Home » , , » সাধারণের ভালোবাসায় সিক্ত দুই অনন্য প্রতিভা

সাধারণের ভালোবাসায় সিক্ত দুই অনন্য প্রতিভা

Written By Unknown on Tuesday, August 16, 2011 | 6:19 AM

মেঘ কেটে যাওয়া সকালের রোদে প্রকৃতি ছিল উষ্ণ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে গগনশিরীষ গাছগুলোর নিচে কালো ব্যানার টানানো মঞ্চের সামনে কফিনে শায়িত দুই বন্ধুর জোড়া লাশ। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। কফিন বন্ধ। নিমেষের আকস্মিকতায় প্রাণবন্ত মানুষ থেকে তাঁরা ক্ষতবিক্ষত শবদেহে পরিণত। সেই বেদনা ক্ষোভ হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা অগণিত জনের কথায়। রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, কবি, ছাত্র—সবাই বলেছেন, এ তো দুর্ঘটনায় মৃত্যু নয়, বলতে হয় রাজপথে প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড। রাষ্ট্র এর দায় এড়াতে পারে না।
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ যখন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের শববাহী গাড়ি শহীদ মিনারে আসে, এর আগে থেকেই মানুষে ভরে উঠেছিল চত্বর। নেপথ্যের করুণ সুর বিমর্ষতা ছড়িয়ে দিচ্ছিল পরিবেশে। দল-মত, বয়স-ধর্মনির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এসেছিলেন অকালপ্রয়াত এই দুই বন্ধু, দেশের দুই প্রতিভাবান কৃতী সন্তানের প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা নিবেদন করতে। প্রিয়জন হারানোর বেদনার সঙ্গে সমবেত মানুষের মনে তীব্র হয়ে উঠেছিল ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ নামের প্রতিকারহীন মৃত্যুর ক্ষোভ ও যন্ত্রণা।
আক্ষেপ করছিলেন সবাই, মাটির ময়না আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনেছিল। তারেক-মিশুক জুটির নতুন উদ্যোগ ছিল কাগজের ফুল। আগামী দিনে আরও নতুন নতুন কাজ হয়তো আরও বড় অর্জনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেত দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে। কিন্তু হায়, না ফুটতেই ঝরে গেল সেই ফুল!
শোকের মিছিল: ব্যানার নিয়ে, পুষ্পস্তবক সঙ্গে করে বা একাকী ফুলের গুচ্ছ নিয়ে মিছিলের মতো জনস্রোত নেমেছিল শহীদ মিনারে। উত্তর দিকের প্রবেশপথ থেকে যাত্রা করে পায়ে পায়ে তাঁরা শহীদ মিনারের মূল বেদির পাশ দিয়ে ঘুরে এগিয়ে আসছিলেন পুব পাশের প্রবেশপথের ধারে শোকমঞ্চের কাছে।
এর আগে সকালে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের শবদেহ আনা হয়েছিল এটিএন নিউজের কার্যালয়ে। সেখানে জানাজার পর পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হয়।
এখানে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শোক জ্ঞাপন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সাংসদ হাসানুল হক ইনু, আসাদুজ্জামান নূর, সারাহ বেগম কবরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমজীবী-পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে অগণিত মানুষ হূদয়ের নিখাদ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করেন।
সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, ছায়ানট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, গণসংগীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদ, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, বাউল একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, এফডিসি, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার, সমকাল, ভোরের কাগজ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল, টিএসসি, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতি, ’৭১-এর পরিবার, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় জাদুঘর, লোকশিল্প জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মুক্তির গানের শিল্পীবৃন্দ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারী প্রগতি সংঘ, নিজেরা করি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, প্রশিকা, নায়েম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, খেলাঘর আসর, প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদ, যুব ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, স্বভূমি লেখক পরিষদ প্রভৃতি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে এই শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়েছিল। জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ সংগঠনগুলোর পরিচিতি এবং প্রয়াত জনের নানা তথ্য ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। জোহরের নামাজের পর হয় জানাজা। কিন্তু এত লোকসমাগম হয়েছিল যে নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে এলেও অনেকেই দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করছিলেন ফুল নিয়ে।
শহীদ মিনার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের দিকে শবযাত্রার আগে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর তাঁদের শিল্পপ্রয়াস চালিয়ে গেছেন। বহির্বিশ্বে আমাদের গুপ্তহত্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের যে নেতিবাচক পরিচিতি রয়েছে, তার বিপরীতে আমাদের সৃজনশীলতার পরিচয় তুলে ধরেছিলেন তারেক মাসুদ। জাতি তাঁদের কখনো ভুলবে না।’ এরপর সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন প্রয়াত দুই কৃতীর স্মরণে। শহীদ মিনার চত্বরে নেমে আসে এক প্রগাঢ় স্তব্ধতা।
শোক থেকে ক্ষোভ: সাংসদ হাসানুল হক ইনু বললেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে যে বিশৃঙ্খলা চলছে, তাতে সরকার ও প্রশাসন যে আছে জনগণ তা টের পাচ্ছে না। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক বন্ধ হয়ে আছে। এক দিনে মহাসড়কে এমন ভয়াবহ অবনতি ঘটেনি। বোঝাই যায়, কোনো তদারকি নেই। গাড়ির চালকদের কীভাবে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, কেন এত দুর্ঘটনা ঘটছে—কোনো বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। এসব মৃত্যু হত্যাকাণ্ডেরই শামিল। দেশবাসী আর কোনো অজুহাত শুনতে চায় না। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আজ, এই মুহূর্ত থেকেই কাজ দেখতে চায় জনগণ। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ নিতে হবে। ব্যর্থ হলে এর দায়িত্ব কেউ এড়াতে পারবেন না।’
একই রকম প্রতিক্রিয়া ছিল প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর। বললেন, ‘যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। যাঁদের উদাসীনতায় রোজ অসংখ্য সাধারণ মানুষ ও প্রতিভাবান প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে, তাঁরা কী করে পদ আঁকড়ে থাকেন? কী দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা?’
প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এ ধরনের অপমৃত্যুকে আমি হত্যাকাণ্ড হিসেবেই গণ্য করি। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী আমাদের রাষ্ট্র। রাস্তাঘাট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ। কাজেই এমন দুর্ঘটনায় আরও কত প্রাণ ঝরে যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।’ তিনি বলেন, সরকার যদি এই মৃত্যু থেকে শিক্ষা না নেয়, তবে জাতিকে আরও চরম মূল্য দিতে হতে পারে।
কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলেও সরকারের টনক নড়ে না। সড়ক অচল মানে দেশ অচল। কর্মকর্তারা নিষ্ক্রিয়। যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত তাঁর অকর্মণ্য কর্মকর্তাদের সচেতন করার লক্ষ্যে। আমার মনে হয়, যোগাযোগমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা।’
প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, ‘জাতীয় সংকটের সবচেয়ে বড় প্রতিফলন সড়কপথের বিশৃঙ্খলা। এই দুই তরুণ প্রতিভার কাছে আমাদের আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। কিন্তু তাঁরা অকালে চলে গেলেন এই বিশৃঙ্খলার শিকার হয়ে।’
বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বললেন, ‘মানুষকে তো চলাচল করতে হবে। কাজেই পথের নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তারেক ও মিশুক বাংলা একাডেমীর হয়ে ভাষা আন্দোলনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছিলেন। এ বছরই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই কাজ আর আমরা দেখতে পারব না। জাতির জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখের ঘটনা।’
এভাবেই দুঃখ ও ক্ষোভ, শোক আর আক্ষেপ মিলে মানুষের মনে এক অসহ্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠছিল এই দুই প্রতিভার অকালপ্রয়াণ।
জানাজা: শহীদ মিনার থেকে শববাহী গাড়ি প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়।
তারপর আবার শবযাত্রা। শবানুগামী নানা বয়সী মানুষের ঢলের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল, মানুষের প্রতি যাঁরা আস্থা রাখেন, মানুষকে ভালোবেসে যাঁরা কাজ করে যান, তাঁদের প্রতিও ভালোবাসা জানানোর মানুষের অভাব হয় না কখনো।
দাফন: জানাজার পর মিশুক মুনীরের মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হিমাগারে রাখা হয়। তারেক মাসুদের মরদেহ নেওয়া হয় এফডিসিতে। সেখানে তাঁর জানাজা শেষে মরদেহ বিএসএমএমইউর হিমাগারে রাখা হয়।
মিশুক মুনীরের ছোট ভাই আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তা আসিফ মুনীর প্রথম আলোকে জানান, সিয়েরালিয়নে কর্মরত জাতিসংঘের কর্মকর্তা তাঁদের বড় ভাই আহমেদ মুনীর (ভাষণ মুনীর) মঙ্গলবার দেশে ফিরবেন। সেদিনই বাদ জোহর বনানী গোরস্থানে মিশুক মুনীরকে দাফন করা হবে।
তারেক মাসুদকে কোথায় দাফন করা হবে তা রোববার রাতেও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ফরিদপুর থেকে তারেকের মা এসেছেন। দাফনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
দোয়া মাহফিল: তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল হবে মিশুক মুনীরের পরিবারের উদ্যোগে। কাল মঙ্গলবার বাদ আসর ১৩৯ রামকৃষ্ণ মিশন রোডের চিওরা হাউসে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শোক: বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং সাংবাদিক মিশুক মুনীরের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, এই দুজন তাঁদের সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সাংবাদিকতার অঙ্গনে যে অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন, তা জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। এই মৃত্যুতে দেশ দুই অমূল্য প্রতিভা হারালো।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু