যে ছবি নিয়ে তোলপাড় by সোলায়মান তুষার

Wednesday, January 29, 2014

ফেসবুকে একটি ছবি ও মন্তব্য পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে সাইবার দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। তোলপাড় চলছে সর্বত্র। আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রীরা। হাতাহাতিও হয়েছে।
অভিযোগ গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে। শনিবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ঘুরতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্‌দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনি। সেখানে তিনি একটি তরল দুধের দোকানে গিয়ে ৫টি প্যাকেট কেনেন এবং একটি ফ্রি পান। ৬টি প্যাকেট হাতে নিয়ে একজন মেয়ে বিক্রেতার সঙ্গে দোকানেই ছবি তোলেন রনি। ওইদিন রাত ১২টার পর ছবিটি তিনি ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করেন। ছবিটির সঙ্গে তিনি মন্তব্য দেন এভাবে, ‘দুধের এত স্বাদ কে রে ? এই পোলা দুধ খায় কে রে... ’। তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ৩৪০ জন লাইক দেন এবং আরও ৫১ জন কমেন্ট করেন। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সর্বত্র। উল্লেখ্য, মেহেদী হাসান তার ফেসবুক আইডি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রেখেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর মধ্যে বেশির ভাগ বক্তব্যই ছিল নারীদের প্রতি বিদ্রুপ করে লেখা। বিষয়টি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুশরাতের নজরে আসে। নুশরাত মেহেদী হাসানের ফেসবুক ওয়ালে তাকে ‘স্টুপিড’ এবং ‘কে তাদের পোস্ট দেয়’ বলে মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যের পর মেহেদী ও তার গ্রুপের কর্মীরা নুশরাতকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। মেহেদী মন্তব্য দেয়ার পর নানাজন নানা মন্তব্য দিয়েছেন। কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরা হলো- আবু হাসান তাপস নামের একজন লেখেন, ‘ভাই দুধের দাম কি কম নাকি ?? পাইকারি কিছু কিনতাম’। মইন আহমেদ লিখেন ‘চরংড়হবু ড়র ঃধ শধৎবু’। এ নিয়ে নুশরাত ও মেহেদীর মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলে। ২৬শে জানুয়ারি নুশরাত তার ওয়ালে লিখেন ‘অফলাইন, অনলাইন-এ ইভ টিজিং-এর ঘটনার সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে! আমরা যারা নারী আমাদের প্রতিনিয়ত নানা অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে! আর মুখ বুজে সহ্য নয়! এবার হবে প্রতিরোধ...।’ ক্যাম্পাস-এর বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিজের নারী সত্তাকে জাগ্রত করুন; সকল অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন...একবার সহ্য করলে বারবার মরতে হবে; এ লড়াই বাঁচার লড়াই...ক্যাম্পাসের বোনদের উদ্দেশ্য বলছি নিজের নারী সত্তাকে জাগ্রত করুন; সকল অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন...একবার সহ্য করলে বারবার মরতে হবে; এ লড়াই বাঁচার লড়াই..।’ আবার লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রী বোন এবং নারী শিক্ষকদের আহ্বান জানাই অফলাইন, অনলাইনের এইসব কুলাঙ্গার ইভটিজারদের বিরুদ্ধে এক ও অভিন্ন অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ গড়ে তুলুন। এটা কোন ব্যক্তিগত সমস্যা না, এটা সামাজিক ব্যাধি, একে সমূলে উৎপাটন করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’ ওই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ‘রক্তাম্বর ধারিণী হবো সময়ের প্রয়োজনে- একুশ শতকে নারীর প্রতিবাদ যেন শুধুই কৌতুক’ শিরোনামে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মোমবাতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রীবৃন্দের ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়। এখানেই শেষ নয়, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক পর্যন্ত গড়ায়। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রীরা ফেসবুকে নারীদের ইভটিজিংকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভিসিকে লিখিত অভিযোগ করেন। ভিসি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির ঘটনায় সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপআপ্যায়ন সম্পাদক লিটন মাহমুদকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কবি জসীম উদ্‌দীন হল শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান রনিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে মন্তব্য ও ছবি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মেহেদী হাসান রনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রনি এর আগেও নারীদের নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন। এমনকি ছাত্রলীগের মেয়েদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, এর আগে রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের এক নেত্রীকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। মেহেদী হাসান রনি ফেসবুকে ছবি ও মন্তব্য পোস্ট করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি বাণিজ্য মেলায় গিয়ে ৫টি দুধের প্যাকেট কিনি। একটি প্যাকেট ফ্রি পাই। আমি বিক্রেতাদের অনুমতি নিয়েই একটি ছবি তুলি এবং তা ফেসবুকে দেয়ার কথা জানাই। তখন আগ্রহ নিয়ে এক নারী বিক্রেতা আমার পাশে দাঁড়ায়। আমি অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ফেসবুকে ছবি দেইনি। ছবি দেয়ার পর অনেকেই মজা করে মন্তব্য করেছে। তিনি বলেন, এটা নিতান্তই ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া কিছুই না। বিষয়টি নিজেদের মধ্যে সমাধান হয়ে গেছে। তিনি বলেন, নুশরাত আমাকে নিয়ে একটি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিলে আমার গ্রুপের কর্মীরা তাকে নিয়ে মন্তব্য করেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুশরাত বলেন, একজন নারী হিসেবে আমি ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি। তিনি বলেন, এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন বিচার হয়নি। একজন নেতা হিসেবে যেভাবে বক্তব্য দেয়া দরকার সেটা রনির মধ্যে ছিল না। এর আগেও সে নানা ধরনের মন্তব্য করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নারীদের নিয়ে এভাবে নানা মন্তব্য করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগটি পেয়েছি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে অনেকে এর অপব্যবহার করছে। নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যকে আক্রমণ করছে। তিনি বলেন, বিষয়টি যখন সাংগঠনিক পর্যায়ে চলে আসে তখন সংগঠনের স্বার্থেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশের পা ধরেও ভাইকে বাঁচাতে পারলো না স্বর্ণা

Sunday, January 26, 2014

সোহানকে যখন কোপাচ্ছিল তখন ফাঁড়ির ভেতরে ছোট বোন স্বর্ণা পুলিশের পা ধরে ভাইকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে আসেনি। কিছুক্ষণ পর এলো পুলিশ।
কিন্তু তার আগেই বড় ভাই সোহানকে নির্মমভাবে কোপালো ঘাতকরা। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করলো কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলো কলেজছাত্র সোহান। এরপর ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল বিকালে সিলেট নগরীর ভিআইপি রোডে লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহান ইসলাম সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সাহানা বেগম সানুর দ্বিতীয় ছেলে। এ ঘটনায় নগরীর কুয়ারপাড় ও খুলিয়াপাড়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত সোহান ইসলাম (১৮) সিলেট মদন মোহন কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র এবং খুলিয়াপাড়া ৫২-৪ নম্বর বাসার তাজুল ইসলামের ও সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুর পুত্র। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এলাকার লোকদের হাতে সে খুন হয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কামাল আহমদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হয়। শুক্রবার সোহানের লোকজন কামালকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। কামাল বর্তমানে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ১৩ নং ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলাও হয়েছে। রোববার বিকালে নগরীর জিন্দাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছোট বোন নুশরাত জাহান স্বর্ণাকে নিয়ে বাসায় ফিরছিল সোহান। লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কাছে পৌঁছলে প্রতিপক্ষ গুলজার ও কামালের  লোকজন তার গতিরোধ করে প্রথমে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। ভাইয়ের উপর হামলার ঘটনার পর স্বর্ণা দৌড়ে ঢোকে পার্শ্ববর্তী লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। এ সময় সে পুলিশের কাছে ভাইকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায়। তবে, ঘটনা বুঝতে না পেরে পুলিশ কর্মকর্তারা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এক পর্যায়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের চিৎকারে পুলিশ ফাঁড়ির বাইরে গিয়ে ধাওয়া করলে খুনিরা গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাবেক কাউন্সিলর প্রার্থী গুলজার আহমদের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন হামলা চালিয়ে তাকে খুন করে বলে নিহতের পরিবার দাবি করেছে। নিহতের মা সাবেক কাউন্সিলর সাহানারা বেগম সানু হাসপাতালে ছেলের মৃতদেহ ধরে বিলাপ করছিলেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, গুলজার ও কামালের লোকজন তার ছেলেকে খুন করেছে। তিনি ঘাতকদের ফাঁসি দাবি করেন। পিতা তাজুল ইসলাম ছেলের লাশ দেখে নির্বাক হয়ে গেছেন। তিনি জানান, ওরা এতটা ভয়ংকর কাজ করতে পারে জানা ছিল না। তিনি বলেন, পুলিশ আরও আগে বেরিয়ে এলে হয়তো ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব হতো। ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১০-১২ জন লোক মোটরসাইকেল থামিয়ে সোহানের ওপর হামলা চালায়। তাদের হাতে দা-লাঠি সহ ধারালো অস্ত্র ছিল।
 ঘটনার পরপরই তারা খুলিয়াপাড়া ও বিলপাড় এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে, লামাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মনির জানিয়েছেন, ঘটনা চলাকালেই পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ধাওয়া করে। এ সময় ঘাতকরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ সোহানকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

‘সোহাগ মরেনি, মরেছে আমার স্বপ্ন’ by সিদ্দিক আলম দয়াল

Wednesday, January 22, 2014

ছেলের হাফেজ হওয়ার আশা পূরণ করতে পারল না পিতা সফিক কাজী। নিজে কাজীর করে অসচ্ছল হিসেবে জীবনযাপন করে শুধু পেটে ভাত যোগাড় হয়েছে। নিজের সন্তানদের একটু রাস্তায় তুলে দিতে চেয়েছিলেন।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ছেলেকে দিয়েছিলেন মাদরাসায়। বড় হয়ে কিছু করবে। নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন- বুকভরা আশা আর স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গেছে হতভাগ্য পিতার ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের রামভদ্র রাজবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা কাজী সফিক। জমিজমা সামান্য। যা আছে তাতে ছোট সংসার মোটামুটি চলে যায়। চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় সোহাগ। বাড়ির কাছে বলে পিতা কাজী সফিক তার ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দেন খানাবাড়ি মাদরাসায়। সফলতার সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষায় সোহাগ অষ্টম শ্রেণীতে পড়লেখা করছিল ।
মা জেলেখা বেগম বলেন, পরিবারের সবার আদরের বলে দাদা-দাদী নাম রাখেন সোহাগ। তখন থেকেই সোহাগ হয়ে যায় সবার কাছে সোহাগী। ছোটবেলা থেকেই নামাজ পড়তো এরং রোজা রাখতো। ধর্মেও যেমন কর্মেও তেমন ছিল সে। সেজন্য গ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মাদরাসার সহপাঠীদের প্রিয় সোহাগ ভাই ।
সুন্দর মার্জিত চেহারার এক কিশোর সোহাগ কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তবে পিতার খবর তার জানা নেই। সে কারণে পিতা কাজী সফিক ও মা জেলেখা বেগমের চোখের মণি ছিল সে। মাদরাসার ক্লাসশেষে বাড়ি ফিরেই প্রতিদিন মায়ের বুকে মাথা রেখে আদর খুঁজতো। মা তাকে বুকে জড়িয়ে কপালে দিতেন চুমু। তারপর গোসল-খাওয়া সেরে ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষায় মনোযোগ দেয়া। মায়ের স্বপ্ন ছিল সোহাগ বড় হয়ে তাদের সংসারের হাল ধরবেন। নিজের জীবনকে সৎ চরিত্রে গঠন করে সরকারি চাকরি করে সারাজীবন মানুষের সেবা করে যাবেন। মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে সোহাগের কোন কমতি ছিল না। তাই নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে স্থান করে নেবে মানুষের মনে। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না। একটি বুলেট পিতা সফিক ও মা জেলেখা বেগমের স্বপ্ন খান খান করে দিলো। সোহাগের মা তার ছেলের মরা মুখ দেখে হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, আমার সোহাগ মরেনি। মরেছি আমি। মরেছে আমার স্বপ্ন। গুলিটা যেন আমার বুক ভেদ করে আমার প্রাণটা কেড়ে নিয়েছে। সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় জামায়াত-শিবির ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা ৪ পুলিশকে হত্যাসহ সংখ্যালঘুদের ঘবরাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালায়। এজন্য সুন্দরগঞ্জ থানায় অন্তত ৩২টি মামলা দায়ের করা হয়। আভিযুক্ত করা হয় জামায়াত-শিবির ও বিএনপি কর্মীসহ প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে ।
সমপ্রতি ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আবারও সুন্দরগঞ্জে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালায়। তারা বিভিন্নস্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনার পর গত শনিবার আসামি গ্রেপ্তার করতে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ।
অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যৌথবাহিনীও  সেনাবাহিনীর সহায়তায় আবারও ওইসব গ্রামে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। রাতভর অভিযানের যৌথবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। এ সময় জামায়াত-শিবির কর্মীরা পালিয়ে গেলেও ফাঁকে পড়ে গ্রামবাসী ও মহিলা-শিশুরা। আতঙ্কে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় খানাবাড়ি মাদরসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সোহানুর রহমান সোহাগ (১৪)।  গ্রেপ্তার এড়াতে সোহাগকে আশঙ্কা জনক অবস্থায় বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। গতকাল ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহাগ মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল সকাল থেকেই ওই এলাকায় শত শত মানুষ তার বাড়িতে ভিড় জমায়। তার মা জেলেখা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তার ছেলে সোহাগ একজন নিষ্পাপ সন্তান। এ কিশোর বয়সেই তার প্রাণ কেড়ে নিয়ে যারা আমার স্বপ্ন খান খান করে দিয়েছে তাদের বিচার আল্লার হাতে ছেড়ে দিলাম। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় সোহাগের লাশ এসে পৌঁছায় খানাবাড়ি মাদরাসা প্রাঙ্গণে। পরে মাদরাসার পাশের মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার ভাই মাওলানা নজরুল ইসলাম জানাজা নামাজ পড়ান এবং জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

সহিংসতার আগুন- ৫৬ দিন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন রুবেল by শর্মী চক্রবর্তী

Tuesday, January 21, 2014

দীর্ঘ ৫৬ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন পেট্রল বোমায় আহত সিএনজিচালক রুবেল (৫০)। ২৫শে নভেম্বর আহত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এখনও চিকিৎসা চলছে।
কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে আর ভাল লাগে না। বাড়ি ফিরে যেতে চান। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় ডাক্তাররা ছাড়ছেন না। এখন পর্যন্ত ২০ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। আরও দিতে হবে। তার স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, এই দুনিয়ায় আমার নিজের বলতে কেউ নেই। ছেলেমেয়েগুলো একা বাড়িতে পড়ে আছে। তার স্বামীও সন্তানদের কথা মনে করে কাঁদেন। তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছেন আরও অন্তত মাস খানেক থাকতে হবে। অপারেশন করতে হবে। আমরা গরিব মানুষ। নিজের সহায় সম্পত্তি কিছুই নাই। এতদিন মানুষের সাহায্য নিয়ে চলেছি। আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে জানি না। আমার স্বামীর কিছু হলে আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। রুবেলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। পেট চালাতে অবরোধে বেরিয়ে ছিলেন সিএনজি নিয়ে। কচুয়ার চৌমুহনীতে শিকার হয়েছিলেন দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রল বোমায়।

শুধু রুবেলই নয়, তার মতো আরও অনেকেই এখনও কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। তাদের আর্তনাদ যেন  থামছে না। হরতাল-অবরোধে পেট্রল বোমায় আহত হয়েছেন এমন ২০জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ২জন, এইচডিইউতে ৭ জন, পেইং ওয়ার্ডে ৯ জন এবং কেবিনে আছেন দু’জন। পেইং ওয়ার্ডে আহত শাহাদাত (৩৫) আর্তনাদ করে বলেন, আমি আর যন্ত্রণা সইতে পারছি না। প্রচণ্ড  কষ্ট হচ্ছে। আমাকে একটু ওষুধ দিবেন- যাতে আমার যন্ত্রণা সেরে যায়? কেরানীগজ্ঞের ফল বিক্রি করতেন শাহাদত। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। বলেন, গত ৭ই ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের আলম মার্কেটের ফুটপাতে আমি ফল বিক্রি করছিলাম। হঠ্যৎ আমার সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে তার শরীরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ঝলসে যায়। ককটেল বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে দোকানে ছেলে বসে ছিল। ছেলেকে বাসায় পাঠানোর পরপরই ককটেল বিস্ফোরিত হয়। শাহাদাত বলেন, সেদিন যদি ছেলেকে বাসায় না পাঠাতাম তাহলে তাকে হারাতে হতো। এক ছেলে আর তিন মেয়ে নিয়ে শাহাদাতের সংসার। পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। বলেন, আমার কিছু হলে ছেলেমেয়েগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আমি ছাড়া তো তাদের আর কেউ নেই। বাবার এই কান্না দেখে পাশে চিৎকার করে কান্না শুরু করে এক বছরের ছোট্ট মেয়েটি।
পেশায় সিএনজি চালক রিপন (৩৫)-এর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে। দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রল বোমায় আহত হয়ে গত ৭ই ডিসেম্বর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলে। শুধু আগুনে শরীরই পুড়ে যায়নি তার, হারিয়েছেন ডান চোখ। কিছুই দেখতে পান না সেই চোখ দিয়ে। বারবার একটা কথাই জানতে চাচ্ছিলেন তিনি, আমি কি আর এই চোখ দিয়ে দেখতে পারবো না? আমার চোখ কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন না? আমি যদি দেখতে না পাই তবে আমার সংসার কিভাবে চালাবো? আমার তো আর কেউ নেই। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসাধীন হরতাল-অবরোধের আগুনে পোড়ারা সবাই এখন ফিরে পেতে চান স্বাভাবিক জীবন। সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে চান নিজ নিজ পরিবারের কাছে। চিকিৎসাধীন অন্যরা হলেন- চাঁপাই নবাবগঞ্জের ট্রাকচালক জামাতুল ইসলাম (২৭), রংপুরের সবজি ব্যবসায়ী লোকমান (৪৫), চট্টগ্রামের সিএনজিচালক খোরশেদ আলম (৫০), যশোরের কৃষক মেহের আলী (৬০), গাইবান্ধার পুলিশ কনস্টেবল আবুল কালাম (৪৫), চানখাঁপুলের কাজল (৩০), চট্টগ্রামের ট্রাকচালক আবু মিয়া (৪০), ট্রাকের হেলপার মো. বিল্টু (৩০), উত্তরার এডভোকেট উজ্জ্বল সরকার (২৭), বরিশালের মিশুকচালক সুলতান সরকার, ট্রাকচালক কামরুল ইসলাম (৩৪), ডিম বিক্রেতা মো. আবুল (৪০), এবি আবির (৪০), এসআই নুরুন্নবি (৫৫)। এদের চিকিৎসা এখনও চলছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন সবাই। এ ব্যাপারে বার্ন ইউনিটে আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, এদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা এখন ভাল। তবে তাদের বাড়ি ফিরতে একটু সময় লাগবে। তার কারণ প্লাস্টিক সার্জারি। এ অপারেশনটি না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের ছাড়তে পারছি না। এ ছাড়া সুস্থ হতে সময় লাগার আরেকটি কারণ শীতে পোড়া ক্ষত শুকাতে সময় লাগছে। তবে আমরা আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই আমরা সবাইকে সুস্থ করে পাঠাতে পারবো।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরকে দেয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করে।
৯ই জানুয়ারি ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর ইউজিসি এ ধরনের সুপারিশ করল। বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্রে ভুল ও প্রশ্নফাঁস হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ঘটনার জের ধরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন জনপ্রিয় শিক্ষক পদত্যাগও করেছিলেন। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একপ্রকার যুদ্ধ করতে হয়। কেউ কেউ ১০টি বা তার অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও চান্স পান না। কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে হয়। তাতেও চান্স না পেলে দু’টি বছর পিছিয়ে যেতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এক্ষেত্রে অর্থ ও শ্রম দু’টোই যায়। সমপ্রতি গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনায় এলেও বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরোধিতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া এই পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার জের ধরে সমপ্রতি অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন। পরে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা করা হয়। আলোচনার পর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়- বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রথম বর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া পর্যালোচনার উপর কমিশন গুরুত্ব আরোপ করে। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য চলমান প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ভর্তি পরীক্ষাসমূহ কেবলমাত্র বোর্ড পরীক্ষার একটি অতি সংক্ষিপ্ত রূপ এবং এ পরীক্ষার গুণগতমান বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ। একাধিক ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুল ধরা পড়েছে। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বোর্ড পরীক্ষায় ভাল ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা এক ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত পরীক্ষায় কোন কারণে ব্যর্থ হলে তারা কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়। যা তাদের প্রতি অবিচার বলে কমিশন মনে করে। এছাড়া বর্তমান পদ্ধতিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে ৬-১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় এবং দীর্ঘসময় তাদের কোচিং সেন্টারের শরণাপন্ন হতে হয়। মানসিক চাপ ও একই বিষয়বস্তু নিয়ে দীর্ঘকাল অধ্যয়নরত থাকার ফলে তাদের সৃজনশীলতা বহুলাংশে হ্রাস পায়। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের যে সময় ব্যয় হয় তার পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। এই সময়টুকু শিক্ষকরা বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারেন। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাসমূহের এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অতিরিক্ত আয়ের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয় বটে, তবে এই আয়ের নৈতিক বৈধতা প্রশ্নসাপেক্ষ। কমিশন প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প উদ্ভাবন করে ভর্তি প্রক্রিয়ার আমূল সংস্কারের সুপারিশ করছে ইউজিসি। তবে ইউজিসির এ সুপারিশ নিয়ে আপত্তি তুলেছে শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইউজিসির এ ধরনের সুপারিশ কাল্পনিক। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের পদ্ধতি নেই। তিনি বলেন, প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা আলাদা স্বাতন্ত্র্য আছে। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, বোর্ড পরীক্ষার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোন যৌক্তিকতা নেই। কেননা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সিলেবাস রয়েছে। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে কেন কথা বলা হচ্ছে? আমরা একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একমাসে মাত্র ১২ টাকা বেতন নিই। সেখানে প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয়ে বিভিন্ন নামে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা নেয়। সেখানে ইউজিসি কোথায় থাকে। অনামিকা ভট্টাচার্য  এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে চান্স পেয়েছেন। তিনি এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি প্রচলিত পদ্ধতিকেই সমর্থন করেন। অনামিকা বলেন, একেকটা বিশ্ববিদ্যালয় একেকভাবে পরীক্ষা নেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ হয়। একটা পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে মেধা বিকাশের সুযোগ থাকবে না। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী তার পছন্দ বিষয়ে পড়তে চাইলে তার ১০-১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাদের টাকা ব্যয় হয়। শ্রম ও সময় ব্যয় হয়। এটা না করে গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করলে এতো সময় ও অর্থ ব্যয় হবে না। তিনি বলেন, মানবিকের জন্য একটি, সামাজিক বিজ্ঞানের জন্য একটি, বিজ্ঞানের জন্য একটি পরীক্ষা নিলেই হয়। অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, আমেরিকার বিশ্বদ্যিালয়গুলোতে এ ধরনের পদ্ধতি চালু রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশনে (জিআরই) অংশ নিয়ে যে নম্বর পায় তা দিয়ে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারে।

ফেসবুকের এক নারী ইঞ্জিনিয়ারের কথা... by ইমরান আলী

পরীক্ষার ফলাফল থেকে শুরু করে, প্রশাসনিক, বৈমানিক, বিজ্ঞানী, নিরাপত্তায়, রাষ্ট্র পরিচালনা, বলতে গেলে সবদিক দিয়েই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে। থেমে নেই প্রযুক্তিতেও।
ফেসবুকের মতো সারা বিশ্বে জনপ্রিয় এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম ১০ জন ভাড়াটে এমপ্লয়ির ভেতরেও ছিলেন নারী। বিশ্বের কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কি জানেন তাদের ফেসবুকে বন্ধুদের নিউজফিডগুলোর ডেভেলপার কে ছিলেন? রুচি সাংভি। আর ইনিই হচ্ছেন ফেসবুকের প্রথম নারী ভাড়াটে ইঞ্জিনিয়ার (ডেভেলপার)। ভারতীয় এই রুচি সাংভিকে বলা হয় বিশ্বে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে শক্ত অবদান রাখা ২০ নারীদের মধ্যে একজন। প্রখর এই মেধাবীর ফেসবুকে চাকরিতে যোগদান নিয়ে বেশ মজার তথ্যও রয়েছে।

জুকারবার্গ ও তার বন্ধুরা মিলে যখন দেখলেন তাদের তৈরি করা ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বেড়েই চলছে তখন সিদ্ধান্ত নিলেন কিছু এক্সপার্টকে ‘হায়ার’ করার। কতকটা চুক্তিভিত্তিক কাজ। ‘রুচি’ নিজেও ছিলেন একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। তিনি ফেসবুকে আবেদন করলেন চাকরির জন্য। ভাইভার প্রথম দিনেই তিনি অফিসে গিয়ে ভিমরি খেলেন। পুরো অফিস ফাঁকা। খোঁজ নিয়ে জানলেন সব প্রোগ্রামার নাকি সারা রাত জেগে প্রোগ্রামিংয়ের কাজ করেন আর দিনে ঘুমান। ফাঁকা অফিসে তিন ঘণ্টা একা বসেই অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তারপর কেউ একজন এসে তার ভাইভা নিয়েছিলেন। সে পরীক্ষায় তিনি টিকেও গেলেন। সেখান থেকে তার ক্যারিয়ারের উন্নয়ন।
ফেসবুকের পুরো ব্যাপারটাই ‘রুচির’ কাছে ছিল আনন্দদায়ক। পাশাপাশি তিনি এটাকে নিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে।
ভারতের পুনেতে বড় হওয়া রুচির জন্ম ২০শে জানুয়ারি ১৯৮২ সালে। কারনিগ মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া রুচি ফেসবুকে যোগদান করেন ২০০৫ সালে। ২০০৬ সালে ফেসবুকের নিউজ ফিডের (প্রথম ভার্সন) পেছনে রয়েছে তার ব্যাপক অবদান। ২০০৬ সালে তিনি এর বিস্তারিত বর্ণনা লেখেন এক ব্লগে। সে সময় ফেসবুকে নিউজ ফিডের এই ব্যাপারটি ছিল একেবারেই আলোচিত ও সমালোচিত। নিউজ ফিড যা ফেসবুকের অন্য বন্ধুর হোম পেজে প্রদর্শিত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। ফলে এটা কে নিয়ে অনেকেই সরাসরি তখন রুচিকে আক্রমণ করেছিলেন সমালোচনার ভাষায়। সমালোচনাকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী এই নিউজ ফিড নাকি তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও কথাকে ছড়িয়ে দিচ্ছিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে। সব সমালোচনাকে এড়িয়ে রুচি হয়ে ওঠেন আরও সক্রিয় কর্মী এবং ফেসবুকের একনিষ্ঠ একজন। ২০০৬ সালে তিনি ফেসবুকের প্রডাক্ট লিড হিসেবে কাজ করেন। রুচি মূলত ফেসবুকের নতুন নতুন কি কি সুবিধা আনা যায় সে বিষয়েও গবেষণা করতেন। আজকের দিনে আমরা যে ফেসবুক ব্যবহার করছি তার পেছনে রুচির অবদান অনস্বীকার্য।
সফলভাবে ৫ বছর ফেসবুকে কাজ করে তিনি ২০১০-এ চাকরি ছেড়ে দিয়ে ও তার স্বামী আদিত্য আগারয়ালের সঙ্গে নিজেই  ‘কোভ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। তবে সেই প্রতিষ্ঠান খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি। ২০১২ সালে তিনি ড্রপবক্স((ফটো, ডকুমেন্ট, ভিডিও বা কোন ফাইল শেয়ারিং/ব্যাকআপ সুবিধা)) থেকে চাকরির ডাক পান। ড্রপবক্সের পণ্য বিপণন, প্রচার ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজ করেন। একপর্যায়ে তিনি ড্রপবক্স অপারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের কাছে ড্রপবক্সও বেশ আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বে ফেসবুকে কাজ করার সুবাদে রুচি ২০১১ সালে ‘বেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়ন কাজের জন্য FWD.us-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এই রুচি সাংভি। ফেসবুকের নিউজ ফিডের সাবেক এই প্রথম নারী ডেভেলপারের ব্যক্তিগত যত কথা ও গল্প কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে ঋডউ.ঁং-এর সাইটে।
ফেসবুকের প্রথম নারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে রুচির নাম ফেসবুক ইতিহাসে যে লেখা থাকবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই বললেই চলে।

দাম্পত্যের তুষের অনলে জ্বলছিলেন সুনন্দা পুষ্কর

Monday, January 20, 2014

দাম্পত্যের তুষের অনলে জ্বলছিলেন সুনন্দা পুষ্কর। স্বামী ভারতের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রী শশী ঠারুর পরকীয়ায় জড়িয়ে যাওয়ায় তাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে চলছিল তিক্ত সম্পর্ক।
এর এক পর্যায়ে রাজধানী নয়া দিল্লির এক অভিজাত হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয় তার মৃতদেহ। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তার মৃতদেহ উদ্ধার করার পর হাসপাতালে নেয়া হয় পোস্টমর্টেমের জন্য। এরপর বলা হয়েছে, সুনন্দা পুষ্করের বড় ধরনের কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল না। যে পুরুষকে ভালবেসে বিয়ে করে তিনি সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কিছুদিন আগে আবিষ্কার করেন তিনি অন্য নারীর প্রেমে মজেছেন। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এ নিয়ে টুইটারে তিনি ফাঁস করে দেন নানা গোপন বিষয়। নয়া দিল্লির হোটেলে ৫২ বছর বয়সী সুনন্দা পুষ্কর ১৫ই জানুয়ারি একা অবস্থান করেন। পরের দিন তার সঙ্গে যোগ দেন মন্ত্রী শশী। সুনন্দা তার স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কে তথ্য ফাঁস করে দেয়ার পরদিনই তার রহস্যময় মৃত্যু হয়। হোটেল থেকে সুনন্দার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেরালা ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা ভালমতো পরীক্ষা করে বলেন, সুনন্দার বড় কোন অসুখই ছিল না। সোমবার এ বিষয়ে মন্ত্রী শশীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে পুলিশের। এ জন্য আগে থেকেই তাকে প্রস্তুতি নিতে দু’ দিন সময় দেয়া হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, সুনন্দার মৃত্যু আকস্মিক ও অস্বাভাবিক। তার শরীরে রয়েছে ক্ষতের চিহ্ন। শনিবার লোদি রোডে সুনন্দার মৃতদেহ দাহ করা হয়। ওদিকে এর আগের এক রিপোর্টে বলা হয়, টুইটারে পাকিস্তানি সাংবাদিক মেহের তারারের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন শশী ঠারুর। বুধবার শশী ঠারুরের টুইটার একাউন্টে ইঙ্গিত দেয়া হয়, লাহোর ভিত্তিক সাংবাদিক মেহের তারারের সঙ্গে প্রণয় চলছে ৫৭ বছর বয়সী শশীর। এরপরই তিনি টুইটারে লেখেন, তার একাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে। মেহেরের সঙ্গে তার কোন প্রেম নেই। এর আগে একবার সুনন্দা পুষ্কর দ্য ইকোনমিক টাইমস পত্রিকাকে বলেন, শশী বা তার একাউন্ট কেউ হ্যাক করেনি, তারাই এসব বার্তা দিচ্ছেন টুইটারে। তিনি বলেছেন, লাহোর ভিত্তিক মেহের তারার যেসব ব্যক্তিগত বার্তা শশী ঠারুরকে পাঠিয়েছেন সেগুলোই তিনি পোস্ট করেছেন। টুইটারে মেহের তারার বলেছেন, টুইটারে তিনি সব সময় প্রকাশ্যে শশী ঠারুরের প্রশংসা করেছেন। তার বইয়ের পর্যালোচনা করেছেন। এ নিয়ে লুকোচুরির কিছুই নেই। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সুনন্দা পুষ্করকে উদ্ধৃত করে বলেছে, তার স্বামী শশী ঠারুরের সঙ্গে মেহের তারারের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্য তিনি বিচ্ছেদ চাইবেন। এনডিটিভি চ্যানেলকে সুনন্দা পুষ্কর বলেছেন, মেহের তারার তার স্বামীকে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন শশী-সুনন্দা দম্পতি বললেন, তারা বিবাহিত, সুখী এবং এভাবেই বাকিটা সময় থাকতে চান। কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়! এখন দু’জন দু’ ভুবনের বাসিন্দা।

ওদিকে সুনন্দা পুস্কর ও শশী ঠারুরের জীবনে ঝড় তোলার অভিযোগ পাকিস্তানি যে নারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তিনি বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। মেহের তারার বলেছেন, শশী ঠারুর ও তার স্ত্রী সুনন্দা পুস্করের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টিতে তার কোন ভূমিকা নেই। সুনন্দা পুস্করের লাশ দিল্লির একটি অভিজাত হোটেল থেকে উদ্ধার করার পর এ বিতর্ক ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। ঠিক এমন সময় পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলকে মেহের তারার বলেছেন, তিনি এ ঘটনায় ষড়যন্ত্রের শিকার। লাহোরভিত্তিক এই সাংবাদিকের বয়স ৪৫ বছর। এরই মধ্যে তিনি টুইটার একাউন্টে পাল্টে ফেলেছেন প্রোফাইল ছবি। তিনি বলেছেন, শশী ঠারুরের সঙ্গে তার দু’বার সাক্ষাত হয়েছে। একবার গত এপ্রিলে ভারতে। দ্বিতীয়বার গত জুনে দুবাইতে। তখন সেখানে অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মেহের বলেন, যখন আমি তাকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছি, তখন অন্য মেয়ে হয়তো তা পছন্দ করবে না। সুনন্দা তার স্বামীকে অন্য জন এভাবে প্রশংসা করছে তা হয়তো সহ্য করতে পারেন নি। তাই তিনি শশীকে আমার সঙ্গে কথা বলতে বারণ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও শশী টুইটারে আমাকে ফলো করতে থাকেন। আমি বুঝতে পারি না তার স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বললে বা ই মেইলে যোগাযোগ করলে তাতে তার সমস্যা আছে।

অন্তরালে দুই কিংবদন্তি- গ্রেটা গারবো থেকে সুচিত্রা সেন

গ্রেটা গারবো ও সুচিত্রা সেন। দু’জনেই অভিনেত্রী। একজন বাংলার মেয়ে। অন্যজন সুদূর সুইজারল্যান্ডের। তারপরও তাদের মধ্যে রয়েছে অদভুত মিল। তারা দু’জনেই চোখের চাহনিতে লিখে দিয়েছেন অমর কবিতা।
প্রেমের জয়গান তাতে ফুটে উঠেছে এক অকৃত্রিমতায়। সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে দু’জনেই হারিয়ে গিয়েছিলেন প্রেমের এক গোপন ভুবনে। সেখান থেকে তাদের মুক্তি মেলে নি কোনদিন। নিজেরাই নিজেদের করেছেন লোকচক্ষুর আড়াল। সেভাবেই কেটে গেছে তাদের জীবনের বড় অংশ। বলা যায়, এ সময়টা তাদের জীবনের অন্ধকার সময়। নিজেরাই নিজেদের কষ্ট দিয়েছেন। ঘরের চার দেয়ালে বন্দি হয়েছেন স্বেচ্ছায়। তারপর আর কোনদিন পৃথিবীর কারও সামনে মুখ দেখান নি। শত চেষ্টা করেও তাদের একান্ত আপনজন বাদে কাউকে দেখান নি মুখ। এমন কি মৃত্যুর পরেও কাউকে দেখতে দেন নি ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’কে। দেখতে দেন নি মৃত্যুর পরেও সেই অজস্র কবিতার চোখ এখনও উত্তম কুমারের জন্য পথ চেয়ে আছে কিনা। গ্রেটা গারবো কি জীবনের শেষ সময়টাতে তার প্রিয়তম জন গিলবার্টের ডাক শুনতে পেয়েছিলেন! ১৯০৫ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বরে সুইডেনের স্টকহোমে জন্ম গ্রেটা গারবোর। তিনি প্রথমে অভিনয়ে কাজ শুরু করেন ইউরোপে। এরপর ১৯ বসন্তের যুবতী গ্রেটা গারবো যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এমজিএম-এর ব্যানারে কাজ করার জন্য। রমা দাস গুপ্তা যেমন কলকাতা গিয়ে সুচিত্রা সেন হয়ে ওঠেন, গ্রেটা গারবোর ক্ষেত্রে তেমন হয় নি। তিনি নাম পাল্টান নি। তার মতোই অসাধারণ, অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্যের অধিকারী ছিলেন সুচিত্রা। শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তার আগে গ্রেটা গারবো কাজ করেন নির্বাক ও পরে সবাক চলচ্চিত্রে। তাকে বলা হয় হলিউডের সবচেয়ে খেয়ালি তারকা। তবে তার সঙ্গে সুচিত্রা সেনের রয়েছে কিছু পার্থক্য। গ্রেটা গারবো কখনও বিয়ে করেন নি। তার কোন সন্তান নেই। সারা জীবনই তিনি বেছে নেন নিঃসঙ্গ জীবন। কিন্তু সুচিত্রা সেন বিয়ে করার পরই এসেছেন চিত্রজগতে। তার কন্যা মুনমুন সেন, নাতনি রিয়া ও রাইমা সেন অভিনেত্রী। ১৮ বছর বয়সে কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রিয়নাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় সুচিত্রার। গ্রেটা গারবো যাদের সঙ্গে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ প্রেম গড়ে উঠেছিল জন গিলবার্টের সঙ্গে। ১৯২৬ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি অবস্থান করেন গিলবার্টের সঙ্গে। তাদের মধ্যে এমন গাঢ় প্রেমকে পুুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে এমজিএম। এ সংস্থা তৈরি করে ‘ফ্লেশ অ্যান্ড দ্য ডেভিল’। নির্মিত হয় ‘লাভ’ এবং ‘এ ওম্যান অব অ্যাফেয়ার্স’। এগুলো ব্যবসাসফল হয়। বহুবার তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন গিলবার্ট। ১৯২৬ সালে একবার তাকে ইলেন বোর্ডম্যান ও কিং ভিদোরের সঙ্গে বিয়ের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বিয়ের আসরে উপস্থিত হন নি গ্রেটা গারবো। ১৯৩৭ সালে লিওপোল্ড স্টকোস্কি নামে এক কনডাক্টরের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তার সঙ্গে তিনি পরের বছরগুলো চুটিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। শুধু বন্ধুত্ব নয়, গাঢ় প্রেম। এই প্রেমের উন্মাতাল হাওয়ায় তারা মাঝে মাঝেই হারিয়ে যেতে থাকেন ইউরোপে। এছাড়াও গ্রেটা গারবোর প্রেম গড়ে উঠেছিল সিসিল বিটন, রাশিয়ার ধনকুবের দিলীপ কুমার, সঞ্জীব কুমার, ধর্মেন্দ্র, দেব আনন্দ, ভারত ভূষণ, শেখর, জর্জ শলির সঙ্গে। অন্যদিকে, সুচিত্রা সেন অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ রায়, বসন্ত চৌধুরী, কমল চিত্র, প্রশান্ত কুমার, রঞ্জিত মল্লিক প্রমুখের সঙ্গে। এর মধ্যে উত্তম-সুচিত্রা জুটি যেন জীবন্ত হয়ে কথা বলতো। তাদের অভিনয়কে কখনও মনে হয় নি অভিনয়। একান্তে, মনের গভীরে, চোখে চোখে তারা যে অভিনয় করে গেছেন তা তাদেরকে চিরজীবন দিয়েছে। তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল সত্যিকার প্রেম। তারই ধারাবাহিকতায় সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র থেকে অবসর নেয়ার পর ৩৫টি বছর ঘরের ভিতর নিজেকে বন্দি করে রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন ভীষণ জেদি। ১৯৭৮ সালে তার ‘প্রণয় পাশা’ ভাল ব্যবসা করে নি। অভিমানে তিনি চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যান বাকিটা জীবন। ওদিকে গ্রেটা গারবোও চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তিনিও নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এ থেকেই বলাবলি আছে যে, তাকে দেখেই সুচিত্রা সেন লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যেতে উদ্বুদ্ধ হন। এ জন্যই সুচিত্রাকে কাব্য করে বলা হয় ‘বাংলার গ্রেটা গারবো’। তবে গ্রেটা গারবো বিয়ে না করলেও তার ছিল উদ্দাম, উন্মুক্ত প্রেমময় জীবন। তিনি একাধারে পুরুষ ও মেয়েদের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হয়েছেন। ১৯২৭ সালে মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী লিলিয়েন তাশমানের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপরেই তারা প্রেমে পড়ে যান। এছাড়া সমকামিতা গড়ে ওঠে তার মারসিডিস ডি একোস্তার সঙ্গে। এ সময়ে তাদের মধ্যে বিনিময় হয় ১৮১টি প্রেমপত্র, কার্ড, টেলিগ্রাম। এর বেশির ভাগই এখন সংরক্ষিত আছে ফিলাডেলফিয়ার রোদেনবাক মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরিতে। শুরুর দিকে গ্রেটা গারবো চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতেন। তিনি একা একা থাকতে ভালবাসতেন। কোন বন্ধুর সঙ্গে অযথা আড্ডা দেয়া পছন্দ করতেন না। তেমনি সুচিত্রা সেন প্রথম দিকে চলচ্চিত্রে আসতেই চান নি। তাকে বলা যায় অনেকটা জোর করে এ জগতে প্রবেশ ঘটিয়েছেন তার স্বামী। গ্রেটা গারবো কখনও অটোগ্রাফ দেননি। ভক্তদের চিঠির কোন জবাব দেন নি। সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হাতেগোনা। কখনও তিনি অস্কার উৎসবে যোগ দেননি। তাকে অস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রচার বিমুখ গ্রেটা গারবো সেই পুরস্কার আনতে যান নি। লোকচক্ষুর অন্তরালে যখন তিনি নিজেকে নিয়ে যান তখন শত চেষ্টা করেও বাইরের কেউ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন নি। এ সময় ভীষণ বিষণ্নতা তাকে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। ১৯৮৪ সালে এর জন্য তাকে সফল চিকিৎসা দেয়া হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শুধুমাত্র তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জানতে পারেন সপ্তাহের তিন দিন- সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার নিউ ইয়র্ক হাসপাতালের দ্য রোগোসিন ইনস্টিটিউটে ৬ ঘণ্টা করে তিনি ডায়ালাইসিস করান। ১৯৯০ সালের ১৫ই এপ্রিল ৮৪ বছর বয়সে ওই হাসপাতালেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরে শোনা যায় তিনি গ্যাস্ট্রিকেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার মৃতদেহ সমাহিত করা হয়েছে মানহাটনে। অন্যদিকে সূচিত্রা সেন ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজ কাপুরের অফার, গ্রহণ করেন নি দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। স্বেচ্ছা অন্তরালে যাওয়ার আগে অভ্যস্ত ছিলেন তুমুল বৈভবের বিলাসী জীবনে। রঙ্গ-কৌতুকেও ছিলেন অভ্যস্ত। এক অনুষ্ঠানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গেঞ্জি টেনে ছিঁড়ে দেখিয়েছিলেন কিভাবে এ দৃশ্যটি তিনি রূপায়িত করেছেন ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ইউজিসি’র ৫ দফা সুপারিশ by সোলায়মান তুষার

Friday, January 3, 2014

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ৫ দফা সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসি’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।
দেশের উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৪৮ ভাগই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে অধ্যয়নরত। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত স্নাতকদের গুণগত মান মোটেই আশানুরূপ নয়। অধিভুক্ত কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক অবস্থা উদ্বেগজনক বলে মনে করে ইউজিসি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত স্নাতকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে সেখানে কেবল এমএস ও পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে। অন্য ছয়টি বিভাগীয় শহরে একটি করে স্বায়ত্তশাসিত স্নাতকোত্তর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে ওই বিভাগের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী কলেজগুলো অধিভুক্ত করা। যেসব কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক উভয় পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলোকে পৃথক দু’টি কলেজে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগীয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কেবল কয়েকটি নির্বাচিত কলেজে মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম সীমিত রাখা; মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা স্নাতকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করার পদ্ধতি প্রবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে। অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব বিভাগীয় বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করে এসব শিক্ষকের চাকরির বিধিমালা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনুরূপ করার কথা বলা হয়েছে। দেশে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র অ্যাফিলিয়েটিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব কোন শিক্ষার্থী না থাকলেও এর অধীনে ২ হাজার সাতটি অধিভুক্ত ও অঙ্গীভূত কলেজে ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত দু’ হাজারেরও বেশি কলেজ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে একটি দুরূহ কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট বর্তমানে গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন করে স্ব-স্ব বিভাগের কলেজগুলোর শিক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব ওই সব কেন্দ্রের ওপর অর্পণ করার উদ্যোগকে কমিশন স্বাগত জানিয়েছে। তবে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কলেজগুলোর একাডেমিক মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করে ইউজিসি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং গবেষণা-সংক্রান্ত জনবল নিয়োগ করে কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা যেতে পারে। উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক অবস্থায় ইউজিসি’র উদ্বেগের কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ কলেজে একাদশ শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কেবল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কারিকুলাম প্রণয়ন এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এ ছাড়া বেসরকারি কলেজগুলোর গভর্নিংবডিতেও শিক্ষক নিয়োগের জন্য নির্বাচনী কমিটিতে প্রতিনিধি নিয়োগ করে। সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম তদারকি করার দায়িত্ব থাকলেও এটি করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগ, এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে পোস্টিং অর্থাৎ বদলি-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভূমিকা নেই। এর ফলে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৯৯২ সালে অ্যাফিলিয়েটিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে নিজস্ব আয় থেকে। তারা ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে ডিগ্রি প্রদান পর্যন্ত সব কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত হারে ফি আদায় করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, আয় ১২৮ কোটি ৩৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা এবং ব্যয় ১২৩ কোটি ৪৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজার্ভ ফান্ডের রয়েছে, ৭০০ কোটি টাকার বেশি। এ ফান্ড থেকেও প্রতি অর্থবছরে বিপুল আয় হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ব্যয়ের চেয়ে আয়ের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর থেকে কমিশন অনুন্নয়ন খাতে কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটিতে বহুমুখী সমস্যা রয়েছে। এর একটি সেশনজট। এ সমস্যার সমাধান হলেই বাকি সমস্যা এমনিতেই কেটে যাবে। আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, একদিনে সব সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য সময় প্রয়োজন।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু