হাজার বছর ধরে তারা বিখ্যাত। কোটি মানুষের মনে তারা ঠাঁই পেয়েছেন। নির্মাণ করেছেন নতুন ইতিহাস। যার যার অবস্থানে থেকে তারা পৃথিবীর মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন। ঝড় তুলেছেন প্রেমিক মনে।
সে আবেদন যুগের পর যুগ টিকে আছে। এর মধ্য দিয়ে তারা লাভ করেছেন অমরত্ব। তাদের কেউ রাজনীতিক, কেউ গোয়েন্দা, সেক্স সিম্বল, কেউ বা সাংস্কৃতিক আইকন। এমন সাত আবেদনময়ীকে বাছাই করেছে হাফিংটন পোস্ট। তাতে বলা হয়েছে ওই সাত আবেদনময়ী হলেন ক্লিওপেট্রা, ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট, ভায়োলেট গর্ডন-উডহাউজ, মাতাহারি, ওয়ালিস সিম্পসন, আনাইস নিন ও মেরিলিন মনরো।
ক্লিওপেট্রা: এক সময় জুলিয়াস সিজার ও মার্ক অ্যান্থনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সম্রাট। তাদের মনকে জয় করেছিলেন ক্লিওপেট্রা। জুলিয়াস সিজারের সঙ্গে তিনি যেভাবে সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন তার জন্য ক্লিওপেট্রাকে বেশি স্মরণ করা হয়। জুলিয়াস সিজারের ব্যক্তিগত চেম্বারে তিনি গোপনে ঢুকেছিলেন একটি কার্পেটের ভিতর নিজেকে লুকিয়ে। তারপর সেই কার্পেট থেকে সিজারের সামনে নিজের অবগুণ্ঠন খুলে দেন। তাদের জানাশোনা হয়।
মেরিলিন মনরো: বিশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় আবেদনময়ী মেরিলিন মনরো। তিনি মার্কিন তারকা অভিনেত্রী। তার রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা রাজনীতিকও। তার রূপের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। তাদের প্রেমকাহিনী নিয়ে সারা বিশ্ব তোলপাড় হয়েছে। বলা হয়, প্রেমের ক্ষেত্রে এটি সর্বাধিক আলোচিত কাহিনী। ১৯৬২ সালে কেনেডির জন্মদিনে ‘হ্যাপি বার্থডে’ গানটি শুনিয়ে কেবল কণ্ঠের জাদুতেই তাকে জয় করে নিয়েছিলেন মনরো। সংক্ষিপ্ত সময়ের হলেও কিংবদন্তি এই তারকা অভিনেত্রী ও কেনেডির প্রেম ছিল অত্যন্ত গাঢ়। অ্যাথলে থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, লেখক, বিজ্ঞাপননির্মাতাসহ নানা গুণী ব্যক্তিকেই বশ করেছিলেন তীব্র যৌন আবেদনময়ী মনরো। সেই সময়েই খোলামেলা পোশাক থেকে শুরু করে নানা ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে সব সময়ই আলোচনায় ছিলেন এবং অকপট যৌনতার প্রতীক হিসেবে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি।
ক্যাথারিন দ্য গ্রেট: রাশিয়ার শাসন ক্ষমতায় এসেছিলেন এমন নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও আবেদনময়ী হিসেবে পরিচিত রুশ সম্রাজ্ঞী ‘ক্যাথরিন দ্য গ্রেট’। জীবনের নানা পর্যায়ে বহু পুরুষের সঙ্গে তার প্রণয়-কাহিনী বিখ্যাত হয়ে আছে। ক্যাথারিন খুবই আবেগী ও প্রচণ্ড রোমান্টিক ছিলেন। এই সম্রাজ্ঞী ঠিক ততদিনই কোন পুরুষকে সঙ্গ দান করতেন, যতদিন তারা তাকে তৃপ্ত করতে পারতো। তার বিরাগভাজন হয়ে পড়লেই ওই প্রেমিককে বিতাড়িত করতেন। অবশ্য প্রণয়ের পুরস্কার হিসেবে ভূ-সম্পত্তি বা পদবি দিয়ে সম্মানেই বিদায় করা হতো ওই পুরুষদের।
ভায়োলেট গর্ডন-উডহাউস: আভিজাত্য ও সৌন্দর্যে পরিপাটি ভায়োলেট গর্ডন-উডহাউজ। তিনি ইংরেজ নারী। পিয়ানোর মতো বাদ্যযন্ত্র ‘হার্পসিকর্ড’ বাজাতেন তিনি। ভারতীয় পুরাণের পঞ্চপাণ্ডবের কাহিনীর মতো না হলেও ভায়োলেট তার চার স্বামীকে নিয়ে এক সংসার গড়েছিলেন তার কেবল একজন স্বামীই আইনত বৈধ হলেও একই ছাদের তলায় চার পুরুষকেই সুখী রাখতে পেরেছিলেন ভায়োলেট। কেবল একবারই নাকি ক্রিকেট খেলা নিয়ে ওই পঞ্চ নর-নারীর মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল!
মাতা হারি: মাতাহারি উন্মাতাল ডাচ্ নর্তকী। নাচের মধ্যে পুরুষকে শিকার করার মতো একটি প্রবণতা থাকায় ১৯০০-এর দশকের শুরুতে তিনি প্যারিসকে যেন মাত করে দেন। এ জন্য তার ওপর নজর পড়ে অনেক পুরুষের। ফলে তারা তাকে রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহার করে। এভাবে অনেক পুরুষের কাছে তিনি ব্যবহৃত হয়েছেন। এসব পুরুষের সফরসঙ্গী হয়ে ঘুরেছেন সারা ইউরোপে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি তার দৈহিক গোপন আকর্ষণকে কাজে লাগান। শুরু করেন গুপ্তচরবৃত্তি। তার কোড নাম ছিল এইচ-২১। কিন্তু জার্মানি ও ফ্রান্স উভয় পক্ষের কাজ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের হাতে তিনি ধরা পড়েন। তাকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
ওয়ালিস সিম্পসন: যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত সমাজের সুন্দরী ওয়ালিস সিম্পসন পর পর তিন পুরুষকে বিয়ে করেন। এক রাজাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে এনেছিলেন। ১৯৩০ সালের দিকে যখন ইংল্যান্ডের যুবরাজ অষ্টম এডওয়ার্ডের সঙ্গে তার দেখা হয়, ততদিনেই নিজের দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন করেছিলেন সিম্পসন। দুই বছরের মাথায় তাদের প্রেম তুঙ্গে ওঠে। ১৯৩৬ সালের জানুয়ারিতে এই যুবরাজ সিংহাসনে আসীন হন। কিন্তু তা কেবল ছেড়ে আসার জন্যই। রাজা হয়ে দু’বার তালাক নেয়া এক আমেরিকান নারীকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। নিজেকে সিম্পসনের প্রেমে সমর্পণ করে ওই বছরই ভাই যুবরাজ ষষ্ঠ জর্জের কাছে সিংহাসন ছেড়ে দেন তিনি। উইন্ডসরের ডিউক ও ডাচ্েস হিসেবে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছিলেন তারা।
আনাইস নিন: স্প্যানিশ-কিউবান পিতা আর ফরাসি-ডেনিশ মায়ের সন্তান আনাইস নিন জন্মেছিলেন প্যারিসে। আটলান্টিকের ওপারে পাড়ি জমিয়ে একজন আমেরিকান লেখিকা হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন এই সুন্দরী। বিখ্যাত লেখক হেনরি মিলারের সঙ্গে বোহেমিয়ান জীবনের অনেকটা সময় প্যারিসে কাটিয়েছেন তিনি। হাগ গুইলার ও রুপার্ট পোল নামে দুই পুরুষকে বিয়েও করেছিলেন আনাইস নিন। কিন্তু বোহেমিয়ান ও বহুগামী জীবনে অভ্যস্ত আনাইস দুই স্বামীর কারও ঘরেই বেশি দিন স্থির থাকতে পারেন নি। নিজের প্রেমিককুলকে নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘুরে ফিরে লুকোচুরি খেলতে হয়েছে তাকে।
0 comments:
Post a Comment