উপনির্বাচন-দুই আসনে আজ অগ্নিপরীক্ষা

Wednesday, January 26, 2011

দেশজুড়ে পৌর নির্বাচন নিয়ে ভোট উৎসবের আমেজের মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় সংসদের দুটি আসনের উপনির্বাচন। হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের এ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুতে হবিগঞ্জের এবং ২২ নভেম্বর লুৎফুল হাই সাচ্চুর মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসন শূন্য হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে এ দুটি আসন রক্ষা করা মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মরিয়া চেষ্টা হচ্ছে নির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে এনে সরকারকে চাপের মুখে ঠেলে দেওয়া। পৌরসভা নির্বাচনে ভালো ফলাফলের উৎসাহ নিয়ে তারা উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।
হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। চার দলের প্রার্থী হলেন বিএনপির নেতা ও লন্ডন প্রবাসী শেখ সুজাত মিয়া। জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু। এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অ্যাডভোকেট মনমোহন দেবনাথ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মালেক চৌধুরী ও খেলাফত মজলিসের শাইখ আব্দুল কালাম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বিএনপির প্রার্থী হলেন ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। এ আসনের বাকি তিন প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মো. ইউনুস মিয়া ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নিয়াজুল করিম।
এদিকে উপনির্বাচনে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দুই নির্বাচনী এলাকায় গতকাল বুধবার দুই কম্পানি (১২৫ থেকে ১৩০ জন করে) বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পরও নির্বাচন কমিশন গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষীণ একটা প্রত্যাশা ধরে রেখেছিল। এ বিষয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, ‘বারবার সেনা চেয়েও নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হওয়ায় আমাদের ধারণা, সরকার এ নির্বাচনে নির্বিঘেœ কারচুপি করতে চাইছে।’ তবে কমিশনের পক্ষে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী না থাকলেও বিকল্প যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
গতকাল রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এএসপি (সদর সার্কেল) সঞ্জয় সরকার, সদর থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন ও বিজয়নগর থানার ওসি দুলাল মাহমুদকে যাঁর যাঁর নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নির্বাচন কমিশন অব্যাহতি দিয়েছে বলে জানা যায়।
নির্বাচন কমিশন ২৭ তারিখের এসব নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন এলাকার নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছে। নির্বাচনী এলাকা দুটির প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে মোট ৩৫ জন পর্যবেক্ষক কাজ করছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কমিশন সচিবালয়ে একজন উপসচিবের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ : একদিকে প্রেস্টিজ, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ
হবিগঞ্জের নির্বাচনকে শাসক দল আওয়ামী লীগ নিয়েছে প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দল এটিকে নিয়েছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে। আর প্রধান দুই শক্তির বাইরে জাতীয় পার্টি বিষয়টিকে নিয়েছে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরীক্ষা হিসেবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন এ আসনের ফলাফল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের জনপ্রিয়তা দেখতে নির্বাচন সামনে রেখে দুবার হবিগঞ্জ ঘুরে গেছেন।
বিগত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সিলেট অঞ্চলে দুর্গ গড়ে তুলেছিল। এর মধ্যে হবিগঞ্জের চার আসনের সব কটিতেই জয় সেই দুর্গকে করে তোলে আরো সুরক্ষিত। কিন্তু সাম্প্রতিক পৌর নির্বাচনের ফলাফলে সেই দুর্গে ফাটল ধরার ইঙ্গিত থাকায় উপনির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে সর্বাÍক চেষ্টাই চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড হামলার সেই নির্মম দিনে হচ্ছে আজকের এই নির্বাচন।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে প্রথম দিক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ার বিষয়টিকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন চার দল ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী। গতকাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ সারির নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ-পাল্টাঅভিযোগের তীর ছোড়াছুড়ি চলেছে। এ ছাড়া কালো টাকার বিতরণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে বলে ভোটারদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচন হবে নবীগঞ্জ ও বাহুবলের ১৭৫টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ৯২টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে। উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. এমরান মিয়া প্রস্তুতির বিষয়ে গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৭ সশস্ত্র সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া থাকবেন ৩৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও বাক্স পাঠানোর কাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনী এলাকায় এবার মোট ভোটার তিন লাখ এক হাজার ৪৪৭। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৬১৯, পুরুষ এক লাখ ৪৪ হাজার ৮২৮। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে কমিশনের লোকজন মাঠে তৎপর রয়েছেন। প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার আছেন দুই হাজার ৮২৩ জন।
এদিকে গতকাল রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকা ঘুরে সহিংসতার বড় কোনো আশঙ্কা দেখা যায়নি। ঘরে ঘরে গোপন বৈঠকে ভোট চাওয়াসহ বিভিন্ন কৌশলের কারণে প্রধান প্রার্থীদের কেউই নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে চা বাগান এলাকার প্রায় ১৮ হাজার ও সংখ্যালঘুদের প্রায় ৫০ হাজার ভোট এ নির্বাচনের হিসাবে বড় ভূমিকা রাখবে। কয়েক দিন আগেও চা বাগান এলাকার ভোটাররা নাখোশ ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ওপর। কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতায় সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। নবীগঞ্জবাসীর প্রধান দাবি, এলাকায় গ্যাস সরবরাহের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী ভোট টানার চেষ্টা করেছেন।
গতকাল মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করেন, ‘চার দলের মনোনীত বিএনপির শেখ সুজাত বিভিন্ন গ্রামে সমর্থকদের দিয়ে অর্থ বিতরণ করছেন। এ অর্থ নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করতে পারে।’ শেখ সুজাত বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এলাকায় এ অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’
হবিগঞ্জ-১ আসনটি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির জন্য অনুকূল হলেও চার দলের জন্য তা সব সময়ই ছিল প্রতিকূলে। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ তিনবার ও জাতীয় পার্টি একবার জয়লাভ করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত হ্যাটট্রিক বিজয়ী প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজী।
সংবাদ সম্মেলন : গতকাল বিকেল ৩টায় হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তিন রঙা ব্যানার ও পুলিশ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণায় অংশ নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তাদের আরো অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। এতে নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াছ আলী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মন্জু ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ হবিগঞ্জের দলীয় কার্যালয়ে গতকাল বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আনা আচরণবিধি ভঙ্গসহ অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করে। পাল্টা অভিযোগ করে বলা হয়, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপির ধনাঢ্য প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া বিগত নির্বাচনের মতো এবারও গ্রামে গ্রামে কালো টাকা ছড়াচ্ছেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ্ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির ও সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যত ভয় এজেন্টদের মনে!
বুধবার সারা দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর ছিল উৎসবমুখর। এখান থেকেই ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এখান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কেন্দ্রে যান।
আজকের নির্বাচন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার ২৩৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩৮ জন। মোট ১২৬টি ভোটকেন্দ্রের বুথসংখ্যা ৫৯১। ৬২টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও আনসারের নেতৃত্বে ২৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ত্রধারী ১০ জন পুলিশ ও পাঁচজন আনসার এবং ১২ জন লাঠিধারী আনসার। এ ছাড়া ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চারজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে দুই কম্পানি বিজিবি সদস্য এবং র‌্যাবের ১০টি মোবাইল টিম।
কাগজে-কলমে পাঁচ প্রার্থী থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া মনোনয়নপত্র দাখিল করেও পরে মহাজোট প্রার্থী মোকতাদির চৌধুরীর সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মহাজোট প্রার্থী মোকতাদির চৌধুরী ও চারদলীয় জোটের প্রার্থী খালেদ হোসেন মাহবুবের মধ্যে।
গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক আ. হান্নান কালের কণ্ঠকে জানান, লিখিতভাবে অফিসিয়াল নির্দেশ না এলেও জেলা সদর সার্কেল এসএসপি, সদর থানার ওসি ও বিজয়নগর থানার ওসিকে তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার মৌখিক নির্দেশ এসেছে। একই ধরনের কথা জানান রিটার্নিং অফিসার এম আনোয়ার হোসেন।
এদিকে গতকাল নির্বাচনের শেষবেলার প্রস্তুতি হিসেবে দরজা বন্ধ করে একেক এলাকার এজেন্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌলভীপাড়া এলাকায় সকাল থেকেই জেলা বিএনপির সভাপতি হারুন আল রশিদের বাড়ির দোতলায় চলে এ বৈঠক। এক গ্র“প বেরিয়ে যেতেই ডাক পড়ে আরেক গ্র“পের। কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কারো মুখ হাসি-খুশি, কারো অন্ধকার।
অন্ধকার মুখ নিয়ে বেরিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এজেন্ট বলেন, ‘দলের স্বার্থে প্রার্থীর এজেন্ট হইছি, কিন্তু আমরার নিরাপত্তার জন্য প্রার্থী কী করল, বুঝলাম না। মাইর খাইলেও কেন্দ্রে বইয়া থাকতে অইবÑএইডা কেমনে অয়?’
কেন্দ্রে তো পুলিশসহ প্রশাসনিক নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা থাকবেই, তার পরও দল বা প্রার্থীর কাছ থেকে কী আশা করছেনÑজানতে চাইলে বিএনপি প্রার্থীর ওই এজেন্ট ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘পুলিশ কি আমরার নিরাপত্তা দিব? দিব তো সরকারি দলের লোকজনরে!’
ভয় আছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টদের মধ্যেও। বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট বা কর্মীরা কিছু কিছু কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের এজেন্টদের ওপর চড়াও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগের প্রতিটি ভোটেই দেখেছি, অনেক কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট ও কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নিজেরা ব্যালটে সিল মেরেছে। এসব অভিজ্ঞতার কারণেই আমরা এবার আমাদের দৃষ্টিতে ২৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রশাসনকে অবহিত করেছি।’
বিএনপির এজেন্টদের ভয়ের কথা জানান জেলা বিএনপির সভাপতি হারুন আল রশিদ। সন্ধ্যায় তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যেকোনো সময় সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছি, আর এজেন্টদের মনে সাহস জোগানোর চেষ্টা করছি, যাতে তারা সব ধরনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান করতে পারে।’ বিএনপির প্রার্থীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও এজেন্টদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি সময় দিতে পারেননি।
এদিকে রাত ৯টায় বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন এলাকায় তাঁর কর্মী ও এজেন্টদের ভয়ভীতি ও মারধর করছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
আজকের ভোটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের ১২৬টি কেন্দ্রে ৫৯১টি বুথের প্রতিটিতে প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে একজন করে এজেন্ট থাকার কথা। সে অনুযায়ী চার প্রার্থীর পক্ষে এজেন্টসংখ্যা হবে দুই হাজার ৩৬৪ জন। তবে এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষের এজেন্টদের নিয়েই যত সংশয়, বিশেষ করে বিএনপির এজেন্টরা আশঙ্কা করছেন, কেন্দ্রে কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টরা তাঁদের ওপর যেকোনো সময় চড়াও হতে পারে। একই আশঙ্কা আওয়ামী লীগের এজেন্টদেরও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না। প্রিসাইডিং অফিসার বা এজেন্টদেরও ভয়-সংশয়ের কিছু নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সরাসরি পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকবেন।’ বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, এগুলো দেখা হচ্ছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ উপনির্বাচন-সতর্ক আওয়ামী লীগ

Saturday, January 22, 2011

দ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির কাছে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়ে জাতীয় সংসদের দুটি আসনে উপনির্বাচন সামনে রেখে অনেক সতর্ক আওয়ামী লীগ। এ উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে উপনির্বাচন হবে এ মাসেই।

পৌর নির্বাচনের ফলের পুনরাবৃত্তি এড়াতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ্ উদ্দিন সিরাজ সার্বক্ষণিক আছেন মাঠে।
হবিগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে মিছবাহ্ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি গ্রেনেড হামলায় খুন হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। সেই ২৭ জানুয়ারিই নির্বাচন হচ্ছে বলে নবিগঞ্জ ও বাহুবলের মানুষ কিবরিয়া হত্যার প্রতিশোধ নেবেন ব্যালটে।’
এদিকে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নিলেও মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে কাক্সিক্ষত সাড়া মেলেনি। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের এক বৈঠকে দুটি আসনে উপনির্বাচনে মহাজোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী সরে দাঁড়ালেও হবিগঞ্জে সমঝোতার ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনাই হয়নি দুই দলের মধ্যে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাচনে প্রার্থী প্রত্যাহার হলেও হবিগঞ্জে আমাদের প্রার্থী প্রত্যাহারের ব্যাপারটা বিবেচনায় আসেনি।’ তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ রংপুর থেকে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা চেয়েছেন শেখ হাসিনা
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের কৌশল ঠিক করতে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
গত বুধবার রাতে গণভবনেও তাঁরা উপনির্বাচন এবং সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী যেকোনো মূল্যে উপনির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের উপনির্বাচনে প্রচারে নামার নির্দেশ দেন। নির্বাচনী এলাকায় সরকারের দুই বছরের কর্মকাণ্ডের বিবরণ জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশনাও দেন তিনি।
এ ছাড়া বৈঠকে শেখ হাসিনাকে পৌর নির্বাচনের ফল, প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের হিসাব সম্পর্কে অবহিত করা হয়। বৈঠকে শেখ হাসিনা পৌরসভা নির্বাচনে কোন কোন কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও দলীয় এমপি দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন তাঁর জেলাভিত্তিক তালিকা চেয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীদের এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ চিহ্নিত করে তাঁকে জানানোর নির্দেশ দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাপার সঙ্গে সমঝোতা : আগামী ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ-১ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হবিগঞ্জ উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মুসফিক হোসেন চৌধুরী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কেন্দ্রীয় নেতা উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলা হলেও হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল মমিন বাবু প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলেও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনের মাঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। দুই আসনেই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া ও ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহমুদ শ্যামল।
আসন্ন দুই উপনির্বাচনে বিজয় অর্জনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেও হঠাৎ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সদ্যসমাপ্ত পৌর নির্বাচনে দলের পরাজয় নিয়ে শঙ্কায় আছে শাসক দলটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপনির্বাচনে জয়লাভের জন্য আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন প্রচারণায়।’ তবে দুই উপনির্বাচনে প্রশাসনিকভাবে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব নির্বাচনের ফল পক্ষে আনার জন্য, তবে জনগণের রায় যাই হোক তা মেনে নেবে দল।’
জানা গেছে, নির্বাচনে প্রচারের জন্য আজ কাজী জাফরুল্লাহ এবং মাহবুব-উল-আলম হানিফের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল যাবে হবিগঞ্জে। এরই মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং দলের অন্য কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের নেতারা দুই নির্বাচনী এলাকায় গেছেন।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু