Home » , , , , » আমরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি গুন্ডেরা নহে by মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

আমরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি গুন্ডেরা নহে by মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

Written By Unknown on Saturday, March 1, 2014 | 4:08 AM

কলাম লিখতে গিয়ে প্রিয় ও অপ্রিয় অনেক বিষয়ই চলে আসে। এই কলামের বিষয়টা অনেকের কাছে অপ্রিয় কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের হৃদয়ের কাছে একটি প্রিয় বিষয় এবং মনের আকুতি। বিষয়টি হচ্ছে- অতি সমপ্রতি বাজারে আসা একটি হিন্দি সিনেমা।

সামপ্রতিক বলিউডি ছবি ‘গুণ্ডে’তে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ছবির শুরুতে নেপথ্য কণ্ঠে বলা হয়েছে- ‘১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১, শেষ হলো ভারত-পাকিস্তানের তৃতীয় যুদ্ধ। প্রায় ৯০ হাজার পাকিস্তানি ফৌজ আত্মসমর্পণ করলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে সেদিন। এটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় আত্মসমর্পণ। এই যুদ্ধের ফলে জন্ম নিলো একটি নতুন দেশ, বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষই পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, তাঁরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এর প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেন, ছবিটি যেহেতু ভারতীয় সেন্সর বোর্ড হয়ে এসেছে, বোর্ড মেম্বাররাই ছবিটির সেন্সর ছাড়পত্র দিয়েছেন এবং তারা যেহেতু সরকারেরই নিযুক্ত, সুতরাং ভারত সরকার সচেতনভাবেই কাজটি করেছে। তবে আমি মনে করি না যে, ভারত সরকার সচেতনভাবে এই কাজটি করেছে। আমি মনে করি ভারতের জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশের মনের অবচেতন অংশে এইরূপ ধারণা বিদ্যমান এবং সেই ধারণাটাই এই সিনেমার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। গুণ্ডে ছবির সমালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সরকারেরও সমালোচনা হচ্ছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে দেখার পরও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট প্রতিবাদ জানানো হয়নি।
আমাদের চলচ্চিত্র জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার অনেকটা এ রকম বলেছেন, ‘আমরা স্বীকার করি স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত আমাদেরকে সহায়তা করেছে। স্বাধীনতা, বাংলাদেশের লাখ লাখ সংগ্রামী মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমাদের অর্জন। কারও দয়ায় নয়। ‘গুণ্ডে’ ছবিতে বলা হয়েছে, ভারত, যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। আমি তাদের এই মনোভাবে বিস্ময় প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন কলমসৈনিক হিসেবে আমার রক্ত, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আর ৩ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের কি কোন মূল্য নেই?’ আমাদের চলচ্চিত্র জগতের আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব চাষী নজরুল ইসলাম অনেকটা এ রকম বলেছেন, ‘গুণ্ডে ছবির উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত।’ বিখ্যাত সংগীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী যা বলেছেন তার মধ্যে অন্যতম একটি বক্তব্য হচ্ছে- ‘এই ছবির প্রতি আমার ঘৃণা জন্মেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পর বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের চলচ্চিত্রের মতো একটি বড় ক্যানভাস থেকে এমন মেসেজ সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক এবং এলার্মিং।’ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি এই কলামে কিছু কথা তুলে ধরতে চাই এবং গুণ্ডে ছবিতে প্রকাশিত মনোভাবের কারণে এই কথাগুলো অতিরিক্ত তাৎপর্য বহন করে বলে আমি মনে করি। আমার কথাগুলো নতুন নয়।
মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য বিভিন্ন বয়সী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর নিকট কম-বেশি ভিন্নভাবে প্রতিফলিত বা উদ্ভাসিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র ১৯৭১ সালের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা তথা মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এর সাক্ষী। বয়সের ভারে এবং অন্যান্য সাংসারিক চাপে তারা অনেকেই ক্লান্ত। তাদের কাছে বিজয় দিবসের তাৎপর্য এবং ’৭১ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ওই দিবসটির তাৎপর্য কম-বেশি ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। প্রতি বছর যখন মার্চ বা ডিসেম্বর আসে তখন আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম এবং যুদ্ধের মাধ্যমে একটি আক্রমণকারী বা হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় অর্জন করেছিলাম। আমরা কিছু অনুভূতি ও চেতনাকে অন্য কিছু অনুভূতি ও চেতনার উপর অধিকতর মূল্য দিয়ে স্থাপন করেছিলাম। বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা শুরু করেছিলাম ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সন্ধ্যা থেকে। মরুভূমিতে রাত্রে পথ চলার সময় পথিক যেমন বারবার আকাশের উত্তরাংশে উজ্জ্বলভাবে স্থিত ধ্রুবতারার দিকে তাকায় নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে, তার গন্তব্যের দিক ঠিক আছে কিনা, অথবা আধুনিক যুগে সৈনিক বা নাবিক কম্পাস এর কাঁটা মিলিয়ে দেখে গন্তব্যের দিক ঠিক আছে কিনা, তেমনই রাজনৈতিকভাবে আমরা প্রতি বছরের ১৬ই ডিসেম্বর এলে অন্তত একবার হিসাব মিলানোর সুযোগ পাই। কিসের উপর বিজয় অর্জন করেছিলাম, অর্জনটুকু ঠিক আছে না ক্ষয়ে গিয়েছে এবং পথভ্রষ্ট বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে থাকলে কি করা যেতে পারে? তবে এই ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে তথা মার্চ এর আগমনের মুহূর্তে এই তাৎপর্য আর কি অতিরিক্ত গুরুত্ব পায় এবং কেনই বা অতিরিক্ত গুরুত্ব পায় সেটা অতি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরতে চাই।
দর্শনীয়ভাবে (ইংরেজি ভাষায় ভিজিবলি) পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ও তাদের সহযোগিতাকারীদের ওপর বিজয় অর্জন করেছিল মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ কমান্ড। দর্শনীয়ভাবে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের উপর বিজয় অর্জন করেছিল ভারত ও বাংলাদেশ নামক দু’টি রাষ্ট্র। দার্শনিক বা তত্ত্বীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে: (এক) পাকিস্তানি সামরিক শাসন তথা স্বৈরশাসনের ওপর বিজয় অর্জন করেছিল তৎকালীন পূর্ব- পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের শক্তি ও ইচ্ছা। (দুই) পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ বাধ্য করছিল বাঙালিদেরকে পাকিস্তানে থাকতে। ওই প্রক্রিয়াকে অস্বীকার (ইংরেজি ভাষায় ডিনাই) করত স্বাধীন ও সার্বভৌম হওয়ার অধিকার আদায় হয়েছিল। (তিন) পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক অভ্যাস ও রেওয়াজের বিপরীতে বিজয় অর্জন করেছিল গণতান্ত্রিক অভ্যাস ও চিন্তা-চেতনা। (চার) পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে পূর্বপাকিস্তানি বাঙালি জনগোষ্ঠী কর্তৃক পরিচালিত প্রতিবাদের বিজয় হয়। (পাঁচ) পাকিস্তানি সরকার ও শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক, শান্তি ও সাম্যের মহান ধর্ম ইসলামের নাম ব্যবহার করে জনগণের ওপর বর্বরতা  বাস্তবায়ন ও অসাম্যের ধারা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জয় হয় তথা মানবিকতা বা মানবতাবাদের জয় হয়।
তবে, আলোচনা করতে গেলে অনেকগুলো শিরোনাম আলোচকের সামনে উপস্থিত হয়। স্থানাভাবে এই সংক্ষিপ্ত কলামে সবকিছু আলোচনা করা যাবে না এবং সবকিছু আলোচনা করতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ একটি বা দু’টি বিষয়ের উপর থেকে ‘ফোকাস’ হারিয়ে যেতে বাধ্য। তাই আমি বিরাজমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য থেকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিস্থিতিটিকে আলোচনায় সামনে আনছি।
দীর্ঘ প্রায় ২২-২৩ বছরের বিভিন্ন মাত্রার ও আঙ্গিকের সংগ্রামের সর্বশেষ ধাপ হলো ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ। সূক্ষ্ম হিসাবে ২৬৬ দিন। যাহোক আমরা ১৯৭১-এর আলোচনায় আসি। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ দিবাগত রাত্রে ১২টা বা ১২টার পর তথা ২৬শে মার্চ প্রত্যক্ষ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে ভারতের সাহায্য সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। অক্টোবর মাসে প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে একটা গোপন চুক্তি হয়। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পরোক্ষ সহযোগিতার মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। ডিসেম্বরের ৩ তারিখ থেকে ভারত ও পাকিস্তান প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর অপরাহ্ন ৪টা পর্যন্ত তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় সামরিক বাহিনী ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাগণ যথা ‘জেড’ ফোর্স, ‘এস’ ফোর্স, ‘কে’ ফোর্স এবং বিভিন্ন সেক্টর-এর সেক্টর ট্রুপসগণ, যেমন যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন তেমনই চালাতে থাকলেন তবে ৩রা ডিসেম্বর থেকে সেটা চালানো হলো ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধের সাংগঠনিক কাঠামোর (ইংরেজিতে সামরিক পরিভাষায়: অর্ডার অব ব্যাটল (ইংরেজি ভাষায় অরব্যাট) সঙ্গে তাল মিলিয়ে, যৌথ কমান্ডের অধীনে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধাগণ যারা সারা বাংলাদেশে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-নগরে ছড়িয়ে থেকে যুদ্ধরত ছিলেন তারা, বিগত মাসগুলোর মতো প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক গেরিলা তৎপরতা অব্যাহত রাখেন। সার্বিকভাবে ভারতীয় ও মুক্তি বাহিনীর আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের রেকর্ড এবং ছবি অনুযায়ী, পাকিস্তানিদের পক্ষে আত্মসমর্পণ করেন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড-এর কমান্ডার লে. জেনারেল এএকে নিয়াজী এবং আত্মসমর্পণ গ্রহণ করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড এর কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। সেই অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি তৎকালীন কর্নেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না (বা তাঁকে উপস্থিত রাখা হয়নি!!)। প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানীর কোন প্রতিনিধিকেও আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট করা হয়নি। অর্থাৎ জিনিসটা এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যে, ১৩ দিনের দীর্ঘ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছে এবং ওই যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানিগণ ওই যুদ্ধের বিজয়ী ভারতীয়দের নিকট আত্মসমর্পণ করছে। ইংরেজিতে দু’টি শব্দ আছে যথা মার্জিন বা মার্জিনালাইজড। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে অপরাহ্নে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সফলভাবেই মুক্তিবাহিনীর অবদান ও সাফল্যকে মার্জিনালাইজড করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় ও বিজয়ের আনন্দ ওই বিকালবেলায় ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। দুই বছর পর সিমলায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর যেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেই চুক্তির ফলেও বাংলাদেশের মানুষের এবং মুক্তিযোদ্ধাগণের অবদানকে মার্জিনালাইজড করে ফেলা হয়। এতদ্‌সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং মুক্তিযোদ্ধাগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সচেতন জনগণ নিজেদের প্রেরণায়, নিজেদের আত্মসম্মানের তাগাদায় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় দিবসকে একান্তই নিজেদের বিজয় হিসেবে সমুন্নত রেখেছে সফলভাবে। ওই বিজয়টি বাস্তবে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের এবং ওই আমলের বাংলাদেশের জনগণের। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ১৯৭১-এর বিজয়টি প্রেরণার একটি অম্লান চিরন্তন উৎস। এই উৎসকে অক্ষত রাখা অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৭১-এর রণাঙ্গনে রক্ত বিনিময়ের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ নামক দু’টি রাষ্ট্রের মধ্যে এবং দু’টি রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে যেই সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল সেই সম্পর্কটির উষ্ণতা বিগত ৪২ বছর সময়কালে একই রকম থাকেনি। বিগত ৪২ বছরে উভয় দেশের মধ্যে তিক্ততা যেমন ছিল তেমনই মধুর সম্পর্কের সময়ও ছিল। ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং ভারতীয় স্বার্থের মূল্যায়নে সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় ছিল ২০০৯ থেকে নিয়ে আজ অবধি। ১৯৭১ সালের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ উপকার প্রদান করতে হবে- এটাই বাস্তব। কিন্তু কৃতজ্ঞতার সীমারেখা কতটুকু, অর্থাৎ কতটুকু পরিমাণ ভাষা প্রয়োগ, কতটুকু পরিমাণ উপকার প্রদান, কতটুকু পরিমাণ স্বার্থ-ত্যাগ করলে বলা হবে যে, বাংলাদেশ যথেষ্ট কৃতজ্ঞ- এই সীমারেখা কোনদিনই চিহ্নিত হয়নি। এই প্রসঙ্গটি আলোচনা করতে গেলেই, আলোচনাকারীকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করে ফেলা হয়। বাংলাদেশ ভারতকে অনেক কিছুই দিলো। আরও অনেক কিছু দেয়ার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকার মনে হয় প্রস্তুত এবং আগ্রহী। কিন্তু সময়ের অভাবে পেরে ওঠেনি। তাই আরও সময় চায়। মনে হচ্ছে যেন, বাংলাদেশ দিতেই থাকবে এবং ভারত নিতেই থাকবে, এ রকম একটি পরিস্থিতি।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির শেষাংশে, গুণ্ডে ছবির প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আমি একটি শব্দযুগল এখানে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। ওই শব্দযুগল হচ্ছে: ‘ইলাস্টিসিটি অব গ্রাটিচিউড’- তথা কতটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশকে যথেষ্ট বলা হবে? ইলাস্টিক বস্তুকে যেমন বেশি টানলে ছিঁড়ে যায়, তেমনই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রক্রিয়াকে যদি টানতেই থাকে কেউ তাহলে সেটা ছিঁড়ে যেতে বাধ্য। আমার প্রশ্ন, আমরা কতটুকু টেনেছি? আমাদের কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা আদায়ের নিমিত্তে বা কৃতজ্ঞতার উসিলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র কি চায়? আমার অনুভূতি হচ্ছে যে, ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং আঞ্চলিক পরাশক্তি। ভারতের সঙ্গে আমাদের গঠনমূলক বাস্তবতা ভিত্তিক সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। পারস্পরিক আদান-প্রদানের মানদণ্ড স্থির করতেই হবে। এবং এই কাজটি করতে গেলে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় উপাত্ত হিসেবে কাজ করবে।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু