সৌরজগতে পৃথিবী নামক গ্রহেই শুধু প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। জীবনের কোলাহল শুধু এ গ্রহেই শ্রুত হয়। পৃথিবী নামক গ্রহেই জীবনের অস্তিত্ব বিদ্যমান। যার জীবন আছে সেই তো জীব। জীব দুই ধরনের। যেমন- উদ্ভিদ ও প্রাণী। পৃথিবীর গহীন বন, মরুভূমি, ছোট-বড় বন-বাদাড়ে, মাটিতে জীব বসবাস করে। স্থানভেদে পরিবেশের বিভিন্নতায় ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রাণী বাস করে। কেউ স্থলে, কেউ জলে, কেউবা সমুদ্রে। আবার কেউ মন সুখে আকাশ পানে উড়াল দেয়। জলবায়ু ও পারিপাশ্বর্িক অবস্থায় বিভিন্ন প্রাণী বিভিন্ন পরিবেশে ওপর নির্ভরশীল। এরকম বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় প্রাণী নিয়েই প্রাণিজগৎ।
কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ থেকে শুরু করে আমাদের পরিবেশে রয়েছে বিভিন্ন প্রাণী। কোনগুলো মানবহিতকারী পরিবেশ বান্ধব আবার কোনটি মানুষও পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। যেমন- মৌমাছির মৌচাক থেকে মধু ও মোম পাওয়া যায়। রেশম পোকার গুটি থেকে রেশম পাওয়া যায় পাশাপাশি মশা, মাছি, উইপোকা আমাদের ক্ষতি করে থাকে। ফসলের জন্য ক্ষতিকর হলো পামরী পোকা, লেদা পোকা বিছা পোকা, ক্ষুদে মাকড় যেগুলো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। এসবের ভিড়ে আমাদের জন্য একটি উপকারী ও পরিবেশ বান্ধব সরীসৃপ জাতীয় অ্যামিবা দলভুক্ত প্রাণী হলো কেঁচো। কেঁচো মাটির নিচে বাস করে। কেঁচো মাটির উর্বরা শক্তির জন্য এক বিরাট শক্তি। কেঁচো ফসলের জমিতে ওলট-পালট করে। যেমন উপরের মাটি নিচে ও নিচের মাটি ওপরে তুলে আনে। তাইতো কেঁচোকে "প্রকৃতির লাঙল" বলা হয়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা অনন্য। তাছাড়া কেঁচোর তৈল থেকে ওষুধ তৈরি করা হয়। কেঁচোর বিষ্ঠা ফসলি জমির জন্য মহাউপকারী। গ্রামাঞ্চলে কেঁচোর তোলা মাটি ফোঁড়া উপশমে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দিনকে দিন কেঁচো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন হেতু অনেক প্রজাতির অস্তিত্বই হুমকির সম্মুখীন। তাছাড়া ফসলি জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে কেঁচো। তাছাড়া এক শ্রেণীর মৎস্য শিকারী কেঁচোকে মাছের ' টোপ" হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা "বিষলং" গোটা, "রিডা বীজ"সহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে মাটির নিচে থাকা কেঁচো নিধন করছে। বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে প্রায়শই দেখা যায় কেঁচো নিধন দৃশ্য। তাই দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির লাঙল কেঁচো। বিজ্ঞানীদের হিসেব মতে, সেদিন দূরে নয় ১১ হাজারেরও বেশি প্রজাতি বিলুপ্তির প্রহর গুণছে। এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ মৎস্য এবং এক-চতুর্থাংশ স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ। বায়ুমণ্ডলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কার্বনসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ নির্গমন। মানব সৃষ্ট ঘনীভূত অমস্নজান মানুষ ও প্রাণীর জন্য মারাত্মক বিপদের কারণ। পরিবর্তীত জলবায়ু ও মানব সৃষ্ট কারণে প্রতিদিনই আমরা হারাচ্ছি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। ফলে জীববৈচিত্র্যে চির ধরছে। প্রকৃতি হারাচ্ছে ভারসাম্য। আমাদের অস্তিত্বের জন্য, পরিবেশের অস্তিতের জন্যই আমাদের উচিত বিভিন্ন প্রাণিকূলকে বাঁচিয়ে রাখা। কেঁচো এমন একটি প্রাণী। যা আমাদের জমির উর্বরতা ধরে রাখতে উত্তম সহায়ক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত উপকারী। অথচ আমরা সেদিকে খেয়াল না করে নির্বিচারে কেঁচোর অস্তিত্ব ধ্বংস করছি। আমরা বুঝতে পারছি না যে, নিজেই নিজের ক্ষতি করছি। এমনিতেই জমির উর্বর শক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে। এরপরেও যদি জমির উর্বরতা ধরে রাখার সহায়ক শক্তি প্রকৃতির লাঙল কেঁচো ধ্বংস করা থেকে আমরা বিরত না হই তবে সেদিন খুব দূরে নয়, যখন মাটি থেকে একেবারে হারিয়ে যাবে মানবহিতকারী জীব কেঁচো। তাই প্রকৃতির লাঙল কেঁচো বাঁচাতে এখনই উদ্যোগ প্রয়োজন।
জীব বৈচিত্র্য : হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক লাঙ্গল
Written By Unknown on Thursday, December 2, 2010 | 4:12 AM
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
Post a Comment