামনে সৈকতের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। দোতলা ভবনের নিচের অংশটা নেই। এর সামনে পাকা দক্ষিণ কলাতলীর ফাইভ স্টার একতা সংঘের একতলা দুটি কক্ষ ভেঙ্গে পড়ে আছে। এরও একটু উত্তর দিকে ছিল মেরিন ড্রাইভ রোড। এই রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটারের কোন অস্থিত্ব নেই। এখানে বেড়ে গেছে সমুদ্রের সীমানা, কমে গেছে স্থলভাগ।

কক্সবাজার থেকে ঠিক ৯ কিলোমিটার দূরে পূর্বে হিমছড়ি পাহাড়, মাঝে পাকা রাস্তা। তারপরেই পশ্চিমে সমুদ্র। এখানে রাস্তা ছুঁইছুঁই করছে সমুদ্রের পানি। পাটের অনেক মোটা কাপড়ের (জিউ টেক্সটাইল) মধ্যে বালি ঢুকিয়ে এখানে ঢেউয়ের ধাক্কা রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তা থাকছে না। ঢেউয়ের ধাক্কায় এই কাপড়ে জড়ানো বালির বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। পরিস্থিতিটা এখানে আরো খারাপ। কোনরকমে রাস্তা ভাংলেই পাহাড় ভাঙ্গা শুরু হবে। পাকা পিচঢালা এই কক্সবাজার-টেকনাফ সংযোগ সড়কটি এখন হুমকির মুখে। জোয়ারের সময় রাস্তা একেবারেই ছুঁইছুঁই করে পানি। এখন রাস্তা বাড়ানো হচ্ছে পাহাড়ের দিকে। পাহাড় কেটে। একেবারে পাহাড়ের পাদদেশে। এখানে সৈকত ঘেঁষে ছিল ঝাউবাগান, পুকুর। এখন তার কিছুই নেই।

কর্তব্যরত সেনা কর্মকর্তা মো. সামসুল ইসলাম বললেন, এখানে ঝাউবাগান শুধু ন, অনেক জঙ্গলও ছিল। কিন্তু তার কিছুই নেই। সব পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝাউবাগান পানিতে তলিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার ভেতরে চলে এসেছে সাগরের পানি। চেষ্টা করা হচ্ছে সাগরের ভাঙ্গন ঠেকানোর।

কক্সবাজারের বাসিন্দা সাবেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী রেজা বললেন, 'আমি ৪০ বছর সৈকতে হাঁটি। এখন যেমন ভাঙ্গন হচ্ছে আগে কখনো তা দেখিনি। সুন্দর ঝাউবন ছিল। এখন নেই। আদী সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে সৈকতের। একেবারে হিমছড়ি পর্যন্ত চওড়া সৈকত দিয়ে হেঁটে যাওয়া যেত। এখন আর তা যাওয়া যায় না। এখন সৈকতে নামামাত্র সমুদ্র। আগে দূরে ছিল।'

পানি স্তর বেড়েছে

মাকসুদুর রহমান বিআইডবিস্নউটিএ-এর অটোগেজ অপারেটর হিসাবে কর্মরত আছেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি কর্মরত। বঙ্গোপসাগর ও বাকখালী নদীর মোহনার একটু দূরে পানির জোয়ার-ভাটার জরিপ করেন প্রতিদিন। কত পানি বাড়ল আর কত পানি কমল তা তিনি মাপেন অটোগেজ যন্ত্রের সাহায্যে। উত্তর নুনিয়াচড়ায় পানি মাপা সরকারি এই যন্ত্র স্থাপন করা আছে। তিনি বললেন, 'সমুদ্রের সৈকত অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে পানি ছিল এখন সেখান থেকে অনেকটা চলে এসেছে। শীতে ভাটায়ও এখন আর আগের মতো পানি নেমে যায় না।'

বঙ্গোপসাগর ও বাকখালী নদীর মোহনায় ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পানির উচ্চস্তর ছিল ৩ দশমিক ৩৯ মিটার। একই মাসে পর্যায়ক্রমে ১৯৯৫ সালে ৩ দশমিক ৪৩, ২০০০ সালে ৩ দশমিক ৭৭, ২০০৫ সালে ৩ দশমিক ৫৩ এবং ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উচ্চস্তর ছিল ৩ দশমিক ৮৮ মিটার। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে ছিল ৪ দশমিক ০১ মিটার।

পানি কেন বাড়ছে

পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত ইত্তেফাককে বলেন, প্রায় ৩০ বছরে আমাদের সমুদ্রের পানিস্তর প্রায় ১০ ইঞ্চি বেড়ে গেছে। এখন আগের থেকে বেশি পানি ঢুকছে কক্সবাজারের বাকখালী নদীতে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বেড়েছে। স্রোত পরিবর্তন হচ্ছে। সমুদ্র তীরবর্তী নদীতে ক্ষয় বেড়েছে। এসব বিচার করে মনে হয় সমুদ্রের পানি স্তর বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের পানির হিসাব পর্যালোচনা করাটাই যথাযথ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. গিয়াস উদ্দিন ইত্তেফাককে বললেন, যেখানে পাহাড় কাটা হচ্ছে সেখানেই ভাঙ্গন হচ্ছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে আমাদের আরো বৃক্ষায়ন দরকার। পুরো সমুদ্র সৈকতকে আরো সুন্দর করতে ১২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে। জুনের মধ্যে এই পরিকল্পনা শেষ হবে। একই সাথে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করা হচ্ছে। সমুদ্রের সীমানাই এখনো ঠিক করা হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে সীমানা ঠিক করে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হবে। ইতোমধ্যে ৫৯টি পস্নট বাতিল করা হয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট এলাকায় কোন টিউবওয়েল স্থাপন করা হবে না। বাকখালি নদী থেকে পানি এনে শোধন করে নতুন শহরে দেয়া হবে। পরিবেশের দিকে খেয়াল রেখেই এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

নতুন পরিকল্পনা
কক্সবাজার শহরকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কক্সবাজার সদরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বললেন, প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার লম্বা বাঁধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তভর্ুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের আঘাত থেকে কক্সবাজারকে রক্ষা করা এবং পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর ফলে বেলী হ্যাচারী থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে সুগন্ধা পয়েন্টের সাগর পাড় দিয়ে লাভলী সৈকত দিয়ে ডায়াবেটিক পয়েন্টের বাইরে ঝাউবন ভেতরে রেখে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরকে প্রকল্পের ভেতরে রেখে নুনাছড়ি পর্যন্ত উপকৃত হবে।

অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানিয়েছে, এখানে যে পরিমাণ বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন তার কিছুই করা হচ্ছে না। এমনকি যে সময় যা করা প্রয়োজন তাও করা হচ্ছে না। সিডর হওয়ার পরে যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল তা এখনো করা যায়নি অর্থের অভাবে। অথচ সিডরের পরে কয়েকবছরে পানির বৈশিষ্টও পরিবর্তন হয়েছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা হচ্ছে না। সংশিস্নষ্টরা জানিয়েছেন, কক্সবাজার ছাড়াও কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় সমুদ্রের ভাঙ্গন হচ্ছে। কিছু এলাকায় বাঁধ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বেশিরভাগ এলাকা অরক্ষিত।

কক্সবাজার

কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর। কক্সবাজার প্যানোয়া নামেও পরিচিত যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। এর আরো একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে প্যালংকি। আধুনিক কক্সবাজারের নাম রাখা হয়েছে ব্রিটিশ আমলের ভারতের এক সেনা কর্মকর্তা 'ককস' এর নামে। পৃথিবীর সব থেকে বড় অভঙ্গুর বালুময় সমুদ্র সৈকত এখানে। লম্বা ১২৫ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি উপসাগর বঙ্গোপসাগর। এটি অনেকটা ত্রিভূজাকৃতির। এর পশ্চিমে ভারত ও শ্রীলংকা, উত্তরে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য (এই দুই বাংলায় এর ব্যাপ্তি বলেই এর নাম হয়েছে বঙ্গোপসাগর), থাইল্যান্ডের দক্ষিণাংশ এবং আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে পূর্ব দিকে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু