Home » , , , , , » জীবন দিয়ে জ্বালা মেটালো রানা প্লাজায় আহত সালমা

জীবন দিয়ে জ্বালা মেটালো রানা প্লাজায় আহত সালমা

Written By Unknown on Friday, January 24, 2014 | 10:30 PM

জীবন দিয়ে জ্বালা মেটালো রানা প্লাজায় আহত গার্মেন্ট শ্রমিক সালমা। দীর্ঘ নয় মাস দেহের যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়েছেন তিনি। একদিকে অর্থাভাব অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যয় মেটানো ছিল তার জন্য দুঃসাধ্য।
তারপরও বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। এজন্য নিয়েছিলেন অন্য একটি গার্মেন্টে চাকরিও। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কিছু দিন কাজও করেছেন। নয় মাস আগে এক ভোরে সাভারের রানা প্লাজায় স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন সালমা। সেদিন দেয়ার কথা ছিল বেতন। সে স্বপ্ন মিইয়ে যায় রানা প্লাজার কংক্রিটের সঙ্গে। গত বছরের ২৪শে এপ্রিল ভয়াবহ সেই ধসের সময় অন্যদের মতো তিনিও আটকা পড়েছিলেন ভেতরে। তিন দিন পর উদ্ধার করা হয় তাকে। মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পেয়েছিলেন মারাত্মক আঘাত। এনাম মেডিকেল, সিআরপিসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাও করানো হয়েছে তাকে। তারপরও পুরোপুরি সুস্থ হননি সালমা। স্বামী বাবুকে নিয়ে উঠেন তুরাগ থানাধীন বামনারটেক ফজলু মিয়ার টিনশেড এক বাড়িতে। বাসের হেলপার স্বামী বাবুর আয়ও নিতান্ত হাতেগোনা। তার ওপর অসুস্থ সালমার চিকিৎসা। যেন এক মস্ত বোঝা বাবুর ওপর। ইতিমধ্যে সরকার থেকে পাওয়া অর্থও শেষ করেছে তার চিকিৎসায়। কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। বাবু জানায়, যখন শরীরের ব্যথা আঁকড়ে ধরতো সালমা তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতো। অসহ্য হয়ে মাথা ঠুকতো দেয়ালে। শেষ ক’দিনও মৃত্যুকে ডেকেছে সে। আত্মহত্যা করেই জীবন জ্বালা মিটিয়েছে সে। ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে  সালমা। গতকাল সকালে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত সালমার স্বামী বাবুর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তিনি নিজে গাড়িচালকের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তার স্ত্রী সালমা কাজ করতো রানা প্লাজার সপ্তম তলার একটি গার্মেন্টে। ধসের পর থেকে তার মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু অর্থাভাবে ভালভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। চলতি মাসের প্রথম দিন তারা সাভার থেকে বাসা পরিবর্তন করে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন বামনারটেক এলাকায় আসেন। স্থানীয় ফজলুর রহমানের টিনশেড বাড়ির ছোট দুটি কক্ষ ভাড়া নেন। বৃহস্পতিবার রাতেও স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছেন। রাত ১২টার দিকে দু’জনে একসঙ্গে ঘুমাতে যান। ভোরে স্বামী ঘুম থেকে উঠে দেখেন স্ত্রী সালমা তার পাশে নেই। কক্ষের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। এ সময় তিনি প্রতিবেশীদের ডাক দিলে প্রতিবেশী ইউনুস বাইরের ঘরের দরজা খুলতে গেলে সেটি ভেতর থেকে আটকানো দেখতে পান। পরে জানালা দিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসেন সালমার স্বামী বাবু। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় তুরাগ থানার পুলিশ। সকাল দশটার দিকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

সরজমিন ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের বিছানার পাশের একটি বাটিতে বেশ কয়েক ধরনের ওষুধপত্র পড়ে আছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধগুলো খেতে হতো সালমাকে। নিহত সালমার ভাই শফিক ও তার স্ত্রী ঘরের জিনিসপত্রগুলি নিয়ে যাওয়ার জন্য গোছাচ্ছিলেন। ভাই শফিক জানান, রানা প্লাজা ধসে আহত হওয়ার পর তার বোন সরকারি ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার কাছ থেকে মোট এক লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়েছিল। কিন্তু পুরো টাকাই সালমার চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়ে যায়। নিরূপায় হয়ে তুরাগের একটি কোরিয়ান গার্মেন্টে নতুন কাজও নেয়। কিন্তু মাথার যন্ত্রণার কারণে নিয়মিত কাজ করতে পারতো না।
প্রতিবেশী ইউনুস জানান, রানা প্লাজায় আহত হওয়ার পর থেকে সালমা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। দুই-তিন দিন পরপরই মাথা ব্যথায় সে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়ত। একই সঙ্গে দেয়ালে মাথা আছড়িয়ে যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা করতো। তাদের কোন পারিবারিক কলহ ছিল না।
এদিকে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রাথমিক তদন্তে ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, নিহত সালমা রানা প্লাজার গার্মেন্টে চাকরি করত। রানাপ্লাজা ধসের কারণে তার মাথায় ও শরীরে আঘাত পায়। এতে তার শারীরিক যন্ত্রণা হতো। যার প্রেক্ষিতে সালমা একটু অস্বাভাবিক ছিল। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে যে কোন সময়ে সে নিজের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। তুরাগ থানার এসআই কামাল হোসেন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সালমা মাথায় আঘাত পেয়েছিল বলে তার স্বামী জানিয়েছে। এতে তার মাথায় যন্ত্রণা হতো। ওই যন্ত্রণার কারণেই সে আত্মহত্যা করে। সালমার স্বামী বাবুকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ফজলুর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক হালিমা নামে এক নারী  মামলার বাদী হয়েছেন। সালমার আত্মহত্যার কারণ ও অন্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, নিহত সালমার এটি দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে প্রথম ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে। ওই ছেলে চট্টগ্রামে একটি মাদরাসায় পড়াশুনা করছে। দুই বছর আগে বাবুর সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। এই ঘরে তাদের কোন সন্তান নেই। তার বাবার নাম ফটিক জোয়ার্দ্দার। মা নুরজাহান বেগম। তাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা থানাধীন বসুরা পশ্চিম পাড়ায়। এ ছাড়া তার স্বামী বাবুর গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সদর থানার চর সরিষাবাড়িতে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু