Home » , » ভোজ্যতেলের দাম লইয়া বাণিজ্যমন্ত্রীর হতাশা অযৌক্তিক নহে

ভোজ্যতেলের দাম লইয়া বাণিজ্যমন্ত্রীর হতাশা অযৌক্তিক নহে

Written By Unknown on Thursday, December 2, 2010 | 4:03 AM

রকারের নানামুখী চেষ্টা সত্ত্বেও একদিনের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম লিটারপ্রতি ১৩ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাইয়াছে। এই প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্য যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করিয়াছে। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি খোলাখুলি বলিয়াছেন_ দেশটা মগের মুলস্নুক নয় যে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানো যাইবে। বাণিজ্যমন্ত্রীর মতে, যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই আকস্মিকভাবে ভোজ্যতেলের দাম যেইভাবে বৃদ্ধি করা হইয়াছে তাহা কোনো ব্যবসা নয়, স্রেফ মুনাফাখোরি। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, ভোজ্যতেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত ২৯ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশিস্নষ্ট ব্যবসায়ীদের সহিত এক জরুরি সভায় মিলিত হইয়াছিল।
সেই সভায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেন। সন্দেহ নাই যে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশেহারা জনগণ মন্ত্রীর এই মন্তব্যে কিছুটা হইলেও স্বস্তিবোধ করিবেন। তবে মন্ত্রীর এই বক্তব্যে হতাশার সুরও অস্পষ্ট নহে। এই হতাশা যে কিছুটা অসহায়তাজনিত তাহাও অনুধাবন করা কঠিন নয়। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রীর হয়তো সদিচ্ছা বা আন্তরিকতার অভাব নাই। কিন্তু বাস্তবতা হইল, কিছুতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাইতেছে না। রাখা কঠিনও বটে। কারণ বিষয়টি শুধু মন্ত্রীর একার ইচ্ছাধীন নহে।

অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ার কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির যুক্তি দেখাইয়াছেন। তবে তাহাদের এই যুক্তি যে যথার্থ নহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উত্থাপিত তথ্য-উপাত্তে তাহা স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম-প্রধান জানাইয়াছেন যে, গত তিন মাসের আমদানি-মূল্য বিশেস্নষণ করিয়া দেখা গিয়াছে বর্তমানে বাজারে যে-সয়াবিন তেল পাওয়া যাইতেছে তাহা কেনা হইয়াছে কেজি ৭০ টাকারও কমে। পরিশোধনসহ সব খরচ হিসাবে নিলে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ৮৩ টাকার কিছু বেশি। অথচ ক্রেতাদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো দাম আদায় করা হইতেছে। মন্ত্রীর সদুপদেশ কিংবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কতর্ৃক দাম নির্ধারণ করিয়া দেওয়ার পরও পরিস্থিতি পাল্টায় নাই। বরং ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়াই চলিয়াছে। আর ইহার জন্য যথারীতি একে অপরকে দায়ী করার চিরাচরিত প্রবণতাও অব্যাহত আছে।

বাজার বাজারের নিয়মেই চলিবে_ইহাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক বাজারে দরের উঠানামা এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে দামের কিছুটা হেরফের হইতেই পারে। এই ব্যাপারে কাহারও আপত্তি থাকিবার কথা নহে। কিন্তু ভোজ্যতেল লইয়া নিকট অতীতেও নানা কারসাজির অভিযোগ উঠিয়াছে। সেইসব অভিযোগ যে একেবারে ভিত্তিহীন ছিল না তাহাও সর্বজনবিদিত। গণতন্ত্রই বলি আর মুক্তবাজার অর্থনীতিই বলি_সবকিছুরই মূল ভিত্তি হইল আইনের শাসন। আর ইহার অবিচ্ছেদ্য অংশ হইল দায়িত্বশীলতা। আইনের শাসনের স্বার্থে সকলকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি মানিয়া চলিতে হয়। ব্যবসায়ীরাও ইহার ব্যতিক্রম নহেন। কিছুটা রূঢ় শোনাইলেও বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদেরকে গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অপরিহার্য সেই দায়িত্বশীলতার কথাই স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন মাত্র। কারণ ইহার ব্যত্যয় ঘটিলে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হয়, স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়া ওঠে_যাহা দীর্ঘকাল যাবৎ 'মগের মুলস্নুক' হিসাবে তুলনীয় হইয়া আসিতেছে। সেই অবস্থা নিশ্চয় কাহারও কাম্য নহে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু