Home » , » চায়ের রফতানি ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখিতে উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নাই

চায়ের রফতানি ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখিতে উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নাই

Written By Unknown on Friday, January 21, 2011 | 4:00 AM

ভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়িয়া যাওয়ায় এবং উৎপাদন হ্রাস পাইবার কারণে বাংলাদেশ বাদ পড়িয়াছে চা রফতানিকারক দেশের তালিকা হইতে। উপরন্তু কিছু চা আমদানি করা হইয়া থাকে। বিশ্বের চা রফতানিকারক দেশগুলির তুলনায় বাংলাদেশের চায়ের দাম অনেক বেশি, ফলে কিছু প্রাইভেট কোম্পানি চা আমদানি করিয়া বাজারজাত করিতেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশের চা বাগানগুলিতে বৎসরে ৬০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়, যাহা দেশীয় বাজারের চাহিদার সমান। গত ২০ বছরে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়িয়াছে ৯.৯৪ ভাগ, আর উৎপাদন বাড়িয়াছে মাত্র ২.১৪ ভাগ। চায়ের উৎপাদন বাড়াইতে যথাযথ উদ্যোগ-পরিকল্পনার অভাবেই দেশের ঐতিহ্যবাহী চা-বাগান ও চা শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হইতেছে।

দেশে চায়ের উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ চা বাগানগুলিতে কয়েক দশকের পুরাতন গাছের জায়গায় উচ্চ ফলনশীল জাতের চা-গাছ রোপণ করা সম্ভব হয় নাই। এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত ৬০ বৎসর পর চা গাছে পাতার উৎপাদন কমিয়া যায়। পুরাতন বাগানসমূহে বেশিরভাগ চা গাছের বয়স ৬০ বৎসরের বেশি। উপরন্তু চাহিদানুযায়ী সার ব্যবহার না করার কারণেও চায়ের উৎপাদন ১০ হইতে ১২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাইতেছে বলিয়া চা-বিজ্ঞানীরা মনে করেন। দেশের ১৬৩টি চা বাগানের জন্য বিভিন্ন ধরনের সারের চাহিদা বৎসরে প্রায় ৫৩ হাজার টন। সারের প্রাপ্যতা অনুযায়ী সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত সার চা বোর্ড ও চা সংসদের মাধ্যমে বাগানগুলিতে সরবরাহ করা হইয়া থাকে। কিন্তু বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিতেছে। চাহিদা অনুযায়ী সার না পাওয়ার অভিযোগ রহিয়াছে অনেক বাগানের। অন্যদিকে অনেক বাগানের ব্যবস্থাপনা দুর্বলতাও উৎপাদন হ্রাসের কারণ। ইহাছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও সিলেট অঞ্চলে চায়ের উৎপাদন কমিবার আশঙ্কা করিতেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। দেশে বর্তমানে ১৬৩টি চা বাগান রহিয়াছে। ইহার মধ্যে ৭৪টি চা বাগানই রুগ্ন। ২০০৩ সালে তিনটি পার্বত্য জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পঞ্চগড়েও বেসরকারি উদ্যোগেও চা-চাষ শুরু হইয়াছে। কিন্তু চা-খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ ও প্রণোদনা শুল্ক কার্যক্রম যথেষ্ট না হওয়ায় চায়ের উৎপাদন বাড়িবার বদলে কমিয়া গিয়াছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার কারণেও চা-শিল্প হুমকির মধ্যে পড়িয়াছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হইতেছে। এই পরিমাণ জমিতে প্রতি বৎসর ৩০ কোটি কেজি চা উৎপাদন করা সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে উৎপাদন হইতেছে ৬ কোটি কেজি।

বাংলাদেশে একদা কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে পাটের পরই চা প্রধান রফতানি পণ্য হিসাবে গণ্য হইত। সোনালী আঁশের সুদিন গত হইবার পরেও চা রফতানির তালিকায় টিকিয়াছিল। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভাবনাময় চা-শিল্পের ক্রমবর্ধমান সংকট এবং দেশের চা-আমদানি নির্ভর দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়টি ভাবনা উদ্রেককারী নিঃসন্দেহে। চা-শিল্পের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ১২ বৎসর মেয়াদি কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা 'ভিশন ২০২১' নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানা যায়। কিন্তু বিগত এক বৎসরেও এই পরিকল্পনার কোনো অগ্রগতি হয় নাই। আমরা মনে করি, চায়ের উৎপাদন বাড়াইতে সার্বিক উদ্যোগ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। পুরাতন বাগানগুলিতে উচ্চ ফলনশীল চায়ের উৎপাদন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের সম্ভাবনাময় এলাকাতেও চায়ের চাষ সমপ্রসারণ করার কথা ভাবা প্রয়োজন। চায়ের উৎপাদন বাড়াইতে প্রয়োজনীয় সার ও অন্যান্য সহযোগিতা নিশ্চিত করিতে হইবে অবশ্যই। পুরাতন বাগানসমূহে নূতন চারা লাগাইতে হইবে ক্রমান্বয়ে। তবে দেশের চাহিদা মিটাইয়াও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী চা অন্যতম রফতানি পণ্য হিসাবে ধরিয়া রাখিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু