ব্রাজিলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে

Friday, January 14, 2011

ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরের কাছে পার্বত্য এলাকায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। দেশটিতে স্মরণকালের ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরও বহু লোক নিখোঁজ রয়েছে। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা আজ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন ।

উদ্ধারকারীরা উপদ্রুত এলাকায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ অভিযানে উদ্ধারকারীদের সঙ্গে নিখোঁজদের স্বজনেরাও যোগ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবিষ্যতে মৃত্যের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বন্যা ও ভূমিধসে রাস্তাঘাট ও সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় দুর্যোগ-কবলিত এলাকায় যোগাযোগ রক্ষা ও উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। কয়েকটি এলাকায় টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
১৯৬৭ সালের পর ব্রাজিলের মানুষ এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দেখেনি। ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা-কবলিত এলাকায় ৪২ কোটি ডলারের জরুরি ত্রাণ সাহায্য পাঠানো হয়েছে।
বন্যা ও ভূমিধসে রিও ডি জেনিরোর পার্শ্ববর্তী নোভা ফ্রিবুরগো, সেরানা, পেট্রোপোলিস ও তেরেসোপোলিস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নোভা ফ্রিবুরগো এলাকায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০১ জন, তেরেসোপোলিসে ১৭৫ জন এবং পেট্রোপোলিসে ৩৯ জন। বন্যাক্রান্ত অন্যান্য এলাকায় বাকি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনে আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বিবিসি ও আল-জাজিরা।

বিশ্বের কয়েকটি দেশে বন্যা ব্রাজিলে নিহত ৩৫৬, ফিলিপাইনে ৪২

Thursday, January 13, 2011

বিশ্বের কয়েকটি দেশে বন্যা এবং এতে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি প্রকট আকার নিয়েছে। ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৩৫৬ জন মারা গেছে। ফিলিপাইনে মারা গেছে ৪২ জন। গৃহহীন হয়েছে চার লাখ মানুষ। শ্রীলঙ্কায় মারা গেছে অন্তত ২১ জন। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখের বেশি। আর অস্ট্রেলিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

ব্রাজিল : কর্মকর্তারা জানান, রিও ডি জেনিরিও প্রদেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও ভূমিধস হয়েছে। টেরেসোপোলিস শহরে ভূমিধসে অন্তত ১৪৬ জন মারা গেছে। নোভো ফ্রিবার্গো শহরে মারা গেছে ১৫৫ জন। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন অগি্ননির্বাপণকর্মী। পেট্রপোলিস শহরে ৩৪ জন মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। টেরেসোপোলিসে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। টেরেসোপোলিসের পার্শ্ববর্তী নদীর পানি উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টেরেসোপোলিসের মেয়র জর্জ মারিও সেডল্যাসেক বলেন, 'এটা মহাবিপর্যয়, বড় দুর্যোগ।' ব্রাজিলের টেলিভিশনগুলোর ফুটেজে দেখা যায়, বন্যার পানির তোড়ে বাড়িঘর এবং রাস্তায় থাকা গাড়ি ভেসে যাচ্ছে।
টেরেসোপোলিসের বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা গতকাল জানান, তাঁরা ২৪ ঘণ্টায় ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন। এটি পুরো জানুয়ারির স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে অনেক বেশি। দুর্গত তিনটি শহরেই বিদুৎ ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা। টেরেসোপোলিসের এক ব্যক্তি বলেন, 'আমি এখানে ২৫ বছর ধরে বাস করছি। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হইনি।'
কর্মকর্তারা জানান, দুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আট শতাধিক উদ্ধারকর্মী দুর্গত এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রাজিলের সদ্য দায়িত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট দিউমা হুসেফের গতকাল দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা।
ফিলিপাইন : মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে ৪২ জন নিহত হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে চার লাখ মানুষ। দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের কর্মকর্তারা গতকাল জানান, অবকাঠামো ও শস্যের ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ ডলার অর্থের বেশি। বিভাগের প্রধান বেনিতো রামোস বলেন, 'ডিসেম্বরের শেষদিকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সে থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় চার লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান চাল ও অন্যান্য শস্য উৎপাদক অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেনারা হেলিকপ্টারে করে দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহ করছেন। নিহতদের অধিকাংশই বন্যার পানিতে ডুবে অথবা মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে।'
রামোস জানান, ৮০টি প্রদেশের অধিকাংশই টানা বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বেনিনো অ্যাকুইনো মধ্যাঞ্চলের বন্যাদুর্গত বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করবেন।
শ্রীলঙ্কা : মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে চলা বন্যায় অন্তত ২১ জন মারা গেছে। দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের (ডিএমসি) এক মুখপাত্র বলেন, 'গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বন্যায় ১০ লাখ ৬৬ হাজার মানুষ ঘরহারা হয়েছে। শুধু পূর্বাঞ্চলের বাত্তিকালোয়া জেলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। গৃহহীনদের জন্য ২২৫টি আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। এতে আড়াই লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বাকিদেরও আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা চলছে।'
অস্ট্রেলিয়া : আবহাওয়াবিদরা অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বাভাস দেওয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম শহর ব্রিসবেনে নতুন করে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরটিতে বন্যার পানি সর্বোচ্চ বিপৎসীমায় পেঁৗছে গেছে। কর্মকর্তারা জানান, ব্রিসবেন নদীর তীর উপচে গতকাল পর্যন্ত ৩৫টি শহরতলির ১২ হাজার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে এবং এক লাখ ১৮ হাজার ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ব্রিসবেনের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাগুলোয় এখন নৌকা চলছে। শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুড়ছেন হাজার হাজার মানুষ।
সূত্র : বিবিসি ও এএফপি।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু