নারী-পুরুষ নির্বিশেষে খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে পরিবারে কন্যাসন্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ, একাত্তরে শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গকে প্রাধান্য দিয়ে এবং সেই সঙ্গে সম্প্রতি গঠিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে, সেসব বিবেচনায় নানামুখী সামাজিক বৈপরীত্যের মধ্যে আজ বাংলাদেশে সর্বজনীন মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোয় দিবসটি পালন করা হচ্ছে 'বৈষম্য নিরসনে নিবেদিতপ্রাণ, মানবাধিকার রক্ষায় সদা সচেষ্ট মানুষের প্রতি অবিচল সমর্থন ও সংহতি' ব্যক্ত করে।
এ কথা সত্য, সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার অধিকারের সপক্ষে এবং তা হরণের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কখনো এককভাবে, কখনো দলবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিয়ে আসছে। তবে ইতিহাসের পর্যায়ক্রমিক ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা গৃহীত হওয়ার পর থেকে তা সংগঠিত আনুষ্ঠানিক রূপপরিগ্রহ করে। সে জন্যই আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও বিশ্বব্যাপী কিছু মানুষ অধিকার রক্ষায় অসাধারণ কর্মকাণ্ডে নিজেদের ব্যাপৃত রেখে চলেছেন। তাঁদের কর্মতৎপরতার খণ্ডচিত্র উপস্থাপনও সহজ নয়। তাঁরা কাজ করেন বৈষম্য, বঞ্চনা ও সন্ত্রাসের অবসানকল্পে। ধর্ম, বিশ্বাস, বর্ণ, অস্পৃশ্যতা, আঞ্চলিকতা, সংখ্যালঘুত্বের কারণে, আদিবাসী ও নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে নিরলস তাদের প্রয়াস, অপরিহার্য কর্মসূচি। সুবিচার প্রতিষ্ঠায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার নারী-পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে বরাভয় দান, সরকারের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্নমুখী বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা সোচ্চার। বাংলাদেশের মানবাধিকারের প্রসঙ্গটি এলেই দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান নানামুখী সামাজিক বৈপরীত্যের ছবি উঠে আসে। আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী এবং যার মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা দুজনই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে এখন মেয়েরাই সংখ্যায় বেশি। শিক্ষকতায়, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে ডিসেম্বর মাস ঘটনাবহুল। বেদনা ও বিজয়_দুই কারণেই অনন্যসাধারণ। এ মাসেই বরেণ্য শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ দেশের মেধাসম্পন্ন সেরা সন্তানদের পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রভুদের যোগসাজশে এ দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি মানবাধিকারও ভূলুণ্ঠিত করে। বিলম্বে হলেও সেই বর্বরতার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার যেমন চিরন্তন তেমনি অপ্রতিরোধ্য।
Home »
উপ-সম্পাদকীয়
,
কালের কণ্ঠ
» মানবাধিকার দিবসঃ মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা by কাজী ফারুক আহমেদ
মানবাধিকার দিবসঃ মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা by কাজী ফারুক আহমেদ
Written By Unknown on Friday, December 10, 2010 | 1:23 AM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
Post a Comment