Home » , , , , » কর ও ভ্যাটের আওতা না বাড়ানোর প্রস্তাব বিএনপির

কর ও ভ্যাটের আওতা না বাড়ানোর প্রস্তাব বিএনপির

Written By Unknown on Wednesday, June 8, 2011 | 1:06 PM

দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেছেন, গত দুই দশকে কোনো অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো এতটা বিপর্যয়ে আর পড়েনি। এর জন্য তিনি গত বছর বিএনপির প্রস্তাব না মানাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হলেও সরকার একে গুরুত্ব দেয় না। খালেদা জিয়া আরো বলেছেন, অর্থনীতির এই নাজুক অবস্থার মূলে আরো আছে মূল্যস্ফীতি, সার, চালের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া, শেয়ারবাজারে বিপর্যয় ইত্যাদি বিষয়।

গতকাল বুধবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে (সাবেক শেরাটন) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর বাজেট প্রস্তাবে এসব কথা বলেন। ওই প্রস্তাবে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। সংসদে অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার এক দিন আগে এই প্রস্তাব তুলে ধরল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
গত বছর বাজেটের আগে এ ধরনের বাজেট প্রস্তাব দেওয়ার রীতি চালু করে বিএনপি। তবে গত বছর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বাজেট ঘোষণার তিন দিন আগে। গতকাল প্রস্তাব ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছর পেশ করা তাদের বাজেট প্রস্তাব পুরনো হয়ে যায়নি উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোকেই আবার তুলে ধরেন। এর সঙ্গে যুক্ত করেন নতুন কিছু প্রস্তাব। এবারের প্রস্তাবে করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকা করা, বিদেশগামীদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়া, আইলাবিধ্বস্ত এলাকায় পুনর্বাসন বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ, বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তার হার বাড়ানো, তাঁতিদের ১৫ শতাংশ নগদ ভর্তুকি ও কৃষকদের জন্য সমবায় ব্যবস্থা গঠনে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি করা হয়।
এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর কর্তন রহিত করে সুদের হার পুনর্নির্ধারণ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থোক হিসাবে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ শতকরা ২৫ ভাগ কমানো, ভ্যাটের আওতা আর সম্প্রসারণ না করা, ডাক্তারের ফি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি, বাড়িভাড়া/স্থাপনা ও যাত্রীভাড়ার ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার, প্রতি উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি করে বয়স্ক নিবাস নির্মাণ, সারা দেশের জন্য ডে-কেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন প্রস্তাবের কথা বলা হয় বিএনপির বাজেট প্রস্তাবে।
অবকাঠামো উন্নয়নে বিএনপি বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো হলো রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সব বিভাগীয় শহরের উচ্চগতির ট্রেন চালু করা, ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণ, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং রেল যোগাযোগসহ দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণ। বিএনপি রেল যোগাযোগসহ দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করছে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
খালেদা জিয়া শুরুতেই বলেন, 'আমাদের এ বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপনের পেছনে উদ্দেশ্য ছিল জাতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের ধ্যান-ধারণা তুলে ধরা। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির সামনে একটি দিকদর্শন তুলে ধরা আমরা দায়িত্ব মনে করি। সেই চিন্তা থেকেই আমরা গত বছর বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার আমাদের ধারণাগুলোকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। যার ফলে আজ সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এক কথায় দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে।'
বিএনপির বাজেট প্রস্তাবে 'সংকট ঘনীভূত হচ্ছে' শীর্ষক একটি অনুচ্ছেদ রাখা হয়। সেখানে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকটের আশঙ্কা করা হয়। বলা হয়, চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের চিত্র নৈরাশ্যজনক। এটা কোনো আশার আলো দেখায় না। সরকারি মহল দাবি করছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬.৭ শতাংশ। অথচ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রাক্কলন অনুযায়ী এই প্রবৃদ্ধির হার ৬.৩ শতাংশের বেশি নয়। দেশীয় একটি সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকও প্রায় একই ধরনের প্রাক্কলন করেছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হিসাব বারবার সংশোধন, তথ্যের অসামঞ্জস্য ও হিসাবপ্রক্রিয়ার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে প্রস্তাবে দাবি করা হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, প্রবৃদ্ধির যে হার দাবি করা হচ্ছে, পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে, দীর্ঘমেয়াদে এই প্রবৃদ্ধিও টেকসই হবে না। সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, সরকার যে প্রবৃদ্ধির হার দাবি করছে সেটাও পরিসংখ্যানে কারচুপির ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের প্রতি জনৈক মন্ত্রীর রক্তচক্ষু প্রদর্শন সর্বজনবিদিত।
পরিবহন ও জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যাওয়াকে 'মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা' বলে অভিহিত করেন খালেদা জিয়া। জনগণের বিপুল অংশের নিট আয় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪১ শতাংশ, একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫১ শতাংশ। বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থেও (রেমিট্যান্স) নামমাত্র প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি হিসাবে জুনের শেষে ঘাটতি দেখা দেবে, লেনদেনের ভারসাম্যেও ঘাটতি দেখা দেবে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দাবি করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হচ্ছে বিশালভাবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রশ্নে সরকারের দুজন মন্ত্রীকে ভিন্নমত পোষণ করতে দেখা গেছে। তাহলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হলো কী করে?'
শেয়ারবাজারের বিপর্যয় থেকে ফায়দা লুটকারী গোষ্ঠীর পাচার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচারের কারণে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে যেখানে মার্কিন ডলারের মূল্যমান কমছে, সেখানে বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান বাড়ছে।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচক নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূলত ভোগতাড়িত হওয়ায় ভঙ্গুরতায় ভুগছে। মূল্যস্তর, বিনিয়োগ, সঞ্চয়, বাজেট ঘাটতি, শিল্পোৎপাদন, বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হার, বিদেশি মুদ্রার মজুদ এবং কর্মসংস্থান সবই নেতিবাচক। বিগত দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ এবারই সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থায় পড়েছে।
বাজেটের আকার বাড়লেও সে হিসাবে উন্নয়ন ব্যয় বাড়ছে না উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি সরকারের শেষ বাজেটের তুলনায় বর্তমান বাজেট ১২০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয় পাঁচ বছরে বেড়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। ফলে বাজেটে উন্নয়ন প্রাধান্য ধীরে ধীরে কমছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া। মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় আগামী বাজেটের জন্য ঘোষিত ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি খুব বেশি নয় বলে উল্লেখ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তবে এর অর্থসংস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ওপর ক্রমবর্ধমান ভর্তুকির চাপ বেড়ে গেলে রাষ্ট্র ভয়াবহ রাজস্ব আয়ের সংকটে পড়বে। ফলে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। বেসরকারি খাত ঋণ-দুর্ভিক্ষে নিক্ষিপ্ত হবে, সামগ্রিক উৎপাদন ব্যাহত হবে।
দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে সরকার কৃত্রিম পরিসংখ্যান দিয়ে কারসাজি করছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, গত বছর সরকার বলেছিল দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৩৭.৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। এক বছর পর সরকার বলছে, দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা বলছে, ২০১০ সালের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে নতুনভাবে ১.৫৯ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে প্রবেশ করেছে।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গেছে উল্লেখ করে খাদে জিয়া বলেন, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে রেখে ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার প্রতিশ্রুতির ধারেকাছেও নেই। সর্বশেষ এপ্রিলে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৫৪ শতাংশ। গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ আরো বেশি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মার্চের হিসাবে মোটা চালের দাম ৩২ শতাংশ, আটার দাম ৫০ শতাংশ, ভোজ্য তেলের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষের ৩৩ শতাংশ আয় দিয়ে চাল কিনতে হয়।
সারের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ইউরিয়ার দাম কেজিপ্রতি আট টাকা বাড়ানোর ফলে উৎপাদন খরচ বাড়বে ৪০ শতাংশ। এতে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির লোকসানের বোঝা দিন দিন বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয় বিএনপির প্রস্তাবে। সেখানে বলা হয়, বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার ফলে জাতীয় বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তাদের ওপর ভর্তুকির দায়ও চাপানো হচ্ছে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাবে। অপরিকল্পিতভাবে তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায় তরল জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে জাতীয় বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।
খালেদা জিয়া আরো বলেন, কোনো টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যুৎ সেক্টরে কুইক রেন্টাল পাওয়ার কেন্দ্রের বেশির ভাগই দেওয়া হয়েছে সরকারদলীয় ব্যবসায়ীদের। এসব জায়েজ করার জন্য পাস করা হয়েছে ইনডেমনিটি অ্যাক্ট এবং সংশোধন করা হয়েছে পিপিআর অ্যাক্ট। টিসিবির ডিলারশিপ, খোলাবাজারে বিক্রি কর্মসূচির (ওএমএস) ডিলারশিপ ও সার বিতরণের জন্য ডিলার নিয়োগ দিয়ে দলীয় ব্যক্তিদের মধ্যে সুযোগ বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও একটি ব্যক্তি-উদ্যোক্তাগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপির লক্ষ্য হলো, এদের কার্যকর নীতি-সহায়তা দিয়ে স্বাবলম্বী ও আত্মমর্যাদাবোধে বিশ্বাসী করে গড়ে তোলা।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু