Home » , , , , , » সহিংসতার আগুন- ৫৬ দিন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন রুবেল by শর্মী চক্রবর্তী

সহিংসতার আগুন- ৫৬ দিন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন রুবেল by শর্মী চক্রবর্তী

Written By Unknown on Tuesday, January 21, 2014 | 11:30 PM

দীর্ঘ ৫৬ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন পেট্রল বোমায় আহত সিএনজিচালক রুবেল (৫০)। ২৫শে নভেম্বর আহত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এখনও চিকিৎসা চলছে।
কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে আর ভাল লাগে না। বাড়ি ফিরে যেতে চান। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় ডাক্তাররা ছাড়ছেন না। এখন পর্যন্ত ২০ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। আরও দিতে হবে। তার স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, এই দুনিয়ায় আমার নিজের বলতে কেউ নেই। ছেলেমেয়েগুলো একা বাড়িতে পড়ে আছে। তার স্বামীও সন্তানদের কথা মনে করে কাঁদেন। তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছেন আরও অন্তত মাস খানেক থাকতে হবে। অপারেশন করতে হবে। আমরা গরিব মানুষ। নিজের সহায় সম্পত্তি কিছুই নাই। এতদিন মানুষের সাহায্য নিয়ে চলেছি। আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে জানি না। আমার স্বামীর কিছু হলে আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। রুবেলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। পেট চালাতে অবরোধে বেরিয়ে ছিলেন সিএনজি নিয়ে। কচুয়ার চৌমুহনীতে শিকার হয়েছিলেন দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রল বোমায়।

শুধু রুবেলই নয়, তার মতো আরও অনেকেই এখনও কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। তাদের আর্তনাদ যেন  থামছে না। হরতাল-অবরোধে পেট্রল বোমায় আহত হয়েছেন এমন ২০জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ২জন, এইচডিইউতে ৭ জন, পেইং ওয়ার্ডে ৯ জন এবং কেবিনে আছেন দু’জন। পেইং ওয়ার্ডে আহত শাহাদাত (৩৫) আর্তনাদ করে বলেন, আমি আর যন্ত্রণা সইতে পারছি না। প্রচণ্ড  কষ্ট হচ্ছে। আমাকে একটু ওষুধ দিবেন- যাতে আমার যন্ত্রণা সেরে যায়? কেরানীগজ্ঞের ফল বিক্রি করতেন শাহাদত। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। বলেন, গত ৭ই ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের আলম মার্কেটের ফুটপাতে আমি ফল বিক্রি করছিলাম। হঠ্যৎ আমার সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে তার শরীরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ঝলসে যায়। ককটেল বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে দোকানে ছেলে বসে ছিল। ছেলেকে বাসায় পাঠানোর পরপরই ককটেল বিস্ফোরিত হয়। শাহাদাত বলেন, সেদিন যদি ছেলেকে বাসায় না পাঠাতাম তাহলে তাকে হারাতে হতো। এক ছেলে আর তিন মেয়ে নিয়ে শাহাদাতের সংসার। পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। বলেন, আমার কিছু হলে ছেলেমেয়েগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আমি ছাড়া তো তাদের আর কেউ নেই। বাবার এই কান্না দেখে পাশে চিৎকার করে কান্না শুরু করে এক বছরের ছোট্ট মেয়েটি।
পেশায় সিএনজি চালক রিপন (৩৫)-এর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে। দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রল বোমায় আহত হয়ে গত ৭ই ডিসেম্বর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলে। শুধু আগুনে শরীরই পুড়ে যায়নি তার, হারিয়েছেন ডান চোখ। কিছুই দেখতে পান না সেই চোখ দিয়ে। বারবার একটা কথাই জানতে চাচ্ছিলেন তিনি, আমি কি আর এই চোখ দিয়ে দেখতে পারবো না? আমার চোখ কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন না? আমি যদি দেখতে না পাই তবে আমার সংসার কিভাবে চালাবো? আমার তো আর কেউ নেই। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসাধীন হরতাল-অবরোধের আগুনে পোড়ারা সবাই এখন ফিরে পেতে চান স্বাভাবিক জীবন। সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে চান নিজ নিজ পরিবারের কাছে। চিকিৎসাধীন অন্যরা হলেন- চাঁপাই নবাবগঞ্জের ট্রাকচালক জামাতুল ইসলাম (২৭), রংপুরের সবজি ব্যবসায়ী লোকমান (৪৫), চট্টগ্রামের সিএনজিচালক খোরশেদ আলম (৫০), যশোরের কৃষক মেহের আলী (৬০), গাইবান্ধার পুলিশ কনস্টেবল আবুল কালাম (৪৫), চানখাঁপুলের কাজল (৩০), চট্টগ্রামের ট্রাকচালক আবু মিয়া (৪০), ট্রাকের হেলপার মো. বিল্টু (৩০), উত্তরার এডভোকেট উজ্জ্বল সরকার (২৭), বরিশালের মিশুকচালক সুলতান সরকার, ট্রাকচালক কামরুল ইসলাম (৩৪), ডিম বিক্রেতা মো. আবুল (৪০), এবি আবির (৪০), এসআই নুরুন্নবি (৫৫)। এদের চিকিৎসা এখনও চলছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন সবাই। এ ব্যাপারে বার্ন ইউনিটে আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, এদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা এখন ভাল। তবে তাদের বাড়ি ফিরতে একটু সময় লাগবে। তার কারণ প্লাস্টিক সার্জারি। এ অপারেশনটি না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের ছাড়তে পারছি না। এ ছাড়া সুস্থ হতে সময় লাগার আরেকটি কারণ শীতে পোড়া ক্ষত শুকাতে সময় লাগছে। তবে আমরা আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই আমরা সবাইকে সুস্থ করে পাঠাতে পারবো।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু