Home » , , » ছাত্রলীগের রোষানলে শিক্ষকেরা by শরীফুল ইসলাম

ছাত্রলীগের রোষানলে শিক্ষকেরা by শরীফুল ইসলাম

Written By Unknown on Monday, August 8, 2011 | 1:20 PM

য়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ধাওয়া ও হামলায় পাঁচজন শিক্ষকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর ও দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ছিনতাইয়ে জড়িত অভিযোগে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে পুলিশে সোপর্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষকদের ধাওয়া ও হামলা করেন। এদিকে রোববার রাতে প্রক্টরকে গালিগালাজ ও তাঁর বাসভবনের সামনে ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি গতকাল দুপুর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা-কর্মী আরিফুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন, সুমন চন্দ্র রায় ও শাকিল গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে যান। তাঁরা সেখানে আপত্তিকর অবস্থায় তিন জুটিকে দেখে জুটিগুলোর কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁরা তিনটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই পাঁচজন সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীচীর ধারে নদীর পাড়ে যান। সেখানে তাঁদের তিনজন থেকে যান এবং আরিফুল ও নূর মোহাম্মদ নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে বৈশাখী চত্বরের দিকে যান। ওই দুজনকে নিরাপত্তাকর্মীরা আটক করেন। খবর পেয়ে প্রক্টর আবু হাদী নুর আলী খান সেখানে গিয়ে ওই দুজনকে মারধর করেন এবং তাঁদের নিজ গাড়িতে করে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করেন।
প্রশাসন সূত্র জানায়, নূর মোহাম্মদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল ও আরিফুল ফজুলল হক হলের আবাসিক ছাত্র। প্রক্টর আবু হাদী অভিযোগ করেন, এ দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করার জের ধরে রোববার রাত ১০টার দিকে ছাত্রলীগের একাংশ তাঁর ক্যাম্পাসের ডি/৩ বাসার সামনে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ফুলের টব ভাঙচুর করে ও গেটে লাথি মারে।
শিক্ষকদের সূত্র জানায়, রাতের ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের গ্যালারিতে জরুরি সভা হয়। সভা শেষে বেলা একটার দিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং এর সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মৌন মিছিল বের হয়। ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড়ে ছাত্রলীগের একাংশের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের লক্ষ্য করে কটূক্তি করেন। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষক ধাওয়া করে চার শিক্ষার্থী নূরে আলম, আহসান হাবিব, রাসেল আহমেদ ও ওয়ালীউল্লাহকে ধরে ফেলেন। শিক্ষকেরা ওই চারজনকে টেনেহিঁচড়ে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যান এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
সূত্র জানায়, ওই চারজনকে আটক করা নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমন ও জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের বাগিবতণ্ডা হয়। তাঁরা ওই চারজনকে পুলিশে সোপর্দ না করার অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি শুরু হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে মারধর করা হয়। এ সময় প্রক্টর কার্যালয়, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়, টিএসসি, প্রশাসন ভবন, কৃষি অনুষদ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া একটি ছাত্রাবাস ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যবহূত কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগও করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষকেরা সেখান থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষকদের ধাওয়া করেন এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। ইটের আঘাতে পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস গুরুতর আহত হন। তিনি রাত নয়টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অচেতন অবস্থায় ছিলেন।
ছাত্রলীগের ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক, প্রক্টরসহ চার শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ছাত্র মিলিয়ে আরও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। হামলার ছবি তুলতে গেলে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতি জরুরি বৈঠক করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার তা ৎ ক্ষণিক ঘোষণা দেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষকেরা বিকেল চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে যান।
বিকেল চারটার দিকে উপাচার্য প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। তবে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে উপাচার্য বৈঠক করেননি।
এ সময় ছাত্রলীগ আটক চারজনের মুক্তির দাবিতে সহস্রাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্য ছাত্রলীগের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতা ও শিক্ষকদের সূত্র জানায়, বৈঠকে ছাত্রলীগ গতকাল আটক হওয়া চার কর্মীর মুক্তি এবং ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টরের পদত্যাগ, ছাত্রলীগের কর্মীদের আটকের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দাবি অনুযায়ী সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপাচার্যের নির্দেশে ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান কোতোয়ালি থানা থেকে ওই চারজনকে ছাড়িয়ে আনেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমন এ বিষয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগ এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। কোনো প্রকার তদন্ত কমিটি ছাড়া শিক্ষকদের ছাত্র প্রহার ও ধরপাকড়ের ঘটনা পুরোপুরি অন্যায়। কাজেই সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আমরা ওই ছাত্রদের মুক্তি দাবি করেছি। এ ঘটনায় আমরা প্রক্টরসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবার ও জড়িত শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবি করেছি।’
প্রক্টর আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তাঁর পদত্যাগ দাবির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘দুঃখের কথা আর কী বলব! ছাত্রদের হাতে আজকের আমার এই গণপিটুনির কথা কোনো দিন ভুলব না।’ তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. সামছুল আলম জানান, প্রক্টরের বাসায় হামলার প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে দুপুর থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক সমিতি। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আবার বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়া হবে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে উপাচার্য এম এ সাত্তার মণ্ডলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘রোববার ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল চার ছাত্রকে শিক্ষকেরা দুপুরে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, ইফতারের সময় শিক্ষকেরাই আবার তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত চার প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু