Home » , , , , , » এ কেমন গণতন্ত্র? by বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম

এ কেমন গণতন্ত্র? by বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম

Written By Unknown on Tuesday, January 28, 2014 | 4:30 AM

৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্রের জানাজা হয়েছে। সারা পৃথিবী অমন নির্বাচন কখনও দেখেনি। ভোটার নেই, প্রার্থী নেই, অর্ধেকের বেশি আসনে এমনিই জয়ী- এমন ন্যক্কারজনক ঘটনাকে বর্তমান শাসক দল যেভাবে হেলাফেলা করছে তাতে মনে হয় সরকার যেন সমুদ্র জয়ের মতো বিশ্ব জয় করে  ফেলেছে।
এ দেশের মানুষ কখনও অন্যায় মাথা পেতে নেয় না। ঘোর কেটে গেলে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর অবকাশ পেলে সরকারের এসব ভানুমতির খেল হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। কেউ যদি তার ব্যর্থতা বুঝতে না চায় তাহলে কার কি করার থাকে? ৩০০ আসনের ১৫৩টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, বাকিগুলোতেও নিজেরা নিজেরাই ভাগাভাগি। সর্বদলীয় ভাগাভাগির নির্বাচন, ভাগাভাগির সংসদ, ভাগাভাগির মন্ত্রিসভা এবং বিরোধী দল। এমন ব্যর্থ সংসদ আর হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন তার সংসদে বিরোধী দল নেই। কিন্তু না। জাতীয় পার্টির কিছু সরকারে, কিছু বিরোধী দলে। বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। যে লাউ, সে-ই কদু। আগে ছিলেন সংসদ নেতা বেগম খালেদা জিয়া, বিরোধী নেতা শেখ হাসিনা। তারপর সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধী দলে বেগম খালেদা জিয়া। সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। এবার সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। গতবার শেষের দিকে শিরিন শারমিন চৌধুরী স্পিকার ছিলেন। ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছাড়া সাধারণত স্পিকার হন না। এবার মহিলা সদস্য না হওয়ায় শিরিন শারমিন চৌধুরীর স্পিকার হওয়ায় অসুবিধা আছে। তবে আওয়ামী লীগ নেত্রী সব করতে পারেন। শিরিন শারমিনের দক্ষতা নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন নেই। আমার প্রশ্ন, সমান নারী-পুরুষের দেশে পুরুষের স্থান কোথায়? এসবের পরও কিন্তু সাধারণ নারীরা বড় বেশি বঞ্চিত। তা ছাড়া পরোক্ষ নির্বাচিত স্পিকার পৃথিবীর কোথাও তেমন মর্যাদা পায় না। স্পিকারের পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অভিভাবকের পদ। তাই তার বয়স, গ্রহণযোগ্যতা, মেধা ও মননের দিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখা দরকার।
স্বৈরাচার পতনের পর একটা গণতান্ত্রিক রূপ নেয়ায় দেশবাসী বেশ ভালই ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঘাড়ে সরাসরি যতক্ষণ জাতীয় পার্টি ও জামায়াত না ছিল ততক্ষণ মোটামুটি একটা গণতান্ত্রিক চরিত্র ছিল। কিন্তু এখন আর সেসবের কোন বালাই নেই। যুদ্ধাপরাধী বিএনপির গলার মালা, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বরমালা। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কপাল! নির্বাচনের আগে বারবার বলেছেন এমন নির্বাচনে গেলে দেশবাসী থুতু দেবে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। কোন আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আবার কোন আসনে জামানত হারিয়েছেন। দুনিয়ায় এমনও হয় যে, একটায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী, অন্যটায় জামানত হারায়? এটাও কি মেনে নিতে হবে? একজন নারীর পুরুষ হওয়া এমন অবাস্তবতা মেনে নিলেও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বৃহত্তর রংপুরে জামানত হারিয়েছেন- এটা মেনে নেয়া খুব একটা সহজ নয়। এরশাদের আগে এ অঞ্চলে কোন স্বৈরশাসক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজনীতি করতে পারেননি। এরশাদ ভালভাবেই করেছেন। তিনবার একাধিক আসনে জয়ী হয়েছেন যা আর কেউ হননি। সেই ভদ্রলোক যে একটি আসনে এবার জামানত খোয়ালেন, একটু লজ্জাও পেলেন না, নাকি সব লজ্জা চুলায় গেছে? তিনি তো নির্বাচন করতে চাননি, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে চেয়েছেন, তাহলে এ প্রতারণা কেন? শপথ কেন? দূত হওয়ায় গর্বের কি? তার স্ত্রী গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা, তিনি গৃহপালিত দূত। বর্তমানে তার যে ভাবমূর্তি তাতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে দেশের ভাবমূর্তি মন্দ ছাড়া ভাল কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না। বুঝতে পারছি না আগামী দিনে কপালে কি আছে! আগে ছিল মহাজোট, এখন ভোটহীন সরকার। এটা জোট না আওয়ামী লীগ কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনের আগে সংবিধানের অজুহাত দিয়েছেন, এখন বলছেন ৫ বছরের জন্যই তারা নির্বাচিত। ভাল কথা, ৫ কেন, ২৫ বছর থাকলেই বা দোষ কি? ২০৪১ সাল পর্যন্ত তো নানা কথা বলছেন। তবে সমস্যা হলো মানুষ ভাবে এক, আল্লাহতায়ালা করেন আরেক। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। যখন মারে কেউ আর সোজা হতে পারে না। সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে যত সব অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল তার শেষ পরিণতি ৫ তারিখের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যে সহিংসতা ঘটেছে বাংলাদেশে আর কখনও তেমন হয়নি। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানের হাজার বছরের সহাবস্থান। সেটাকে ধ্বংস করার একটা চেষ্টা এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। হাজার বছর আমরা একত্র বাস করেছি। আর্য-অনার্য-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান একসঙ্গে বাস করতে আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি। মুসলমান বাদশাহর হিন্দু সেনাপতি, মন্ত্রী। হিন্দু রাজার মুসলমান সেনাপতি মন্ত্রী কোন অসুবিধা হয়নি। ভাই ভাই হিসেবে আমরা পাশাপাশি বাস করেছি। ’৪৭-এ ইংরেজ ভারত ত্যাগের সময় আমাদের অসামপ্রদায়িক সমাজ ভেঙে সামপ্রদায়িকতার বীজ বুনে যায়। যাতে আমরা মাঝেমধ্যেই আক্রান্ত হই। কখনও স্তিমিত আবার কখনও আগ্নেয়গিরির মতো সামপ্রদায়িক লাভা উদগীরণ শুরু হয়।
অতি সমপ্রতি নির্বাচন নিয়ে সে রকম দাঙ্গা-হাঙ্গামার বহিঃপ্রকাশ দিনাজপুরের কর্নাই, ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া, যশোরের অভয়নগর এলাকায়। দাঙ্গা-হাঙ্গামার কথা পত্রপত্রিকায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়। তাই গত ২২শে জানুয়ারি দিনাজপুরের কর্নাই এবং ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া, গোপালপুরের দেওনিয়া বাজার গিয়েছিলাম। দিনাজপুরের কর্নাইয়ে এবং ঠাকুরগাঁওয়ের দেওনিয়া বাজারের ঘটনা প্রায় একই। দিনাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের পথে হাজী দানেশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পাড় হয়ে পশ্চিমে কয়েক কিলোমিটার গেলেই কর্নাই প্রাথমিক বিদ্যালয়- সেখানেই ভোটকেন্দ্র। কর্নাই ভোটকেন্দ্রের পাশে ৪০-৫০ গজও হবে না কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দোকানের পিছে খুবই দরিদ্র কয়েক ঘর সাহা শুঁড়ি সমপ্রদায়ের বাস। সেখানে একটি মাটির ঘরের চাল পুড়েছে, ঘরের একমাত্র দরজা-জানালা অক্ষত। ৪০-৪৫ ফুট লম্বা মাটির ঘর মাঝামাঝি দেয়াল দিয়ে ৩-৪টি রুম করা হয়েছে। লম্বা ১০-১২ ফুট, পাশ ৮ ফুট। চারদিকে দেয়াল ঠিক আছে শুধু উপরের চাল পুড়েছে। কি করে যে দরজা-জানালা চারপাশের সব কিছু ঠিকঠাক রেখে ওভাবে পুড়লো বারবার দেখেও বুঝতে পারলাম না। পোড়া ঘরে ঢুকতেই ঘরের মালিক সন্তোষ চন্দ্র সাহা বললো, মালিরা চাপিরা এই কাজ করেছে। প্রথম বুঝতে পারিনি মালি, চাপি কি। পরে বুঝলাম মালদার থেকে যারা এসেছে তারা মালি, আর চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে যারা এসেছে তারা চাপি। আমাদের কাছে কিছু শীতবস্ত্র ছিল যা ডা. জাহিদ এবং প্রিয় নুরুল ফজল বুলবুল এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে দিয়েছিল। কষ্ট হলেও প্রায় ১৫ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। ছিন্নমূল মানুষের কাড়াকাড়ির জন্য সেগুলো ভালভাবে দিতে পারিনি। কিন্তু যা পেরেছি তাতেই আনন্দে মনটা ভরে গেছে। সেখান থেকে গিয়েছিলাম কাঞ্চন নদীর পাড়ে মহাদেবপুর। যেখানে মালি আর চাপিরা থাকে। কর্নাইতে হিন্দু, মহাদেবপুরে মুসলমানের বাস। যাওয়ার সময় কেউ কেউ বলছিল সেখানে যাবেন না। আমি যখন যাই তখন আসরের সময় ছিল। মহাদেবপুরে ৩টা মসজিদ- সাহাপাড়া, বকরীপাড়া আর কাঞ্চন নদীর ধার জামে মসজিদ। মসজিদ ভাঙচুর করা হয়েছে, ইটপাটকেল পড়ে আছে। ঘটনার ১৮ দিন পরও মহাদেবপুরের অনেক বাড়ির দরজা-জানালা, চুলা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙা পড়ে থাকতে দেখেছি। নামাজ পড়েছি মসজিদের সামনে বারান্দায় ঝাড়ু দিয়ে। ইটপাটকেল তখনও ছড়ানো-ছিটানো ছিল। ১৮ দিন আজান হয়নি। শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশে মহাদেবপুর গ্রামে একটি পুরুষও নেই, এমনকি নামাজ পড়ার ইমাম, আজান দেয়ার মুয়াজ্জিন নেই। ৪০-৪৫ বছরের শহর বানু, স্বামী বেলাল হোসেন, ইসমত আরাসহ ১০-১২ জন বারবার পায়ে পড়তে চেষ্টা করছিল। ছোট-বড় যেই হোক কেউ পায়ে পড়তে নিলে এখন আর ভাল লাগে না, বুক কেঁপে ওঠে। অনেক বলে কয়ে অনুনয় বিনয় করে তাদের থামানো হয়েছিল। গ্রামে একটা পুরুষ নেই। খুব অবাক হয়েছি, যৌথবাহিনীর সঙ্গে গিয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িঘর ভেঙেছে, ছোটখাটো লুটতরাজ করেছে সেসবের বিচারের কথা না বলে শুধু কান্নাকাটি করেছে ‘শান্তি চাই আর শান্তি চাই, স্বামী-সন্তান নিয়ে নিরাপদে থাকতে চাই’। মহাদেবপুর কাঞ্চন নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় আলুর চাষ। পুরুষ নেই, কেউ আলু তুলতে পারছে না। আর ক’দিন গেলেই পচে যাবে। দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও ডিসি, এসপিদের চিঠি দিয়েছি শান্তিপ্রিয় মানুষদের যেন হয়রানি না করা হয়। আর কিছু না হোক কয়েক শ’ হেক্টর জমির আলু তুলে যেন বাজারে সরবরাহ করা হয়। আর যদি নেয়াহেতই তা না পারেন তাহলে নিজেরাই গিয়ে মহাদেবপুরবাসীর ক্ষেতের আলু তুলে নেন। জানি না আমার কথা শুনবেন কিনা। শোনা না শোনা তাদের ব্যাপার। আমার কাজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া।
কর্নাই ও মহাদেবপুরের ঘটনায় আমি কোন সামপ্রদায়িকতা দেখিনি। ঘটনাটি সম্পূর্ণই রাজনৈতিক। আরও অবাক হয়েছি, ভোটকেন্দ্রের ৪০-৫০ গজের মধ্যে বেলা ১টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকতে আগুন দেয়া হলো কি করে? আরও মজার ব্যাপার, সেনাবাহিনীর ভ্রাম্যমাণ টিম কর্নাইয়ের এ ঘটনার সময় শামীম, পিতা লুৎফর রহমান, আরেকজন কামরুল ওরফে কামু, পিতা বাটু মিয়াকে হাতেনাতে ধরে দু’জনকে থানায় সোপর্দ করেছিল। যাদের গভীর রাতে দিনাজপুরের বর্তমান হুইপ আমাদের নেতা রহিম ভাইয়ের ছেলে ইকবালুর রহিম ছাড়িয়ে এনেছে। তাই এ ব্যাপারে আর কি বলি? শত বছর যারা পাশাপাশি বাস করছে, কর্নাইয়ের যে ক’টি দোকানপাট পুড়েছে, একটা হিন্দুর দোকান পাশের দু’টি মুসলমানের। ২২-২৩টা দোকানের মধ্যে মুসলমানদের ১৫-১৬টা। কোন দিন ওই এলাকায় সামপ্রদায়িক অশান্তি হয়নি। কিন্তু এখন হিন্দু মুসলমান ভাগ হয়ে গেছে। অথচ উভয় সমপ্রদায়ই খুব গরিব। ফেরার পথে মাগরিবের নামাজের সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। তাই হাজী দানেশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ মিয়া হলের পাশে রাস্তায় নামাজ আদায় করেছি। সেখানেই শুনলাম ছাত্রলীগ, যুবলীগ চাঁদাবাজদের কারণে ঠিকাদাররা ৩-৪ মাস ড. ওয়াজেদ মিয়া হলের কাজ করতে পারেনি। কথাটা শুনে আসমান থেকে পড়েছিলাম। ভাল করে খোঁজখবর নিয়ে জানলাম ঘটনা সত্য। অবাক হয়ে গেলাম, দেশের প্রধানমন্ত্রীর স্বামীর নামে একটি হলের নির্মাণকাজ তারই দলের চাঁদাবাজদের জন্য যদি ৩-৪ মাস বন্ধ থাকে তাহলে অন্যদের উপায় কি? দেশের আইনশৃঙ্খলা কত উন্নত! ভাবতে ভাবতে ঠাকুরগাঁওয়ের পথে চলেছিলাম। কখন গভীর রাত হয়ে গিয়েছিল বুঝতে পারিনি।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু