Home » , , » মুদ্রণ শিল্পের আঁতুড়ঘর মিসর

মুদ্রণ শিল্পের আঁতুড়ঘর মিসর

Written By Unknown on Tuesday, January 18, 2011 | 1:46 AM

প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার আকুল আকুতি 'চিঠি দিও প্রতিদিন' অথবা 'চিঠি দিও, পত্র দিও, জানাইও ঠিকানা।' আক্ষেপ 'নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম বন্ধুর কাছে মনের কথা কেমনে পৌঁছাইতাম?' হ্যঁযা, মনের ভাব প্রকাশ করবার সহজাত আকাঙ্ক্ষা মানুষের জীবনের একেবারে গোড়ার দিকের কথা।
তখনও ভাষায় উন্মেষ ঘটেনি। ভাষাকে লেখ্য রূপদানে সাংকেতিক চিহ্ন তথা বর্ণমালার আকার দেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু পারস্পরিক মনের ভাব আদান-প্রদান তখনও থেমে থাকেনি। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া, নানান শব্দ ও আওয়াজের মাধ্যমে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করেছে। আনন্দ-বেদনা, ভয়-সংশয়, বিদ্বেষ-বিস্ময় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে প্রকাশভঙ্গি ছিল নিতান্তই ব্যক্তি পর্যায়ে। যা সার্বজনীন রূপ গেয়েছে আরো বহুকাল পরে। ঠিক কতদিন এমন চলেছে তার সঠিক হিসাব না থাকলেও ধারণা করা হয় অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশের সময়কাল বেশ কয়েক হাজার বছর তো হবেই। দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু প্রতীকী ভাষা। তাও চলে বেশ কিছুকাল। বিপত্তি দেখা দিল এ ভাষার ব্যবহারের বেলায়ও। কারণ ভাবপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা অগত্যা তৃতীয় ধারায় কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণের উপায় উদ্ভাবন। প্রতীকী ভাষার সীমাবদ্ধ এক্ষেত্রে অনেকাংশই কাটিয়ে ওঠা গেল। তৈরি হতে লাগলো নানা মাত্রার শব্দ। যার গাঁথুনিতে বাক্য এবং পরিশেষে খুব কাছে থেকে মনের ভাব প্রকাশ সহজ। কিন্তু দূরে অবস্থনরত কারো সঙ্গে ভাব প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় প্রতিদিনকার লব্ধ অভিজ্ঞতা তথা জীবনের নানা বাঁকের আনন্দ-বেদনা-বিরহের কথা ধরে রাখা। স্থান-কাল-পাত্রের গন্ডি পেরিয়ে বের হওয়া আরো দুরূহ। সে দুরূহ কাজই কথ্য ভাষাকে লেখ্য রূপদান।

শুরুটা পাহাড়ের গুহায়, গাছের কোঠরে কিংবা মাটির জমিনে। সময়কাল নিয়ে রয়েছে বিস্তর মতপার্থক্য। তবে আদিম মানুষের গুহাচিত্র, ছবি অাঁকার কোশেশ, বিভিন্ন অাঁকিবুকি প্রধানত কয়লা, পাথর, গাছের পাতার নির্যাস দিয়েই হতো। অধিকাংশ গবেষক একে লিখন পদ্ধতির সূচনাপর্ব বলে উলেস্নখ করেছেন। তাদের ধারণা, কালের পরিক্রমায় আজ যে সার্বজনীন লিখন পদ্ধতি লিপিকলা অনুসরণ করা হচ্ছে, তার অাঁতুড়ঘর প্রাচীন গ্রীস। এ প্রশ্নে ভিন্নমতও রয়েছে। ভিন্নমতাবলম্বীরা বলেন, গ্রীসে লিপিকৌশল সূত্রপাত হলেও প্রাচীন মিসরীয়রাই লেখার আধুনিক পদ্ধতির সূচনা করে। সময়কাল গুহাচিত্র লিখনের প্রায় তিন হাজার বছর পর। শেষোক্ত দলের অভিমত, প্রাথমিক পর্যায়ে মিসরীয়দের আবিষ্কৃত লিখন পদ্ধতিতে ব্যবহূত হতো বেশকিছু চিহ্ন বা প্রতীক। থাকে বলা হতো 'হিয়োরো গিস্নফিকস্ বা পবিত্র লিখন'। গোড়ার দিকে এ ধরনের লিখন পদ্ধতি ব্যবহূত হতো তাঁবু, মন্দির ও স্মারকস্তম্ভে। কালক্রমে তা অন্যান্য ক্ষেত্রে স্থান করে নেয়। বিভিন্ন ভাষায়, লেখ্য ভাবপ্রকাশে সাংকেতিক চিহ্ন বা বর্ণমালার আবির্ভাব তার পথ ধরেই। কাগজ ও কালির অাঁচড়ে বর্ণমালায় নিয়মভিত্তিক উপস্থাপন আধুনিক লিখন পদ্ধতি। যার ওপর ভর করে শিল্প-সাহিত্য এবং সংস্কৃতির নানা বাহন তরতর করে এগিয়ে চলছে কালের স্রোতে। মলাটবদ্ধ পুস্তকের সেতু বেয়ে ক্যানভাসের দীঘল প্রান্ত ছুঁয়ে যে সভ্যতা আজকের সোপানে পেঁৗছেছে তার মূলে লিখন পদ্ধতি। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এ পদ্ধতির নানা শাখার একটি পত্র সাহিত্য। চিঠি বা পত্র মনের ভাব প্রকাশের তথা অক্ষরের ভাষার কথা বলার অন্যতম উপায়। ডাক পিয়নের আবিভাবেরও আগে মানুষ অক্ষরের ভাষায় পরস্পরের সঙ্গে ভাবে আদান-প্রদান করেছে। টেলিফোন আবিষ্কারের আগে, বলতে গেলে সেটাই ছিল একমাত্র ভরসা। আজ আধুনিক প্রযুক্তিতে লেখ্য রূপে মনের ভাব প্রকাশে না লাগে ডাক-পিয়ন, না লাগে কাগজ-কালি। সেলফোনের বাটন চেপে না বলা কথার মালা গেঁথে ইথারের মাধ্যমে 'এসএমএস' তরঙ্গ চিঠি পাঠানো কঠিন কাজ নয়। কলমের প্রয়োজনীয়তা আজ আর তেমন প্রবল নয়। অথচ আদিম মানুষের সম্বল ছিলো গুহার দেয়াল, গাছের পাতা, ডালপালা কিংবা সহজলভ্য এমন কোন বস্তু। হয়তো সেদিন আর বেশি দূরে নয়, কালি-কলম এবং বাটন চেপে লেখাও ইতিহাসে পরিণত হবে। কিন্তু স্বীকার করতেই হবে, এসবের হাতেঘড়ি আদিম মানুষের হাতেই। মুদ্রণ শিল্পের আজকের চরম উৎকর্ষের মূলে গ্রীক বা মিসরীয়দের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাদের দেখানো পথেই হেঁটে চলছে আধুনিক মুদ্রণ শিল্প।

জাকিরুল ইসলাম

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু