Home » , , , , , » ধরাছোঁয়ার বাইরে ছাত্রলীগের সেই অস্ত্রধারীরা

ধরাছোঁয়ার বাইরে ছাত্রলীগের সেই অস্ত্রধারীরা

Written By Unknown on Tuesday, February 4, 2014 | 1:59 AM

প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেছিল তারা। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। কিন্তু ঘটনার এক দিন পেরুলেও তাদের কারও টিকি স্পর্শ করতে পারেনি পুলিশ। হয়নি কোন মামলাও।
উল্টো চার মামলার আসামি হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোন আলামতও দেখা যায়নি গতকাল পর্যন্ত। এদিকে হামলা ও সংঘর্ষের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় গতকাল সকালেই সব ক’টি হল ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থান করে। পরে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা হল থেকে বেরিয়ে আসে। এদিকে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর নামে মতিহার থানায় দু’টি মামলা করেছেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও দু’টি মামলা করে। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের বা কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে রোববারের ঘটনা তদন্তে ছাত্রলীগও একটি কমিটি গঠন করেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলার বিষয়ে মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন বলেন, মামলা দু’টির একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে বাধাদান, বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরটি বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। প্রথম মামলায় ৬০ জনকে নামসহ অজ্ঞাত দেড় শ’ এবং দ্বিতীয় মামলায় ৫০ জনের নামসহ অজ্ঞাত দেড় শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, থানার এসআই মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় দুটি পৃথক মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দু’টি একটি সরকারি কাজে বাধা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি বাদী হয়ে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আশরাফুল আলম ইমনসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে বলেও পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২রা অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মী প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করেছিল তাদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তাদের কেউ কেউ পুরস্কৃতও হয়েছে।

ওই সময় রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন (তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক), কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আখেরুজ্জামান তাকিম (তৎকালীন সহ-সভাপতি), রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তানিম (গণশিক্ষা সম্পাদক), রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিক রহমান আতিক (উপ-দফতর সম্পাদক), যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতু (উপ-পাঠাগার সম্পাদক) বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। পরে এরা সবাই ছাত্রলীগের কাণ্ডারি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২৮শে নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মীর হাতে পুলিশের সামনে অস্ত্রবাজি করতে দেখা গেছে। সে সময় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান, পলাশ, ফয়সাল আহমেদ রুনু, সাহানুর ইসলাম শাকিল, নাসিম আহমেদ সেতু, সুদীপ্ত সালামসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এসব ছবি বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রোববার বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্য কোর্স বন্ধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তাদের মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল হামলায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস স্ট্যান্ডের পেছন থেকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা একটি সাদা চাদর গলায় পেঁচিয়ে পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একই সময় তার বাম পাশে কালো শার্ট পরে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রানা চৌধুরীকে। ওই সশস্ত্র দলটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে এসে পিস্তল উঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে আমির আলী হল সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান ইমন। একই সময়ে ইমনের সামনেই কালো জ্যাকেট পরা সাদা পিস্তল হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ সেতুকে। সেতুর সামনে এগিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মমতাজ উদ্দীন কলা ভবন পর্যন্ত তাড়া করেন কালো চাদর পরা সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম। এ সময় তাকে এক হাতে পিস্তল ও অন্য হাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা গেছে। সাবেক কমিটির এই নেতা বিভিন্ন হামলা ও সংঘর্ষে অস্ত্রবাজিতে নিজের পারদর্শিতা প্রমাণে সফল হলেও দলে তিনি বঞ্চিত নেতা হিসেবে পরিচিত।
প্রশাসন ও ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খালিকুজ্জামানকে প্রধান করে গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক শামসুুল আলম সরকার, সিন্ডিকেট সদস্য এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন এবং কমিটির সদস্য সচিব হলেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন্তাজুল হক।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, শাহিনুর রশীদ জুয়েল, জিয়াউল হক, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক ও দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, ছাত্রলীগ অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর কোন হামলা করেনি। বরং শিবিরের ক্যাডাররাই ক্যাম্পাসে হামলা চালালে আমাদের নেতাকর্মী আহত হয়। নিজেদের বাঁচাতে আমরাও আক্রমণ করি।
ছাত্রলীগের কাছে অস্ত্র থাকার বিষয়ে সোজাভাবে না বলে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, প্রতিটি মানুষ যেখানে জীবনের নিরাপত্তা গ্রহণ করে ছাত্রলীগও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অনেক কিছুই করছে। অন্যদিকে, মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম সামসুর নূর বলেন, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতাদের আটক করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব দ্রুত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হবে বলেও জানান তিনি।
অস্ত্রধারীরা সন্ত্রাসী: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্র হাতে যারা মহড়া দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যার হাতে অস্ত্র থাকে, সে ছাত্র নয়, সন্ত্রাসী। তার কোন দল থাকতে পারে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কাজ চলছে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রদের ওপর হামলাকারী কারা, তাদের অস্ত্র কোথায় গেল, আন্দোলনে কার কি ভূমিকা ছিল- সব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন: বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিনস কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধ ও বর্ধিত ফি বাতিলে দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিল। এ নিয়ে গত রোববার ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা শিক্ষকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল এমনকি শিক্ষকদের বাসভবন, চেম্বার ও অফিসে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। শিক্ষক সমিতি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাব ও বাসভবনে হামলার ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা জানায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে একই দাবিতে শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন করে।
সাংবাদিকদের মানববন্ধন: অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। মানববন্ধনে বক্তারা সাংবাদিকদের উপর পুলিশি  হামলার নিন্দা জানান।
গ্রেপ্তার ১: মতিহার ওসি জানান, রোববার ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের অভিযোগে সোমবার ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সজীব আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ যাদের নাম পেয়েছে, তাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু