সাধারণের ভালোবাসায় সিক্ত দুই অনন্য প্রতিভা

Tuesday, August 16, 2011

মেঘ কেটে যাওয়া সকালের রোদে প্রকৃতি ছিল উষ্ণ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে গগনশিরীষ গাছগুলোর নিচে কালো ব্যানার টানানো মঞ্চের সামনে কফিনে শায়িত দুই বন্ধুর জোড়া লাশ। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। কফিন বন্ধ। নিমেষের আকস্মিকতায় প্রাণবন্ত মানুষ থেকে তাঁরা ক্ষতবিক্ষত শবদেহে পরিণত। সেই বেদনা ক্ষোভ হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা অগণিত জনের কথায়। রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, কবি, ছাত্র—সবাই বলেছেন, এ তো দুর্ঘটনায় মৃত্যু নয়, বলতে হয় রাজপথে প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড। রাষ্ট্র এর দায় এড়াতে পারে না।
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ যখন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের শববাহী গাড়ি শহীদ মিনারে আসে, এর আগে থেকেই মানুষে ভরে উঠেছিল চত্বর। নেপথ্যের করুণ সুর বিমর্ষতা ছড়িয়ে দিচ্ছিল পরিবেশে। দল-মত, বয়স-ধর্মনির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এসেছিলেন অকালপ্রয়াত এই দুই বন্ধু, দেশের দুই প্রতিভাবান কৃতী সন্তানের প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা নিবেদন করতে। প্রিয়জন হারানোর বেদনার সঙ্গে সমবেত মানুষের মনে তীব্র হয়ে উঠেছিল ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ নামের প্রতিকারহীন মৃত্যুর ক্ষোভ ও যন্ত্রণা।
আক্ষেপ করছিলেন সবাই, মাটির ময়না আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনেছিল। তারেক-মিশুক জুটির নতুন উদ্যোগ ছিল কাগজের ফুল। আগামী দিনে আরও নতুন নতুন কাজ হয়তো আরও বড় অর্জনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেত দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে। কিন্তু হায়, না ফুটতেই ঝরে গেল সেই ফুল!
শোকের মিছিল: ব্যানার নিয়ে, পুষ্পস্তবক সঙ্গে করে বা একাকী ফুলের গুচ্ছ নিয়ে মিছিলের মতো জনস্রোত নেমেছিল শহীদ মিনারে। উত্তর দিকের প্রবেশপথ থেকে যাত্রা করে পায়ে পায়ে তাঁরা শহীদ মিনারের মূল বেদির পাশ দিয়ে ঘুরে এগিয়ে আসছিলেন পুব পাশের প্রবেশপথের ধারে শোকমঞ্চের কাছে।
এর আগে সকালে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের শবদেহ আনা হয়েছিল এটিএন নিউজের কার্যালয়ে। সেখানে জানাজার পর পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হয়।
এখানে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শোক জ্ঞাপন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সাংসদ হাসানুল হক ইনু, আসাদুজ্জামান নূর, সারাহ বেগম কবরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমজীবী-পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে অগণিত মানুষ হূদয়ের নিখাদ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করেন।
সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, ছায়ানট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, গণসংগীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদ, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, বাউল একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, এফডিসি, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, সমকাল, ভোরের কাগজ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল, টিএসসি, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতি, ’৭১-এর পরিবার, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় জাদুঘর, লোকশিল্প জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মুক্তির গানের শিল্পীবৃন্দ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারী প্রগতি সংঘ, নিজেরা করি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, প্রশিকা, নায়েম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, খেলাঘর আসর, প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদ, যুব ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, স্বভূমি লেখক পরিষদ প্রভৃতি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে এই শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়েছিল। জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ সংগঠনগুলোর পরিচিতি এবং প্রয়াত জনের নানা তথ্য ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। জোহরের নামাজের পর হয় জানাজা। কিন্তু এত লোকসমাগম হয়েছিল যে নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে এলেও অনেকেই দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করছিলেন ফুল নিয়ে।
শহীদ মিনার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের দিকে শবযাত্রার আগে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর তাঁদের শিল্পপ্রয়াস চালিয়ে গেছেন। বহির্বিশ্বে আমাদের গুপ্তহত্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের যে নেতিবাচক পরিচিতি রয়েছে, তার বিপরীতে আমাদের সৃজনশীলতার পরিচয় তুলে ধরেছিলেন তারেক মাসুদ। জাতি তাঁদের কখনো ভুলবে না।’ এরপর সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন প্রয়াত দুই কৃতীর স্মরণে। শহীদ মিনার চত্বরে নেমে আসে এক প্রগাঢ় স্তব্ধতা।
শোক থেকে ক্ষোভ: সাংসদ হাসানুল হক ইনু বললেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে যে বিশৃঙ্খলা চলছে, তাতে সরকার ও প্রশাসন যে আছে জনগণ তা টের পাচ্ছে না। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক বন্ধ হয়ে আছে। এক দিনে মহাসড়কে এমন ভয়াবহ অবনতি ঘটেনি। বোঝাই যায়, কোনো তদারকি নেই। গাড়ির চালকদের কীভাবে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, কেন এত দুর্ঘটনা ঘটছে—কোনো বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। এসব মৃত্যু হত্যাকাণ্ডেরই শামিল। দেশবাসী আর কোনো অজুহাত শুনতে চায় না। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আজ, এই মুহূর্ত থেকেই কাজ দেখতে চায় জনগণ। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ নিতে হবে। ব্যর্থ হলে এর দায়িত্ব কেউ এড়াতে পারবেন না।’
একই রকম প্রতিক্রিয়া ছিল প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর। বললেন, ‘যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। যাঁদের উদাসীনতায় রোজ অসংখ্য সাধারণ মানুষ ও প্রতিভাবান প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে, তাঁরা কী করে পদ আঁকড়ে থাকেন? কী দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা?’
প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এ ধরনের অপমৃত্যুকে আমি হত্যাকাণ্ড হিসেবেই গণ্য করি। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী আমাদের রাষ্ট্র। রাস্তাঘাট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কাজেই এমন দুর্ঘটনায় আরও কত প্রাণ ঝরে যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।’ তিনি বলেন, সরকার যদি এই মৃত্যু থেকে শিক্ষা না নেয়, তবে জাতিকে আরও চরম মূল্য দিতে হতে পারে।
কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলেও সরকারের টনক নড়ে না। সড়ক অচল মানে দেশ অচল। কর্মকর্তারা নিষ্ক্রিয়। যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত তাঁর অকর্মণ্য কর্মকর্তাদের সচেতন করার লক্ষ্যে। আমার মনে হয়, যোগাযোগমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা।’
প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, ‘জাতীয় সংকটের সবচেয়ে বড় প্রতিফলন সড়কপথের বিশৃঙ্খলা। এই দুই তরুণ প্রতিভার কাছে আমাদের আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। কিন্তু তাঁরা অকালে চলে গেলেন এই বিশৃঙ্খলার শিকার হয়ে।’
বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বললেন, ‘মানুষকে তো চলাচল করতে হবে। কাজেই পথের নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তারেক ও মিশুক বাংলা একাডেমীর হয়ে ভাষা আন্দোলনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছিলেন। এ বছরই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই কাজ আর আমরা দেখতে পারব না। জাতির জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখের ঘটনা।’
এভাবেই দুঃখ ও ক্ষোভ, শোক আর আক্ষেপ মিলে মানুষের মনে এক অসহ্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠছিল এই দুই প্রতিভার অকালপ্রয়াণ।
জানাজা: শহীদ মিনার থেকে শববাহী গাড়ি প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়।
তারপর আবার শবযাত্রা। শবানুগামী নানা বয়সী মানুষের ঢলের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল, মানুষের প্রতি যাঁরা আস্থা রাখেন, মানুষকে ভালোবেসে যাঁরা কাজ করে যান, তাঁদের প্রতিও ভালোবাসা জানানোর মানুষের অভাব হয় না কখনো।
দাফন: জানাজার পর মিশুক মুনীরের মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হিমাগারে রাখা হয়। তারেক মাসুদের মরদেহ নেওয়া হয় এফডিসিতে। সেখানে তাঁর জানাজা শেষে মরদেহ বিএসএমএমইউর হিমাগারে রাখা হয়।
মিশুক মুনীরের ছোট ভাই আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তা আসিফ মুনীর প্রথম আলোকে জানান, সিয়েরালিয়নে কর্মরত জাতিসংঘের কর্মকর্তা তাঁদের বড় ভাই আহমেদ মুনীর (ভাষণ মুনীর) মঙ্গলবার দেশে ফিরবেন। সেদিনই বাদ জোহর বনানী গোরস্থানে মিশুক মুনীরকে দাফন করা হবে।
তারেক মাসুদকে কোথায় দাফন করা হবে তা রোববার রাতেও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ফরিদপুর থেকে তারেকের মা এসেছেন। দাফনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
দোয়া মাহফিল: তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল হবে মিশুক মুনীরের পরিবারের উদ্যোগে। কাল মঙ্গলবার বাদ আসর ১৩৯ রামকৃষ্ণ মিশন রোডের চিওরা হাউসে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শোক: বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং সাংবাদিক মিশুক মুনীরের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, এই দুজন তাঁদের সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সাংবাদিকতার অঙ্গনে যে অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন, তা জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। এই মৃত্যুতে দেশ দুই অমূল্য প্রতিভা হারালো।

তিন বিভাগে একযোগে শিশু চলচ্চিত্র উৎসব

Sunday, January 16, 2011

বার বড় পরিসরে হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। চতুর্থবারে এসে এ উৎসব একযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবে বাংলাদেশসহ মোট ৪০টি দেশের ২৩৩টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখানো হবে। শিশু নির্মিত চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায়ও এবার ব্যাপক সাড়া মিলেছে।

৯৮টি চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে চূড়ান্ত বিচারের জন্য ৪৮টিকে মনোনীত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উৎসব পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বরাবরের মতো এবারও উৎসবের স্লোগান হচ্ছে, 'ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন'। ২২ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে উৎসব উদ্বোধন করবেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর ১৪টি মিলনায়তনে দর্শকরা এসব ছবি উপভোগ করতে পারবে। প্রতিটি ছবিই শিশুদের জন্য উন্মুক্ত। তবে বড়রা ৩০ টাকার দর্শনীর বিনিময়ে ছবি দেখার সুযোগ পাবেন। ছবিগুলোর মধ্যে থাকছে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, অ্যানিমেশন ও প্রামাণ্যচিত্র। উৎসব চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে উৎসব উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফা মনোয়ার, ড. ইয়াসমীন হক, চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বক্তব্য দেন।
উৎসবের মূল ভেন্যু সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার। এর বাইরে ঢাকার শিশু একাডেমী, ব্রিটিশ কাউন্সিল, আলিয়ঁস ফ্রাঁসেজ (ধানমণ্ডি ও উত্তরা), রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, খিলগাঁও মডেল স্কুল, কলেজ অব লেদার টেকনোলজি (হাজারীবাগ)। চট্টগ্রামে উৎসব হবে থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে। এর বাইরে কয়েকটি বিদ্যালয় ও মাঠে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহীতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ মিলনায়তন এবং জেলা পরিষদ মিলনায়তনে উৎসবের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
প্রমা অবন্তির ওড়িশি নৃত্যের মোহনীয় সন্ধ্যা : নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তি ও তাঁর দলের ওড়িশি, বটু, চতুরঙ্গ নৃত্য মুগ্ধ করল রাজধানীর দর্শক-শ্রোতাদের। শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় গতকাল সন্ধ্যায় ওড়িশি অ্যান্ড টাগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার পরিবেশন করে অপূর্ব সব ধ্রুপদী নৃত্য।
প্রথমে ছিল বটু নৃত্য। ওড়িশি নৃত্যের শুদ্ধ পদ্ধতি মেনে নিয়ে সুর, তাল ও ছন্দের মার্গীয় সুধা ও লয়ে এটি পরিবেশিত হয়। এ নৃত্যে মোহনীয় ভঙ্গিতে শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন মন্দির গাত্রের ভাস্কর্য কিংবা ভাস্কর্যপ্রতিম অঙ্গসঞ্চালন। একতাল ও কলাবতী রাগে প্রমার দল এ নৃত্য পরিবেশন করে। দ্বিতীয় পর্বে প্রমা পরিবেশন করেন চতুরঙ্গ।
রণেশ দাশগুপ্তের শততম জন্মদিন উদ্যাপন : রণেশ দাশগুপ্ত ছিলেন আজীবন সংগ্রামী। তিনি তাঁর সাহিত্য, শিল্প ও কর্মের মাধ্যমে গণমানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়ে গেছেন। তাঁর আদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি উদীচী, প্রগতি লেখক সংঘের মতো প্রগতিশীল সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। তৈরি করেছেন অসংখ্য সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মী।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সাহিত্যিক, সাংবাদিক রণেশ দাশগুপ্তের শততম জন্মদিনে এভাবেই তাঁকে স্মরণ করলেন বিশিষ্টজনরা। গতকাল শনিবার মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে রণেশ দাশগুপ্তের শততম জন্মদিন উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী।
১৯১২ সালের ১৫ জানুয়ারি রণেশ দাশগুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আগামী বছর রণেশ দাশগুপ্তের জন্মশত বার্ষিকী উদ্যাপনে উদীচীর উদ্যোগে শুরু হলো বছরব্যাপী আয়োজন।

সময় এখন পূর্ণিমার

Thursday, January 13, 2011

ত বছরের শেষের দিকে পূর্ণিমার ক্যারিয়ারের মোড় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পরপর দুটি ছবির সাফল্য তাঁকে আবার আলোচনার শীর্ষে এনে দিয়েছে। রাতারাতি সব বড় নির্মাতা আবার তাঁর কাছে ভিড়তে শুরু করেছেন। কিন্তু পূর্ণিমার এখন আর শিডিউল দেওয়ার উপায়ও নেই।

হাতে আছে এক ডজনের মতো ছবি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম 'এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া', 'জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার', 'রাজা সূর্য খাঁ', 'গরিবের দাম অনেক বেশি', 'সে আমার মন কেড়েছে', 'অস্ত্র ছাড় কলম ধর', 'আই লাভ ইউ', 'ছোট্ট সংসার', 'মায়ের বাড়ি' ইত্যাদি। প্রতিটি ছবিই বিগ বাজেটের এবং তারকাবহুল। তাই নির্মাতারা একটু সময় নিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে পূর্ণিমাকেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, 'আগের মতো আর দৌড়ঝাঁপ দিয়ে ছবি করার ইচ্ছে নেই। এখন খুব বেছে, বুঝেশুনে ছবি করতে চাই। ভালো নির্মাতা, ভালো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান না হলে অভিনয় করার প্রয়োজনই দেখি না।' প্রথম থেকেই পূর্ণিমার অভিনয়ের প্রশংসা চতুর্দিকে। এমনকি তাঁর শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত! পূর্ণিমার স্বামীই তাঁর অভিনয়ের বড় ভক্ত। এই তো গত ডিসেম্বরে, 'ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না' মুক্তি পেলে তিনি নিজেই প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখে এসেছেন।
পূর্ণিমার সিদ্ধান্তগুলো এখন আর একা নিতে হয় না। যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে দুজনই সমান অংশ নেন। স্বামীর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও পূর্ণিমা কম সাহায্য করেন না। ফলে কারো মাথার ওপর একক চাপ পড়ে না। সময় পেলেই রাত-বিরাত বেরিয়ে পড়েন ঢাকা শহর ঘুরতে। শুধু ঢাকা নয়, দুজনে ঠিক করেছেন বছরে অন্তত তিনবার বিদেশ যেতে হবে। এতে নাকি মন-মানসিকতা ভালো থাকে। কাজের প্রতি অবহেলাও কমে। দুজনে মিলে প্রতিদিনের একটি রুটিনও করেছেন ইতিমধ্যে। সে রুটিনে বেশ কয়েকটি কাজ আছে, যা বিনা অজুহাতেই করতে হবে। কোনোভাবেই 'আজ না কাল' করা যাবে না। যেমন_পূর্ণিমার ছবি মুক্তি পেলে তা দেখতে হবে প্রেক্ষাগৃহে। প্রথম দিনই। আবার যেদিন আকাশে চাঁদ উঠবে, সেদিন জোছনা পোহাতে হবে মাঝরাত্রি পর্যন্ত দুজনকেই।
কাল মুক্তি পাবে আহমেদ নাসিরের 'মায়ের জন্য পাগল'। পূর্ণিমার সঙ্গে আছেন মারুফ, ববিতা ও ইমন। পূর্ণিমা খুব আশাবাদী।

নগরী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে 'আনন্দ প্রেক্ষাগৃহ' by আপেল মাহমুদ

Wednesday, January 12, 2011

০ বছর বয়সী অবাঙালি খায়রুল আনাম ফার্মগেটের আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের সামনে বসে পান-সিগারেট বিক্রি করছিলেন। গত দুই মাস আগে প্রেক্ষাগৃহটি মালিকপক্ষ লে-অফ ঘোষণা করার পর চাকরি চলে গেলেও হলের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি।

এ কারণে পান-সিগারেটের ডালা নিয়ে সেখানে বসেছেন। তিনি আনন্দ প্রেক্ষাগৃহে যন্ত্রচালক হিসেবে প্রায় ৩০ বছর চাকরি করেন। তাঁর মতো আরো প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর এমনই পরিণতি হয়েছে। সংসার কিভাবে চলবে, তা নিয়েও তাঁদের চিন্তার অন্ত নেই। অচিরেই সেখানে বহুতল আধুনিক বিপণিবিতান নির্মাণকাজ শুরু হবে।
জানা যায়, বর্তমান মালিকপক্ষ প্রেক্ষাগৃহের চেয়ে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণকে লাভজনক মনে করছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রেক্ষাগৃহ ভেঙে সেখানে বিপণিবিতান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কারণে ইতিমধ্যে প্রেক্ষাগৃহে কর্মরত ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেনা-পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। কর্মচারী মো. সৈয়দ জানান, তাঁরা কয়েকজন বর্তমানে প্রেক্ষাগৃহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছেন। ব্যবস্থাপক শামসুল আলম প্রেক্ষাগৃহটি পুনরায় চালুর কথা জানালেও কখন চালু হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরীর কেন্দ্রস্থল ফার্মগেটে অবস্থিত আনন্দ প্রেক্ষাগৃহটি বন্ধ হয়ে গেলে নগরবাসীর বিনোদনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আনন্দ প্রেক্ষাগৃহ দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছিল। অনেক কালজয়ী ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ওই প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হয়। পাক ফিল্ম করপোরেশন নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জাহেদ আসগর চৌধুরী এবং রাশেদ আসগর চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ঊনসত্তর সালের গণআন্দোলনের সময় আনন্দ প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের রমরমা ব্যবসায়িক অবস্থার কারণে পরবর্তী সময়ে একই ভবনে ছন্দ নামে আরেকটি প্রেক্ষাগৃহ সংযোজন করা হয়। দুই প্রেক্ষাগৃহই তখন রাজধানীবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তবে আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে ছন্দ সংযোজনের বিষয়টি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সত্য সাহার সুপারহিট চলচ্চিত্র 'অশিক্ষিত' মুক্তির মাধ্যমে ছন্দ প্রেক্ষাগৃহের জমজমাট উদ্বোধন হয়েছিল।
জানা যায়, চট্টগ্রামের জাহেদ আসগর চৌধুরী এবং রাশেদ আসগর চৌধুরীর চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রামে খুরশীদ মহল ও নূপুর প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি তাঁরা ঢাকায় প্রথমে আনন্দ পরে ছন্দ প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। পাক ফিল্ম করপোরেশন নামে একটি প্রোডাক্টশন হাউসের মাধ্যমে তাঁরা 'পালাবদল', 'পিতাপুত্র' ও 'অভিশাপ' নামে কয়েকটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন। কিন্তু নানা কারণে তাঁরা চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে ধীরে ধীরে দূরে চলে যান। প্রায় ২০ বছর আগে তাঁরা চলচ্চিত্র ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করেন।
তৎকালীন লিকার ব্যবসায়ী সম্রাট শাহজাহান ও শফিউল্লাহ রানা তাঁদের কাছ থেকে আনন্দ প্রেক্ষাগৃহ কিনে নেন। পরে সম্রাট শাহজাহান তাঁর অংশ বিক্রি করে চলে যান। শফিউল্লাহ রানা বর্তমানে দেশ-বিদেশে নানা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এ অবস্থায় তিনি প্রেক্ষাগৃহকে আর লাভজনক মনে করছেন না। বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁর মালিকানার আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের প্রায় ১৭ কাঠা জমি বিক্রির চেষ্টা চলছিল। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন সম্প্রতি কিনে নিয়েছেন বলে তাঁর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। তবে প্রেক্ষাগৃহের মালিকপক্ষ এ কথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, প্রথমে আনন্দ প্রেক্ষাগৃহের জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, রাজধানী থেকে ধীরে ধীরে প্রেক্ষাগৃহের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার প্রথম প্রেক্ষাগৃহ শাবিস্তান থেকে শুরু করে লায়ন, রূপমহল, নাগর মহল, তাজমহল, গুলিস্তান, নাজ ও শ্যামলী ভেঙে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কিছু প্রাচীন প্রেক্ষাগৃহ ভাঙার পরিকল্পনায় রয়েছে। একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, 'চলচ্চিত্র ব্যবসার মন্দা ও জমির মূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকাসহ সারা দেশের অনেক প্রেক্ষাগৃহ হারিয়ে যাচ্ছে।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু