জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ বলেছেন, যে কোন মুহূর্তে গণ-অভ্যুত্থানে পড়তে পারে সরকার। আর সেই আগুনের বহ্নিশিখা সারা দেশে ছড়িতে পড়তে পারে।
তাসের ঘরের মতো ভেঙে যেতে পারে তাদের স্বপ্ন। তাই বিরোধী জোটের হতাশার কিছু নেই। আমরা শর্টকাট রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে যুক্ত হওয়ার একদিন আগে গতকাল দুপুরে গুলশানের নিজ বাসভবনে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ চলমান আন্দোলন নিয়ে তার আশার কথা জানিয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুনের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। চীন বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব ও সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানতে চেয়েছে। আমরা তা তুলে ধরেছি। কাজী জাফর বলেন, শনিবার দুপুরে আমাদের দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠক। বৈঠকে আমরা ১৮ দলীয় জোটে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবো। নির্বাহী কমিটিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে রাতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে ১৮ দলে যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। ১৮ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে এরশাদকে ত্যাগকারী এ নেতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমাদের মতাদর্শগত ঐক্য রয়েছে। আমরা উভয়ই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। এ সম্পর্ককে স্থায়ী রূপ দিতে চাই। কাজী জাফর আহমদ বলেন, ২৪শে জানুয়ারি গণ-অভ্যুত্থান দিবস। আইয়ুবের মার্শাল ল’ সরকার যখন বাংলাদেশের জনগণের ওপর তাদের বিজাতীয় শাসন ও শোষণ নিয়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল। ঠিক তখন; যখন কোথাও কোন আশার আলো দেখা যাচ্ছিল না। আজকের মতোই হতাশার অমানিশার ঘোর অন্ধকার রাজনীতিকে গ্রাস করে নিয়েছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের দলের কমরেড আসাদের ২০শে জানুয়ারি আত্মদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। এ স্ফুলিঙ্গ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। গণ-অভ্যুত্থানের লেলিহান শিখায় আইয়ুবের মসনদকে ছারখার করে দিয়েছিল। ২০শে জানুয়ারি আসাদ ও ২৪শে জানুয়ারি নবকুমার হাই স্কুলের ছাত্র মতিউর রহমানের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে চরম শিখরে পৌঁছেছিল আমাদের আন্দোলন। শহীদ মতিউরের আত্মদানের দিনকে আমরা গণ-অভ্যুত্থানের দিন হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম। তিনি বলেন, আজকেও মনে রাখতে হবে একদলীয় বাকশালী ও ফ্যাসিবাদী শাসনে জনজীবন- অতিষ্ঠ, চারদিকে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। ঠিক তেমনি আমাদের ’৬৮-৬৯ সালের কথা মনে রাখতে হবে। যে কোন স্থানে যে কোন সময় স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হলে সেখান থেকে গণ-অভ্যুত্থানের বহ্নিশিখা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা মনে রাখতে হবে। হতাশা নয়। গভীর আশাবাদ ও বলিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয়ের মাধ্যমে চলমান আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে অনেকেই আসতে চায়, আমরা শর্টকাট রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমাদের রাজনীতি শাশ্বত সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত যে একদিন এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টির সব নেতাকর্মীই আমাদের জাতীয় পার্টিকে প্রকৃত জাতীয় পার্টি মনে করবে। গত কয়েক মাস ধরে ১৮ দলের কর্মসূচিতে সমর্থন দিচ্ছেন কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশ।
বর্ধিত সভা: জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা আজ দুপুর ১২টায় বাড়ি নং-২, রোড নং-৬৮-এ, গুলশান ২-এ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রেসিডিয়াম সদস্য, উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সব সদস্য এবং জেলা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় সম্পর্কে নীতিনির্ধারণী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং একটি সাংগঠনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
0 comments:
Post a Comment