Home » , » প্রত্নতত্ত্ব ধ্বংস নয়

প্রত্নতত্ত্ব ধ্বংস নয়

Written By Unknown on Monday, December 6, 2010 | 1:06 PM

তিহাসের অলিন্দে কোদাল-শাবল চালানো হচ্ছে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে, যেখানে সুপ্ত আছে আমাদের সভ্যতা, যা শত শত বছর ধরে অপেক্ষা করছে_কখন উন্মোচিত হবে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে। হয়তো বা অনেক আগেই সুপ্ত চিহ্নগুলো আবিষ্কৃত হতো, কিন্তু হয়নি। তাও মানুষেরই অনিচ্ছায়। সেখানে পদদলিত হয়েছে ইতিহাস। মাজারের জমি হিসেবে চিহ্নিত প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনের এলাকাটুকু যেহেতু মাজারের জায়গা, তাই মাটি খুঁড়ে প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন ধ্বংস করতেও যেন দ্বিধা নেই কারো। কোপে কোপে ধ্বংস হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ বছর আগের সেই সভ্যতার চিহ্নগুলো। শ্রমিকরা বলছেন, এখানে মনে হয় মানুষের বসতি ছিল।
পাকা ভিটা দেখা যাচ্ছে, মাটির তৈজসপত্রও আছে। সেগুলোর বেশির ভাগই কোদালের আঘাতে গুঁড়ো হয়ে গেছে। কিছু চাপা পড়েছে মাটির নিচে। বাকি আছে আরো কিছু। এদিকে জেলা প্রশাসক বলেছেন, 'প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন রক্ষায় কেউ যেন বেশি উৎসাহ না দেখায়।' এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কি হুমকি দিলেন কারো প্রতি? নাকি নিজেই হুমকিতে পড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনিয়ে দিলেন, তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। সর্বোপরি কে কী বলেছে, তা না ভেবে ইতিহাসের চিহ্ন সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর মাজার কমিটিরও নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। তাদেরও ভাবতে হবে, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে কোনো জাতি টিকে থাকতে পারে না। তাদের প্রয়োজনীয় ভবনটি মাজারের কাছাকাছি অন্য কোথাও হতে দোষ কী? ইবাদতখানা করতে হলে মাজারের লাগোয়া জায়গাতেই হতে হবে, এমন তো কথা নেই। সে ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হবে প্রয়োজনীয় জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়া। যাতে মাজারে আসা মানুষ তাঁদের ধর্মকর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারেন।
মাজার উন্নয়ন কমিটির সব সদস্যই জানেন জায়গাটির প্রত্নতাত্তি্বক মূল্য ব্যাপক। এ জায়গা সংরক্ষণ করা শুধু সরকারেরই দায়িত্ব নয়, জাতীয় সম্পদ হিসেবে স্থানীয় অধিবাসীদেরও দায় আছে। মাজার খোঁড়াখুঁড়ি করার আগেই প্রশাসনকে জানানোর পর তারা এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। একাধিক চিঠি পাওয়ার পরও কিভাবে মাজার কমিটি সেই জায়গায় কোদাল চালাতে পারে! যে উন্নয়ন কাজের জন্য এত বড় সর্বনাশ করা হলো, সেই কাজ সম্পর্কে মাজার কমিটির সদস্যরাও অবগত নন বলে জানা গেছে। গতকাল মাজার কমিটি তাদের কাজ স্থগিত করেছে। কিন্তু যেসব প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন কোদাল-বেলচার আঘাতে ভেঙে গেছে সেগুলো সংরক্ষণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসন ও মাজার কমিটি দ্রুত এ কাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করুক। ভবন তৈরির জন্য যেসব জায়গায় গর্ত করা হয়েছে, সেগুলোকে কিভাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করা যায় সে ব্যবস্থাও দ্রুত করতে হবে। মাজার অক্ষত ও অক্ষুণ্ন রেখে মাজারকেন্দ্রিক কার্যক্রমকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া যায় কি না, তাও মাজার কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভেবে দেখা দরকার। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে কোনো অবস্থায় সেখানে অনুমোদন ছাড়া কেউ কোদাল-শাবল চালাতে না পারে, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। লালবাগ কেল্লা এলাকায় নির্মাণকাজ বন্ধে হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। তাই শুধু মহাস্থানগড় নয়, সারা দেশের প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে ঐতিহ্যবিমুখ জাতি হিসেবে আমরা নিন্দিতই হতে থাকব।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু