কিছু কিছু মানুষ আছেন, সব সময় সিরিয়াস। তাঁরা হাস্যরস নিতে পারেন না। হাস্যকৌতুককে তাঁরা অগ্রহণীয় বলে মনে করেন।
এ ধরনের এক মানুষের কথা পড়েছিলাম একটা রুশ কৌতুক ম্যাগাজিনে।
অফিসের বস তিনি। তাঁর অফিসের একজন কর্মচারী বলল, ‘এই, আমি একটা কৌতুক বলব।’
সবাই বলল, ‘বলো বলো।’
কর্মচারীটি কৌতুক বলতে শুরু করল: ‘এক লোক একটা পার্টিতে ঢুকেছে। তার দু পায়ে বেড়ি করে ব্যান্ডেজ বাঁধা। সে ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না। সবাই বলল, তোমার পায়ে কী হয়েছে? লোকটা বলল, আমার পায়ে নয়, মাথায় হয়েছিল। আমার মাথা ফেটে গিয়েছিল। মাথা ফেটে গেছে? তাহলে তুমি পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধেছ কেন? আরে, আমি পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধেছি নাকি? ডাক্তারের কাছে গেছি। ডাক্তার আমার মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছেন। এত ঢিলা করে ব্যান্ডেজটা বেঁধে দিয়েছেন যে গড়াতে গড়াতে পায়ে এসে পড়েছে।’
এই কৌতুক শুনে অফিসের সবাই হেসে উঠল। শুধু বস হাসতে পারলেন না। তাঁর মনে হতে লাগল, এটা কি সম্ভব?
মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা হলে সেটা কি পা পর্যন্ত নেমে যেতে পারে?
রাতের বেলায় তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। তিনি তাঁর বউকে ঘুম থেকে জাগালেন। বললেন, ‘আচ্ছা বলো তো, একটা লোকের মাথা ফেটে গেছে বলে ডাক্তার তার মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছেন। সেই ব্যান্ডেজটা কি পা পর্যন্ত নেমে যেতে পারে?’
রুশ কৌতুক ম্যাগাজিনটিতে বলা হয়েছে, এই বস আর কেউ নন, তিনি নিজেই একটা কৌতুক ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
কৌতুককে কৌতুক হিসেবে নিতে পারতে হবে। কৌতুকে যুক্তি খোঁজা উচিত নয়।
ধরা যাক এই কৌতুকটা: সিংহের বিয়ে হবে, ভেড়া খুব লাফাচ্ছে। সিংহের বিয়ে, দাওয়াতে যেতে হবে। একজন বলল, ‘সিংহের বিয়ে তো তুই ভেড়া লাফাচ্ছিস কেন?’ ভেড়া বলল, ‘আরে, বিয়ের আগে আমিও তো সিংহ ছিলাম, বিয়ের পরে না ভেড়া হয়ে গেছি!’
এই কৌতুক শুনে যদি কেউ বলে, যাহ্, একটা সিংহ কীভাবে ভেড়া হয়ে যাবে? এটা সম্ভবই না, তাহলে কিন্তু চলবে না।
কিন্তু অনেক পাঠকই আছেন খুব সিরিয়াস। মিলান কুন্ডেরার একটা উপন্যাস আছে—ফেয়ারওয়েল পার্টি। ওই উপন্যাসে মিলান কুন্ডেরা একজন ডাক্তারের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। তাঁর নাম ডাক্তার স্ক্রেটা। ডাক্তার স্ক্রেটা বন্ধ্যা নারীদের চিকিৎসা করেন। তিনি নিজের স্পার্ম বন্ধ্যা নারীদের ইনজেক্ট করে দেন। তাদের অনেকেই সন্তান লাভ করে। উপন্যাসের একটা জায়গায় বর্ণনা আছে, ডাক্তার স্ক্রেটা পথ দিয়ে যাচ্ছেন, বাচ্চারা মাঠে খেলছে, তিনি তাকিয়ে দেখছেন, কয়টা বাচ্চা দেখতে তাঁর মতো হয়েছে।
মিলান কুন্ডেরা বলছেন, তিনি এই চরিত্র ও ঘটনা লিখেছেন একেবারেই হালকা চালে। কৌতুক করার জন্য। কিন্তু ব্যাপারটা কৌতুক রইল না। একদিন মেডিসিনের এক অধ্যাপক তাঁর কাছে এসে হাজির। অধ্যাপক বললেন, ‘আমি আপনার লেখার খুব সিরিয়াস পাঠক। আপনার প্রতিটা লাইন আমার মুখস্থ। আমি একটা সেমিনারের আয়োজন করছি। এটার বিষয় হলো “বন্ধ্যত্ব ও স্পার্ম ডোনেশন”। আপনার উপন্যাস ফেয়ারওয়েল পার্টিতে এই ব্যাপারটা আছে। এটা অত্যন্ত সিরিয়াস একটা বিষয়। এভাবে একটা কঠিন সমস্যার সমাধান হতে পারে। আপনি অবশ্যই আমার সেমিনারে আসবেন। আপনি বক্তব্য দেবেন।’
কুন্ডেরা বললেন, ‘আমার উপন্যাসকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। আমি এটা নিতান্তই কৌতুক করার জন্য লিখেছি।’
অধ্যাপক পরম বিস্ময়ে কুন্ডেরার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনার উপন্যাসকে আমরা সিরিয়াসলি নেব না? আপনি নিজে লেখক হয়ে এ কথা বলতে পারলেন? আপনার লেখাকে আমরা সিরিয়াসলি নেব না?’
কুন্ডেরা বললেন, ‘ভাই, লেখকদের সব কথা সিরিয়াসলি নেবেন না। আরেকটা কথা, ফিকশন লেখকেরা কিন্তু খুব বানিয়ে গল্প করে। গল্প লেখকদের জন্য উপদেশ প্রচলিত আছে, ডোন্ট রুইন ইয়োর স্টোরিজ উইথ ফ্যাক্টস। সত্য ঘটনা বলে তোমার গল্প নষ্ট কোরো না।’
ফেসবুকে একটা চমৎকার কৌতুক পেয়েছি। এটা যে কৌতুক, তা আগেই বলে রাখলাম। একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ উপস্থাপক টেলিভিশনের ক্যামেরায় একজন ছাগলচাষির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন।
উপস্থাপক: আপনি আপনার ছাগলকে কী খাওয়ান?
ছাগলচাষি: কোনটারে? কালোটা না সাদাটা?
উপস্থাপক: কালোটারে...
ছাগলচাষি: ঘাস।
উপস্থাপক: আর সাদাটারে?
ছাগলচাষি: ওইটারেও ঘাস খাওয়াই।
উপস্থাপক: ও আচ্ছা। আপনে ওইগুলানরে রাতে কই রাখেন?
ছাগলচাষি: কোনটারে? কালোটা না সাদাটা?
উপস্থাপক: কালোটারে?
ছাগলচাষি: ওইটারে বাইরের ঘরে বাইন্দা রাখি।
উপস্থাপক: আর সাদাটারে?
ছাগলচাষি: ওইটারেও বাইরের ঘরে বাইন্দা রাখি।
উপস্থাপক: আপনি ওগুলানরে কী দিয়া গোসল করান?
ছাগলচাষি: কোনটারে? কালোটা না সাদাটা?
উপস্থাপক: কালোটারে?
ছাগলচাষি: পানি দিয়া গোসল করাই।
উপস্থাপক: আর সাদাটারে?
ছাগলচাষি: ওইটারেও পানি দিয়া গোসল করাই।
উপস্থাপক: সবকিছু দুইটার বেলায় একই রকম করলে তুই বারবার কালোটারে সাদাটারে জিগাস কেন?
ছাগলচাষি: কারণ, কালো ছাগলটা আমার।
উপস্থাপক: আর সাদা ছাগলটা?
ছাগলচাষি: ওইটাও আমার।
আমার গল্প শেষ। এই গল্প পড়ে আমি হা হা করে হেসেছি। কিন্তু একজন-দুজনকে বলতে গেছি। শুনে তাঁরা হাসলেন না। জানি না, কেন হাসলেন না। হয়তো আমি কৌতুক বলতে পারি না বা সবাই হিউমার নিতে জানে না।
এখন কি ভয়ে ভয়ে একটা কথা বলতে পারি? আসলে এ দল, বি দল দুইটা একই রকম। দুইটাই আমাদেরই দেশের দল। তবু দুইটার কথা আলাদা আলাদাভাবেই বলতে হয়। এক নিঃশ্বাসে আমরা বলতে পারি না।
এর অনেক কারণ আছে। একটা নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে গাটছড়া বাঁধা।
এই প্রশ্নটার একটা সমাধান যদি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির ৮০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়।
আমি যদি এ রকম হালকা গল্প দিয়ে লেখা শেষ করি, আপনারা বলবেন, হালকা লেখক। শুক্রবারটাই মাটি। এবার একটা সিরিয়াস গল্প। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের লেখা গল্প আমি ছোট করে বলি:
একজন ডিগ্রিহীন ডেনটিস্ট সকালবেলা তাঁর চেম্বার খুলে যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করছেন। এ সময় ফোন বাজল, ডেনটিস্টের ছেলে ফোন ধরল। তারপর এসে ডেনটিস্টকে বলল, ‘বাবা, মেয়র ফোন করেছেন, তিনি জানতে চান তুমি কি চেম্বারে আছ?’
ডেনটিস্ট বললেন, ‘নাই। বলে দাও, নাই।’
ছেলেটা গেল এবং ফিরে এসে বলল, ‘মেয়র জিগ্যেস করছেন, তিনি কি এখন আসতে পারেন?’
‘বলে দাও, আমি নাই।’
‘তিনি তোমার সব কথা ফোনে শুনতে পাচ্ছেন।’
‘গিয়ে বলো, দেখা হবে না।’
একটু পরে ছেলে এসে বলল, ‘বাবা, উনি বলেছেন, তুমি যদি তাঁকে না দেখ, তিনি তোমাকে গুলি করে মারবেন।’
এবার ডেনটিস্ট তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘তাঁকে আসতে বলো।’
মেয়র এলেন। ডেনটিস্টের চেয়ারে চিৎ হয়ে শুলেন। হা করলেন। ডেনটিস্ট দেখলেন, একটা আক্কেল দাঁতের অবস্থা খারাপ। বললেন, ‘দাঁতটা তুলে ফেলতে হবে।’
মেয়র বললেন, ‘তুলে ফেলুন।’
ডেনটিস্ট বললেন, ‘কিন্তু কোনো অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা যাবে না।’
‘কেন?’
‘কারণ, ওখানে পুঁজ হয়ে গেছে। রাজি?’
‘হ্যাঁ। তুলে ফেলুন।’
এবার ডেনটিস্ট মেয়রের পা বাঁধলেন। হাত বাঁধলেন। বললেন, ‘হা করুন।’ সাঁড়াশিটা হাতে নিয়ে বললেন, ‘আপনি আমাদের কুড়িজনকে হত্যা করেছেন গুলি করে। এবার তার মূল্য আপনাকে দিতে হবে।’ তিনি দাঁতটা টেনে তুলে ফেললেন।
মেয়রের চোখে পানি চলে এসেছে। ডেনটিস্ট তাঁকে একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বললেন, ‘চোখের পানি মুছে ফেলুন।’
যাওয়ার সময় মেয়র বললেন, ‘বিলটা পাঠিয়ে দেবেন।’
‘বিল কার নামে পাঠাব? আপনার ব্যক্তিগত নামে, না সিটি করপোরেশনের নামে?’
মেয়র বললেন, ‘দুইটা তো একই।’
আনিসুল হক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।
অফিসের বস তিনি। তাঁর অফিসের একজন কর্মচারী বলল, ‘এই, আমি একটা কৌতুক বলব।’
সবাই বলল, ‘বলো বলো।’
কর্মচারীটি কৌতুক বলতে শুরু করল: ‘এক লোক একটা পার্টিতে ঢুকেছে। তার দু পায়ে বেড়ি করে ব্যান্ডেজ বাঁধা। সে ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না। সবাই বলল, তোমার পায়ে কী হয়েছে? লোকটা বলল, আমার পায়ে নয়, মাথায় হয়েছিল। আমার মাথা ফেটে গিয়েছিল। মাথা ফেটে গেছে? তাহলে তুমি পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধেছ কেন? আরে, আমি পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধেছি নাকি? ডাক্তারের কাছে গেছি। ডাক্তার আমার মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছেন। এত ঢিলা করে ব্যান্ডেজটা বেঁধে দিয়েছেন যে গড়াতে গড়াতে পায়ে এসে পড়েছে।’
এই কৌতুক শুনে অফিসের সবাই হেসে উঠল। শুধু বস হাসতে পারলেন না। তাঁর মনে হতে লাগল, এটা কি সম্ভব?
মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা হলে সেটা কি পা পর্যন্ত নেমে যেতে পারে?
রাতের বেলায় তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। তিনি তাঁর বউকে ঘুম থেকে জাগালেন। বললেন, ‘আচ্ছা বলো তো, একটা লোকের মাথা ফেটে গেছে বলে ডাক্তার তার মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছেন। সেই ব্যান্ডেজটা কি পা পর্যন্ত নেমে যেতে পারে?’
রুশ কৌতুক ম্যাগাজিনটিতে বলা হয়েছে, এই বস আর কেউ নন, তিনি নিজেই একটা কৌতুক ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
কৌতুককে কৌতুক হিসেবে নিতে পারতে হবে। কৌতুকে যুক্তি খোঁজা উচিত নয়।
ধরা যাক এই কৌতুকটা: সিংহের বিয়ে হবে, ভেড়া খুব লাফাচ্ছে। সিংহের বিয়ে, দাওয়াতে যেতে হবে। একজন বলল, ‘সিংহের বিয়ে তো তুই ভেড়া লাফাচ্ছিস কেন?’ ভেড়া বলল, ‘আরে, বিয়ের আগে আমিও তো সিংহ ছিলাম, বিয়ের পরে না ভেড়া হয়ে গেছি!’
এই কৌতুক শুনে যদি কেউ বলে, যাহ্, একটা সিংহ কীভাবে ভেড়া হয়ে যাবে? এটা সম্ভবই না, তাহলে কিন্তু চলবে না।
কিন্তু অনেক পাঠকই আছেন খুব সিরিয়াস। মিলান কুন্ডেরার একটা উপন্যাস আছে—ফেয়ারওয়েল পার্টি। ওই উপন্যাসে মিলান কুন্ডেরা একজন ডাক্তারের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। তাঁর নাম ডাক্তার স্ক্রেটা। ডাক্তার স্ক্রেটা বন্ধ্যা নারীদের চিকিৎসা করেন। তিনি নিজের স্পার্ম বন্ধ্যা নারীদের ইনজেক্ট করে দেন। তাদের অনেকেই সন্তান লাভ করে। উপন্যাসের একটা জায়গায় বর্ণনা আছে, ডাক্তার স্ক্রেটা পথ দিয়ে যাচ্ছেন, বাচ্চারা মাঠে খেলছে, তিনি তাকিয়ে দেখছেন, কয়টা বাচ্চা দেখতে তাঁর মতো হয়েছে।
মিলান কুন্ডেরা বলছেন, তিনি এই চরিত্র ও ঘটনা লিখেছেন একেবারেই হালকা চালে। কৌতুক করার জন্য। কিন্তু ব্যাপারটা কৌতুক রইল না। একদিন মেডিসিনের এক অধ্যাপক তাঁর কাছে এসে হাজির। অধ্যাপক বললেন, ‘আমি আপনার লেখার খুব সিরিয়াস পাঠক। আপনার প্রতিটা লাইন আমার মুখস্থ। আমি একটা সেমিনারের আয়োজন করছি। এটার বিষয় হলো “বন্ধ্যত্ব ও স্পার্ম ডোনেশন”। আপনার উপন্যাস ফেয়ারওয়েল পার্টিতে এই ব্যাপারটা আছে। এটা অত্যন্ত সিরিয়াস একটা বিষয়। এভাবে একটা কঠিন সমস্যার সমাধান হতে পারে। আপনি অবশ্যই আমার সেমিনারে আসবেন। আপনি বক্তব্য দেবেন।’
কুন্ডেরা বললেন, ‘আমার উপন্যাসকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। আমি এটা নিতান্তই কৌতুক করার জন্য লিখেছি।’
অধ্যাপক পরম বিস্ময়ে কুন্ডেরার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনার উপন্যাসকে আমরা সিরিয়াসলি নেব না? আপনি নিজে লেখক হয়ে এ কথা বলতে পারলেন? আপনার লেখাকে আমরা সিরিয়াসলি নেব না?’
কুন্ডেরা বললেন, ‘ভাই, লেখকদের সব কথা সিরিয়াসলি নেবেন না। আরেকটা কথা, ফিকশন লেখকেরা কিন্তু খুব বানিয়ে গল্প করে। গল্প লেখকদের জন্য উপদেশ প্রচলিত আছে, ডোন্ট রুইন ইয়োর স্টোরিজ উইথ ফ্যাক্টস। সত্য ঘটনা বলে তোমার গল্প নষ্ট কোরো না।’
ফেসবুকে একটা চমৎকার কৌতুক পেয়েছি। এটা যে কৌতুক, তা আগেই বলে রাখলাম। একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ উপস্থাপক টেলিভিশনের ক্যামেরায় একজন ছাগলচাষির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন।
উপস্থাপক: আপনি আপনার ছাগলকে কী খাওয়ান?
ছাগলচাষি: কোনটারে? কালোটা না সাদাটা?
উপস্থাপক: কালোটারে...
ছাগলচাষি: ঘাস।
উপস্থাপক: আর সাদাটারে?
ছাগলচাষি: ওইটারেও ঘাস খাওয়াই।
উপস্থাপক: ও আচ্ছা। আপনে ওইগুলানরে রাতে কই রাখেন?
ছাগলচাষি: কোনটারে? কালোটা না সাদাটা?
উপস্থাপক: কালোটারে?
ছাগলচাষি: ওইটারে বাইরের ঘরে বাইন্দা রাখি।
উপস্থাপক: আর সাদাটারে?
ছাগলচাষি: ওইটারেও বাইরের ঘরে বাইন্দা রাখি।
উপস্থাপক: আপনি ওগুলানরে কী দিয়া গোসল করান?
ছাগলচাষি: কোনটারে? কালোটা না সাদাটা?
উপস্থাপক: কালোটারে?
ছাগলচাষি: পানি দিয়া গোসল করাই।
উপস্থাপক: আর সাদাটারে?
ছাগলচাষি: ওইটারেও পানি দিয়া গোসল করাই।
উপস্থাপক: সবকিছু দুইটার বেলায় একই রকম করলে তুই বারবার কালোটারে সাদাটারে জিগাস কেন?
ছাগলচাষি: কারণ, কালো ছাগলটা আমার।
উপস্থাপক: আর সাদা ছাগলটা?
ছাগলচাষি: ওইটাও আমার।
আমার গল্প শেষ। এই গল্প পড়ে আমি হা হা করে হেসেছি। কিন্তু একজন-দুজনকে বলতে গেছি। শুনে তাঁরা হাসলেন না। জানি না, কেন হাসলেন না। হয়তো আমি কৌতুক বলতে পারি না বা সবাই হিউমার নিতে জানে না।
এখন কি ভয়ে ভয়ে একটা কথা বলতে পারি? আসলে এ দল, বি দল দুইটা একই রকম। দুইটাই আমাদেরই দেশের দল। তবু দুইটার কথা আলাদা আলাদাভাবেই বলতে হয়। এক নিঃশ্বাসে আমরা বলতে পারি না।
এর অনেক কারণ আছে। একটা নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে গাটছড়া বাঁধা।
এই প্রশ্নটার একটা সমাধান যদি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির ৮০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়।
আমি যদি এ রকম হালকা গল্প দিয়ে লেখা শেষ করি, আপনারা বলবেন, হালকা লেখক। শুক্রবারটাই মাটি। এবার একটা সিরিয়াস গল্প। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের লেখা গল্প আমি ছোট করে বলি:
একজন ডিগ্রিহীন ডেনটিস্ট সকালবেলা তাঁর চেম্বার খুলে যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করছেন। এ সময় ফোন বাজল, ডেনটিস্টের ছেলে ফোন ধরল। তারপর এসে ডেনটিস্টকে বলল, ‘বাবা, মেয়র ফোন করেছেন, তিনি জানতে চান তুমি কি চেম্বারে আছ?’
ডেনটিস্ট বললেন, ‘নাই। বলে দাও, নাই।’
ছেলেটা গেল এবং ফিরে এসে বলল, ‘মেয়র জিগ্যেস করছেন, তিনি কি এখন আসতে পারেন?’
‘বলে দাও, আমি নাই।’
‘তিনি তোমার সব কথা ফোনে শুনতে পাচ্ছেন।’
‘গিয়ে বলো, দেখা হবে না।’
একটু পরে ছেলে এসে বলল, ‘বাবা, উনি বলেছেন, তুমি যদি তাঁকে না দেখ, তিনি তোমাকে গুলি করে মারবেন।’
এবার ডেনটিস্ট তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘তাঁকে আসতে বলো।’
মেয়র এলেন। ডেনটিস্টের চেয়ারে চিৎ হয়ে শুলেন। হা করলেন। ডেনটিস্ট দেখলেন, একটা আক্কেল দাঁতের অবস্থা খারাপ। বললেন, ‘দাঁতটা তুলে ফেলতে হবে।’
মেয়র বললেন, ‘তুলে ফেলুন।’
ডেনটিস্ট বললেন, ‘কিন্তু কোনো অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা যাবে না।’
‘কেন?’
‘কারণ, ওখানে পুঁজ হয়ে গেছে। রাজি?’
‘হ্যাঁ। তুলে ফেলুন।’
এবার ডেনটিস্ট মেয়রের পা বাঁধলেন। হাত বাঁধলেন। বললেন, ‘হা করুন।’ সাঁড়াশিটা হাতে নিয়ে বললেন, ‘আপনি আমাদের কুড়িজনকে হত্যা করেছেন গুলি করে। এবার তার মূল্য আপনাকে দিতে হবে।’ তিনি দাঁতটা টেনে তুলে ফেললেন।
মেয়রের চোখে পানি চলে এসেছে। ডেনটিস্ট তাঁকে একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বললেন, ‘চোখের পানি মুছে ফেলুন।’
যাওয়ার সময় মেয়র বললেন, ‘বিলটা পাঠিয়ে দেবেন।’
‘বিল কার নামে পাঠাব? আপনার ব্যক্তিগত নামে, না সিটি করপোরেশনের নামে?’
মেয়র বললেন, ‘দুইটা তো একই।’
আনিসুল হক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।
0 comments:
Post a Comment