ফেসবুকে একটি ছবি ও মন্তব্য পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে সাইবার দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। তোলপাড় চলছে সর্বত্র। আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রীরা। হাতাহাতিও হয়েছে।
অভিযোগ গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে। শনিবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ঘুরতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনি। সেখানে তিনি একটি তরল দুধের দোকানে গিয়ে ৫টি প্যাকেট কেনেন এবং একটি ফ্রি পান। ৬টি প্যাকেট হাতে নিয়ে একজন মেয়ে বিক্রেতার সঙ্গে দোকানেই ছবি তোলেন রনি। ওইদিন রাত ১২টার পর ছবিটি তিনি ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করেন। ছবিটির সঙ্গে তিনি মন্তব্য দেন এভাবে, ‘দুধের এত স্বাদ কে রে ? এই পোলা দুধ খায় কে রে... ’। তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ৩৪০ জন লাইক দেন এবং আরও ৫১ জন কমেন্ট করেন। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সর্বত্র। উল্লেখ্য, মেহেদী হাসান তার ফেসবুক আইডি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রেখেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর মধ্যে বেশির ভাগ বক্তব্যই ছিল নারীদের প্রতি বিদ্রুপ করে লেখা। বিষয়টি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুশরাতের নজরে আসে। নুশরাত মেহেদী হাসানের ফেসবুক ওয়ালে তাকে ‘স্টুপিড’ এবং ‘কে তাদের পোস্ট দেয়’ বলে মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যের পর মেহেদী ও তার গ্রুপের কর্মীরা নুশরাতকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। মেহেদী মন্তব্য দেয়ার পর নানাজন নানা মন্তব্য দিয়েছেন। কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরা হলো- আবু হাসান তাপস নামের একজন লেখেন, ‘ভাই দুধের দাম কি কম নাকি ?? পাইকারি কিছু কিনতাম’। মইন আহমেদ লিখেন ‘চরংড়হবু ড়র ঃধ শধৎবু’। এ নিয়ে নুশরাত ও মেহেদীর মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলে। ২৬শে জানুয়ারি নুশরাত তার ওয়ালে লিখেন ‘অফলাইন, অনলাইন-এ ইভ টিজিং-এর ঘটনার সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে! আমরা যারা নারী আমাদের প্রতিনিয়ত নানা অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে! আর মুখ বুজে সহ্য নয়! এবার হবে প্রতিরোধ...।’ ক্যাম্পাস-এর বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিজের নারী সত্তাকে জাগ্রত করুন; সকল অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন...একবার সহ্য করলে বারবার মরতে হবে; এ লড়াই বাঁচার লড়াই...ক্যাম্পাসের বোনদের উদ্দেশ্য বলছি নিজের নারী সত্তাকে জাগ্রত করুন; সকল অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন...একবার সহ্য করলে বারবার মরতে হবে; এ লড়াই বাঁচার লড়াই..।’ আবার লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রী বোন এবং নারী শিক্ষকদের আহ্বান জানাই অফলাইন, অনলাইনের এইসব কুলাঙ্গার ইভটিজারদের বিরুদ্ধে এক ও অভিন্ন অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ গড়ে তুলুন। এটা কোন ব্যক্তিগত সমস্যা না, এটা সামাজিক ব্যাধি, একে সমূলে উৎপাটন করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’ ওই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ‘রক্তাম্বর ধারিণী হবো সময়ের প্রয়োজনে- একুশ শতকে নারীর প্রতিবাদ যেন শুধুই কৌতুক’ শিরোনামে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মোমবাতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রীবৃন্দের ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়। এখানেই শেষ নয়, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক পর্যন্ত গড়ায়। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রীরা ফেসবুকে নারীদের ইভটিজিংকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভিসিকে লিখিত অভিযোগ করেন। ভিসি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির ঘটনায় সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপআপ্যায়ন সম্পাদক লিটন মাহমুদকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কবি জসীম উদ্দীন হল শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান রনিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে মন্তব্য ও ছবি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মেহেদী হাসান রনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রনি এর আগেও নারীদের নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন। এমনকি ছাত্রলীগের মেয়েদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, এর আগে রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের এক নেত্রীকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। মেহেদী হাসান রনি ফেসবুকে ছবি ও মন্তব্য পোস্ট করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি বাণিজ্য মেলায় গিয়ে ৫টি দুধের প্যাকেট কিনি। একটি প্যাকেট ফ্রি পাই। আমি বিক্রেতাদের অনুমতি নিয়েই একটি ছবি তুলি এবং তা ফেসবুকে দেয়ার কথা জানাই। তখন আগ্রহ নিয়ে এক নারী বিক্রেতা আমার পাশে দাঁড়ায়। আমি অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ফেসবুকে ছবি দেইনি। ছবি দেয়ার পর অনেকেই মজা করে মন্তব্য করেছে। তিনি বলেন, এটা নিতান্তই ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া কিছুই না। বিষয়টি নিজেদের মধ্যে সমাধান হয়ে গেছে। তিনি বলেন, নুশরাত আমাকে নিয়ে একটি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিলে আমার গ্রুপের কর্মীরা তাকে নিয়ে মন্তব্য করেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুশরাত বলেন, একজন নারী হিসেবে আমি ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি। তিনি বলেন, এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন বিচার হয়নি। একজন নেতা হিসেবে যেভাবে বক্তব্য দেয়া দরকার সেটা রনির মধ্যে ছিল না। এর আগেও সে নানা ধরনের মন্তব্য করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নারীদের নিয়ে এভাবে নানা মন্তব্য করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগটি পেয়েছি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে অনেকে এর অপব্যবহার করছে। নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যকে আক্রমণ করছে। তিনি বলেন, বিষয়টি যখন সাংগঠনিক পর্যায়ে চলে আসে তখন সংগঠনের স্বার্থেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
0 comments:
Post a Comment