পরীক্ষার ফলাফল থেকে শুরু করে, প্রশাসনিক, বৈমানিক, বিজ্ঞানী, নিরাপত্তায়, রাষ্ট্র পরিচালনা, বলতে গেলে সবদিক দিয়েই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে। থেমে নেই প্রযুক্তিতেও।
ফেসবুকের মতো সারা বিশ্বে জনপ্রিয় এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম ১০ জন ভাড়াটে এমপ্লয়ির ভেতরেও ছিলেন নারী। বিশ্বের কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কি জানেন তাদের ফেসবুকে বন্ধুদের নিউজফিডগুলোর ডেভেলপার কে ছিলেন? রুচি সাংভি। আর ইনিই হচ্ছেন ফেসবুকের প্রথম নারী ভাড়াটে ইঞ্জিনিয়ার (ডেভেলপার)। ভারতীয় এই রুচি সাংভিকে বলা হয় বিশ্বে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে শক্ত অবদান রাখা ২০ নারীদের মধ্যে একজন। প্রখর এই মেধাবীর ফেসবুকে চাকরিতে যোগদান নিয়ে বেশ মজার তথ্যও রয়েছে।
জুকারবার্গ ও তার বন্ধুরা মিলে যখন দেখলেন তাদের তৈরি করা ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বেড়েই চলছে তখন সিদ্ধান্ত নিলেন কিছু এক্সপার্টকে ‘হায়ার’ করার। কতকটা চুক্তিভিত্তিক কাজ। ‘রুচি’ নিজেও ছিলেন একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। তিনি ফেসবুকে আবেদন করলেন চাকরির জন্য। ভাইভার প্রথম দিনেই তিনি অফিসে গিয়ে ভিমরি খেলেন। পুরো অফিস ফাঁকা। খোঁজ নিয়ে জানলেন সব প্রোগ্রামার নাকি সারা রাত জেগে প্রোগ্রামিংয়ের কাজ করেন আর দিনে ঘুমান। ফাঁকা অফিসে তিন ঘণ্টা একা বসেই অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তারপর কেউ একজন এসে তার ভাইভা নিয়েছিলেন। সে পরীক্ষায় তিনি টিকেও গেলেন। সেখান থেকে তার ক্যারিয়ারের উন্নয়ন।
ফেসবুকের পুরো ব্যাপারটাই ‘রুচির’ কাছে ছিল আনন্দদায়ক। পাশাপাশি তিনি এটাকে নিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে।
ভারতের পুনেতে বড় হওয়া রুচির জন্ম ২০শে জানুয়ারি ১৯৮২ সালে। কারনিগ মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া রুচি ফেসবুকে যোগদান করেন ২০০৫ সালে। ২০০৬ সালে ফেসবুকের নিউজ ফিডের (প্রথম ভার্সন) পেছনে রয়েছে তার ব্যাপক অবদান। ২০০৬ সালে তিনি এর বিস্তারিত বর্ণনা লেখেন এক ব্লগে। সে সময় ফেসবুকে নিউজ ফিডের এই ব্যাপারটি ছিল একেবারেই আলোচিত ও সমালোচিত। নিউজ ফিড যা ফেসবুকের অন্য বন্ধুর হোম পেজে প্রদর্শিত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। ফলে এটা কে নিয়ে অনেকেই সরাসরি তখন রুচিকে আক্রমণ করেছিলেন সমালোচনার ভাষায়। সমালোচনাকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী এই নিউজ ফিড নাকি তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও কথাকে ছড়িয়ে দিচ্ছিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে। সব সমালোচনাকে এড়িয়ে রুচি হয়ে ওঠেন আরও সক্রিয় কর্মী এবং ফেসবুকের একনিষ্ঠ একজন। ২০০৬ সালে তিনি ফেসবুকের প্রডাক্ট লিড হিসেবে কাজ করেন। রুচি মূলত ফেসবুকের নতুন নতুন কি কি সুবিধা আনা যায় সে বিষয়েও গবেষণা করতেন। আজকের দিনে আমরা যে ফেসবুক ব্যবহার করছি তার পেছনে রুচির অবদান অনস্বীকার্য।
সফলভাবে ৫ বছর ফেসবুকে কাজ করে তিনি ২০১০-এ চাকরি ছেড়ে দিয়ে ও তার স্বামী আদিত্য আগারয়ালের সঙ্গে নিজেই ‘কোভ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। তবে সেই প্রতিষ্ঠান খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি। ২০১২ সালে তিনি ড্রপবক্স((ফটো, ডকুমেন্ট, ভিডিও বা কোন ফাইল শেয়ারিং/ব্যাকআপ সুবিধা)) থেকে চাকরির ডাক পান। ড্রপবক্সের পণ্য বিপণন, প্রচার ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজ করেন। একপর্যায়ে তিনি ড্রপবক্স অপারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের কাছে ড্রপবক্সও বেশ আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বে ফেসবুকে কাজ করার সুবাদে রুচি ২০১১ সালে ‘বেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়ন কাজের জন্য FWD.us-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এই রুচি সাংভি। ফেসবুকের নিউজ ফিডের সাবেক এই প্রথম নারী ডেভেলপারের ব্যক্তিগত যত কথা ও গল্প কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে ঋডউ.ঁং-এর সাইটে।
ফেসবুকের প্রথম নারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে রুচির নাম ফেসবুক ইতিহাসে যে লেখা থাকবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই বললেই চলে।
0 comments:
Post a Comment