Home » , » অনিরুদ্ধ হুমায়ুন আজাদ by নওশাদ জামিল

অনিরুদ্ধ হুমায়ুন আজাদ by নওশাদ জামিল

Written By Unknown on Thursday, August 11, 2011 | 6:08 PM

স্পেনের অন্তরতম সন্তান বিশ্বখ্যাত কবি ও নাট্যকার ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা। দেশকে তিনি ভালোবেসেছিলেন আর দেশের জন্য শহীদ হয়েছিলেন দেশেরই হিংস্র শাসক ও সহযোগীদের হাতে। হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুও অনেকটা লোরকার মতোই। ঘাতকরা তাঁকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল, তবে বিস্ময়করভাবে আক্রান্ত হওয়ার পরও কিছুদিন বেঁচেছিলেন তিনি। পরে মৃত্যু তাঁকে গ্রাস করে। বহুমাত্রিক লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার। ২০০৪ সালের এই দিনে জার্মানিতে মারা যান প্রথাবিরোধী এ লেখক। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমীতে বইমেলা শেষে রাতে বাড়ি ফেরার পথে মৌলবাদীদের হামলার শিকার হন তিনি।
লোরকার স্মৃতি স্মরণে স্পেনে রয়েছে জাদুঘর, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার। কিন্তু আমাদের দেশে বরেণ্য ব্যক্তিদের স্মরণে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। বিদেশে লেখক-কবিদের বাড়ি সংরক্ষণ করা হয় সরকারি উদ্যোগে। আমাদের এখানেও নেতা-নেত্রীদের নামে কত কিছু করা হয়। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, দলীয় লোকের নামে সড়ক ও স্থাপনা করা হয়। তবে দেশের বরেণ্য লেখক হুমায়ুন আজাদের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে তিনি লিখেছিলেন, 'শামসুর রাহমান : নিঃসঙ্গ শেরপা'। তিনিও ছিলেন অনেকটা নিঃসঙ্গ। জীবিতকালে তিনি একাই লড়াই করে গেছেন কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। মৃত্যুর পরও তিনি যেন নিঃসঙ্গ।
হুমায়ুন আজাদের স্ত্রী লতিফা কোহিনূর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তাঁর স্মৃতি রক্ষার জন্য কেউ কিছু করছেন না। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে। তাদের কথা শুনে আমরা ভাবি, হুমায়ুন আজাদের হত্যার বিচারটা তাদের দ্বারা হবে এবং তাঁর অবদান স্বীকৃত হবে। তাঁর স্মৃতি সংরক্ষিত হবে। তাঁকে মর্যাদা দেওয়া হবে যথাযোগ্যভাবে। এই যে স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক দেওয়া হয়, হুমায়ুন আজাদ কি তা পাওয়ার যোগ্য নন? বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি তো বহুমাত্রিক লেখক ছিলেন, এমনকি ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবেও তাঁর যে অবদান সে জন্যও তো তিনি একটি পুরস্কার পেতে পারতেন। কিন্তু তিনি কিছুই পাননি। তাঁর নামে একটি সংগ্রহশালা গড়ার উদ্যোগও নিচ্ছেন না কেউ। এমনকি তাঁর কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এটা আমাদের খুব পীড়া দেয়।'
বাঙালি জাতিসত্তার উন্মেষ এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সম্মানের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করে গেছেন হুমায়ুন আজাদ। তিনি অমলিন হয়ে আছেন বাঙালির কাছে, বিশ্বমানবের কাছে। বাঙালির সমাজজীবন, প্রকৃতি ও ঐহিত্যগতভাবে অর্জিত সংস্কৃতি, সাহিত্য আর শিল্পের মাধুর্যকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বময়। কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-সমালোচনাসহ শিল্পের প্রায় প্রতিটি শাখায় তিনি আলো ছড়িয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট আলোক কণা আমাদের অন্ধকারে পথ দেখায়, প্রাণিত করে। তবে বরেণ্য এ লেখকের নামে ঢাকায় কোনো সড়কের নামকরণ হয়নি কিংবা তাঁর নামে কোনো স্থাপনা নেই। এটাকে অন্যায় হিসেবে দেখছেন তাঁর ভক্ত-সুহৃদরা।
হুমায়ুন আজাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বইয়ের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। রয়েছে দেশি-বিদেশি সাহিত্যের বিপুল ভাণ্ডার। দেশ-বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি পদক পেয়েছেন। অনেক খ্যাতনামা লেখক তাঁকে স্বাক্ষরসহ বই উপহার দিয়েছেন। এসব পদক ও বই সংরক্ষণ করার জন্য যে আর্থিক সামর্থ্য থাকা দরকার, তা তাঁর পরিবারের নেই। এ বিষয়ে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে তাঁরা মত দেন।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কবির হার্দিক সম্পর্ক ছিল। তিনি কবির চিকিৎসার জন্য অনেক কিছু করেছিলেন। এখন কবি নেই। তাঁর স্মৃতিরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে এলে সেটি বাংলা ভাষার একজন বরেণ্য লেখকের প্রতি সমগ্র জাতির সম্মান ও শ্রদ্ধার নিদর্শন হয়ে থাকবে।
হুমায়ুন আজাদের মেয়ে মৌলি আজাদ বলেন, প্রথাবিরোধী এ লেখকের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আশা করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাঋদ্ধ সরকার লেখকের স্মৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসবে। তিনি বলেন, 'সরকার চাইলে আমরা বসে ঠিক করতে পারি। সবার পরামর্শ নিয়ে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে কিছু করা দরকার।'
হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকায় তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মৌলি আজাদ। তবে হুমায়ুন আজাদের জন্মভূমি মুন্সীগঞ্জের রাঢ়িখালে তাঁর সাহিত্য ও কর্মজীবন নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
হুমায়ুন আজাদ মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল। তাঁর পৈতৃক বাড়ি রাঢ়িখাল গ্রামে। তিনি তাঁর পৈতৃক বাড়ি রাঢ়িখালের জ্যোতির্ময় আঙিনায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
হুমায়ুন আজাদ রাঢ়িখালের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। মেধাবী ছাত্র হুমায়ুন আজাদ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৭৬ সালে তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি লাভ করেন।
'অলৌকিক ইস্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে' প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। ১৯৯৪ সালে তিনি 'ছাপ্পানো হাজার বর্গমাইল' দিয়ে ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত 'সবকিছু ভেঙে পড়ে' বইয়ের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। এ ছাড়া তাঁর প্রবন্ধ, গবেষণা, স্মৃতিকথা, অনুবাদ, ভাষাবিজ্ঞান, শিশুসাহিত্যসহ প্রায় ৬০টি পাঠকনন্দিত বই রয়েছে।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু