Home » , » পাখিঃ- পাহাড়ের নীলপরী by আলম শাইন

পাখিঃ- পাহাড়ের নীলপরী by আলম শাইন

Written By Unknown on Friday, July 15, 2011 | 4:14 AM

রব্য উপন্যাসে 'কোকাফ' শহর নামের একটি জায়গার বর্ণনা আছে। শহরটির অবস্থান ঠিক কোন দেশে সে সম্পর্কে কোনো কিছুই জানা যায়নি। তবে লেখক ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন, এটি মর্ত্যলোকের কোনো শহর নয়। ওখানে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় যেতে পারে না, যেতে হলে একটা মাধ্যম লাগে। আর সেই মাধ্যমটি হচ্ছে পরী, (ওটা নাকি পরীরাজ্য।

ওখানে শুধু লালপরী, নীলপরীদের বাস) অর্থাৎ লেখক স্পষ্ট বুঝিয়েছেন, পরীদের পেতে হলে যেতে হবে কোকাফ শহরে। তাঁর হয়তো জানা ছিল না, নীলপরীদের বাস বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলেও আছে। জানা থাকলে নিশ্চয়ই সেটা তুলে ধরতে তিনি কৃপণতা করতেন না।
একেবারেই সত্যি কথা, এ দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ করে কঙ্বাজার, হিমছড়ি, টেকনাফের অরণ্যে নীলপরীদের বিচরণ লক্ষ করা যায়। এরা কোনো কল্পলোকের পরী নয়, এরা হচ্ছে 'আইরেনিদি' গোত্রের একধরনের অপ্সরী পাখি। ইংরেজি নাম 'এশিয়ান ফেইরি ব্লুবার্ড'। এই পাখিরা বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও এদের কোনো বাংলা নাম নেই। বিষয়টি মাথায় এনে বিশিষ্ট পাখিপ্রেমিক অজয় হোম ওদের নাম রেখেছেন নীলপরী। সেই থেকে এ পাখি নীলপরী নামেই পরিচিত। তবে অজয় হোমের দেওয়া নামের সঙ্গে যথার্থ মিল রয়েছে নীলপরী পাখির। যেমনি রূপ তেমনি গানের গলা। মৃদু শিস বাজিয়ে মিষ্টি সুরে গান গায় এরা। গানের ভাষা কিছুটা দুর্বোধ্য হলেও শুনতে বেশ লাগে। অন্যদিকে ওদের রূপের যে ঝলকানি, তা দেখলে চোখে ধাঁধা লেগে যায়। তখন দেখে মনে হয়, সত্যি বুঝি ওরা কল্পলোক থেকে মর্ত্যে বিচরণ করতে এসেছে।
নীলপরীর পুরো শরীরটা নীল পালকে আবৃত নয়। ঘাড়ের নিচ থেকে পিঠ ধরে লেজ পর্যন্ত নীলচে বর্ণের। ঠোঁট ও পা তদ্রূপ। চোখ ফিকে লাল। লম্বায় আট থেকে দশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পুরো শরীরটা বেশ তাগড়া মনে হয়। ছেলে-মেয়ে দেখতে একই রকম। সূর্যের আলো নীলপরী পাখির পিঠে পড়লে নীলাভ দ্যুতি ঠিকরে বের হয়। তখন যে কেউ দেখলে ওদের প্রেমে পড়তে বাধ্য। খেয়ে-না খেয়ে জঙ্গলে পড়ে থাকতে চাইবেন। আর তিনি যদি পাখিপ্রেমিক হয়ে থাকেন, তাহলে তো কথাই নেই।
নীলপরী মোটামুটি সামাজিক পাখি। গাছে গাছেই এদের বিচরণ। বুনো ফল, ফুলের মধু এদের প্রিয়। মাটিতে খুব একটা নামে না এরা। শুধু জলপানের তাগিদ অনুভব করলে তবে নিচে নেমে আসে। একসঙ্গে তখন আরো একটি কাজ সেরে নেয়। জলপান শেষে গোসলাদিও সেরে নেয় ওরা। নীলপরীদের প্রজনন মৌসুম হচ্ছে মার্চ থেকে এপ্রিল। এ সময় এরা
তুলনামূলক ছায়াযুক্ত জায়গায় বাসা বাঁধে। সরু কাঠি, গাছের শুকনো লতাপাতা এদের বাসা তৈরির উপকরণ। বেশ সুন্দর বাসা বাঁধতে পারে এরা। বাসা তৈরি শেষে দুই দিন বিরতি দিয়ে দুটি মাত্র ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ দিন। বাচ্চারা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত মা-বাবার সঙ্গে থাকে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু