চাচার পাঁচালি- নব্য গণতন্ত্র by মাহবুব তালুকদার

Saturday, February 15, 2014

চাচা বললেন, ছাত্রলীগের মিডিয়া কানেকশন বিশেষ ভালো নয়। সে কারণে বারবার 
তাদের খেসারত দিতে হচ্ছে।
আমি বললাম, এ কথার অর্থ কী?
অর্থ খুব সোজা। মিডিয়া ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
মিডিয়া তো রিপোর্ট করা ছাড়া আর কিছুই করছে না।
সেটাই বলতে চাচ্ছি। সেদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার পিস্তল হাতে ছবি ছাপা হয়েছে। এ রকম একপেশে রিপোর্ট বা ছবি ছাপার নাম কী সাংবাদিকতা?
কিন্তু একপেশে রিপোর্ট হলো কীভাবে?
আরে ভাই! জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডাররা যখন প্লাস্টিক বোমা ছোড়ে, তাদের কী কোনো ছবি আজ পর্যন্ত পত্রিকায় ছাপা হয়েছে? হয়নি। অথচ ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা যখন আত্মরক্ষার্থে পিস্তল হাতে নেয়, ফলাও করে সেটা ছাপা হয়, যা দুরভিসন্ধিমূলক।
চাচা কোনো বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে গেলে আমাকে ভাই বলে সম্বোধন করেন। এটা নতুন কিছু নয়। আমি বললাম, ক’দিন আগে জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিবির রগ কাটে, ছাত্রলীগ কবজি কাটে, মাথা কাটে।’ এ কথার জবাবে ছাত্রলীগ লিখিতভাবে প্রতিবাদলিপিতে জানিয়েছে, হাজী সেলিম একজন ‘অশিক্ষিত’ ও ‘মূর্খ’ লোক। কিন্তু এটা কী হাজি সেলিমের কথার জবাব হলো?
ঠিকই বলেছে ওরা। চাচা জানালেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা যেহেতু ছাত্র, সেহেতু তাদের চোখে ‘অশিক্ষিত’ ও ‘মূর্খ’ হাজী সেলিমের অপরাধ হচ্ছে ‘শিক্ষিত’ ও ‘বিদ্বান’ ছাত্রদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মুখ খোলা। সংসদ সদস্য হয়েছেন বলে সংসদে দাঁড়িয়ে সমাজের শিক্ষিত অংশের বিরুদ্ধে গায়ে পড়ে মন্তব্য করা হাজী সেলিমের উচিত হয়নি। ছাত্রশিবির আর ছাত্রলীগ কি এক বিষয় হলো যে তাদের তুলনা করা হবে? ‘অশিক্ষিত’ আর ‘মূর্খ’ না হলে হাজী সেলিম এটা করতে পারতেন না।
আমি বললাম, চাচা! ছাত্রলীগ সম্পর্কে আরো অভিযোগ আছে। ক’দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল থেকে ৯৭ জন শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতারা বের করে দিয়েছে। ওই ৯৭ ছাত্রের অপরাধ হলো তাদের কাছে স্থানীয় ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রত্যয়নপত্র নেই। তাদেরকে জানানো হয়েছে, তারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না এবং ছাত্রলীগ করত- এ রকম প্রত্যয়নপত্র যার যার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে আনতে হবে। এটা কেমন কথা?
কী আশ্চর্য! এতে অভিযোগের কী আছে? চাচা ক্ষুব্ধস্বরে বললেন, ছাত্রলীগ স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি যাতে আসন পেতে ঘাঁটি বানাতে না পারে, তা দেখা নিশ্চয়ই অন্যায় কিছু নয়। তাতে প্রয়োজনে ৯৭ জন কেন, ৯৭০ জনকে হলে থাকতে না দেয়ার অধিকার ছাত্রলীগের রয়েছে।
কিন্তু ছাত্রলীগ তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। হলে স্থান পেতে ছাত্রদের যার যার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতার প্রত্যয়নপত্রইবা আনতে হবে কেন?
তুমি ব্যাপারটা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছ কেন? ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাহায্য করছে বলেই তাদের এটা করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এককভাবে আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারছে না বলেই ছাত্রলীগ এ ব্যাপার হ্যান্ডেল করছে। ওরা যদি অন্যায় কিছু করত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই তাতে বাধা দিতো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি কিছু বলেছে?
না। তারা তো ছাত্রলীগের পক্ষে।
তাহলেই বুঝতে পার, ছাত্রলীগ কোনো অন্যায় করছে না। তুমিও দেখছি হাজী সেলিম হয়ে গেলে।
চাচার কথায় আমি রীতিমতো বিচলিতবোধ করলাম। হাজী সেলিম ঢাকার একজন খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হননি। আওয়ামী লীগের আরেক প্রখ্যাত নেতা ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনকে নির্বাচনে পরাজিত করে তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি মন্ত্রীও হতে পারেন। যদি তাই হয়, তাহলে তিনি হবেন ছাত্রলীগের ভাষায় দেশের প্রথম ‘অশিক্ষিত’ ও ‘মূর্খ’ মন্ত্রী। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে যা বলেছেন, আমি তা সমর্থন করিনি। তাহলে আমি তার সঙ্গে তুলনীয় হলাম কী করে?
আমি প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে বললাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঘোষণা করেছেন, আগামী ২০১৯ সালের ২৮শে জানুয়ারির পূর্বে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়াদ শেষে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এটা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার প্রমাণ। চাচা বললেন, বিএনপি যাতে এ সময়ের মধ্যে নিজেদের তৈরি করে নিতে পারে, এজন্যই সৈয়দ আশরাফ সময়টি অগ্রিম জানিয়ে দিয়েছেন।
চাচা! নির্বাচন কী বিগত নির্বাচনের মতোই হবে?
অবশ্যই। চাচা বললেন, দু-একটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশ আমাদের নির্বাচন মেনে নিয়েছে। সবাই বর্তমান নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তাছাড়া, বাংলাদেশের বিগত নির্বাচন একটা মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ মডেলটিকে গ্রহণ করবে। সুতরাং, সংবিধানের বাধ্যবাধকতা রক্ষা করে একই পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।
কিন্তু এটা তো বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন!
কেন? জাতীয় সংসদে বিরোধী দল তো আছে। বেগম রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা।
উনি কি সত্যি বিরোধীদলীয় নেতা?
তোমার এসব অহেতুক প্রশ্ন আমার ভালো লাগে না। বেগম রওশন এরশাদ একজন অসাধারণ রাজনীতিবিদ। তিনি একদিকে তার স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে দলের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন, অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদার হিসেবে ভারসাম্য রক্ষা করছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় এমন উদাহরণ আর এক পিস পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
আমি চুপ করে চাচার কথা শুনলাম। জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝি না। গত নির্বাচনে এরশাদের নির্দেশে ১৮৬ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বাকিরা নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করেন। বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টির ৩৪ জন সদস্য রয়েছেন। এরশাদ নিজেও সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এরপর তাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অন্যদিকে তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ দলের যে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে স্বামীকে ক্ষমতাহীন করেছেন, তা ফিরে পেতে এরশাদ সমপ্রতি দলের নেতাকর্মীদের এক সম্মেলনে গান গেয়েছেন? ‘আয় খোকা আয়!’ তবে দলের ৩০ জন সংসদ সদস্য তার ডাকে সাড়া দেননি। আসলে দলের খোকারা বুঝতে পারছেন না কার কাছে যাবেন? ক্ষমতাবান রওশন এরশাদের কাছে, না ক্ষমতাহীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে?
আমি আবার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললাম, চাচা! উপজেলা নির্বাচনে তো দেখছি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন আছে, অথচ কাগজপত্রে সবই নির্দলীয়। নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়ার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হচ্ছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত নয়?
তোমার কাছে তো সবই অদ্ভুত। তবে এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গুরুত্বপূর্ণ কেন?
বিএনপি তলে তলে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বলে। বর্তমান সরকারকে বিএনপি অবৈধ সরকার বলছে, আবার এ সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এটা কেমন নৈতিকতাবিরোধী কথা?
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নেই বলেই বোধহয়। আমি বললাম।
আওয়ামী লীগের উচিত ছিল এবারও কৌশল করে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। চেষ্টাও করা হয়েছিল। তবে তা ব্যর্থ হয়েছে। এখন একটা ভিন্ন কৌশল দেখা যাচ্ছে।
কি কৌশল?
এবার উপজেলা নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর বিশেষভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ওপর তেমন আস্থা রাখা যায়নি বলেই এ ব্যবস্থা। চাচা বললেন।
এভাবে নির্বাচন করে কি গণতন্ত্র রক্ষিত হতে পারে?
গণতন্ত্রের তুমি বোঝটা কী? চাচা বিরক্তিস্বরে আমাকে বললেন, তুমি কি মনে করো নির্বাচনে কেবল দেশের মানুষেরা ভোট দেয়, বিদেশীরা কিছু করে না?
তা করে। বিগত জাতীয় নির্বাচনে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সচিব সুজাতা সিং সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন। জাতীয় পার্টি যাতে নির্বাচনে যায়, তার জন্য এরশাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।
কথাটা ফাঁস করা এরশাদের মোটেই উচিত হয়নি। চাচা গলার স্বর স্বাভাবিক করে বললেন, গণতন্ত্রের পুরোনো ধারণা এখন আর নেই। নির্বাচন ছাড়া কিংবা নামকা-ওয়াস্তে নির্বাচন করেও গণতন্ত্র রক্ষিত হতে পারে। এর নাম হচ্ছে নব্য গণতন্ত্র।
নব্য গণতন্ত্র!
আঁতকে উঠলে যে! এটা অবশ্য আইউব খানের মৌলিক গণতন্ত্র নয়। বর্তমান নব্য গণতন্ত্র সময়ের প্রয়োজনে ও সংবিধান রক্ষার্থে গণতন্ত্রের ভিন্নতর রূপ। এটা ওয়েস্ট মিনস্টার গণতন্ত্রের আদল থেকে আলাদা। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ নব্য গণতন্ত্রের বিকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সেটা কী রকম? আমি প্রশ্ন করলাম।
মিসরের দিকে তাকিয়ে দেখ। মিসরের সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। ফিল্ড মার্শাল সিসি বিগত নির্বাচনে নির্বাচিত মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে শাসনক্ষমতা দখল করেন ও মুরসিকে জেলে দেন। মিসরের এবারের নির্বাচনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফিল্ড মার্শাল সিসিকে প্রকাশ্যে অগ্রিম সমর্থন দিয়েছেন। আমি শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, মিসরের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফিল্ড মার্শাল সিসি জয়যুক্ত হবেন।
কিন্তু এতে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে? আমি প্রশ্ন করলাম।
তুমি গণতন্ত্রের পুরোনো ধ্যানধারণার বিষয়টা ভুলে যাও। চাচা বিগলিত হাসি মুখে বললেন, নব্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে কোনো একটা নির্বাচন হলেই হলো। কিভাবে কী নির্বাচন হলো, তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা হবে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়- ছাত্রলীগের দামি পিস্তল ও কিছু সস্তা জীবন by ফারুক ওয়াসিফ

Friday, February 7, 2014

বিশ্বজিতের খুনিরা হাড়কেপ্পন ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাদের মতো দামি পিস্তল দিয়ে বিশ্বজিৎকে মারতে পারত তারা।
তা না করে চাপাতি দিয়ে কোপাতে কত কষ্টই না করতে হয়েছিল ছেলেগুলোকে। চাপাতি সস্তা ও দেশি, পিস্তল দামি ও বিদেশি। রাবির ছাত্রলীগ নেতা ইমন ও নাসিমরা অ্যানালগ থেকে ডিজিটালে প্রমোশন পেয়েছেন বলে তাঁদের অভিনন্দন। তাতে এঁদের দামও গেছে অনেক বেড়ে। দামটা বুঝবেন যদি তাঁর পিস্তলের দামটা জানেন। এক বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা ও বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীর মারফত জানতে পারলাম, যে পিস্তল দিয়ে ইমন গুলি করছিলেন, তার ব্র্যান্ডের নাম বেরেটা টমক্যাট। দাম তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। ছোট কিউট স্মার্ট একটা অস্ত্র। এটা দিয়ে বেশি দূরে গুলি করা যায় না। তবে এর ক্যারিশমা অন্য জায়গায়। সুকুমার রায় বেঁচে থাকলে এটা দেখে বলতেন, ‘এতটুকু যন্ত্র হতে এত শব্দ হয়!’।

অস্ত্রটা বাংলাদেশে এসেছে নাকি মাত্র তিন মাস হলো। অবশ্য অবৈধভাবে এর আগেও আসতে পারে। স্মার্ট পিস্তল হাতে ইমনকে ড্যাশিং দেখালেও কাজের বেলায় তিনি ঠনঠনা। গুলিবাজির ভিডিও দেখলে যে কেউ-ই বুঝবেন, অস্ত্রের প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হয়নি। হাত কাঁপে, বুলেটভরা ম্যাগাজিন ভুল করে খুলে ফেলে। নিজের গুলির শব্দে নিজেই ভয়ে চমকে ওঠে। অন্য কারণের পাশাপাশি এই আনাড়িপনার জন্যও তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা যুক্তিযুক্ত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুখ্যাত ক্যাডার এবং পরে সাংসদ হওয়া অভি নাকি চা-সিগারেট খেতেন না হাত কাঁপবে বলে। ছাত্রশিবিরের বন্দুকবাজদেরও তুখোড় নামডাক আছে। ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অভিকে না পেলে শিবিরের ক্যাডারদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনা শিখতে পারে।

তিন লাখ সাড়ে তিন লাখ টাকার অস্ত্র যে চালায়, তাকে চালাতে দলের কত টাকা লাগে?  সেই টাকা কোথা থেকে জোগাড় হয়? পিস্তলের চোখ দিয়ে দেখলে ইমন লাখো টাকার সেলিব্রিটি ক্যাডার। আর যাঁদের তাক করে সে গুলি করেছে, তাঁরা ‘সামান্য’ কয় টাকার বেতন বাড়ানো নিয়ে আন্দোলন করা ‘সস্তা’ ছাত্রছাত্রী। বলা হয়, সস্তার তিন অবস্থা। এই সস্তা শিক্ষার্থীরা ডাইনিংয়ের পানিপ্রধান ডাল আর কাঁকরময় ভাত খান, গাদাগাদি করে চৌকিতে ঘুমান আর মাস চালানো নিয়ে টাকার টানাটানিতে ভোগেন। তো ইমনদের পক্ষে এঁদের কীভাবে সম্মান করা সম্ভব?

ইমনের যাঁরা বস, তিনি ভিসি হতে পারেন, এলাকার এমপি-মন্ত্রী-নেতা হতে পারেন। তাঁরা অনেক খানদানি লোক। তাঁরা ছাত্রলীগের মতো দুর্দান্ত মেধাবী সংগঠন পোষেন। এদের দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে দখলদারি-জমিদারি পত্তন করেন। ছাত্রলীগ আছে বলেই ছাত্রছাত্রী ও বেয়াড়া শিক্ষকদের প্রজা বানিয়ে রাখতে পারেন। আন্দোলনের স্পর্ধা দেখালে পুলিশ ও ছাত্রলীগ লেলিয়ে প্রজাদের সস্তা পিঠে ছররা গুলির লাল আলপনা এঁকে দেন। পত্রিকা আর টিভিতে ইমনদের পিস্তলের বাহাদুরির পাশাপাশি এ রকম কিছু প্রজার ছিদ্রময় পিঠের ছবি এসেছে। অবশ্য গুলি-বন্দুক কিনতে সরকারকে কত টাকা ব্যয় করতে হয়, তা আমরা জানি না। সেই টাকায় কতজনের পড়ালেখার খরচ রাষ্ট্র দিতে পারত, তা-ও জানা নেই। পুলিশের অস্ত্র, জলকামান, টিয়ার গ্যাস ইত্যাদি কিনতে তো টাকার অভাব হয় না; অভাব হয় কেবল বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে।

এই গল্প জমিদার ও প্রজার গল্প, এই গল্প শিকার ও শিকারির গল্প। শিকারির হাতে অস্ত্র থাকবে, শিকারেরা রক্তাক্ত হবে; এটাই নিয়ম। ক্যাম্পাসগুলোতে দেখেছি, শিক্ষার্থীরা সরকারদলীয় সংগঠনকে ভয় পান। কখনো সেই সংগঠন ছাত্রলীগ; কখনো তা হয় ছাত্রদল-ছাত্রশিবির। তার পরও এদের সঙ্গেই বাস করতে হয় হলে, বিচরণ করতে হয় একই ক্যাম্পাসে। শিকারির চোখ দিয়ে, জমিদারের চোখ দিয়ে ছাত্রছাত্রী ও ছাত্রবান্ধব শিক্ষকদের দেখতে কেমন লাগে জানা নেই। কিন্তু শিকার হিসেবে, প্রজা হিসেবে জানি, ওই সব জমিদার ও শিকারিকে শিক্ষার্থীরা অন্তরের অন্তস্তল থেকে ঘৃণা করেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, রাজশাহীর ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। গত বছর জগন্নাথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছিল, তাদের কারোরই কি শাস্তি হয়েছে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়েরকে যারা কুপিয়ে হত্যা করেছিল, তাদের কি আটক করে আদালতে তোলা হয়েছে? এসব আশ্বাস মনকে ক্লান্ত করে। শ্রদ্ধা-ভক্তি উঠে যায়। বিশ্বজিতের হত্যাদৃশ্য সমগ্র দেশবাসীর হূদয়ে যে হাহাকার আর ধিক্কারের জন্ম দিয়েছিল, তার ধাক্কায় খুনিদের বিচার হয়েছে। হয়তো প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেখে নিন্দার ঝড় ওঠায় ইমনেরাও আটক হবে। কিন্তু যে ছাত্রলীগকে মাস্তানি, খুনোখুনি, মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকতে দেখা যায়, যে সংগঠনের হাতে রয়েছে ইমনের পিস্তলের চেয়েও ভয়ংকর অস্ত্র, সেই ছাত্রলীগ নিয়ে আমরা কী করব? ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসকে আমরা ঘৃণা করেছি, ছাত্রলীগের বেলায় কি সেই ঘৃণার মনকে ঘুমিয়ে রাখব?

একটি দেশে দুর্বৃত্ত ক্ষমতা আর প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র কতটা উদগ্র হতে পারে, ক্যাম্পাসগুলো তার উদাহরণ। ক্যাম্পাসের বাইরে নিপীড়ক ক্ষমতা অনেক চতুরালি জানে। দরকার মোতাবেক তারা নরম ও গরম হয়। কিন্তু ক্যাম্পাসের সরকারদলীয় ক্যাডাররা কাটা রাইফেলের নলের মতো সর্বদাই গরম। প্রতি মুহূর্তে তাদের ক্ষমতা দেখাতে হয়, নইলে কর্মীরা অনুগত থাকবে না, প্রতিপক্ষ সুযোগ নেবে আর ছাত্রছাত্রীরা হয়ে উঠবে ‘বেয়াদব’। তাদের হাঁটাচলা, মোটরসাইকেল দৌড়ানো, হম্বিতম্বি, গুলিবাজি—সবই তাদের রাজনীতির ট্রেডমার্ক। এগুলো তারা নিজেদের জন্য করে, দলের জন্য করে, ওপরঅলাদের দাপট জারি রাখার জন্য করে, নেতা হওয়ার জন্য করে। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে ছাত্রলীগ ভেড়ার পালে নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে এটাই তো স্বাভাবিক। একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাক-ব্রিটিশ আমলের মতো লাঠি-টিয়ার-গুলিতে লুটিয়ে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এ দেশে জনগণের অধিকারকে দাপুটে রাজনীতি আর স্বৈরাচারী প্রশাসন কী মূল্য দেয়, তা যাঁরা ভুলে গেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রণা দিয়ে তা তাঁরা বুঝে নিতে পারেন।

ইমনরা একা নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশ ছাড়া ছাত্রলীগ বা পুলিশ গুলি করতে পারত না। তাঁর নির্দেশ ছাড়া ছাত্রলীগের অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করাও যাবে না। তিনি চেয়েছেন বলেই নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে সাহসের সঙ্গে দাঁড়ানো পাঁচ তরুণ শিক্ষকের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ ওঠানো হচ্ছে। সরকার-প্রশাসন জানে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো সর্বদাই বাহান্ন, উনসত্তর, নব্বইয়ের মতো উত্থান ঘটানোর সম্ভাবনা রাখে। এ ধরনের গণ-আন্দোলন কখনোই পুলিশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।  জোট বাঁধা শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ভয় পায় না। তা ছাড়া সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির জন্য অনেক পুলিশ লাগবে। কথায় কথায় পুলিশ ব্যবহার করলে মিডিয়ায় শোরগোল উঠবে, মানবাধিকারের প্রশ্ন উঠবে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরের এমবেডেড সন্ত্রাসীদের কৌশলের সঙ্গে চালাতে পারলে এসব হুজ্জত এড়ানো যায়। তাই অন্য সব ইমন ও সম্ভাব্য ইমনদের ভয় নেই। বহিষ্কারের নামে তাদের আইনি বিচার থেকে দায়মুক্তি দেওয়া চলবে; যেমন বহিষ্কারের দায়মুক্তি ভোগ করে চলেছে জুবায়েরের খুনি ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। তাই অন্যায় ক্ষমতার অন্যতম খুঁটি ছাত্রলীগও ‘দায়মুক্ত’ থাকবে।

কিন্তু সেই সব শিক্ষার্থীর কী হবে? যাঁরা আন্দোলন করে মার খেয়েছেন, এখন আবার ‘ছাত্রশিবিরের’ ভাঙচুরের দায়ে যাঁদের নামে অভিযোগ গঠন করা হচ্ছে? ইতিমধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর নেতা-কর্মীসহ ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। সেই পাঁচ তরুণ শিক্ষকেরই বা কী হবে, যাঁরা ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সামনে বুক চিতিয়ে বলেছিলেন, ‘ওদের মারতে হলে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে যেতে হবে।’ সেই পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত হবে। গত জরুরি অবস্থার সময়ও শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় রাবির অন্য পাঁচ শিক্ষককে জেলে পাঠানো হয়। এঁরা আছেন বলে নীতি নামক জিনিসটা এখনো চূড়ান্তভাবে লাটে ওঠেনি।

ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ওলেখক।

bagharu@gmail.com

সংগঠনটি কি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে?- স্বরূপে ফিরেছে ছাত্রলীগ!

Tuesday, February 4, 2014

নতুন করে ক্ষমতাসীন হয়ে বর্তমান সরকার নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনকে সম্ভবত ছাড় দিয়ে এর বাইরে রাখা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ প্রমাণ দিল যে তারা তাদের পুরোনো চরিত্রই ধরে রেখেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমনে শুধু পুলিশ দিয়ে কাজ হয়নি, মাঠে নামতে হয়েছে বা নামানো হয়েছে ছাত্রলীগকেও!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দায় প্রাথমিকভাবে ছাত্রলীগের ওই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির হলেও সামগ্রিকভাবে সংগঠনটির এবং চূড়ান্ত বিচারে সরকারের। একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা কিসের জোরে এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তা আমাদের সবারই জানা। প্রথম আলো পত্রিকায় অস্ত্র হাতে যাদের ছবি ছাপা হয়েছে, তারা অচেনা দুর্বৃত্ত নয়, এদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক! তাঁরা অস্ত্র হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন! এঁদের নেতা বানিয়েছেন কারা? কাদের সমর্থন ও আশীর্বাদ রয়েছে তাঁদের ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পেছনে?
বর্ধিত বেতন-ভাতা প্রত্যাহার বা সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে
পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বসে তা ঠিক করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। এসব বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকে কেন মাঠে নামতে হলো? সরকারের তরফে সায় না থাকলে এভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামার বিষয়টি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে! এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সরকারকে এখন প্রমাণ করতে হবে যে এই দুর্বৃত্তপনা ও অপকর্মে তাদের কোনো সায় ছিল না।
শিক্ষামন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘তদন্তের ভিত্তিতে দায়ীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা শুধু আশ্বাস নয়, কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চাই। অস্ত্রধারী হিসেবে যাদের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তারা তো এরই মধ্যে চিহ্নিত। একজন সাধারণ অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত ও ছাত্রলীগের এই নেতাদের মধ্যে আইনগত পার্থক্য করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দেখতে চাই, আইন তার নিজের গতিতে চলছে। কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের জন্য কি আইন নিজের মতো চলে? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সবাই সময়মতো হল ত্যাগ করলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ের পরও হলে অবস্থান করছিলেন।
নতুন করে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন তাদের যে জঘন্য রূপ প্রকাশ করল, এর বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ধরাছোঁয়ার বাইরে ছাত্রলীগের সেই অস্ত্রধারীরা

প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেছিল তারা। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। কিন্তু ঘটনার এক দিন পেরুলেও তাদের কারও টিকি স্পর্শ করতে পারেনি পুলিশ। হয়নি কোন মামলাও।
উল্টো চার মামলার আসামি হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন আলামতও দেখা যায়নি গতকাল পর্যন্ত। এদিকে হামলা ও সংঘর্ষের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় গতকাল সকালেই সব ক’টি হল ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থান করে। পরে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা হল থেকে বেরিয়ে আসে। এদিকে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর নামে মতিহার থানায় দু’টি মামলা করেছেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও দু’টি মামলা করে। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের বা কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে রোববারের ঘটনা তদন্তে ছাত্রলীগও একটি কমিটি গঠন করেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলার বিষয়ে মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন বলেন, মামলা দু’টির একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে বাধাদান, বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরটি বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। প্রথম মামলায় ৬০ জনকে নামসহ অজ্ঞাত দেড় শ’ এবং দ্বিতীয় মামলায় ৫০ জনের নামসহ অজ্ঞাত দেড় শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, থানার এসআই মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় দুটি পৃথক মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দু’টি একটি সরকারি কাজে বাধা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি বাদী হয়ে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আশরাফুল আলম ইমনসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে বলেও পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২রা অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মী প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করেছিল তাদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তাদের কেউ কেউ পুরস্কৃতও হয়েছে।

ওই সময় রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন (তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক), কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আখেরুজ্জামান তাকিম (তৎকালীন সহ-সভাপতি), রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তানিম (গণশিক্ষা সম্পাদক), রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিক রহমান আতিক (উপ-দফতর সম্পাদক), যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতু (উপ-পাঠাগার সম্পাদক) বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। পরে এরা সবাই ছাত্রলীগের কাণ্ডারি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২৮শে নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মীর হাতে পুলিশের সামনে অস্ত্রবাজি করতে দেখা গেছে। সে সময় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান, পলাশ, ফয়সাল আহমেদ রুনু, সাহানুর ইসলাম শাকিল, নাসিম আহমেদ সেতু, সুদীপ্ত সালামসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এসব ছবি বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রোববার বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্য কোর্স বন্ধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তাদের মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল হামলায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস স্ট্যান্ডের পেছন থেকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা একটি সাদা চাদর গলায় পেঁচিয়ে পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একই সময় তার বাম পাশে কালো শার্ট পরে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রানা চৌধুরীকে। ওই সশস্ত্র দলটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে এসে পিস্তল উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে আমির আলী হল সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন। একই সময়ে ইমনের সামনেই কালো জ্যাকেট পরা সাদা পিস্তল হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতুকে। সেতুর সামনে এগিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মমতাজ উদ্দীন কলা ভবন পর্যন্ত তাড়া করেন কালো চাদর পরা সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম। এ সময় তাকে এক হাতে পিস্তল ও অন্য হাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা গেছে। সাবেক কমিটির এই নেতা বিভিন্ন হামলা ও সংঘর্ষে অস্ত্রবাজিতে নিজের পারদর্শিতা প্রমাণে সফল হলেও দলে তিনি বঞ্চিত নেতা হিসেবে পরিচিত।
প্রশাসন ও ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খালিকুজ্জামানকে প্রধান করে গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক শামসুুল আলম সরকার, সিন্ডিকেট সদস্য এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন এবং কমিটির সদস্য সচিব হলেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, শাহিনুর রশীদ জুয়েল, জিয়াউল হক, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক ও দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, ছাত্রলীগ অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর কোন হামলা করেনি। বরং শিবিরের ক্যাডাররাই ক্যাম্পাসে হামলা চালালে আমাদের নেতাকর্মী আহত হয়। নিজেদের বাঁচাতে আমরাও আক্রমণ করি।
ছাত্রলীগের কাছে অস্ত্র থাকার বিষয়ে সোজাভাবে না বলে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, প্রতিটি মানুষ যেখানে জীবনের নিরাপত্তা গ্রহণ করে ছাত্রলীগও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অনেক কিছুই করছে। অন্যদিকে, মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম সামসুর নূর বলেন, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতাদের আটক করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব দ্রুত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হবে বলেও জানান তিনি।
অস্ত্রধারীরা সন্ত্রাসী: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্র হাতে যারা মহড়া দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যার হাতে অস্ত্র থাকে, সে ছাত্র নয়, সন্ত্রাসী। তার কোন দল থাকতে পারে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কাজ চলছে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রদের ওপর হামলাকারী কারা, তাদের অস্ত্র কোথায় গেল, আন্দোলনে কার কি ভূমিকা ছিল- সব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন: বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিনস কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধ ও বর্ধিত ফি বাতিলে দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিল। এ নিয়ে গত রোববার ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা শিক্ষকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল এমনকি শিক্ষকদের বাসভবন, চেম্বার ও অফিসে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। শিক্ষক সমিতি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাব ও বাসভবনে হামলার ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা জানায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে একই দাবিতে শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন করে।
সাংবাদিকদের মানববন্ধন: অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। মানববন্ধনে বক্তারা সাংবাদিকদের উপর পুলিশি  হামলার নিন্দা জানান।
গ্রেপ্তার ১: মতিহার ওসি জানান, রোববার ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের অভিযোগে সোমবার ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সজীব আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ যাদের নাম পেয়েছে, তাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে।

যে ছবি নিয়ে তোলপাড় by সোলায়মান তুষার

Wednesday, January 29, 2014

ফেসবুকে একটি ছবি ও মন্তব্য পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে সাইবার দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। তোলপাড় চলছে সর্বত্র। আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রীরা। হাতাহাতিও হয়েছে।
অভিযোগ গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে। শনিবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ঘুরতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্‌দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনি। সেখানে তিনি একটি তরল দুধের দোকানে গিয়ে ৫টি প্যাকেট কেনেন এবং একটি ফ্রি পান। ৬টি প্যাকেট হাতে নিয়ে একজন মেয়ে বিক্রেতার সঙ্গে দোকানেই ছবি তোলেন রনি। ওইদিন রাত ১২টার পর ছবিটি তিনি ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করেন। ছবিটির সঙ্গে তিনি মন্তব্য দেন এভাবে, ‘দুধের এত স্বাদ কে রে ? এই পোলা দুধ খায় কে রে... ’। তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে ৩৪০ জন লাইক দেন এবং আরও ৫১ জন কমেন্ট করেন। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সর্বত্র। উল্লেখ্য, মেহেদী হাসান তার ফেসবুক আইডি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রেখেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর মধ্যে বেশির ভাগ বক্তব্যই ছিল নারীদের প্রতি বিদ্রুপ করে লেখা। বিষয়টি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুশরাতের নজরে আসে। নুশরাত মেহেদী হাসানের ফেসবুক ওয়ালে তাকে ‘স্টুপিড’ এবং ‘কে তাদের পোস্ট দেয়’ বলে মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যের পর মেহেদী ও তার গ্রুপের কর্মীরা নুশরাতকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। মেহেদী মন্তব্য দেয়ার পর নানাজন নানা মন্তব্য দিয়েছেন। কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরা হলো- আবু হাসান তাপস নামের একজন লেখেন, ‘ভাই দুধের দাম কি কম নাকি ?? পাইকারি কিছু কিনতাম’। মইন আহমেদ লিখেন ‘চরংড়হবু ড়র ঃধ শধৎবু’। এ নিয়ে নুশরাত ও মেহেদীর মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলে। ২৬শে জানুয়ারি নুশরাত তার ওয়ালে লিখেন ‘অফলাইন, অনলাইন-এ ইভ টিজিং-এর ঘটনার সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে! আমরা যারা নারী আমাদের প্রতিনিয়ত নানা অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে! আর মুখ বুজে সহ্য নয়! এবার হবে প্রতিরোধ...।’ ক্যাম্পাস-এর বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিজের নারী সত্তাকে জাগ্রত করুন; সকল অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন...একবার সহ্য করলে বারবার মরতে হবে; এ লড়াই বাঁচার লড়াই...ক্যাম্পাসের বোনদের উদ্দেশ্য বলছি নিজের নারী সত্তাকে জাগ্রত করুন; সকল অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন...একবার সহ্য করলে বারবার মরতে হবে; এ লড়াই বাঁচার লড়াই..।’ আবার লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রী বোন এবং নারী শিক্ষকদের আহ্বান জানাই অফলাইন, অনলাইনের এইসব কুলাঙ্গার ইভটিজারদের বিরুদ্ধে এক ও অভিন্ন অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ গড়ে তুলুন। এটা কোন ব্যক্তিগত সমস্যা না, এটা সামাজিক ব্যাধি, একে সমূলে উৎপাটন করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’ ওই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ‘রক্তাম্বর ধারিণী হবো সময়ের প্রয়োজনে- একুশ শতকে নারীর প্রতিবাদ যেন শুধুই কৌতুক’ শিরোনামে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মোমবাতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রীবৃন্দের ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়। এখানেই শেষ নয়, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক পর্যন্ত গড়ায়। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রীরা ফেসবুকে নারীদের ইভটিজিংকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভিসিকে লিখিত অভিযোগ করেন। ভিসি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির ঘটনায় সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপআপ্যায়ন সম্পাদক লিটন মাহমুদকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কবি জসীম উদ্‌দীন হল শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান রনিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে মন্তব্য ও ছবি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মেহেদী হাসান রনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রনি এর আগেও নারীদের নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন। এমনকি ছাত্রলীগের মেয়েদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, এর আগে রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের এক নেত্রীকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। মেহেদী হাসান রনি ফেসবুকে ছবি ও মন্তব্য পোস্ট করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি বাণিজ্য মেলায় গিয়ে ৫টি দুধের প্যাকেট কিনি। একটি প্যাকেট ফ্রি পাই। আমি বিক্রেতাদের অনুমতি নিয়েই একটি ছবি তুলি এবং তা ফেসবুকে দেয়ার কথা জানাই। তখন আগ্রহ নিয়ে এক নারী বিক্রেতা আমার পাশে দাঁড়ায়। আমি অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ফেসবুকে ছবি দেইনি। ছবি দেয়ার পর অনেকেই মজা করে মন্তব্য করেছে। তিনি বলেন, এটা নিতান্তই ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া কিছুই না। বিষয়টি নিজেদের মধ্যে সমাধান হয়ে গেছে। তিনি বলেন, নুশরাত আমাকে নিয়ে একটি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিলে আমার গ্রুপের কর্মীরা তাকে নিয়ে মন্তব্য করেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুশরাত বলেন, একজন নারী হিসেবে আমি ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি। তিনি বলেন, এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন বিচার হয়নি। একজন নেতা হিসেবে যেভাবে বক্তব্য দেয়া দরকার সেটা রনির মধ্যে ছিল না। এর আগেও সে নানা ধরনের মন্তব্য করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নারীদের নিয়ে এভাবে নানা মন্তব্য করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রীদের পক্ষ থেকে অভিযোগটি পেয়েছি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে অনেকে এর অপব্যবহার করছে। নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যকে আক্রমণ করছে। তিনি বলেন, বিষয়টি যখন সাংগঠনিক পর্যায়ে চলে আসে তখন সংগঠনের স্বার্থেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টেন্ডারবাজি: বগুড়ায় ঠিকাদার খুন, লক্ষ্মীপুরে বাক্স ছিনতাই বরিশালে যুবলীগ নেতাকে পেটালো ছাত্রলীগ

Tuesday, January 21, 2014

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে টেন্ডার বাক্স ছিনতাই ও বরিশালে টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। লক্ষ্মীপুরে টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ৩ যুবলীগ নেতাকে বহিষ্কার ও কমিটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে। এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। ওদিকে রাত সোয়া নয়টায় বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভেতরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন আবদুল মজিদ নামে এক ঠিকাদার। দিনব্যাপী টেন্ডারবাজি নিয়ে উত্তেজনার পর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

লক্ষ্মীপুর/রায়পুর প্রতিনিধি জানান, রায়পুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২টি প্যাকেজে ৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার দরপত্রের টেন্ডার বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যান যুবলীগের নেতাকর্মীরা। পরে উপজেলা পরিষদের সামনে টেন্ডার বাক্সটি ভাঙচুর করে তারা। উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রায়পুর উপজেলায় পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ২ প্যাকেজে ৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজের দরপত্র বিক্রি হয়। বিক্রির শেষ দিন সোমবার পর্যন্ত এ কার্যালয় থেকে ৩৩টি শিডিউল বিক্রি হয়। গতকাল জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। সে অনুযায়ী সকাল থেকে দরপত্র জমা দিতে থাকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। দুপুর ১২টায় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাসেলের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ঢুকে টেন্ডার বাক্স ছিনিয়ে নেয়। পরে উপজেলা কার্যালয়ের সামনে টেন্ডার বাক্স ভাঙচুর করে জমা পড়া দরপত্রগুলো নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। রায়পুর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাসেল বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যুবলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই। যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। রায়পুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। রায়পুর থানার ওসি তদন্ত নাছিরুজ্জামান বলেন, রায়পুর উপজেলা পরিষদে টেন্ডার নিয়ে কি সমস্যা হয়েছে এমন একটি খবর শুনেছি। তবে কারা এটার সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে রায়পুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২টি প্যাকেজে ৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকার দরপত্রের টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে রায়পুর উপজেলা ও পৌর যুবলীগের কমিটি বাতিল করেছে জেলা যুবলীগ। জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সৈয়দ আহমদ ও সদস্য সচিব সালাউদ্দিন টিপু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। অপরদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রায়পুর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাসেল, যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফ হোসেন ও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সামছুল ইসলাম বাবুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, বরিশালে টেন্ডার বাগিয়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে জখম করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুর ২টার দিকে নগরীর জর্ডন রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার সোহেব আলম সেজান (৩০)-কে উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে সেজান এবং বিএম কলেজ ছাত্রলীগের মঈন তুষার গ্রুপের মধ্যে টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তুষার গ্রুপের নেতাকর্মীরা সেজানের ওপর চড়াও হয়। এতে সেজান গ্রুপ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তাদের ওপর হামলা চালায় তুষার গ্রুপের জুবায়ের আলম, নুর আল সাঈদী, ফয়সাল আহম্মেদ মুন্নাসহ ৭-৮ জন। এ সময় যুবলীগ নেতা সেজানকে পিটিয়ে জখম করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল ও ঝালকাঠিতে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য ১১টি গ্রুপের ৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর মধ্যে একটি গ্রুপের ৬১ লাখ টাকার কাজ নাহিদ এন্টারপ্রাইজের নামে বাগিয়ে নেয় তুষার গ্রুপ। এ নিয়ে তুষার এবং সেজান গ্রুপের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। হামলার শিকার সেজান জানান, টেন্ডারবাজিতে বাধা দেয়ায় তুষার তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়েছে। এ অভিযোগ অস্বীকার করে তুষার গ্রুপের নুর আল সাঈদী বলেন, বেলা ১২টার দিকে বিএম কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী সোহেল, রাজু ও রিমন সিএসের জন্য ৯৮ হাজার টাকা জমা দিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে সেজান তাদের বাধা দেয় এবং টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা সেজানকে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভেতরে ঠিকাদার আবদুল মজিদ (৩০)কে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। তিনি বগুড়া শহরের সুত্রাপুরের মুকুল হোসেনের ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রাত সোয়া ৯ টায়। এলাকাকাসী জানান, একটি টেন্ডারের ঘটনা নিয়ে দিনভর সেখানে উত্তেজনা চলছিল। রাত সোয়া ৯ টায় আবদুল মজিদ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভিতরে গেলে তাকে প্রতিপক্ষ উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির উদ্দিন খান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভেতরে তাকে ছুরিকাঘাত করলে  হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার মৃত্যু হয়।

ছাত্রলীগের রোষানলে শিক্ষকেরা by শরীফুল ইসলাম

Monday, August 8, 2011

য়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ধাওয়া ও হামলায় পাঁচজন শিক্ষকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর ও দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ছিনতাইয়ে জড়িত অভিযোগে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে পুলিশে সোপর্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষকদের ধাওয়া ও হামলা করেন। এদিকে রোববার রাতে প্রক্টরকে গালিগালাজ ও তাঁর বাসভবনের সামনে ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি গতকাল দুপুর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা-কর্মী আরিফুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন, সুমন চন্দ্র রায় ও শাকিল গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে যান। তাঁরা সেখানে আপত্তিকর অবস্থায় তিন জুটিকে দেখে জুটিগুলোর কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁরা তিনটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই পাঁচজন সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীচীর ধারে নদীর পাড়ে যান। সেখানে তাঁদের তিনজন থেকে যান এবং আরিফুল ও নূর মোহাম্মদ নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে বৈশাখী চত্বরের দিকে যান। ওই দুজনকে নিরাপত্তাকর্মীরা আটক করেন। খবর পেয়ে প্রক্টর আবু হাদী নুর আলী খান সেখানে গিয়ে ওই দুজনকে মারধর করেন এবং তাঁদের নিজ গাড়িতে করে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করেন।
প্রশাসন সূত্র জানায়, নূর মোহাম্মদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল ও আরিফুল ফজুলল হক হলের আবাসিক ছাত্র। প্রক্টর আবু হাদী অভিযোগ করেন, এ দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করার জের ধরে রোববার রাত ১০টার দিকে ছাত্রলীগের একাংশ তাঁর ক্যাম্পাসের ডি/৩ বাসার সামনে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ফুলের টব ভাঙচুর করে ও গেটে লাথি মারে।
শিক্ষকদের সূত্র জানায়, রাতের ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের গ্যালারিতে জরুরি সভা হয়। সভা শেষে বেলা একটার দিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং এর সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মৌন মিছিল বের হয়। ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড়ে ছাত্রলীগের একাংশের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের লক্ষ্য করে কটূক্তি করেন। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষক ধাওয়া করে চার শিক্ষার্থী নূরে আলম, আহসান হাবিব, রাসেল আহমেদ ও ওয়ালীউল্লাহকে ধরে ফেলেন। শিক্ষকেরা ওই চারজনকে টেনেহিঁচড়ে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যান এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
সূত্র জানায়, ওই চারজনকে আটক করা নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমন ও জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের বাগিবতণ্ডা হয়। তাঁরা ওই চারজনকে পুলিশে সোপর্দ না করার অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি শুরু হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে মারধর করা হয়। এ সময় প্রক্টর কার্যালয়, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়, টিএসসি, প্রশাসন ভবন, কৃষি অনুষদ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া একটি ছাত্রাবাস ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যবহূত কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগও করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষকেরা সেখান থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষকদের ধাওয়া করেন এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। ইটের আঘাতে পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস গুরুতর আহত হন। তিনি রাত নয়টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অচেতন অবস্থায় ছিলেন।
ছাত্রলীগের ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক, প্রক্টরসহ চার শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ছাত্র মিলিয়ে আরও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। হামলার ছবি তুলতে গেলে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতি জরুরি বৈঠক করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার তা ৎ ক্ষণিক ঘোষণা দেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষকেরা বিকেল চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে যান।
বিকেল চারটার দিকে উপাচার্য প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। তবে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে উপাচার্য বৈঠক করেননি।
এ সময় ছাত্রলীগ আটক চারজনের মুক্তির দাবিতে সহস্রাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্য ছাত্রলীগের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতা ও শিক্ষকদের সূত্র জানায়, বৈঠকে ছাত্রলীগ গতকাল আটক হওয়া চার কর্মীর মুক্তি এবং ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টরের পদত্যাগ, ছাত্রলীগের কর্মীদের আটকের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দাবি অনুযায়ী সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপাচার্যের নির্দেশে ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান কোতোয়ালি থানা থেকে ওই চারজনকে ছাড়িয়ে আনেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমন এ বিষয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগ এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। কোনো প্রকার তদন্ত কমিটি ছাড়া শিক্ষকদের ছাত্র প্রহার ও ধরপাকড়ের ঘটনা পুরোপুরি অন্যায়। কাজেই সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আমরা ওই ছাত্রদের মুক্তি দাবি করেছি। এ ঘটনায় আমরা প্রক্টরসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবার ও জড়িত শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবি করেছি।’
প্রক্টর আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তাঁর পদত্যাগ দাবির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘দুঃখের কথা আর কী বলব! ছাত্রদের হাতে আজকের আমার এই গণপিটুনির কথা কোনো দিন ভুলব না।’ তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. সামছুল আলম জানান, প্রক্টরের বাসায় হামলার প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে দুপুর থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক সমিতি। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আবার বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়া হবে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে উপাচার্য এম এ সাত্তার মণ্ডলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘রোববার ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল চার ছাত্রকে শিক্ষকেরা দুপুরে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, ইফতারের সময় শিক্ষকেরাই আবার তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত চার প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

আমি কসাইদের মতো জবাই করতে পারি

Tuesday, January 18, 2011

সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদ মজুমদার ও তার সহযোগীরা ১৩-১৪ জন শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছেন এবং তিনজনকে হল থেকে বের করে দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঢাবি ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শওকত ইসলাম তৃতীয় সেমিস্টারের ওই শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে বলেছেন, 'আমি কসাইদের মতো জবাই করতে পারি।

আমাকে যদি ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে, তার পরও তোদের জবাই করা কোনো ব্যাপার না। হল থেকে এখনই বের হয়ে যাবি। তোদের যেন ক্যাম্পাসে আর না দেখি।' ছাত্রলীগের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত ওই শিক্ষার্থীরা কালের কণ্ঠের প্রতিবেদকের কাছে গতকাল 'মধ্যরাতের' নির্যাতনের এ কথা জানান।
জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাত ২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের অতিথি কক্ষে শিক্ষার্থী নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা জানান, হলের অতিথি কক্ষে প্রতিরাতে ছাত্রলীগের সভা হয়। তারা জানান, সূর্য সেন হলের ২২৬ (ক) নম্বর কক্ষে একত্রে ২২ জন শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকেন। এ কক্ষ 'গণরুম' বলে পরিচিত। এ কক্ষের কেউ সেদিন অতিথি কক্ষে না যাওয়ায় হল ছাত্রলীগ সভাপতি তাঁদের ডেকে পাঠান। ওই কক্ষের ১৩-১৪ জন শিক্ষার্থী অতিথি কক্ষে এলে, দরজা বন্ধ করে তাঁদের সভায় না আসার কারণ জানতে চান সভাপতি সাইদ। শিক্ষার্থীরা তখন পরীক্ষার কথা জানালে সভাপতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে সভাপতিসহ ছাত্রলীগের অন্য নেতা-কর্মীরা তাঁদের মারধর করেন। নির্যাতিতরা সবাই তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে জানান, 'আমাদের কয়েকজনের পরীক্ষা থাকায় সেদিন গেস্ট রুমে যেতে পারিনি। আমরা একটা ভালো রুমের জন্য সভাপতির কাছে দাবি করেছিলাম। এ জন্য তারা আমাদের গালিগালাজ করেছে। পরে চেয়ারের পায়া দিয়ে, সোফায় মাথা ঠেকিয়ে, দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে মেরেছে।' তিনি আরো অভিযোগ করেন, 'এসব ঘটনা যাতে বাইরে প্রকাশ না হয়, সে জন্য নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছে।' এদিকে ঢাবি শাখার ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শওকত ইসলাম তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি এ ধরনের কথা বলিনি। একজন ছাত্র হিসেবে এ ধরনের কথা মানায় না। এখানে নিশ্চয় অন্য কোনো যোগসাজশ রয়েছে।' সূর্য সেন হল ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদ মজুমদার গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোনো প্রোগ্রামে তাদের পাওয়া যায় না। তাই গেস্ট রুমে ডেকে সামান্য চার্জ করেছি মাত্র।' কিন্তু এর আগে সকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'বড় ভাইদের সালাম দেয় না, সম্মান করে না, প্রোগ্রামে আসে না, তাদের মারব না তো কী করব?'
এ ব্যাপারে সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. খোন্দকার আশরাফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা আমি সাংবাদিকদের কাছ থেকেই শুনতেছি। আর কিছু জানি না।' প্রসংগত, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর শহীদুল্লাহ হলে প্রায় একই কারণে ৪৪ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ।

ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিক পেটানো ছাত্রলীগ ক্যাডারদের গ্রেপ্তার দাবি

Saturday, January 8, 2011

ঠাকুরগাঁওয়ে সংবাদ সংগ্রহ করার সময় কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক আলী আহসান হাবীবসহ দুই সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীরা। এ জন্য প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শহরের চৌরাস্তা মোড়ে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভা থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিকরা।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের হামলার প্রতিবাদে ওই সভা থেকেই কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। তিন দিন ধরে এ কর্মসূচি চলবে। আজ রবিবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতার হোসেন রাজার সভাপতিত্বে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান মিঠু, ডেইলি সানের সাংবাদিক সৈয়দ মেরাজুল হোসেন, ইত্তেফাকের আবদুল লতিফ, প্রথম আলোর মজিবর রহমান, ডেইলি স্টারের রুবায়েত, নয়া দিগন্তের গোলাম সারোয়ার সম্রাট, বৈশাখী টিভির ফজলে ইমাম বুলবুল, ডেসটিনির মাসুদ বিপ্লব, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এনামুল হক প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।
গত শুক্রবার সন্ধা সাড়ে ৬টায় শহরের কলেজপাড়ার বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী গোলাম সারোয়ার রঞ্জুর নির্বাচনী অফিসে হামলা করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা। এ সময় ছবি তোলায় ক্যাডাররা আহসান হাবীব এবং দিগন্ত টেলিভিশনের প্রতিনিধি হারুন অর রশিদকে বেধড়ক পেটায়।

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ১৫

Tuesday, January 4, 2011

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্খ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে মহাসড়কে দুই পক্ষ অবস্খান নেয়ায় দেড় ঘন্টা রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতাকর্মীরা পদ্মা এক্সপ্রেস নামে একটি বাস ভাংচুর করে। সড়কের উপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্খলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

রাবি ছাত্রলীগকর্মী অস্ত্রসহ পুঠিয়ায় গ্রেফতার

Saturday, January 1, 2011

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এক কর্মীকে পিস্তলসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে পুঠিয়া থানার বানেশ্বর বেলপুকুর এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্খাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়।
তার সাথে সেলিম রেজা নামে অন্য এক ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছে একটি পিস্তল এবং তিন রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে বলে পুঠিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শামীম হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসাদুজ্জামান ও সেলিম মটর সাইকেলে চড়ে রাজশাহী নগরী থেকে পুঠিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। বেলপুকুর এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে পবা থানা হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পুলিশ মটর সাইকেল থামিয়ে তল্লাশি করে। ওই সময় তাদের কাছে পিস্তল ও গুলি পাওয়া যায়।
আসাদুজ্জামান যশোরের অভয়নগর থানার পাইকড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে এবং সেলিম রাজশাহীর মতিহার থানার মাসকাটাদিঘী এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে।
দু’জনকে রাতেই পুঠিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান শামীম হোসেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু