Home » , , » কারাগারের কবিতা

কারাগারের কবিতা

Written By Unknown on Friday, February 11, 2011 | 3:04 AM

বিদের যদি স্তব্ধ করে দেওয়া যায় লাখ লাখ মানুষ স্তব্ধ হয়ে যাবে, লাখ লাখ মানুষ হারাবে কণ্ঠস্বর। জেল-জুলুমেও স্তব্ধ করা যায়নি এমন চারজন কবির কারাগারে রচিত কবিতা অনুবাদ করেছেন আন্দালিব রাশদী

নাজিম হিকমেত
আমন্ত্রণ


দূর এশিয়া থেকে লাফিয়ে এসে
ঘোটকীর মাথার মতো বেরিয়ে এসেছে
ভূমধ্যসাগরের দিকে—সে আমাদের দেশ।

কবজি রক্তস্নাত, দাঁত কপাটিলাগা, খালি পা
এ মাটি রেশমের কার্পেটের মতো ছড়িয়ে আছে
এই নরকই স্বর্গ আমাদের।

ধনিকতন্ত্রের দরজাগুলো বন্ধ করে দাও, আর খুলতে দিয়ো না
মানুষের কাছে, মানুষের দাসত্ব নিশ্চিহ্ন করে দাও
এই আমন্ত্রণটি আমাদের।

বৃক্ষের মতো এককভাবে বাঁচতে, স্বাধীনভাবে
জঙ্গলের গাছের মতো ভ্রাতৃভাব নিয়ে
এই প্রত্যাশাটি আমাদের।

[নাজিম হিকমেত তুরস্কের কবি, অত্যাচার ও দারিদ্র্যের কবি, গ্রেপ্তার ও নির্বাসনের কবি। বছরের পর বছর অন্তরীণ ছিলেন। নির্বাসিত অবস্থায় ১৯৬৩ সালে মস্কোতে মৃতুবরণ করেন।]

সামিহ আল-কাসিম
কারা-কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা শেষ


আমার ছোট্ট কারা-প্রকোষ্ঠের সরু জানালা দিয়ে
আমি গাছ দেখি—আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে
আর ছাদের ওপর আমার পরিবারের লোকজনের ভিড়
জানালাগুলো আমার জন্য কাঁদছে, প্রার্থনা করছে
আমার ছোট্ট কারা-প্রকোষ্ঠের সরু জানালা দিয়ে
আমি তোমার বড় কারা-প্রকোষ্ঠ দেখতে পাচ্ছি।

[সামিহ আল-কাসিম ১৯৫০ দশকের ফিলিস্তিনি ‘প্রতিরোধের কবি’। বহুবার জেল খেটেছেন।]

হাবিব জালিব
প্রতিরোধের অধিকার


যে বাতি কেবল প্রাসাদেই জ্বলে
হাতেগোনা পছন্দের কজনের সেবায়
যে আলো কেবল তাদের লাভটুকু রক্ষা করে
এমন একটা নিয়ম, আলোহীন ভোর
আমি কবুল করতে অস্বীকার করি, আমি জানতে চাই না।
সিংহাসনে যারা আছে, আমি তাদের দেখে সন্ত্রস্ত নই
আমিও বিজয়ী, শহীদ, শত্রুদের বলে এসো
কারাদেয়ালের ভেতর আমাকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করছ কেন?

এমন নিপীড়ন, হূদয়ের অন্ধকারের মতো
আমি অস্বীকার করি, আমি জানতে চাই না
শাখায় শাখায় ফুল ফুটছে, তুমি তাই বলছ
সুরাপায়ীর পাত্র উপচে পড়ছে, তুমি তাই বলছ
বুকের ক্ষতগুলো নিজেরাই সারা যাচ্ছে, তুমি তা-ই বলছ
এসব খোলা মুখ মিথ্যে, আত্মার এই অপমান
আমি কবুল করতে অস্বীকার করি, আমি জানতে চাই না।

শতকের পর শতক আমাদের শান্তি হরণ করছ
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আমাদের আর বোকা বানাবে না
যেন তুমি ওসব ক্ষতের আরোগ্যকারীর ভান করছ?
তুমি আরোগ্যকারী নও, যদি কেউ তোমাকে মানে মানুক
আমি কবুল করতে অস্বীকার করি, আমি জানতে চাই না।

[পাকিস্তানি বিপ্লবী কবি হাবিব জালিবের জীবন কেটেছে কারাগারে আশ্রয়হীন অবস্থায় খোলা রাস্তায়। ১৯৮৮ সালে তিনি কারামুক্ত হন। ১৯৯৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন, সরকার শেষকৃত্যে সহায়তা করতে এগিয়ে আসলেও কিন্তু তার পরিবার থেকে সরকারি সাহায্য প্রত্যাখ্যান করা হয়।]

ফাজিল আল-আজ্জাবি
আমার অবসর সময়ে


আমার দীর্ঘ বিরক্তিকর অবসর সময়
আমি পৃথিবী বৃত্ত নিয়ে খেলতে বসে যাই
পুলিশ কিংবা দলবল ছাড়া আমি রাষ্ট্র গড়ি
যা কিছু মানুষের ভালো লাগে না, আমি ভেঙে ফেলি
শূন্য মরুভূমির ভেতর দিয়ে আমি গর্জে ওঠা নদী বইয়ে দিই
আমি মহাদেশ ও মহাসাগর সৃষ্টি করি
যদি দরকার হয়, ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখি
আমি জাতিসমূহের নতুন মানচিত্র তৈরি করি।

হাঙরভরা প্রশান্ত মহাসাগরে জার্মানিকে গড়িয়ে দিই
দরিদ্র শরণার্থীরা জলদস্যুর জাহাজ পৌঁছে যাক উপকূলে, কুয়াশায়
বাভারিয়ার প্রতিশ্রুত বাগানের স্বপ্ন দেখতে দেখতে
আমি আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডকে জায়গা অদল-বদল করে দিই
যাতে মহামাননীয়া রানির সৌজন্যে তরুণেরা হাসিস ফুঁকতে পারে
কুয়েতকে বেড়া ও মাইনপোঁতা সীমান্ত থেকে উঠিয়ে
চন্দ্রগ্রহণের দ্বীপ কমোরোতে পাচার করি
অবশ্যই তেলক্ষেত্রগুলো অক্ষত রাখি
একই সময় প্রচণ্ড ড্রামবাদ্য বাদনের মাঝখানে তেহরানকে
পাঠিয়ে দিই তাহিতি দ্বীপপুঞ্জে।
সৌদি আরবকে তার মরুভূমিতে গুটিসুটি মেরে থাকতে দিই
সেখানে অসংকর উটের বিশুদ্ধতা রক্ষা করুক
আর আমি আমেরিকাকে সমর্পণ করি ইন্ডিয়ানদের কাছে
ইতিহাসকে কেবল দিতে
এত দিনের না পাওয়া ন্যায়বিচার
আমি জানি, পৃথিবীটা বদলানো সহজ কাজ নয়
তবুও কাজটা করা যে খুব জরুরি।

[ফাজিল আল-আজ্জাবি তুর্কি কবি, জন্ম ১৯৪০ সালে, জীবন কেটেছে কারাগারে ও নির্বাসনে। তাঁর কবিতায় একটি কাল্পনিক ভূগোলক স্পষ্ট। ইউরোপ তাঁর কাছে সাম্রাজ্যবাদী অমানবিক মহাদেশ।]

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু