দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বন্ধুদেশ ও উন্নয়ন-সহযোগীরা যেসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই নেতিবাচক।
জাতিসংঘসহ বেশির ভাগ সংস্থা ও দেশ বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচন, ভোটারের ন্যূনতম উপস্থিতি এবং নির্বাচনের আগে ও পরে সংঘটিত ব্যাপক সহিংসতায় হতাশা প্রকাশের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আবার আলোচনা শুরু করার তাগিদ দিয়েছে।
সুষ্ঠু ও সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা জরুরি। আরও বেশি জরুরি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার দ্বারা দেশ পরিচালিত হওয়া। দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশের জনগণ ৫ জানুয়ারি সর্বজনগ্রাহ্য সেই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন পায়নি। কেন পায়নি, এ জন্য কার দায় বেশি, সে তর্কের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো চলমান সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোর বিবৃতিতেও যার প্রতিধ্বনি রয়েছে।
যেসব দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রত্যাহারের বিষয়টিও ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তৈরি পোশাকশিল্পে সুষ্ঠু কর্মপরিবেশের অভাবের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি-সুবিধা তুলে নেওয়ার পর রাজনৈতিক কারণে ইইউ বা অন্য কোনো সংস্থা যদি কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমাদের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আলোচনার বাইরে রাখলে কিংবা তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ রহিত করা হলে তাদের অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। নির্বাচনোত্তর সহিংসতার দুটি দিক আছে। প্রথমটি আইনশৃঙ্খলাজনিত, দ্বিতীয়টি রাজনৈতিক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের কঠোর অবস্থানকে মানুষ স্বাগতই জানাবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করলে সেটি উন্নয়ন-সহযোগী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেমন সুনজরে দেখবে না, তেমনি চলমান রাজনৈতিক সংকটকেও ঘনীভূত করবে।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তাকে কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। এই অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দেশগুলোকে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা। সরকার যে সংবিধান রক্ষার জন্য নির্বাচন করেছে বলে দাবি করে, দেশ শাসনে সেই সংবিধানে বর্ণিত জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখা হলে অনেক সমস্যার সমাধানই সহজ হয়ে যাবে।
0 comments:
Post a Comment