ফেসবুকের পথচলা এক অবিস্মরণীয় গল্প, যার অংশ হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। এত মানুষের জীবন ছুঁয়ে যেতে পারাটা এক বিরল সৌভাগ্যের বিষয়।
তাই আমি নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিই—প্রতিটি দিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে, সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে হবে।
অনেকে আমাকে প্রশ্ন করে, ফেসবুকের আজকের অবস্থান আমি কখনো ভাবতে পেরেছিলাম কি না। অসম্ভব! মনে পড়ে ফেসবুকের যাত্রা শুরুর কিছুদিন পর এক রাতে কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে পিৎজা খাচ্ছিলাম। খেতে খেতে আমি তাদের বলছিলাম, আমি আমাদের কলেজের অল্প কিছু মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করছি। তবে দেখে নিয়ো, একদিন কেউ না কেউ সারা পৃথিবীর মানুষকে একসুতোয় গাঁথবে।
মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, খুব সহজে তাদের জীবনের টুকরা গল্পগুলো শেয়ার করতে পারবে, নিজেদের মতো করে তাদের সামাজিক সম্পর্কগুলো সাজিয়ে নিতে পারবে—এসব আমার সব সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো। আজ ১০ বছর পর যখন পেছনে ফিরে তাকাই, নিজেকে প্রশ্ন করি—ঠিক কী জন্য আমাদের হাতেই ফেসবুকের সূচনা হয়েছিল? আমরা তখন ছিলাম সাধারণ শিক্ষার্থী, বড় কোম্পানিগুলোর তুলনায় আমাদের হাতে সম্পদ বলতে একদম কিছুই ছিল না। তারা যদি এই ধারণা নিয়ে কাজ করত, তবে হয়তো তারাই ফেসবুক বানিয়ে ফেলত।
এই প্রশ্নের কেবল একটি সম্ভাব্য উত্তরই আমার জানা আছে, আমরা পুরো ব্যাপারটাকে অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম। যখন অন্যরা বুঝে উঠতে পারছিল না যে পৃথিবীর সবাইকে সংযুক্ত করার আদৌ কোনো দরকার আছে কি না, ততক্ষণে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। যখন তারা সন্দেহ করছিল এমন একটি ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারবে কি না, তখন আমরা এটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সব রকম বন্দোবস্ত করে ফেলছিলাম। পৃথিবীকে একসুতোয় গাঁথার প্রচেষ্টা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল। আজ ১০ বছর পরও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তাই আগামী ১০ বছর নিয়ে আমি আরও বেশি আশাবাদী। এখন আমরা বিশ্বজুড়ে মানুষকে আরও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারব। আজ পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে। আগামী এক দশকে আমাদের দায়িত্ব হবে বাকিদেরও এই সুবিধার আওতায় আনা।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মূলত জীবনের টুকরা মুহূর্তগুলো ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে। আগামী দশকে মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর আর জটিল সব সমস্যার সমাধানেও সহায়তা করবে এই মাধ্যমগুলো। আজ আমরা হাতে গোনা কিছু উপায়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে শেয়ার করি। আমাদের অনুভূতি আর স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখা, কিংবা পরস্পরের সঙ্গে আদান-প্রদানের আরও অনেক নতুন উপায় নিয়ে আসবে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি।
আপনারা সবাই যেভাবে আমাদের উদ্ভাবনগুলো ব্যবহার করে নিজেদের সামাজিক জগৎ গড়ে তুলেছেন, তা সত্যি আমাদের হূদয় ছুঁয়ে গেছে। ফেসবুকে আপনারা যেমন জীবনের আনন্দময় মুহূর্তগুলো শেয়ার করেছেন, তেমনি দুঃখগুলোও একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। নতুন সম্পর্কের সূচনা হয়েছে, পুরোনো বন্ধনগুলো আরও দৃঢ় হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে কর্মজীবনেও এর প্রভাব পড়েছে। নানা নতুন পণ্য আর সেবা উদ্ভাবিত হচ্ছে, অনেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারছে। সবাই একে অন্যকে অসংখ্য উপায়ে সাহায্য করছে। আপনাদের এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা পৌঁছে দেওয়া আমার দায়িত্ব, আর তা পালনে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাব। আমাকে এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
সূত্র: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ফেসবুকের দশম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মার্কের স্ট্যাটাস।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার
0 comments:
Post a Comment