Home » , , » ফেলানী হত্যার ঘটনায় ভারতের দুঃখ প্রকাশ

ফেলানী হত্যার ঘটনায় ভারতের দুঃখ প্রকাশ

Written By Unknown on Thursday, January 20, 2011 | 1:28 AM

কুড়িগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারত। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সীমান্তে গুলি না চালানোর আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকায় শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ভারতীয় পক্ষ এ আশ্বাস দেয়।
জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তে গুলি না চালানোর আশ্বাস দেওয়া হতে পারে। এদিকে বৈঠকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামি ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠক সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই খুনি বর্তমানে ভারতে আছে বলে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে ওই খুনিদের গ্রেপ্তার করে হস্তান্তরের অনুরোধ জানায়। তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি আছে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ। তবে ভারত এ ব্যাপারে আরো তথ্য চেয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় আইন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার সফিক আহমেদ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিকে এ বছরের মধ্যেই ফিরিয়ে আনার
ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ছাড়া পলাতক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন লে. কর্নেল (বরখাস্ত) নূর চৌধুরী, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ ও লে কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী।
এদিকে ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশের কারাগারে আটক অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চেয়েছে। গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদার। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্ত সমস্যার সমাধানে পৌঁছানো যাবে বলে তিনি আশা করছেন। এ বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আগামী দেড় মাসের মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসবেন।
বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের আগে গতকাল দুপুরে দুই দেশের যুগ্ম সচিবদের নেতৃত্বে যৌথ ওয়ার্কিং গ্র“পের বৈঠক শেষ হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে আলোচ্যসূচি হিসেবে নির্ধারিত সুপারিশমালায় সই করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উত্তর-পূর্ব) শম্ভু সিং। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেন দুই দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানরা।
ফেলানী হত্যার জন্য ভারত দুঃখ প্রকাশ করেছে কি না জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। অন্যদিকে ভারতের যুগ্ম সচিব শম্ভু সিং বলেন, ‘আমি দুঃখিত। কারণ আমি এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যথার্থ ব্যক্তি নই।’ তবে অনুষ্ঠান শেষে দেওয়া যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএসএফের হাতে নিহত নির্দোষ বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর বিষয়ে আলোচনার সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং অবশ্যই হত্যা বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তের কাছে বাংলাদেশি কিশোরী (ফেলানী) হত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সমবেদনা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার জন্য বৈধ পথগুলো ব্যবহার করতে এবং বিশেষ করে রাতে সীমান্তে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করতে অনুরোধ জানিয়েছে।
গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, ফেলানী হত্যার জন্য ভারত দুঃখ প্রকাশ করে গুলি না চালানোর আশ্বাস দিয়েছে। ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির আওতায় অপদখলীয় ভূমি, ছিটমহল বিনিময়ের মতো বিষয়ে এ বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, তখন সব সমস্যার সমাধান চূড়ান্ত হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার যুগ্ম সচিবদের নেতৃত্বে বৈঠকের সময়ই ফেলানী হত্যার ঘটনায় বিব্রত বোধ করেছিল ভারতীয় প্রতিনিধিদল। গতকাল সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফেলানী হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি ও খবর ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সামনে তুলে ধরা হয়। এ সময় ভারতীয় পক্ষ এ ব্যাপারে বিব্রত বোধ করে দুঃখ প্রকাশ করে বলে, এমন হত্যা তারা সমর্থন করে না।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাইয়ের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলকে ফেলানী হত্যার ছবি দেখানোর সময় দুইবার বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময় তাঁরা ফেলানী হত্যার কারণ জানতে চাইবেন। আপনারা উত্তর নিয়ে আসবেন।’
সূত্র জানায়, আজ ভারতীয় পক্ষ সাংবাদিকদের সামনে সীমান্তে গুলি বন্ধের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি ফেলানীকে হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থার কথা জানাতে পারে। গতকালের বৈঠকে তারা ফেলানীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এসেছিল।
এদিকে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, নারী ও শিশু পাচার, বন্দি প্রত্যর্পণ, নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যা, সীমান্তে বেড়া, অভিবাসন ইস্যু বিশেষ করে ভিসাব্যবস্থা সহজীকরণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারতের মূল দাবি ছিল, বাংলাদেশ থেকে কথিত ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যদিকে বাংলাদেশের দাবি ছিল, সীমান্তে সব ধরনের হত্যা বন্ধ করা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বলেছে, ভারত অনুপ চেটিয়াকে ফেরত চায়। তবে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।
জানা গেছে, ভারতের কারাগারে মোট ৫২৬ জন বাংলাদেশি আটক আছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব আজ সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর শেরাটন হোটেলে দুই দেশের প্রতিনিধিদল আবার বৈঠকে বসবে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু