অবশেষে পৌরসভা নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। দেশের ৩১০টি পৌরসভার মধ্যে ২৬৯টিতে নির্বাচন হবে আগামী মাসে। মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোর নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকেই আলোচনা হচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হবে। পৌরসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ থাকবে না। প্রার্থীরা দলনিরপেক্ষ প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করবেন। যদিও এটা ঠিক যে প্রার্থীদের পেছনে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদ থাকবেই। নির্বাচন কমিশন পৌরসভা নির্বাচনে চার বিভাগকে চারটি জোনে ভাগ করেছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চার দিনে বিভাগভিত্তিক এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রথমে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭৬টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে ১২ জানুয়ারি। ১৩ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৫৪টি পৌরসভায়। ঢাকা বিভাগের ৭০টি পৌরসভায় ১৭ জানুয়ারি এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ৬৯টি পৌরসভায় ১৮ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে। বাকি ৪১টি পৌরসভার মধ্যে ২৪টিতে মামলা, সীমানা নির্ধারণ ও অন্যান্য জটিলতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না। আর ১৭টির মেয়াদ এখনো উত্তীর্ণ হয়নি। এর আগে সর্বশেষ ২০০৪ সালের মে মাসে দেশে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য নতুন কিছু বিধিবিধান রয়েছে। প্রার্থীদের অবশ্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং মনোনয়নপত্রে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নম্বর জানাতে হবে। এটা না জানালে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে না। নির্বাচনে প্রার্থীর যত আয়-ব্যয় তা ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই করতে হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সাত ধরনের ব্যক্তিগত তথ্যের হলফনামা জমা দিতে হবে। জামানতের পরিমাণ মেয়র প্রার্থীদের জন্য ভোটার অনুপাতে সর্বনিম্ন ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। কাউন্সিলরদের পাঁচ হাজার টাকা জামানত দিতে হবে ব্যাংক ড্রাফট অথবা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে। প্রচারণায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই বিধিবিধান থাকছে। পোস্টার যে প্রেসে ছাপা হবে, সেই প্রেসের নাম-ঠিকানাসহ কত পোস্টার ছাপানো হচ্ছে, তা জানাতে হবে। প্রচার শুরু করা যাবে প্রতীক বরাদ্দের পর, তার আগে নয়। মেয়র প্রার্থীরা ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবেন না। এ কাজ করবেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না। নির্বাচনকে সহজ করার অনেক কাজই এগিয়ে রাখা হয়েছে। ভোটারদের দেওয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, যদিও ভোটের সঙ্গে এ-জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও নির্বাচন কমিশন সেই তথ্য, ব্যাংক থেকে প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া যে সাতটি বিধান আরোপ করা হয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশনকে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কম। অন্যদিকে ব্যক্তিগত সাত তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় তথ্য গোপন করার সুযোগ থাকবে না। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করতে হয়। জনসভা ও নির্বাচনী মিছিল নিষিদ্ধ করায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে_এমনটি ধারণা করা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের কথাও জানিয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও উত্তেজনা-অস্থিরতার বিষয়েও নির্বাচন কমিশন সজাগ। যে ২৪টি পৌরসভায় মামলা, সীমানা নির্ধারণ ও অন্যান্য জটিলতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না, সেগুলোর জটিলতা দূর করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করতে হবে। অনেক সময় নিজেদের কার্যকাল দীর্ঘ করার জন্যও অনেকে মামলার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। নির্বাচন কমিশন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে_এটাই প্রত্যাশা।
Related Articles
If you enjoyed this article just Click here Read Dhumketo ধূমকেতু, or subscribe to receive more great content just like it.
0 comments:
Post a Comment