সফলদের স্বপ্নগাথা- দশে দশ: মার্ক জাকারবার্গ

Tuesday, February 11, 2014

ফেসবুকের পথচলা এক অবিস্মরণীয় গল্প, যার অংশ হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। এত মানুষের জীবন ছুঁয়ে যেতে পারাটা এক বিরল সৌভাগ্যের বিষয়।
তাই আমি নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিই—প্রতিটি দিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে, সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে হবে।

অনেকে আমাকে প্রশ্ন করে, ফেসবুকের আজকের অবস্থান আমি কখনো ভাবতে পেরেছিলাম কি না। অসম্ভব! মনে পড়ে ফেসবুকের যাত্রা শুরুর কিছুদিন পর এক রাতে কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে পিৎজা খাচ্ছিলাম। খেতে খেতে আমি তাদের বলছিলাম, আমি আমাদের কলেজের অল্প কিছু মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করছি। তবে দেখে নিয়ো, একদিন কেউ না কেউ সারা পৃথিবীর মানুষকে একসুতোয় গাঁথবে।
মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, খুব সহজে তাদের জীবনের টুকরা গল্পগুলো শেয়ার করতে পারবে, নিজেদের মতো করে তাদের সামাজিক সম্পর্কগুলো সাজিয়ে নিতে পারবে—এসব আমার সব সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো। আজ ১০ বছর পর যখন পেছনে ফিরে তাকাই, নিজেকে প্রশ্ন করি—ঠিক কী জন্য আমাদের হাতেই ফেসবুকের সূচনা হয়েছিল? আমরা তখন ছিলাম সাধারণ শিক্ষার্থী, বড় কোম্পানিগুলোর তুলনায় আমাদের হাতে সম্পদ বলতে একদম কিছুই ছিল না। তারা যদি এই ধারণা নিয়ে কাজ করত, তবে হয়তো তারাই ফেসবুক বানিয়ে ফেলত।
এই প্রশ্নের কেবল একটি সম্ভাব্য উত্তরই আমার জানা আছে, আমরা পুরো ব্যাপারটাকে অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম। যখন অন্যরা বুঝে উঠতে পারছিল না যে পৃথিবীর সবাইকে সংযুক্ত করার আদৌ কোনো দরকার আছে কি না, ততক্ষণে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। যখন তারা সন্দেহ করছিল এমন একটি ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারবে কি না, তখন আমরা এটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সব রকম বন্দোবস্ত করে ফেলছিলাম। পৃথিবীকে একসুতোয় গাঁথার প্রচেষ্টা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল। আজ ১০ বছর পরও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তাই আগামী ১০ বছর নিয়ে আমি আরও বেশি আশাবাদী। এখন আমরা বিশ্বজুড়ে মানুষকে আরও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারব। আজ পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে। আগামী এক দশকে আমাদের দায়িত্ব হবে বাকিদেরও এই সুবিধার আওতায় আনা।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মূলত জীবনের টুকরা মুহূর্তগুলো ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে। আগামী দশকে মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর আর জটিল সব সমস্যার সমাধানেও সহায়তা করবে এই মাধ্যমগুলো। আজ আমরা হাতে গোনা কিছু উপায়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে শেয়ার করি। আমাদের অনুভূতি আর স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখা, কিংবা পরস্পরের সঙ্গে আদান-প্রদানের আরও অনেক নতুন উপায় নিয়ে আসবে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি।
আপনারা সবাই যেভাবে আমাদের উদ্ভাবনগুলো ব্যবহার করে নিজেদের সামাজিক জগৎ গড়ে তুলেছেন, তা সত্যি আমাদের হূদয় ছুঁয়ে গেছে। ফেসবুকে আপনারা যেমন জীবনের আনন্দময় মুহূর্তগুলো শেয়ার করেছেন, তেমনি দুঃখগুলোও একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। নতুন সম্পর্কের সূচনা হয়েছে, পুরোনো বন্ধনগুলো আরও দৃঢ় হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে কর্মজীবনেও এর প্রভাব পড়েছে। নানা নতুন পণ্য আর সেবা উদ্ভাবিত হচ্ছে, অনেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারছে। সবাই একে অন্যকে অসংখ্য উপায়ে সাহায্য করছে। আপনাদের এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা পৌঁছে দেওয়া আমার দায়িত্ব, আর তা পালনে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাব। আমাকে এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
সূত্র: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ফেসবুকের দশম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মার্কের স্ট্যাটাস।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার

জীবন বাঁচানো নায়কেরা by আলম পলাশ

Friday, December 20, 2013

গত ২৭ নভেম্বর, বুধবার। ভোর চারটা ৫০ মিনিট। জমজমাট চাঁদপুর স্টেশন। তার আগের দিন থেকে শুরু হওয়া অবরোধের ছোঁয়া সেখানে নেই বললেই চলে। ঠিক আর ১০ মিনিট পরে স্টেশন ত্যাগ করবে মেঘনা এক্সপ্রেস। গন্তব্য চট্টগ্রাম।
স্টেশনে প্রিয়জনকে বিদায় দিতে অনেকেই এসেছেন। ব্যাগ গুছিয়ে নির্দিষ্ট আসনে বসছেন যাত্রীরা। ব্যস্ত কুলি, হকার ও ট্রেনের কর্মচারীরা। এরই মধ্যে ট্রেনের হুইসেল পড়ে গেছে। তখন ভোর পাঁচটা। বিশালাকার অজগরের মতো হেলেদুলে চাঁদপুর স্টেশন ছাড়ল মেঘনা এক্সপ্রেস। স্টেশনের বাইরে কুয়াশা মোড়ানো ভোর। তবে সবচেয়ে ভয় জাগানো ব্যাপার হলো জায়গায় জায়গায় রেললাইন উপড়ে ফেলার খবর। ততক্ষণে অবশ্য বাংলাদেশ রেলওয়ের আগাম সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ‘অবরোধের সময় দেখে-শুনে ধীরগতিতে (নিয়ন্ত্রিত গতি) ট্রেন চালাতে হবে।’

সেভাবেই ট্রেন চালাচ্ছেন চালক জয়নাল আবেদিন ও সহকারী চালক আজম খান। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে পরবর্তী স্টেশনে পৌঁছারও তাড়া আছে। ট্রেন ছাড়ার পর এরই মধ্যে তিনটি স্টেশনে থেমেছে। যথারীতি যাত্রী উঠেছেন-নেমেছেন। ততক্ষণে ভোরের কুয়াশাও কাটতে শুরু করেছে। গাছগাছালির ফাঁক গলে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। ট্রেনের ভেতরে অনেকেই সকালের নাশতা সারছেন। পণ্য বিকোতে ব্যস্ত হকারেরা। টিকিট দেখতে ব্যস্ত টিটি। ব্যস্ত সামনের স্টেশনে নামার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরাও। ৩ নম্বর স্টেশন হাজীগঞ্জ ছাড়ার পরপরই সবে গতি বাড়াতে যাবেন চালক, তখন তাঁর দৃষ্টি আটকে যায় সামনে। বিন্দুর মতো লাল কিছু একটা লাইন ধরে এগিয়ে আসছে ট্রেনের দিকে! পাশে বসে থাকা আজম খানকে ভালো করে খেয়াল করতে বলেন জয়নাল আবেদিন। আজমও তীক্ষ দৃষ্টিতে নজর রাখেন। সাদা কুয়াশার ভেতর লাল বিন্দুটা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আরও একটু এগিয়ে এলে নিশ্চিত হন ‘ওই কিছু একটা’ আদতে একটা লাল নিশান। একটা বাঁশের আগায় লাল রঙের কাপড় বেঁধে ট্রেনের দিকে দৌড়ে আসছেন একজন বয়স্ক মানুষ। লাল মানেই দুর্ঘটনার সংকেত—ভালো করেই জানেন দুই চালক। কমিয়ে দেন ট্রেনের গতি। লাল নিশান হাতে বয়স্ক মানুষ আর ট্রেনের মধ্যে তখন দূরত্ব কমে এসেছে। লাফ দিয়ে নামেন আজম। বয়স্ক মানুষটির কাছে গিয়ে জানতে চান, ঘটনা কী? শীতের সকালে বয়স্ক মানুষ, অর্থাৎ তাজুল ইসলামের কপালে ঘাম। হাঁপাতে হাঁপাতে বলেন, ‘সামনে রেললাইন অনেকখানি কাটা!’

ওরা তো আমার মতন কোনো মায়ের পুত!
ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস কৃষক তাজুল ইসলামের। সেদিনও উঠেছেন। নামাজ পড়েছেন। তারপর বাইরে বেরিয়েছেন। তাজুল ইসলামের বাড়ির পাশ দিয়ে চলে গেছে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রেললাইন। প্রতিদিনই ভোরবেলা রেললাইনে গিয়ে কিছু সময় কাটান। ২৭ নভেম্বরও বের হয়েছিলেন। কিন্তু রেললাইনে বসতে গিয়ে তাঁর চোখ আটকে যায়। তাজ্জব ব্যাপার! কাল সন্ধ্যায়ও দেখেছেন রেললাইন ঠিক আছে। রাতের মধ্যে কী এমন হলো যে সেখান থেকে প্রায় ৬০ ফুট লম্বা   লোহার পাত হাওয়া! পাতগুলো পড়ে আছে খানিক দূরে। এখন উপায়! ঠিক একই সময়ে সেখানে হাজির হন শিবপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন। রেললাইনের পাশে বাড়ি হওয়ায় তাঁরা ভালো করেই জানেন, কখন কোন ট্রেন আসে-যায়। মেঘনা এক্সপ্রেস আসার সময় হয়ে এল প্রায়। কিছু একটা করতেই হবে—এই চিন্তা থেকেই দৌড়ে আবার বাড়িতে যান তাজুল। হাতে নেন উঠানের বাঁশে টাঙিয়ে রাখা স্ত্রীর লাল পেটিকোট। বাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে হাতে নেন টেঁটা (বাঁশের তৈরি মাছ শিকারের বিশেষ অস্ত্র)। সেটার আগায় লাল পেটিকোটটি বেঁধে দ্রুত রেললাইনের ওপর চলে আসেন। দৌড়াতে থাকেন উয়ারুক স্টেশনের দিকে। অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন ছুটতে থাকেন মেহের স্টেশনের দিকে। সেখানে পেয়ে যান এক রেলমিস্ত্রিকে। তাঁর মাধ্যমে যোগাযোগ করেন স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে। সতর্ক  করে দেন সম্ভাব্য বিপদের ব্যাপারে। স্টেশন মাস্টারও দ্রুত খবরটা পৌঁছে দেন  ট্রেনের গার্ডকে।

ওদিকে তাজুল ইসলাম দৌড়াচ্ছেন। একসময় তাঁর কানে আসে ট্রেনের হুইসেল। বাড়িয়ে দেন দৌড়ানোর গতি। ক্রমেই তাঁর সামনে স্পষ্ট হতে থাকে ট্রেন। চালক লাল নিশান দেখতে পেয়েছেন—এটা বুঝতে পারেন। ট্রেনের গতিও কমছে ধীরে ধীরে। খুব কাছাকাছি এসে থেমে যায় মেঘনা এক্সপ্রেস। এগিয়ে আসেন ট্রেনের গার্ড। নেমে আসেন চালকদ্বয়। জয়নাল আবেদিন বুঝতে পারেন, একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেল মেঘনা এক্সপ্রেস।

কথার ফাঁকে তাজুল ইসলামকে আমরা বলি, ‘আপনি তো সত্যিই অনেক বড় দায়িত্ব পালন করেছেন!’ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীরা তো আমার মতন কোনো মায়ের পুত (ছেলে)! হেগোর জীবন বাঁচানো আমার দায়িত্ব মনে করছি।’

আর আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য, ‘চোখের সামনে এত বড় অ্যাকসিডেন হইব ভাইবা গা শিউরায় উঠতেছিল। কিছু না ভাইবাই দৌড় দিছি, মনে মনে ভাবতেছিলাম মানুষগুলারে বাঁচাইতে হইব।’

সাহসী প্রাণ

চাঁদুপরের শাহরাস্তি থানার পশ্চিম উপলতা গ্রামের তাজুল ইসলাম পেশায় কৃষক। তবে চাষ করার মতো নিজের কোনো জমি নেই। অন্যের জমিতে কাজ করেন। স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে পশ্চিম উপলতা গ্রামে রেললাইন ঘেঁষে বসবাস তাঁর। সন্তানদের মধ্যে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ে করিয়েছেন দুই ছেলেকে। বাকি দুই ছেলের মধ্যে একজন রাজমিস্ত্রি, অপরজন মুদির দোকানে কাজ করেন। সব মিলিয়ে টানাটানির সংসার। আনোয়ার হোসেনেরও একই অবস্থা। পেশায় করাতকলের শ্রমিক।

সেই ‘টেনে চলা সংসারে’ ট্রেন থামিয়ে দেওয়ার ঘটনা অনেকটা সুখের বার্তা বয়ে এনেছে। স্থানীয় সাংসদ, রেলমন্ত্রী, পুলিশ সুপার ও জেলা
প্রশাসক তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন। সব মিলিয়ে তিনি পেয়েছেন প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকার পুরস্কার। জানতে চাই, ‘এই টাকা দিয়ে কী করবেন?’ তাজুল ইসলাম খানিকটা চিন্তায় ডুব দেন, ‘ভাবছি দুইটা গাভি কিনব। গাভির দুধ বিক্রি করেই সংসার চলবে। অন্যের জমিতে আর কাজ করতে হবে না।’

‘আপনি তো একটা প্রশংসাপত্র পেয়েছেন।’—মনে করিয়ে দিতেই ঘর থেকে বের করে আনেন বাঁধাই করা প্রশংসাপত্র। চাঁদপুর পুলিশ সুপার মো. আমির জাফরের স্বাক্ষর করা প্রশংসাপত্রে শেষ দিকে লেখা, ‘তাজুল ইসলাম...দায়িত্বশীল, সুনাগরিকসুলভ ও সাহসী ভূমিকার মাধ্যমে একটি  যাত্রীবাহী ট্রেনকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেন। তাঁর ভূমিকায় আমরা গর্বিত।’

সফলদের স্বপ্নগাথা- যেতে হবে বহুদূর by জোয়ান বায়েজ

সবাই এক হলেই অন্য রকম কিছু করা সম্ভব। এখন বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি আর কুশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের আন্দোলন চলছে। সবাই মিলে এক হয়েছে বলেই এমনটি করা সম্ভব হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছে। এ ধরনের আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি অনেক প্রভাবশালী ও জটিল প্রকৃতির। কোনো ধরনের জাতীয় নেতা ছাড়া এ ধরনের কাজ নিঃসন্দেহে অসাধ্য সাধনই বটে।

বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে শিল্পীরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই অংশ নেন। এ ক্ষেত্রে শিল্পীদের দায়বদ্ধতাও বেশি। শিল্পকলা ও আন্দোলনের মাঝে যোগসূত্র অবশ্যই আছে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে শিল্পীদের সংযোগই এই বৈচিত্র্যপূর্ণ যোগসূত্রের কারণ। জেলের কয়েদি থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রের যোদ্ধার সঙ্গে আমি শিল্পী হিসেবে কথা বলতে পারি। সে আমার কথা শুনতে পারে। যা অন্যান্য সাধারণ মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এমন কাজ করতে পেরে আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান। প্রকৃতি আমাকে সত্যিকারের সৌভাগ্য উপহার দিয়েছে। আমার কণ্ঠের গানই আমার সব। আমার এই প্রকৃতিপ্রদত্ত কণ্ঠ দিয়ে আমি যা ইচ্ছে বলতে পারি। আমি আমার কণ্ঠের গানকে এমনভাবে ব্যবহার করেছি, যা দিয়ে আমি জীবনের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করেছি। আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছে আমার কণ্ঠ, আমার গান।

এই তো কিছুদিন আগে এ বছর বর্ণবাদবিরোধী ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নন্দিত মার্কিন নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের ওয়াশিংটন পদযাত্রা ও ঐতিহাসিক ভাষণ ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’-এর অর্ধশত বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করা হলো। এই দীর্ঘ সময়ে বিশ্বব্যাপী নাগরিক আন্দোলনের লক্ষ্য কিছুটা হলেও অর্জিত হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি সেই আন্দোলনের লক্ষ্য নাগরিকদের অধিকার এখনো সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখনো আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য অনেক দূর যেতে হবে। খুব সাধারণ অর্থে, এই পৃথিবীর মতো নিষ্ঠুর জায়গা আর একটিও নেই। এখানে অধিকাংশ মানুষই কেউ কারও কথা মনে রাখে না, কেউ অন্যের জন্য কিছু চিন্তা করে না। দিনকে দিন বিশ্বব্যাপী মানুষে মানুষে বিভেদ বেড়েই চলছে। এই বৈষম্য নিঃসন্দেহে বড় ধরনের সামাজিক বিপর্যয়।

আমাদের নাগরিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের সংগ্রামকে অনেক দূর নিয়ে যেতে হবে। থেমে পড়লে হবে না। তবে এটা নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন একটি কাজ। কারণ, অধিকার আদায়ের জন্য অনেক দিন ধরে বেশি কিছু করা কিংবা দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন চালানো অনেক বড় কাজ। তবে যেকোনো আন্দোলন সফলতার ক্ষেত্রে আমার নিজের মূলমন্ত্র হলো—ক্ষুদ্র জয় আর বড় পরাজয় মেনে চলা। আপনি যদি বড় সব পরাজয়কে মেনে নিতে পারেন, তাহলে ক্ষুদ্র জয়েই খুঁজে পাবেন পরিপূর্ণ তৃপ্তি।

 সেই ষাটের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বিভক্ত ছিল। এখানকার নাগরিকদের ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক তর্ক ছিল। আমরা যারা যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলাম, তারা আমাদের আসল কাজ সম্পর্কে জানতাম। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা যায় তার জন্য নতুন কোনো উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম। কারণ আমি অনেক ছোটবেলা থেকে নিজেকে অহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করি। যখন আমার বয়স ১৫, তখন আমি পথে নামি। এ জন্যই বোধ হয় আমি অন্যদের মতো ছিলাম না। সেই সব সাধারণ মানুষ, যারা যুদ্ধের বিপক্ষে ছিল, তাদের অধিকাংশেরই যুদ্ধ নিয়ে রাজনৈতিক বা সামাজিক কোনো ধারণা ছিল না। তারা যুদ্ধ চাইত না, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধে কী করতে হবে, সেটা তারা জানত না। তাই তো শেষ পর্যন্ত তারা নিজ নিজ কাজে ফিরে যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এটা ঘটেনি। আমি ছোটবেলা থেকে নানা ধরনের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাই তো যুদ্ধ শেষেও আমার যুদ্ধ শেষ হয়নি।

সূত্র: রেডিও ফ্রি ইউরোপ রেডিও লিবার্টিকে দেওয়া জোয়ান বায়েজের ২০১৩ সালের এক সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান

হাজি মুহম্মদ মুহসীন মৃত্যুর ২০০ বছর পর by অমর সাহা

দানবীর হাজি মুহাম্মদ মুহসীনের মৃত্যুর ২০০ বছর পূর্ণ হলো গত নভেম্বরে। এ নিয়ে তাঁর জন্মস্থানে ছিল নানা অনুষ্ঠান। এই মানবহিতৈষীর জন্মভিটা ঘুরে তাঁর কথা স্মরণ করলেন প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি অমর সাহা
এখনো তিনি মানুষের হূদয়ে জাগ্রত—সেই হুগলী থেকে গোটা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে সুদূর বাংলাদেশেও। তিনি হাজি মুহম্মদ মুহসীন। মৃত্যুর ২০০ বছর পরও এতটুকু ম্লান হয়নি তাঁর স্মৃতি, কীর্তিগাথা। আজও তিনি দানবীর হিসেবে অমর, প্রাতঃস্মরণীয়।

ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি দানবীর হাজি মুহম্মদ মুহসীনের কথা। আজ সেই তিনি নেই। এই তো সেদিন, ২৯ নভেম্বর চলে গেল এই মহান পুরুষের মৃত্যুদিন। হুগলীর ইমামবাড়াসহ সর্বত্র দিনটি পালিত হলেও কলকাতায় ছিল না কোনো আয়োজন। হুগলীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২০০ বছর পূর্ণ হওয়া এই মৃত্যুদিবসকে ঘিরে তিন দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে কলকাতা ও ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন বহু খ্যাতিমান বিশিষ্টজন।

হাজি মুহসীন জন্মেছিলেন ১৭৩২ সালের ১ আগস্ট। তাঁর পিতা হাজি ফয়জুল্লাহ। জানা যায়, তাঁর পূর্বপুরুষেরা এসেছিলেন সুদূর ইরান বা পারস্য থেকে। তবে তাঁদের আদি বাস ছিল আরবে।

দিল্লির মসনদে তখন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব। সম্রাটের বিচারালয়ের সম্মানিত সদস্য ছিলেন আগা মোতাহার। আওরঙ্গজেব আগা মোতাহারের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যশোর, হুগলী, নদীয়া ও ২৪ পরগনা জেলার প্রচুর জমি তাঁকে জায়গীর দেন। এরপরে আগা মোতাহার হুগলীতে বসবাস শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে ছিল স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে মন্নুজান। তবে কিছুদিন পর মারা যান আগা মোতাহার। পরে আগা মোতাহারের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করেন মুহসীনের বাবা হাজি ফয়জুল্লাহ। মন্নুজান হয়ে যান মুহসীনের বোন। তাঁদের বাবা-মা মারা গেলে ভাইবোন হয়ে পড়েন অভিভাবকহীন। বিশাল সম্পত্তির মালিক হন মন্নুজান। একসময় তিনি বিয়ে করেন আগা সালাউদ্দিনকে, যিনি কর্মসূত্রে সে সময় ইরান থেকে এসে হুগলীতে বাস গেড়েছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসন্তান মন্নুজান তাঁর সম্পত্তি মুহসীনকে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এতে রাজি হননি মুহসীন।

অবশেষে মন্নুজান ১৮০২ সালে সমুদয় সম্পত্তি লন্ডনের সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে মুহসীনকে দান করেন। পরে মুহসীন ১৮০৬ সালের ২০ এপ্রিল হুগলীতে এক অছিয়তনামা রেজিস্ট্রি করেন। তাতে মেধাবী ছাত্রছাত্রীসহ মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্য তাঁর সম্পত্তি থেকে আয়ের অর্থ ব্যয় করার কথা বলেন। আহমদ ছফার যদ্যপি আমার গুরু বইয়ে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তথ্য দিয়েছেন, ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও নাকি মুহসীন ফান্ড থেকে ছাত্রবৃত্তি পেয়েছিলেন।

মুহসীন ট্রাস্টের অন্যতম এক কর্মকর্তা হুগলীর বাসিন্দা মীর্জা মহম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, হুগলীর ঐতিহাসিক ইমামবাড়া যেখানে অবস্থিত, তার মাঝখানে ওজুর জন্য যে জলাশয় তৈরি করা হয়েছে, সেখানেই ছিল মুহসীনের প্রথম ছোট্ট ইমামবাড়া। এখানেই একসময় থাকতেন তিনি। মুহসীনের মৃত্যুর পর তাঁর অগাধ অর্থ থেকে তৈরি হয়েছিল ৪২ বিঘা জমির ওপর এই ইমামবাড়া।

তিনি আরও জানান, এর সামনের দুটি চূড়ার উচ্চতা ১৫০ ফুট। ইমামবাড়া নির্মাণ শুরু হয় ১৮৪১ সালে। তখন খরচ হয় আট লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটির নকশা সংগ্রহ ও নির্মাণ করেন ইঞ্জিনিয়ার মাওলানা সৈয়দ কেরামত আলি—ভারতের উত্তর প্রদেশের জৈনপুরের বাসিন্দা। তিনি ইরানের কাজমাইন থেকে এই ইমামবাড়ার নকশা আনেন। এই ইমামবাড়ায় রয়েছে সুন্দর একটি মসজিদ। মসজিদের গাত্রে লেখা আছে কোরআনের আয়াত। এ ছাড়া রয়েছে আরবি, উর্দু ও পারসি শেখার বিদ্যালয়—নাম ’হাওজা-ই-ইলমিয়া’।

এই ইমামবাড়ার পেছনে হুগলী নদীর তীরে রয়েছে একটি সূর্যঘড়ি। এই সূর্যঘড়ির ওপর পড়া সূর্যের আলোর ছায়া থেকে বোঝা যেত সময়।

আর ইমামবাড়ার সামনের দুটি বিশালকায় চূড়ার মাঝে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ঘড়ি। এই চূড়ায় উঠতে ১৫২টি সিঁড়ি পার হতে হয়। ঘড়িটি লন্ডনের বাকেন্ড মারি কোম্পানির বিগবেন ঘড়ি। পৃথিবীতে এখন এই ধরনের আরও একটি ঘড়ি রয়েছে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদে। ইমামবাড়ার ঘড়িটি কেনা হয় ১৮৫২ সালে ১১ হাজার ৭২১ টাকায়। সেদিন এটি মহারানি ভিক্টোরিয়া দান করতে চাইলেও তা গ্রহণ করেনি ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ। এই ঘড়িতে আছে বিশালকায় তিনটি পিতলের ঘণ্টা—৮০, ৪০ ও ৩০ মণ ওজনের। এর চাবির ওজন ২০ কেজি। সপ্তাহে এক দিন ঘড়িতে চাবি দিতে হয়। চাবি দিতে লাগে দুজন।

হাজি মুহম্মদ মুহসীনের কত সম্পত্তি ছিল বা এখন আছে তার সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারেননি। হুগলীর বাসিন্দা শেখ লুৎফর রহমানের মতে, মুহসীন এস্টেটের অধিকাংশ সম্পত্তি ছিল বাংলাদেশের যশোর ও খুলনায়। এর পরিমাণ এক হাজার ৮০০ একরের মতো। তখন যশোর ও খুলনার মুহসীন এস্টেট থেকেই ৬৫ হাজার টাকার কর আসত। আর গোটা মুহসীন এস্টেট থেকে আয় হতো এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ হতো মুহসীন এস্টেট, বিশেষত ইমামবাড়া ও মুহসীনদের পারিবারিক কবরস্থান। লুৎফর রহমান আরও জানান, যশোর ও খুলনা বাদে হুগলীর চুঁচুরা, হাজিনগর, নদীয়ার কল্যাণী, মুর্শিদাবাদ, কলকাতার খিদিরপুর এবং পদ্মপুকুরেও রয়েছে মুহসীনের অন্তত এক হাজার ৪০০ একর সম্পত্তি। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, কেবল হুগলীতেই রয়েছে ১২ হাজার বিঘা সম্পত্তি। তবে এ বিপুল সম্পত্তির অধিকাংশই এখন বেহাত।

মুহসীন এস্টেটের আয় থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হুগলী মুহসীন কলেজ, হুগলী মাদ্রাসা এবং হুগলীর জেলা হাসপাতাল ‘ইমামবাড়া সদর হাসপাতাল’। আর এই আয় থেকে এখনো দুস্থ ও মুসলিম কৃতী ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয় বৃত্তি। এ বছরও ২০ হাজার রুপি করে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে ১০৬ জন ছাত্রছাত্রীকে।

ইমামবাড়ার একটু দূরেই মুহসীনের পারিবারিক কবরস্থান। এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হাজি মুহম্মদ মুহসীন, মন্নুজান খানম, মুহসীনের মা জয়নাব বেগম, ভগ্নিপতি আগা সালাউদ্দিন, বাবা হাজি ফয়জুল্লাহ ও ইঞ্জিনিয়ার আগা মোতাহার।

স্থানীয় মানুষজন চাইছেন, এই ইমামবাড়াকে সংস্কার করে টিকিয়ে রাখা হোক মুহসীনের স্মৃতিকে। এখানে গড়া হোক একটি পর্যটন কেন্দ্র। এ জন্য এখন প্রাথমিক পর্যায়ের কাজও শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশি খাবার ও পোশাকের উৎসব by মাসুদুর রহমান

Saturday, November 30, 2013

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে সম্প্রতি (২৭ অক্টোবর) প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় বাংলাদেশি খাবার ও পোশাক উৎসব। কাউয়ানডিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ উৎসব বেলা ১১টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবার ও পোশাকের সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের পরিচিতি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করাই ছিল এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
উৎসবে ছিল নানা ধরনের ২২টি খাবার ও পোশাক স্টল। পাশাপাশি পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীরা অনুষ্ঠানে নাচ-গান পরিবেশন করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথিরা নাচ দেখছেন 
টেস্ট দ্য ফ্লেবার অব বাংলাদেশ স্লোগানে এ উৎসব আয়োজন করে অবাক (অ্যাডিলেড-বাংলাদেশি কালচারাল ক্লাব)। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদেরই সামাজিক সংগঠন অবাক। স্থানীয় লোকজনের কাছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরতেই তারা এ উৎসবের আয়োজন করে।
এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা, শিশু উন্নয়ন ও বহুসংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী জেনিফার র‌্যানকিন এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে গৃহায়ণ, নগর উন্নয়ন, যোগাযোগ, অবকাঠামো ও খনিজসম্পদমন্ত্রী টম কাউটসানতোনিস এমপি, হিন্ডমার্শের ফেডারেল সদস্য ম্যাট উইলিয়ামস এমপি, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বহুসংস্কৃতি ও জাতিগতবিষয়ক কমিশনের (SAMEAC) সদস্য জোসেপ মাসিকা ওএম, পার্লামেন্টের স্পিকার মিখায়েল অ্যাটকিনসন এমপি এবং ওয়েস্ট টরেন্স শহরের মেয়র জন ট্রেইনার উপস্থিত ছিলেন।
অতিথিরা বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। তাঁদের কেউ কেউ দলীয় সংগীতেও অংশ নেন। প্রধান অতিথি জেনিফার র‌্যানকিন এমপি বাংলাদেশি সালোয়ার-কামিজ এবং বিশেষ অতিথি স্পিকার মাইকেল অ্যাটকিনসন বাংলাদেশের পাঞ্জাবি পরেন। অতিথি সবাই মেহেদির রং লাগান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিশুদের নৃত্য পরিবেশনা 
স্থানীয় ও অন্যান্য দেশের প্রায় দেড় হাজার দর্শক উৎসবে যোগ দেন।
 সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করছে কয়েকজন শিশু শিল্পী 
তাঁরা বাংলাদেশি খাবার খেয়ে এবং পোশাক কেনার সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত ও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে ছিল পিঠা, হালিম, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, বিরিয়ানি, আমের লাচ্ছি, ফালুদা, বোরহানি, দইবড়া, জিলাপি, শিঙাড়া, সমুচা ইত্যাদি। পোশাক ও হস্তশিল্পের মধ্যে ছিল সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, নকশিকাঁথা, শোপিস, গয়না ইত্যাদি।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রুদ্র শোভন ও বেদোয়ারা হক অমন গান এবং ইশতি, সৃষ্টি, লুবাবা, অরিত্রি প্রমুখ নাচ পরিবেশন করেন। তাঁদের পরিবেশনা শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়ায়। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত কয়েকজন বাংলাদেশি বলেন, অ্যাডিলেডে এই প্রথমবারের মতো তাঁরা এত সুন্দর অনুষ্ঠান দেখলেন। অংশগ্রহণকারী কেউ কেউ উৎসবকে অ্যাডিলেডে ছোট্ট এক বাংলাদেশ বলে অভিহিত করেন।
অবাক প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, পয়লা বৈশাখসহ বাংলাদেশের বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে।
মাসুদুর রহমান
অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া
 উত্সবের একাংশউত্সবে আগত কয়েকজন বাংলাদেশি
ওয়েস্ট টরেন্স শহরের মেয়র জন ট্রেইনার বাংলাদেশের হস্তসামগ্রী দেখছেন
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু