গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি অপচয় রোধ করাও। গ্যাসের অপচয় রোধকল্পে ইতিমধ্যে জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ কম পরিলক্ষিত হয়নি বটে, কিন্তু এর সুফল আশানুরূপ নয়। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের কারণে এই অপচয় বেশি হচ্ছে_ এ যুক্তি অমূলক নয়, অগ্রাহ্য করার মতোও নয়। এদিকে জ্বালানি সংকট ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সরকার এলপিজির (লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।
এ লক্ষ্যেই এ ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর কমানোর কথাও ভাবছে সরকার। আমরা মনে করি, সরকারের এই ভাবনা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং দূরদর্শী। সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে মানুষকে অধিকতর আকৃষ্ট করা গেলে একদিকে অপচয় রোধ হবে, অন্যদিকে, জনবিড়ম্বনাও লাঘব হবে অনেকটাই। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে কিছু জরুরি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।প্রথমেই দৃষ্টি দিতে হবে সিলিন্ডারজাত গ্যাসের প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ হ্রাস করার দিকে। দেশে বেশ কিছু সিলিন্ডার গ্যাস কম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটির ব্যবসায়িক সুনাম তুঙ্গে। তাদের ক্ষেত্রে সরকার যদি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে, তাহলে সরকার, জনগণ এবং ব্যবসায়ী_ এই ত্রয়ীরই যথেষ্ট কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব। এলপিজিসহ সিলিন্ডারের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর কমানোই যথেষ্ট নয়, আমদানির সব রকম পথও মসৃণ করা দরকার। দেশীয় আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন, ক্ষমতা এবং বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু তারা নানা রকম প্রতিবন্ধকতা-প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার কারণে মানুষের সহযোগিতায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তারা যথাযথ সরকারি সহযোগিতা পেলে সিলিন্ডারসহ তৎসংশ্লিষ্ট সব কিছুর মূল্যই সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সক্ষম হবে, অন্যদিকে, সরবরাহও পর্যাপ্ত করা সম্ভব। বৃহদাকারের সিলিন্ডার বা ট্যাংকের মাধ্যমে তা আরো ব্যাপকভাবে বাজারজাত করা গেলে শিল্পকারখানায়ও এর ব্যবহার বাড়বে। বিশেষ করে, আবাসিক ও ছোট গ্রাহকদের মধ্যে এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে পারলে এর ইতিবাচক দিক হবে বহুমুখী। বর্তমানে এলপিজির দাম বেশি হওয়ায় তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সরকারের নতুন উদ্যোগ যদি যথাযথভাবে কার্যকর হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান চিত্র পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার এবং এলপিজির আমদানিকারক, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয়ের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিলে অবশ্যই মানুষ উপকৃত হবে এবং জ্বালানি সংকট মোকাবিলা সহজ হবে। তবে সরকারকে এ ব্যাপারে অধিকতর এগিয়ে যেতে হবে। সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে হলে শুল্ক, কর হ্রাসের পাশাপাশি সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে আবাসিক ও গৃহস্থালি কাজে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী উদাহরণ। এ পদ্ধতি সামগ্রিকভাবে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এলপিজির দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা ও এর ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব নয়। বসুন্ধরাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের যথেষ্ট সক্ষমতা যেহেতু রয়েছে, সেহেতু এ ব্যাপারে সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়া। ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার প্রয়োজনে সরকারের তরফে এ জন্য গতিশীল কার্যক্রম দরকার। উচ্চারণসর্বস্ব ঘোষণা আর প্রতিশ্রুতির মধ্যে বিষয়টি বন্দি না রেখে ত্বরিত কাজের কাজ করা প্রয়োজন।
0 comments:
Post a Comment