Home » , » শিশুদের শ্রমে চলে অধিকাংশ আফগান পরিবার

শিশুদের শ্রমে চলে অধিকাংশ আফগান পরিবার

Written By Unknown on Tuesday, December 21, 2010 | 5:15 AM

বদুল ওহাবের বয়স মাত্র ১১ বছর। এ বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, মেতে ওঠার কথা শৈশবের দুরন্তপনায়। কিন্তু ওহাবের সময় কাটে জ্বলন্ত হাপরের কাছে। পেটের টানে, পরিবারের রুটি-রুজির জোগান দিতে বাবার কামারশালায় কাজ করতে হয় তাকে। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনি। ভারী হাতুড়ি দিয়ে লাল টকটকে লোহা পিটিয়ে তৈরি করতে হয় গাড়ির যন্ত্রাংশ। আগুনের তাপ আর হাতুড়ির ওজন বইতে বইতে ঘর্মাক্ত হয় ওয়াহাবের শরীর। তবু থামার উপায় নেই। কারণ, হাতুড়ির ওঠানামা বন্ধ হলে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার উঠবে না।

আফগানিস্তানের শিশুশ্রম পরিস্থিতি বুঝতে একজন ওহাবের গল্পই যথেষ্ট। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু। অবাক করার মতো হলেও সত্য; এ শিশুদের মধ্যে ৪০ শতাংশই কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত। আর তাদের শ্রমের অর্থেই চলে পরিবার রুটিরুজি।
আফগান সরকারের তথ্যমতে, দেশটিতে প্রায় ১২ লাখ শিশুশ্রমিক রয়েছে, যারা ওহাবের মতোই শ্রম দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। কেউবা করে খণ্ডকালীন কিংবা পূর্ণকালীন কাজ। দেশটির সরকার বলছে, যুদ্ধ, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বড় পরিবারের প্রবণতা সে দেশে বৃহত্ একটি শিশুশ্রম বাজার সৃষ্টি করেছে।
তবে শিশুশ্রম নিয়ে ২০১০ সালে আফগানিস্তান স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ শিশুর মধ্যে ৪০ শতাংশই কাজে নিয়োজিত। আর মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, দেশটিতে শিশুশ্রম আইনের প্রতি নিয়মিতভাবেই তাচ্ছিল্য দেখানো হচ্ছে।
আফগানিস্তানের আইন অনুযায়ী, সে দেশের ১৪ বছর বয়সী শিশুরা সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। তবে তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। দেশটিতে অনেক শিশুই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
ওহাব আক্ষেপ করে বলছিল, ‘বাবা আমাদের ভরণ-পোষণ দিতে পারেন না। কারণ, বাজারে খাবারের দাম বেশ চড়া। আমরা সরকারে কাছ থেকেও কোনো সহায়তা পাই না। আমি স্কুলে যেতে চাই। কিন্তু বাবা যে একা। তাই তাঁকে সাহায্য করতে আমাকে এখানে কাজ করতে হয়।’
ওহাবের বাবা আবদুল রেজাক বলেন, ‘আমার ছেলে এখানে কাজ করুক, তা আমি চাই না। আমি চাই সে স্কুলে যাক। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হয়।’
আফগানিস্তানের শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ করে, কেউবা করে কৃষিকাজ। আবার অনেকেই করে কার্পেট সেলাই, রাস্তায় পণ্য বিক্রি, ভিক্ষা কিংবা টোকাইয়ে কাজ।
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, আফগানদের বার্ষিক গড় আয় ৩৭০ মার্কিন ডলার। অনেক আফগান পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কাজে নিয়োজিত করাটাকেই বেশি পছন্দ করে। এটা না করে তাদের উপায়ও নেই। বলা চলে, পরিবার চালাতে সাধারণ আফগানরা তাদের শিশুদের কাজে পাঠাতে একরকম বাধ্যই হয়।
আফগানিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে নাদের নাদেরি বলেন, দেশটির অধিকাংশ শিশুই নয় বছর বয়সেই কাজে যোগ দেয়। এ শিশুরাই তাদের পরিবারের রুটি-রুজির জোগানদাতা।
দীর্ঘ ৩০ বছরের যুদ্ধে আফগানিস্তান বিশ্বের একটি দরিদ্রতম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেখানকার জনসংখ্যার অর্ধেকই শিশু। এ শিশুদের এক-চতুর্থাংশই পাঁচ বছর বয়সের আগেই মারা যায়। দারিদ্র্যের কষাঘাত, অপুষ্টি, বঞ্চনা—এসবের দুষ্টচক্রে আফগানদের গড় আয়ুষ্কাল মাত্র ৪৪ বছরে নেমে এসেছে। সূত্র: রয়টার্স।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু