গণমাধ্যমকে ‘পরামর্শ’ দিত ডিজিএফআই

Saturday, September 24, 2011

ড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর।

সাংবাদিকদের কাছে ফোন করে খবর ছাপা না ছাপার ব্যাপারে ‘পরামর্শ’ দেওয়ার কথা সফরকারী মার্কিন মন্ত্রীর কাছে স্বীকার করেছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা। উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপসহকারী মন্ত্রী এরিকা বার্কস-রাগেলস সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। বার্কস-রাগেলস শুনতে পান, সরকারি কর্মকর্তারা, বিশেষ করে, সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই সাংবাদিকদের নানা রকম হয়রানি করছে। সাংবাদিকেরা অভিযোগ করেন, কোন খবর কীভাবে প্রকাশ করতে হবে, আর কোনটি প্রকাশ করাই যাবে না, এ বিষয়ে ঘন ঘন ফোন করে নির্দেশনা দিচ্ছে ডিজিএফআই, যা ভীতির সঞ্চার করছে। ১৯ থেকে ২১ মে ঢাকা সফরকালে এরিকা বার্কস-রাগেলস বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন সাংবাদিকদের ফোন করে নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি তাঁর কাছে স্বীকার করেন ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ও সন্ত্রাস দমন বিভাগের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন। সামরিক কর্মকর্তাদের এ ধরনের তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করতে বলেন মার্কিন মন্ত্রী। রাজনৈতিক বিষয়ে ডিজিএফআইয়ের তৎপরতার ব্যাপারে বার্কস-রাগেলস বলেন, বেসামরিক বিষয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নাক গলানো বন্ধ করা উচিত।
বাংলাদেশ সফরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এরিকা বার্কস-রাগেলস। তিনি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেন।
এদিকে বার্কস-রাগেলসের সঙ্গে বৈঠকের সময় একটি আইনের খসড়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তিনি জানান, এতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ‘তুচ্ছ’ ও ‘বিরক্তিকর’ অভিযোগ করলে তার জন্য জেল-জরিমানার বিধান থাকবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’ এবং এটি কার্যকর হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়মুক্তির মনোভাব কাজ করতে পারে। বার্কস-রাগেলস ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ ধরনের আইনের ব্যাপারে ডিজিএফআই ও সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ডিজিএফআইয়ের প্রধান ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বীকার করেন, এ ধরনের আইন হলে তা আইনটির লক্ষ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উভয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন।

সংস্কারে দলগুলোর ব্যর্থতাই আমার মূল উদ্বেগঃ মইন

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ১৬ মাস পর হতাশা প্রকাশ করে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বলেছিলেন, এত দিন পরও নিজেদের সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ব্যর্থতাই’ তাঁর মূল উদ্বেগ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগে ইতিমধ্যে আদালতে দোষী সাব্যস্ত ৫৪ জন নেতাকে দলগুলো কেন বহিষ্কার করছে না।
২০০৮ সালের ৬ মে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির সঙ্গে বৈঠকে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ এসব কথা বলেছিলেন বলে উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে। ৭ মে ওয়াশিংটনে এ কূটনৈতিক তারবার্তাটি পাঠান রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি।

তারবার্তার ভাষ্যমতে, সেনাপ্রধান মইন রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশিত সংস্কার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করলেও মরিয়ার্টিকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করবে না।
ঢাকাসহ সারা বিশ্বের মার্কিন দূতাবাসের পাঠানো আড়াই লাখ তারবার্তা গত ৩০ আগস্ট ফাঁস করে দিয়েছে ওয়েবসাইট উইকিলিকস।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেনাপ্রধানকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক সংস্কার কার্যক্রম সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং তা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের জন্য সময় লাগবে, তবে এটা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে হবে।
সেনাপ্রধান জানান, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের আগে ওই দিনই তিনি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দলগুলোকে সংস্কারে রাজি করানোর জন্য তাঁদের উৎসাহিত করেছেন। কেননা বাংলাদেশ আবার সেই এক-এগারোর আগের অবস্থায় ফিরতে পারে না।
মইন উ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ‘প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে’ এবং তাদের পথ অনুসরণ করতে চায় না। সেনাবাহিনী বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেনি উল্লেখ করে মইন জানান, এমনকি তিনি নিজেও কোনো মন্ত্রণালয়ে যাননি যাতে কেউ এ কথা না বলতে পারে যে তিনি হস্তক্ষেপ করছেন।
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, পরাজিত দল যাতে পরে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে, সে জন্য এটা প্রয়োজন।
মইন উ আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা শিগগিরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া তিনি জরুরি অবস্থা পর্যায়ক্রমে শিথিল করারও ঘোষণা দেবেন।
মইন উ আহমেদ রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন। ‘কোনো পরিস্থিতিতেই’ নির্বাচন এ সময়সীমা অতিক্রম করবে না।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, আসন্ন রাজনৈতিক সংলাপে সেনাবাহিনীকেও অংশ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কিন্তু তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না। এটা বেসামরিক উপদেষ্টাদের কাজ।

সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিয়ে গুঞ্জন

Wednesday, September 21, 2011

ড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ঘাটতি এবং বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘ব্যর্থতার’ পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের প্রথম থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের রাজনৈতিক ও সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের কথা তখন বলা হচ্ছিল। কারাবন্দী দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা-ও পরিষ্কার নয়। এ অবস্থায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাজনৈতিক কাঠামোয় একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে সেনানিবাসে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের তৎকালীন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি ওই সময় ওয়াশিংটনকে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভুল পদক্ষেপের কারণে আরেকটি রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তবে ওই অবস্থায় সেনাবাহিনী কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারে বলে তাঁর মনে হয়নি। ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট গীতা পাসির পাঠানো ওই তারবার্তা গত ৩০ আগস্ট উইকিলিকসের ফাঁস করা বার্তাগুলোর একটি।
তারবার্তায় বলা হয়, ওই গুঞ্জন নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক সোবহানের সঙ্গে কথা বলেন দূতাবাসের কর্মকর্তা। তাঁদের মত ছিল, সেনাবাহিনীর সক্রিয় হওয়ার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া। এ প্রসঙ্গে ফারুক সোবহান বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা বিচারাধীন।
তারবার্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ফারুক সোবহান বলেন, সেনাপ্রধানের চারপাশে ঘিরে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতাউর রহমানের মতো স্বনিয়োজিত কিছু উপদেষ্টা। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার জন্য সেনাপ্রধানকে উৎসাহিত করছেন। সব মিলিয়ে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছেন, যেখানে মনে হবে কেবল সেনাপ্রধানই দেশকে ‘রক্ষা’ করতে পারেন।
তবে ফারুক সোবহান স্বীকার করেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ঘাটতি, বন্যাসহ অনেক সমস্যাই মোকাবিলা করতে হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে। প্রধান উপদেষ্টার চেয়ে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের অধিকতর সক্রিয়তা নিয়ে যেসব আলোচনা হচ্ছিল, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, সেনাপ্রধানই সরকারের মূল দায়িত্বে—এ ধারণা যে সত্যি নয়, তা বোঝানোর জন্য গণমাধ্যমে আরও বেশি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তারবার্তায় বলা হয়, এ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম মো. আমিনের সঙ্গেও কথা বললে তাঁর সোজাসাপ্টা প্রশ্ন, ‘দেশের সব সমস্যার বোঝা কেন আমাদের ঘাড়ে নিতে যাব?’ তাঁর মতে, সেনাবাহিনী এখন যে কাজ করছে তার জন্য তারা একদিন বীর হিসেবে বিবেচিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো সেনাবাহিনীও ২০০৮ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন দেখতে চায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক সোবহান প্রথম আলোর কাছে তারবার্তার বক্তব্য অস্বীকার করে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে অবশ্যই কথা হয়েছে। কিন্তু এখানে আমাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।’

উইকিলিকস ঝড় by রাশেদ মেহেদী

Tuesday, September 13, 2011

মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিস্ময় উইকিলিকস। মহাক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন থেকে শুরু করে বিশ্বের ছোট-বড় সব রাষ্ট্রের 'ব্ল্যাকবক্স' ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে উইকিলিকসের ক্ষিপ্রতা। যে অন্ধকারে আগে কখনও কেউ চোখ রাখতে পারেনি, সেখানে চোখ রাখছে উইকিলিকস। অবস্থা এমন যে, সকালে ঘুম থেকে উঠে রাষ্ট্রযন্ত্রের মহানায়করা তটস্থ মনে চোখ রাখেন উইকিলিকসের পাতায়, সাধারণ মানুষ গভীর আগ্রহে জেনে নেন অজানাকে। উইকিলিকসের এ ঝড় বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়েও।
বাংলাদেশের রাজনীতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের খুঁটিনাটি অনেক বিষয় বেরিয়ে আসছে প্রতিদিন। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি, উভয়ের নেতারাই মনে করেন, এটি দেশ, রাজনীতি ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র। উদ্দেশ্যমূলক কোনো কারণে একটি বিশেষ মহল এসব করছে বলে তারা বিশ্বাস করেন। দেশের সুশীল সমাজ অবশ্য মনে করেন, উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোপন তারবার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের দৈন্য প্রকাশ পেয়েছে।
তারা বলেন, রাজনীতিবিদরা দেশের মানুষের কাছে না গিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ধরনা দেন। তাদের কাছে তদবিরে ব্যস্ত থাকেন ছোট-বড় সব দলের নেতারা। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, এভাবে গোপন দলিল প্রকাশ অনৈতিক ও অপরাধ। এদিকে উইকিলিকসের দাবি অনুযায়ী তাদের হাতে আছে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রায় ৩০ লাখ গোপন নথি। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ইরাক যুদ্ধের গোপন নথিই রয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ। বাংলাদেশ সম্পর্কে ২ হাজার ১৮২টি গোপন নথি আছে উইকিলিকসের হাতে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০টি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হওয়া এসব প্রতিবেদন এখন সংবাদপত্রে পাঠকদের মূল খোরাক। সবকিছু ছাপিয়ে এখন উইকিলিকসের ফাঁস করা প্রতিবেদনের ওপরই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন পাঠক।
২০১০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে উইকিলিকস ঝড়ের সূচনা হয়েছিল ইরাক আর আফগান যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন গোপন নথি প্রকাশের মধ্য দিয়ে। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে সাড়ে ৪ লাখ গোপন নথি আর আফগান যুদ্ধ নিয়ে ৯২ হাজার নথির সঙ্গে দুর্লভ ভিডিওচিত্র। গোটা দুনিয়া অবাক বিস্ময়ে দেখল জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের গোপন নথির গোপনীয়তার গর্ব ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এ ধাক্কা সামলাতে যখন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে কাবু করার উপায় খুঁজছিল ঠিক তখন চীন, রাশিয়াসহ একাধিক ক্ষমতাধর দেশের গোপন নথি ফাঁস করে নতুন আলোচনার ঝড় তুলল উইকিলিকস। এরপর একের পর এক নতুন চমক, নতুন আঘাত। উইকিলিকসের দুনিয়া কাঁপানো সেই ঝড় আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত ঘুরে এখন জোর দাপটে বাংলাদেশের সীমানাতেও বয়ে যাচ্ছে। বিশিষ্টজনদের মুখে এমনও শোনা যাচ্ছে, সিডর কিংবা আইলার মতো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে; কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় থাকা কিছু ভাগ্যবান, সিডর কিংবা আইলা যাদের নিরাপদ সুরম্য প্রাসাদ কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি, তারা এখন বিধ্বস্ত উইকিলিকস ঝড়ে। এ ঝড় সাধারণ মানুষের জন্য কোনো বিড়ম্বনা বয়ে আনেনি, বরং চোখ খুলে দিচ্ছে প্রতিদিন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় কোন নেত্রীর মনে কী ছিল, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কোন চোখে কাকে দেখেছে, তারেক রহমানকে নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা কী ছিল, বর্তমান সরকারের কোন মন্ত্রী পর্দার আড়ালে অদক্ষতা এবং সততার অভাবের সার্টিফিকেট পাচ্ছেন, জামায়াতের গোপন মিশনের লক্ষ্য কী_ কোনো কিছুই এখন আর অজানা নয় দেশের সাধারণ মানুষের। অনেকে বলছেন, আর কিছু না হোক দেশের রাজনীতিকদের বিষয়ে উইকিলিকস অন্তত বিচার-বিশ্লেষণের সুযোগ করে দিয়েছে।
অনেকে মন্তব্য করেছেন, উইকিলিকসে প্রকাশিত নথির তীর যখন সরকারি দলের দিকে থাকে তখন বিরোধী দল উইকিলিকসের ভক্ত হয়ে যায়, আর তীর যখন বিরোধী দলের দিকে তখন সরকারি দল মুচকি হাসে। এক কথায় তারা বলছেন, ক্ষমতার ছায়ায় থাকা এসব ব্যক্তির সবাই উইকিলিকসের ভক্ত, আবার বিরোধী_ দুটিই।
যুক্তরাষ্ট্রের নথি প্রকাশ করার মুহূর্ত থেকেই বৈরী পরিবেশের মুখে পড়ে উইকিলিকস। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ, এমনকি আন্তর্জাতিক মাস্টার কার্ড ব্যবহারে বিনা নোটিশে নিষেধাজ্ঞা, প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা, উইকিলিকসের ডোমেইনে এক ডজন হ্যাকারের ধারাবাহিক হামলা। অবশ্য কোনোকিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি উইকিলিকসকে। বরং আরও বেশি উদ্যম, আরও বেশি বেপরোয়া উইকিলিকস। জামিনে বের হয়ে যুক্তরাজ্যে গোয়েন্দাদের ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্যে কাটাচ্ছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, আর উইকিলিকসের পাতায় সেই গোয়েন্দাদের পাঠানো গোপন তারবার্তা দিব্যি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ-মার্কিন সম্মিলিত গোয়েন্দা শক্তি যেন হার মেনেছে উইকিলিকসের সাইবার বোমার কাছে। সবার মাঝে এখন একটিই প্রশ্ন, উইকিলিকসের এই যাত্রার শেষ কোথায়? আরও কী চমক দেখাবে উইকিলিকস?
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের দখলে
উইকিলিকসের পাতায় বাংলাদেশের স্থান হয়েছিল ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত গোপন নথির বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় পরিবর্তন আনতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কথা। এর কিছুদিন পরই হরকাতুল জিহাদ বা হুজিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আনতে চেয়েছিল বলে তথ্য প্রকাশ করে হৈচৈ ফেলে দেয় উইকিলিকস। ওয়ান-ইলেভেনের সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির পাঠানো তারবার্তা নিয়ে প্রথমদিকে উইকিলিকসের পাঠানো তথ্যগুলো ছিল ইসলামী দল এবং তাদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ঘিরেই। ক্ষমতার বৃত্তের কাছাকাছি থাকা দলগুলোর মধ্যে বিএনপির চারদলীয় জোটের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে চায় এবং এ উদ্দেশ্যে নেওয়া তাদের গোপন মিশন নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে উইকিলিকস। তখনও ক্ষমতার পালাবদলের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির গায়ে উইকিলিকসের আঁচড় লাগেনি।
গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সারাদেশে বেহাল সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। ঠিক সে মুহূর্তে উইকিলিকসের তীরও বিদ্ধ করল তাকে। উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেল, ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আরও কয়েক মাস আগেই যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তার সততা বিশ্বাসযোগ্য নয়_ এমন মত দিয়ে তারবার্তা পাঠিয়েছে ওয়াশিংটনে। পরদিনই সাংবাদিকদের যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রমাণিত সৎ ব্যক্তি, উইকিলিকসের তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। উইকিলিকস নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিও বললেন, এসব তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তখন থেকেই বাংলাদেশের সব সংবাদপত্রের প্রথম পাতার গুরুত্বপূর্ণ শিরোনামে চলে এলো উইকিলিকস। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদ সংস্থায় বিশেষ জায়গা করে নিল উইকিলিকসের ফাঁস করা প্রতিবেদন।
এরপর একের পর এক বাংলাদেশ বিষয়ক তথ্য ফাঁস হতে থাকলে সংবাদপত্রের প্রথম ও শেষ পাতায় উইকিলিকস কর্নার চালু হলো। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো পৃথক শিরোনাম দিয়ে উইকিলিকসের খবর প্রচার শুরু করল। এখানেও শেষ হলো না। এখন কোনো কোনো সংবাদপত্রে উইকিলিকস নিয়ে পৃথক পাতা আর টেলিভিশনে চার-পাঁচটি প্যাকেজ নিয়ে 'উইকিলিকস বিশেষ' প্রচারিত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে সংবাদমাধ্যমগুলোর দায়িত্বশীলদের বক্তব্য হচ্ছে, পাঠক কিংবা দর্শক চায় বলেই এত গুরুত্ব দিয়ে উইকিলিকসে বাংলাদেশ বিষয়ে প্রকাশিত তথ্যকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সংবাদপত্রগুলোর অনলাইন সংখ্যায় উইকিলিকসের তথ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি মতামত আসছে, রেটিং আসছে। সবকিছু মিলিয়ে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উইকিলিকস।
উইকিলিকসের পাতায় ওয়ান-ইলেভেনের অজানা অধ্যায়
ওয়ান-ইলেভেনের আগে-পরে রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিয়ে অনেক অজানা তথ্য প্রতিদিন প্রকাশ করছে উইকিলিকস। প্রতিটি তথ্যের উৎস যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের গোপন তারবার্তা। এ তথ্যগুলোই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রধান আকর্ষণ। মাঠের ভাষণে রাজনীতিবিদরা কী বলেন আর পর্দার আড়ালে কী করেন, উইকিলিকসের তথ্য থেকে সে সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। 'ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বিগ্ন, বিএনপি চেয়ারপারসন বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া শান্ত ছিলেন', 'তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদকে রাজনীতিতে চায়নি যুক্তরাষ্ট্র', 'খালেদা জিয়া নিজে রাষ্ট্রপতি আর তার ছেলে বিএনপির বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন', 'খালেদা জিয়ার বড় ব্যর্থতা তারেকের দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া', 'যেভাবে ভেস্তে গেল মাইনাস টু ফর্মুলা', 'গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন এমডি ড. মুহাম্মদ ইউনূস চেয়েছিলেন দুই নেত্রী সরে যান', 'জাতীয় সরকার গঠনের চেষ্টা করেছিল ফখরুদ্দীন সরকার', 'বিডিআর বিদ্রোহের সময় পরিস্থিতি সামলাতে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী (বর্তমানে অর্থমন্ত্রী) প্রণব মুখার্জির পরামর্শ চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার' প্রভৃতি সংবাদ শিরোনাম বাংলাদেশে এখন তুমুল আলোচিত। যোগাযোগমন্ত্রীর সততা এবং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার ব্যাপারে উইকিলিকসে তথ্য প্রকাশের পর বিএনপি নেতারা বেশ খুশি হয়েছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, দেশের মন্ত্রীদের সততা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠলে তা খুবই দুঃখজনক। তারেক রহমান আর খালেদা জিয়াকে ঘিরে একের পর এক তথ্য ফাঁস হলে সেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই বললেন, উইকিলিকসের তথ্যের বাস্তব ভিত্তি নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যার যার স্বার্থে উইকিলিকসের তথ্য ব্যবহার করতে চেয়েছে। এখন উইকিলিকসের আঘাত বড় দু'দলের জন্যই বিব্রতকর হয়ে উঠছে। তাদের মতে, উইকিলিকস চোখ খুলে দিচ্ছে।
ক্ষমতাধর দেশের নতুন মাথাব্যথা উইকিলিকস
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়ার মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর মহাক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নতুন মাথাব্যথা এখন উইকিলিকস। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে এভাবে গোপন দলিল প্রকাশকে অনৈতিক ও অপরাধ বলে মন্তব্য করেছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব রবার্ট গিবস তার এক বিবৃতিতে বলেন, এভাবে গোপন নথি প্রকাশ বড় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র সেভাবেই বিষয়টিকে দেখছে। আইনগত ব্যবস্থা কী নেওয়া যায় তাও ভাবা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, উইকিলিকসের এসব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না, কোনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অবশ্য প্রভাব পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রকাশিত গোপন নথির সত্যতা সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এদিকে সুইডেনের এক নারীকে ধর্ষণের দায়ে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর অনেকের মত ছিল, এটি যুক্তরাষ্ট্রের পাতানো মামলা। পরে সে মামলায় অ্যাসাঞ্জ গ্রেফতারও হলেন। শেষ পর্যন্ত জামিনও পেলেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ হলো উইকিলিকসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। আন্তর্জাতিক মাস্টার কার্ড পরিচালনায় যুক্ত সংস্থাগুলোও উইকিলিকসকে দেওয়া কার্ড ফেরত চাইল। এর বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকে দিল উইকিলিকস। এর পরের অধ্যায়ে হ্যাকারদের হামলা শুরু হলো উইকিলিকসের প্রতি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক ডজন হামলা হলো। হ্যাকারদের তীব্র উৎপাতের পর উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত বিকল্প ডোমেইনের মাধ্যমে নতুন করে তাদের ওয়েবসাইট চালু করল গত ফেব্রুয়ারিতে।

উদ্দেশ্যমূলক

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিকল্প ধারার গণমাধ্যম উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া বাংলাদেশ সম্পর্কিত তথ্যগুলোকে উদ্দেশ্যমূলক বলে উল্লেখ করেছেন দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতারা। তারা মনে করছেন এসব তথ্য যে সময়ে প্রকাশ হয়েছে তা রীতিমতো উদ্দেশ্যমূলক। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে 'পানি ঘোলা' করার উদ্দেশ্যেই কোনো একটি মহল এমনটি করছে। বাংলাদেশ সম্পর্কিত তথ্যগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিলেও এর সত্যতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলেছেন, উইকিলিকসে প্রকাশিত সব তথ্যই যে সঠিক ও বাস্তবসম্মত এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। মার্কিন তারবার্তার তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি নেতারাও। তারা বলেছেন, এর ফলে দেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়বে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় দলের নেতারাই মনে করেন, এটি নতুন ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিদ্যমান নিবিড় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার বিশেষ উদ্দেশ্যে এসব প্রচার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রচার হওয়ার পর বিএনপি সাধুবাদ জানিয়ে বলেছিল, উইকিলিকসের তথ্যেই সরকারের দুর্নীতির প্রমাণ মেলে। বিএনপি সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম বললেন, 'এর বাস্তব ভিত্তি নেই'। গতকাল মঙ্গলবার সমকালকে দেওয়া পৃথক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, অতীতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার আলোকে মার্কিন দূতাবাসের গোপন তারবার্তার বরাত দিয়ে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন। এ নিয়ে খুব বেশি 'উল্লসিত' কিংবা 'বিমর্ষ' সর্বোপরি 'মাতামাতি'রও কিছু নেই।
আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য : দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি উইকিলিকসে প্রকাশিত তথ্যের সত্যতা বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেছেন, সেখানে অন্য নেতানেত্রীদের কার সম্পর্কে কী বলা হয়েছে সেগুলো নিয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তবে তার (আমু) সম্পর্কে যে ঘটনা ও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা যে তারিখ উল্লেখ করে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে; সেই তারিখে তিনি দেশেই ছিলেন না। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছিলেন।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, যে বা যারা বাংলাদেশ সম্পর্কিত ঘটনা কিংবা তথ্য প্রকাশ করছেন, সেসবের সত্যতা প্রমাণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদেরই।
আমাদের দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের পেছনে এক ধরনের 'অসৎ উদ্দেশ্য' অবশ্যই আছে। মহৎ উদ্দেশ্যে নয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করা তথা 'পানি ঘোলা' করে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্য নিয়েই কেউ কেউ এসব করছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, উইকিলিকসে আমাদের দেশ কিংবা নেতানেত্রী সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা মার্কিন দূতাবাস থেকে সেই দেশের সরকারের কাছে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে আসছে। এগুলো এখানকার সংশ্লিষ্ট ওই দূতাবাসটির নিজস্ব চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন। এর মধ্যে কিছু তথ্য আছে, যেগুলো নিঃসন্দেহে বাস্তবতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব ঘটনা আমাদের অনেকেরই আগে থেকে জানাও ছিল। সব প্রতিবেদন কিংবা এতে প্রকাশিত সব তথ্যই যে বাস্তবসম্মত কিংবা সত্য হবে_ এটা অবশ্য মনে করার কোনো কারণ নেই।
এদিকে দলটির অনেক নেতা উইকিলিকসে প্রকাশিত তথ্যগুলোকে 'স্পর্শকাতর' বলে উল্লেখ করেছেন। তারা এ নিয়ে মন্তব্য করতেও অনীহা প্রকাশ করেন। দলের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য বলেন, 'কোথাকার কোন রাষ্ট্রদূত তার দেশের সরকারের কাছে কী পাঠিয়েছেন, তাই নিয়ে মাতামাতির কিছু দেখছি না। এ নিয়ে মন্তব্য করারও কিছু নেই।'
বিএনপি নেতাদের বক্তব্য : দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জেমস এফ মরিয়ার্টি বাংলাদেশে আসেন ২০০৮ সালের শেষদিকে। অথচ ২০০৫-০৬ সালের ঘটনা তার বরাত দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই সময় যিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তার দায়িত্ব ছিল স্টেট ডিপার্টমেন্টে মতামত পাঠানো। ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সময়ের মিল না থাকায় উইকিলিকসের তথ্য নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের রাজনীতি এবং নেতাদের নিয়ে যেসব মতামত পাঠিয়েছেন, তা তার ব্যক্তিগত মতামত। কারণ তিনি যে সূত্র থেকে তথ্য জানাচ্ছেন, সে সূত্র সত্য নাও বলতে পারে। মোশাররফ আরও বলেন, ঢালাওভাবে বিএনপিকে নিয়ে তারবার্তার তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ উদ্দেশ্যমূলক। এসব শুরু হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সফরের আগে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিবিড় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার বিশেষ উদ্দেশ্যে এসব প্রচার করা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, এসব তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কিছুর সত্যতা রয়েছে। সত্য ও মিথ্যার সংমিশ্রণে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সময়ের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। মাহবুব বলেন, তার সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের কথোপকথন দিয়ে যে তথ্য প্রকাশ হয়েছে, তা সঠিক নয়।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের মতামতে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এটি শুধু ঘটনাপ্রবাহের ওপর ভিত্তিতে পর্যালোচনা।
এদিকে সোমবার বিএনপিকে নিয়ে উইকিলিকসের তথ্য সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উইকিলিকসের তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলা হয়, এসব তথ্যের 'বাস্তব ভিত্তি' নেই। দলটির দাবি, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রশাসনের সঙ্গে বিএনপির নিবিড় সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার একটি অপকৌশল মাত্র। একই সঙ্গে দেশকে রাজনীতিশূন্য এবং বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্রেরও অংশ।
ফখরুল বলেন, তারেক রহমানের যুক্তরাষ্ট্র সফর সম্পর্কে গীতা পাসির বরাত দিয়ে উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যটি বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কয়েকটি বার্তায় যে সময়ের কথা এসেছে, তা মরিয়ার্টির কার্যভার নেওয়ার অনেক আগে।

অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা ছিল নূরউদ্দীন ও মাহবুবের

Monday, September 5, 2011

ড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। ফাঁসের তালিকায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলও। সাবেক সেনাপ্রধান ও ’৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ নূরউদ্দীন খান ২০০৪ সালে তৎ কালীন জোট সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎ খাত করে একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস ওয়াশিংটনে পাঠানো এক গোপন বার্তায় এমন কথাই বলেছিলেন। গত ৩০ আগস্ট জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস হ্যারি কে টমাসের পাঠানো সেই তারবার্তাটি ফাঁস করেছে।

‘সম্ভাব্য অভ্যুত্থানে সমর্থন দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের’ শিরোনামের ওই তারবার্তা থেকে জানা যায়, নূরউদ্দীন খান তৎ কালীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারকে উৎ খাত করে দুই বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন। নূরউদ্দীন খানের মতে, বাংলাদেশের পরিবারতান্ত্রিক সরকার ও ইসলামি জঙ্গিবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করা। এতে ভবিষ্যতে দুই নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সব পথ রুদ্ধ হবে। নূরউদ্দীন খান দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চান।
হ্যারি কে টমাস নূরউদ্দীনের প্রস্তাব শুনে সঙ্গে সঙ্গে এর বিরোধিতা করেন। তিনি সাবেক সেনাপ্রধানকে জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎ খাতের কোনো পরিকল্পনা সমর্থন করবে না। তিনি নূরউদ্দীনকে হুঁশিয়ার করে দেন, তৎ কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
তারবার্তায় বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নূরউদ্দীন খান ভোজনের টেবিলে যোগ দেন। সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হয়। সেখানে হ্যারি কে টমাস তাঁকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই গণতন্ত্রের সমর্থক ও তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কামনা করে। সংবিধানবহির্ভূত কোনো প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার উৎ খাত করার পরিকল্পনা তারা অনুমোদন করতে পারে না। বিশেষ করে, সামরিক অভ্যুত্থান তাঁর দেশ কিছুতেই মেনে নেবে না বলে তিনি নূরউদ্দীনকে জানিয়ে দেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের জবাবে নূরউদ্দীন খান তাঁকে বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এমন দুজন নারীর (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) কাছে জিম্মি, যাঁরা কখনোই দেশ ও জাতির স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নিজেদের মতপার্থক্য দূরে ঠেলে রাখতে পারেন না। নূরউদ্দীন খান বলেন, বাংলাদেশ সরকার দেশটির সেনাবাহিনীকে একটি দেউলিয়া বাহিনীতে পরিণত করেছে। এ অবস্থার জন্য তিনি সরাসরি তৎ কালীন চারদলীয় জোট সরকারকে দায়ী করে বলেন, ‘এই মুহূর্তে (২০০৪) সেনাবাহিনীর শীর্ষ সাতজন কর্মকর্তাই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাই মেজর (অব.) সাইদ এস্কান্দারের সহপাঠী। যোগ্যতা না থাকার পরও শুধু অনুগত থাকার কারণে এসব পদে তাঁদের বসানো হয়েছে। নূরউদ্দীন এই সাতজনকে ‘পরশ্রীকাতর সাত’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি হ্যারি কে টমাসকে আরও বলেন, বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিকীকরণ শুরু হয়েছে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রথম বিএনপি সরকারের সময় থেকে (১৯৯১-৯৬)। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাজনৈতিকীকরণের প্রবণতা আরও বেড়েছে।
নূরউদ্দীন খান রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসকে প্রস্তাব দেন তাঁর পরিকল্পনাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি হবেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের তদানীন্তন কমান্ড্যান্ট আবু তৈয়ব মুহাম্মদ জহিরুল আলম (যিনি জেনারেল জহির নামে পরিচিত)। তিনি দাবি করেন, জেনারেল জহির গণতন্ত্রের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যোগ্য নেতাদের এক পতাকাতলে নিয়ে এসে অন্তর্বর্তীকালীর সরকার গঠন করবেন। দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি সেই সরকার জেনারেল জহিরের নেতৃত্বে একটি নতুন খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করবে এবং দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে সেগুলোকে শক্তিশালী করে তুলবে। একই সঙ্গে সরকার বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট করবে। সবশেষে তারা একটি সর্বজনস্বীকৃত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
তারবার্তা থেকে জানা যায়, আলোচনার একপর্যায়ে নূরউদ্দীন খান হ্যারি কে টমাসকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার সব সময়ই সেনাবাহিনীর তরফ থেকে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করে। এমনকি তারা সাইদ এস্কান্দারের ব্যাচমেটদেরও বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, এ বছরের শুরুতেই (২০০৪) মেজর জেনারেল রোকনকে কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল হিসেবে বদলি করা হয়েছে। কারণ, সরকারের চোখে তিনি একটি হুমকি।
নূরউদ্দীনের এই কথার পিঠে রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস মন্তব্য করেন, মেজর জেনারেল রোকন খালেদা জিয়ার ভাই সাইদ এস্কান্দারের একজন কোর্সমেট। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাদের অন্যতম, যিনি একটি সেনা অভ্যুত্থান সফলভাবে সংঘটনের ক্ষমতা ও মেধা রাখেন।
নূরউদ্দীন খান হ্যারি কে টমাসের কাছে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কেও নিজের হতাশা ব্যক্ত করেন। ২০০৪ সালের গোড়ার দিকে নূরউদ্দীন খান আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর দেশের মানুষের কাছ থেকে যে ধরনের সহানুভূতি শেখ হাসিনার পাওয়ার কথা ছিল, তা তিনি পাননি। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করার পরিবর্তে শেখ হাসিনা কেবল হরতাল ও অবরোধ দিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চাইছিলেন। এতে তিনি জনপ্রিয়তা হারান। এই পর্যায়ে নূরউদ্দীন হ্যারি কে টমাসকে বলেন, এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই দেশের বিদ্যমান পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির একমাত্র বিকল্প হতে পারে।
নূরউদ্দীন আরও বলেন, প্রথমত, খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো বরাবরের মতো দেশে ভীতি ছড়াবেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করবেন এবং এর মাধ্যমে অর্থনীতিকে ডোবাবেন। তিনি একইভাবে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও বোন শেখ রেহানা সম্পর্কে বিষোদগার করে বলেন, তাঁরাও তারেক-কোকোর মতো দুর্নীতিবাজ ও অর্থলোলুপ।
একপর্যায়ে নূরউদ্দীন খান দেশের বিদ্যমান দুরবস্থার জন্য নিজেকেও আংশিক দায়ী করেন। তিনি বলেন, স্বৈরশাসক লে. জেনারেল এরশাদ যখন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, তখন পাকিস্তানের তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল আসলাম বেগ (যিনি নূরউদ্দীনের একজন বন্ধু ও সাবেক সহকর্মী) নূরউদ্দীনকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। নূরউদ্দীন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে আসলাম বেগ তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এরশাদের পর পাকিস্তান কাকে সমর্থন দিতে পারে। আসলাম বেগের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি পাকিস্তানকে বিএনপির প্রতি সমর্থন দেওয়ার কথা বলেন। তিনি আসলাম বেগকে জানিয়েছিলেন, বিএনপিতে অনেক সাবেক সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ী শ্রেণীও দলটিতে আছে, যাঁরা বাংলাদেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষমতা রাখেন।
তারবার্তায় বলা হয়, ওই সময় পাকিস্তান বিএনপিকে মদদ দেওয়ার জন্য তার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে ব্যবহার করছিল। অন্যদিকে ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) আওয়ামী লীগকে মদদ দিচ্ছিল। নূরউদ্দীন খান বলেন, উভয় দেশ এখনো (২০০৪) এই দুই দলকে মদদ জুগিয়ে আসছে। বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের মল্লযুদ্ধের ভূমিতে পরিণত হয়েছে। নূরউদ্দীন খান হ্যারি টমাসকে জানান, ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় ভারত আওয়ামী লীগের ওপর পুরোপুরি খুশি ছিল না। সে সময় তাদের গোয়েন্দা সংস্থা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলকেই অর্থসহায়তা করেছিল। বিএনপির চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমান ‘র’-এর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, তাঁদের দল যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন ও সে দেশে গ্যাস রপ্তানির বিষয়ে তিনি তাঁর মা খালেদা জিয়াকে রাজি করাবেন। অবশ্য পরবর্তী সময়ে তিনি তা করতে ব্যর্থ হন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ২০০৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে নয়াদিল্লি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে।
নূরউদ্দীন বলেন, ২০০৬ সালের নির্বাচনে জেতার জন্য বাংলাদেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ধ্বংসাত্মক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তিনি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বইপত্র নিষিদ্ধ করার বিষয়ে চারদলীয় জোট সরকারের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনাও করেন। একই সঙ্গে তখনো পর্যন্ত সিলেটে তদানীন্তন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী ও মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নূরউদ্দীন বলেন, সরকার এই মুহূর্তে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না শুধু ইসলামি দলগুলোকে খুশি করার জন্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একটি আলোচনার কথাও ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় উল্লেখ করেছেন হ্যারি কে টমাস। ওই বার্তায় বলা হয়, ২০০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে তদানীন্তন সরকারি দল বিএনপির সাংসদ লে. জেনারেল মাহবুবের আলাপ হয়। সেই আলাপে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আশা করে। যুক্তরাষ্ট্র সবুজ সংকেত দিলেই তারা অভ্যুত্থান ঘটাবে।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ১৯৯৬ সালে একটি বড় ধরনের সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব বহন করে।
মাহবুবুর রহমান হ্যারি কে টমাসের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি হয়তো আরও অন্তত একটি প্রজন্ম পরিবারতন্ত্রের মধ্যে ঘুরপাক খাবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সেনাবাহিনীই একমাত্র সংগঠিত প্রতিষ্ঠান এবং তারা বেসামরিক প্রশাসনে শিগগির হস্তক্ষেপ করতে চায় না।
হ্যারি টমাস উল্লেখ করেন, মাহবুবুর রহমান তাঁকে জানিয়েছিলেন, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কিছু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই করবে না।
লে. জেনারেল (অব.) নূরউদ্দীন খান এ ব্যাপারে গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎ খাতের এ ধরনের প্রস্তাব আমি কাউকে দিইনি। আমি সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং থাকব। ১৯৯০ সালে আমি না থাকলে ওই সময় এরশাদের পতনও হতো না, গণতন্ত্রও আসত না। তাই আমাকে নিয়ে এ ধরনের গণতন্ত্রবিরোধী কথাবার্তা অসত্যই নয়, অবান্তরও।’
সাবেক সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘২০০৪ সালে আমি তো গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলাম না। রাস্তার মানুষ ছিলাম। এ ধরনের একজন মানুষের পক্ষে কি এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব? যে কেউ সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন।’
লে. জেনারেল (অব.) আবু তৈয়ব মুহাম্মদ জহিরুল আলম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে কেউ সরকারপ্রধান করার প্রস্তাব দেবেন—এমন কোনো আভাসও তিনি কখনো পাননি। এই প্রথম এ ধরনের একটি বিষয় শুনলেন।

নরওয়ের পত্রিকার ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ অ্যাসাঞ্জ

Monday, January 31, 2011

রওয়ে থেকে প্রকাশিত পত্রিকা আফটেনপোস্টেন-এর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, গোপন মার্কিন কূটনৈতিক বার্তা প্রকাশ করে তারা ভিন্নধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ক্ষিপ্ত করেছে। আফটেনপোস্টেন নিজেদের মর্জিমতো বার্তাগুলো প্রকাশ করার কারণেই অ্যাসাঞ্জের এই ক্ষোভ।
গত ডিসেম্বর থেকে আফটেনপোস্টেন নিয়মিতভাবে উইকিলিকসের ফাঁস করা প্রায় আড়াই লাখ গোপন মার্কিন কূটনৈতিক বার্তা নিজেদের মর্জি অনুযায়ী প্রকাশ করে আসছে।
গত নভেম্বরে প্রথম গোপন কূটনৈতিক বার্তা প্রকাশ করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেয় উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ। ওই সময় তারা ঘোষণা দেয়, তাদের হাতে এ ধরনের আড়াই লাখের বেশি বার্তা রয়েছে।
ওই বার্তাগুলো নিয়মিতভাবে প্রকাশ করার জন্য বিশ্বে বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পাঁচটি পত্রিকার সঙ্গেও চুক্তি করে উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আফটেনপোস্টেন ওই পাঁচটি পত্রিকার মতো কোনো চুক্তি বা শর্ত মেনে বার্তাগুলো প্রকাশ করছে না। নরওয়ের ওই পত্রিকা কর্তৃপক্ষের মাত্র তিনজন জানেন কীভাবে উইকিলিকসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ওই সব গোপন নথি পাওয়া গেছে।
আফটেনপোস্টেন-এর বার্তা সম্পাদক ওলে এরিক আলমলিদ বলেন, ‘এগুলো (গোপন নথি) পাওয়ার জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। শুধু একটি ই-মেইলের মাধ্যমে এগুলো আমাদের হস্তগত হয়নি। তবে আমরা এর জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করিনি এবং এগুলো দেওয়ার বিনিময়ে কোনো শর্তও আরোপ করা হয়নি। আমাদের স্বাভাবিক কঠোর সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুসরণ করেই আমরা এই বার্তাগুলো প্রকাশ করতে পারি।’
নরওয়ের রাজধানী ওসলোতে সুসজ্জিত কার্যালয়ে ৩০ জন সংবাদকর্মী দিনরাত পরিশ্রম করে সতর্কতার সঙ্গে ওই আড়াই লাখ গোপন মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। উইকিলিকস যেভাবে বুঝেশুনে সতর্কতার সঙ্গে ওই নথিগুলো প্রকাশ করছে, সেই নীতি না মেনে আফটেনপোস্টেন তাদের নিজেদের মর্জিমাফিক আগেভাগেই বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করে দিচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুতে অ্যাসাঞ্জ নরওয়ের একটি অর্থনীতিবিষয়ক পত্রিকাকে বলেছিলেন আফটেনপোস্টেন তাদের ‘মিডিয়া পার্টনার’।
তবে তাঁর এই দাবি পুরোপুরি সমর্থন করে না ওই পত্রিকার কর্তৃপক্ষ। অ্যাসাঞ্জের পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ পাঁচটি পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, দের স্পিগেল, এল পাইস ও লা মঁদ এবং উইকিলিকস হিসাব করে নিজেদের নীতিমালা অনুযায়ী গোপন বার্তাগুলো ফাঁস করবে। কিন্তু নরওয়ের পত্রিকাটি ওই নীতিমালা না মেনে নিজেদের মতো করে গোপন নথিগুলো প্রকাশ করে দিচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে পত্রিকার পাতাগুলোয় ওই সব গোপন কূটনৈতিক বার্তার বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। একটি সংবাদে জানানো হয়, ইসরায়েল গাজার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল, আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একটি বাণিজ্যিক কৃত্রিম উপগ্রহের ছদ্মবেশে একটি গোয়েন্দা উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে।
অন্য একটি খবরে জানানো হয়েছে, দামেস্কে স্ক্যান্ডেনেভিয়ার দেশগুলোর দূতাবাসে চালানো হামলায় সমর্থন দিয়েছে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ। এএফপি।

অ্যাসাঞ্জ গুপ্তচর! যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ গঠনের চেষ্টা

Sunday, January 23, 2011

ইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অভিযোগ করেছেন, গোপন কমিটি করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খুব শিগগির এ অভিযোগ চূড়ান্ত করে দেশটি তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর উদ্যোগ নেবে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

গত শুক্রবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অ্যাসাঞ্জ। ৯ দিন আটক থাকার পর এর আগের দিনই ব্রিটেনের কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে বিচার বিভাগ। নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে তারা উইকিলিকসের কাছে তথ্য পাচারের দায়ে আটক মার্কিন সেনা ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করছে। ম্যানিং তাঁর তথ্য চুরির পেছনে অ্যাসাঞ্জের অনুপ্রেরণা ও সহায়তা থাকার কথা বললে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা সহজ হবে। ম্যানিং বর্তমানে ভার্জিনিয়ার একটি সেনাঘাঁটির গোপন কারাগারে বন্দি আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ যাবৎ উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া সব মার্কিন গোপন নথি তিনিই সরবরাহ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আড়াই লাখ গোপন নথি প্রকাশ করে চলতি মাসের শুরুতে সারা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে উইকিলিকস। এ ঘটনায় বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র সরকার অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। এই ফাঁকে দুই সুইডিশ নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগে স্টকহোমের একটি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগ অস্বীকার করলেও ৭ ডিসেম্বর লন্ডন পুলিশের কাছে ধরা দেন অ্যাসাঞ্জ। এর ৯ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার তিন লাখ ৭৪ হাজার ডলারের বিনিময়ে তিনি জামিনে মুক্তি পান। জামিনে থাকা অবস্থায় অ্যাসাঞ্জকে ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে 'ইলিংহাম হল' নামের একটি বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। এ বাড়িতেই শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
অ্যাসাঞ্জ ধর্ষণের অভিযোগকে 'একটি সফল প্রচারণা' হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, উইকিলিকস ও তাঁকে কলঙ্কিত করার লক্ষ্যেই একটি মহল এ প্রচারণা চালিয়েছে। অ্যাসাঞ্জ বলেন, 'মার্কিন আইনজীবীরা আমাকে জানিয়েছেন যে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের লক্ষ্যে দেশটি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে। আমি আশঙ্কা করছি, তারা আক্রমণাত্মক কোনো অভিযোগের পরিকল্পনা করছে।' অ্যাসাঞ্জ এ কমিটির বিষয়টি গোপন রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেন, 'নিশ্চয়ই তারা অস্বাভাবিক কিছু করার চেষ্টা করছে।' তিনি দাবি করেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার আগে তিনি কখনো ম্যানিংয়ের নাম শোনেননি। তিনি বলেন, 'উইকিলিকস ওয়েবসাইটটি এমনভাবে তৈরি যে আমরা সূত্রের নাম জানতে পারি না।' সূত্র : এএফপি, এপি।

সুইস ব্যাংকে দুই হাজার হিসাবধারীর গোপন তথ্য উইকিলিকসের হাতে

Wednesday, January 19, 2011

সুইজারল্যান্ডের সাবেক এক ব্যাংকার বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুই হাজার অ্যাকউন্টের গোপন তথ্য উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিতে সুইস ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, তথ্যগুলো যাচাই-বাচাই করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। রুডলফ এলমার নামের ওই ব্যাংকার লন্ডনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত সোমবার দুটি সিডি করে এ সব তথ্য হস্তান্তর করেন। তিনি জানান, তথ্যগুলো ১৯৯০ থেকে ২০০৯ সালের। এতে বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও খ্যাতনামা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য কী পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, তা বেরিয়ে আসবে। অ্যাকাউন্টধারীদের তালিকায় বেশ কিছু তারকার নামও রয়েছে। তবে অ্যাকাউন্টধারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি এলমার।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ জন রাজনীতিকসহ, খ্যাতনামা ব্যবসায়ী, বহুজাতিক কম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার অ্যাকাউন্টধারীর গোপন তথ্য রয়েছে সিডি দুটিতে।
লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে এলমারের পাশেই ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি বলেন, 'আমি এলমারকে সমর্থন দিতে এখানে উপস্থিত হয়েছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তথ্যগুলো প্রকাশ করা হবে। কূটনীতিক তথ্যের মতোই এ সব তথ্যকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে।' অ্যাসাঞ্জ ব্রিটেনে কয়েক দিন আটক থাকার পর এখন জামিনে রয়েছেন। যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগের বিচার করতে তাঁকে ব্রিটেন থেকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের চেষ্টা চলছে। আগামী ৭ থেকে ৮ ফ্রেব্রুয়ারি এ ব্যাপারে লন্ডনের আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে এলমার বলেন, 'আমি সেখানে ছিলাম। চাকরি করেছি। আমি জানি, আজকাল ব্যবসা কিভাবে চলে। আমি এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। আমি জানি, এ ব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে। এটা আমাদের সমাজের ক্ষতি করছে। একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে যারা বিশ্বের অবৈধ সব অর্থ গোপন অ্যাকাউন্টে রাখার ব্যবস্থা করে। একজন ব্যাংকার হিসেবে যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার দাঁড়ানোর অধিকার রয়েছে।'
এলমার সুইজারল্যান্ডের বেসরকারি জুলিয়াস বায়ের ব্যাংকের কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ শাখায় চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে আট বছর কর্মরত ছিলেন। ২০০২ সালে তাঁকে বহিষ্কার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তিনি ২০০৭ সালেও উইকিলিকসকে তথ্য সরবরাহ করেন। এ কারণে সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে এলমার বিচারের মুখোমুখি রয়েছেন। আজ বুধবার জুরিখের একটি আদালতে এ সম্পর্কিত শুনানিতে তাঁকে হাজির হতে হবে। সূত্র : এএফপি।

আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা উইকিলিকসের নেই

Tuesday, January 11, 2011

যৌন হয়রানির মামলায় উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে হস্তান্তর করা হবে কি না, সে ব্যাপারে আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করেছেন আগামী ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি। এ বিষয়ে শুনানির জন্য গতকাল মঙ্গলবার অ্যাসাঞ্জকে লন্ডনের আদালতে হাজির করা হয়। সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে আদালত এই দিন ধার্য করেন। এদিকে গতকাল ফ্রান্সে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, আরও আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা উইকিলিকসের নেই।
লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে উলভিচ ক্রাউন আদালতে জেলা জজ নিকোলাস ইভান্স ১০ মিনিটের শুনানি শেষে পূর্ণাঙ্গ শুনানির এই দিন ধার্য করেন। আদালতে অ্যাসাঞ্জকে শুধু তাঁর নাম ও ঠিকানা জিজ্ঞেস করা হয়। একই আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। গতকালের শুনানিতে ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারির শুনানির সময় অ্যাসাঞ্জকে জামিনে লন্ডনের ফ্রন্টলাইন ক্লাবে (৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি) রাত কাটানোর অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারেও সম্মতি দিয়েছেন বিচারক। সাংবাদিকদের পরিচালিত ওই ক্লাব থেকেই ব্রিটেনে কার্যক্রম পরিচালনা করে উইকিলিকস।
শুনানি শেষে অ্যাসাঞ্জ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের আজকের (মঙ্গলবার) পদক্ষেপে আমরা সন্তুষ্ট। উইকিলিকসের সঙ্গে আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।’
গত ১৬ ডিসেম্বর জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে ফ্রন্টলাইন ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ভন স্মিথের খামারে অবস্থান করছেন অ্যাসাঞ্জ। যৌন নিপীড়নের মামলায় সুইডেনে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবলে গত ৭ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গতকাল ফ্রান্সে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, উইকিলিকস আরও আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার অবস্থায় নেই। ফ্রান্সভিত্তিক বেতারকেন্দ্র ইউরোপ ওয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যাসাঞ্জ জানান, গত নভেম্বরে গোপন মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা প্রকাশ শুরু করার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে সাড়ে ছয় লাখ ডলার করে হারাচ্ছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে উইকিলিকস বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানের জন্য অনলাইনে বিভিন্ন দাতার পাঠানো অর্থপ্রাপ্তি বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে উইকিলিকস। তবে ওয়েবসাইটটি গোপন নথি ফাঁস করা চালিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
মার্কিন গোপন দলিল ফাঁস করার পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একাধিক অনলাইন আর্থিক প্রতিষ্ঠান উইকিলিকসের অ্যাকাউন্টে লেনদেন স্থগিত করে।
এ ছাড়া উইকিলিকসের এক বিবৃতিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মার্কিন কংগ্রেস সদস্য গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ডসের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। ওই ঘটনায় নিহত ছয়জনের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি। বিবৃতিতে অ্যাসাঞ্জ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকজন রাজনীতিক উইকিলিকসের কর্মী ও তাঁর বিরুদ্ধে সহিংস বক্তব্য রেখেছেন। তাঁকে তালেবানের মতো খুঁজে বের করে হত্যার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ধরনের বক্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃতুদণ্ডের আশঙ্কা: জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী বলেছেন, অ্যাসাঞ্জকে সুইডেন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলে, তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। মার্কিন গোপন নথি ফাঁসের কারণ দেখিয়ে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে গতকালের শুনানির নথিতে বলা হয়, মার্কিন কর্তৃপক্ষ সুইডেনের কাছ থেকে অ্যাসাঞ্জকে নিজেদের কাছে নিতে চাইতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে সেখান থেকে তাঁকে গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবির বা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে। একটি ওয়েবসাইটে আসামিপক্ষের এই নথি প্রকাশ করা হয়। এএফপি, বিবিসি।

অ্যাসাঞ্জের ঠাঁই হবে গুয়ানতানামো বন্দি শিবিরে!

ইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আ্যাস্যাঞ্জকে যদি সুইডেনে প্রত্যার্পণ করা হয় তবে তার শেষ আশ্রয় হতে পারে কিউবার গুয়ানতানামো কারাগার! অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা গতকাল মঙ্গলবার এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তারা বলেছেন, সুইডেন যদি অ্যাসাঞ্জকে হাতে পায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাকে ওয়াশিংটনে ফিরিয়ে নেয়া কঠিন কিছু হবে না। কারণ, উইকিলিকসের মাধ্যমে অ্যাসাঞ্জ এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে মার্কিন আইনে অপরাধ হিসেবে প্রমাণ করা সম্ভব। এমনকি মৃতু্যদণ্ডের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনের হাতে তুলে দেয়া হবে কি না সে প্রশ্নে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে ব্রিটেনের একটি আদালত। অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনের দুই নারীর যৌন অসদাচরণ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সুইডেনে নিতে চায় সুইডিশ কর্তৃপক্ষ। ওই মামলায় বর্তমানে কঠোর শর্তাধীনে যুক্তরাজ্যে জামিনে মুক্ত রয়েছেন অ্যাস্যাঞ্জ। ব্রিটেন যাতে তাকে সুইডেনের হাতে তুলে না দেয় সে ব্যাপারে জোর আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে অ্যাসাঞ্জের প্রতিরক্ষা টিম। তার প্রতিরক্ষা টিমের প্রধান আইনজীবী বলেছেন, আল-কায়েদা ও তালেবান বিদ্রোহীদের মার্কিন সিআইএ গোয়েন্দারা যে অভিযোগে দোষী প্রমাণ করে গুয়ানতানামোতে পাঠিয়েছে তারা ইচ্ছা করলে অ্যাসাঞ্জকেও দোষী প্রমাণ করে সেখানে বন্দি করতে পারে। তাই তাকে সুইডেনে পাঠানো ঠেকাতে হবে।

উলেস্নখ্য, গত বছর ইরাক ও আফগান যুদ্ধ নিয়ে পেন্টাগনের কয়েক লাখ গোপন নথি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিনিময় করা আড়াই লাখ গোপন তারবার্তা ফাঁস করে দুনিয়া জুড়ে হৈচৈ ফেলে দেয় উইকিলিকস। এতে ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্র। অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন।

অ্যাসাঞ্জসহ উইকিলিকস-সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে তথ্য চায় যুক্তরাষ্ট্র

Monday, January 10, 2011

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জসহ উইকিলিকসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যক্তির বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারকে নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন সরকার। আদালতের নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, উইকিলিকসের কাছে গোপনীয় নথিপত্র পাচারের জন্য অভিযুক্ত এক মার্কিন সেনা, আইসল্যান্ডের একজন এমপি ও দুজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞের ব্যক্তিগত বার্তা, যোগাযোগের তথ্য, ব্যাংক হিসাব নম্বর ও অন্যান্য ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন। ভার্জিনিয়ায় মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের একজন বিচারক এসব ব্যক্তিগত তথ্য হস্তান্তর করার জন্য টুইটারকে নির্দেশ দেন।
এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে টুইটার। তবে সাইটটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোম্পানির নীতি হচ্ছে, সরকার যদি এ ধরনের কোনো অনুরোধ জানায়, তাহলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে জানানো হয়।
অ্যাসাঞ্জের ধারণা, তথ্য দেওয়ার জন্য ফেসবুক ও গুগলকেও এ ধরনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ওই দুই কোম্পানি। আদালতের এ ধরনের নির্দেশে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও আইসল্যান্ডের পার্লামেন্ট সদস্য বিরগিত্তা জোন্সদোত্তির। আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
অ্যাসাঞ্জ মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে ‘হয়রানি’র অভিযোগ তুলেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ইরান সরকার যদি সাংবাদিক, বিদেশি মানবাধিকারকর্মীর কাছ থেকে জোরপূর্বক এসব তথ্য আদায়ের চেষ্টা করে, তাহলে সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ নিয়ে কথা বলবে।
দুই লাখ ৫০ হাজার গোপনীয় কূটনৈতিক তারবার্তা প্রকাশের ঘটনায় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
আদালতের আদেশে যাঁদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মার্কিন সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিশ্লেষক ব্র্যাডলি ম্যানিং, ডাচ্ হ্যাকার রোপ গনগ্রিগ্রিজপ ও মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার জ্যাকব অ্যাপেলবাউমের নাম রয়েছে।
জোন্সদোত্তির তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার জন্য টুইটারকেই বেছে নেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে তাঁর সব টুইট সম্পর্কে জানতে চেয়েছে মার্কিন সরকার। তিনি বলেন, ‘তারা কি বুঝতে পারছে যে আমি আইসল্যান্ডের পার্লামেন্টের সদস্য?’
এই এমপি বলেন, আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য তাঁর হাতে ১০ দিন সময় রয়েছে। জোন্সদোত্তির আবারও বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের কোনো তথ্য হস্তান্তর করার কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই।
ফাঁস হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ: এদিকে উইকিলিকস শত শত মানবাধিকারকর্মী, বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর পরিচয় ফাঁস করে দেওয়ায় তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্ভাব্য সব কিছু করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে তাঁদের অল্প কয়েকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার এ কথা জানানো হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত মার্কিন দূতাবাসকর্মীদের কাছে যেসব বিদেশি মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করত, উইকিলিকস তাদের অনেকের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ওই বিদেশি ব্যক্তিদের জীবনেও নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়া কেউ হামলার শিকার হয়েছেন—এমন তথ্য তাঁরা এখনো পাননি। তবে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ওই ঘটনার পর অনেক ভিন্নমতাবলম্বী নিজ নিজ সরকারের হাতে হেনস্তা হচ্ছেন। যাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের ব্যাপারে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা।
উইকিলিকস এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ গোপন মার্কিন তারবার্তা প্রকাশ করেছে। এ ঘটনার পর অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে মার্কিন সরকার এবং এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। টেলিগ্রাফ ও বিবিসি।

নয়া দিগন্তর খবর- আরো গোপন তথ্য ফাঁস করার ঘোষণা উইকিলিকস’র

Wednesday, December 8, 2010

রো গোপন তথ্য ফাঁস করার ঘোষণা দিয়েছেন উইকিলিকস’র মুখপাত্র ক্রিস্টিন রাফনসন। ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতার ও জামিন নাকচের ঘটনাকে মিডিয়ার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়েবসাইটটির মুখপাত্র ক্রিস্টিন রাফনসন বার্তা সংস্খা রয়টার্সকে বলেছেন, বিভিন্ন দেশের গোপন নথি যেগুলো আজ কিংবা আগামী দিনগুলোতে প্রকাশের কথা রয়েছে তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সেগুলো যথাসময়ে ফাঁস করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

ক্রিস্টিন রাফনসন বলেন, উইকিলিকস চালু আছে। আমরা আগের মতোই কাজ চালিয়ে যাব। লন্ডন এবং বিভিন্ন অজ্ঞাত স্খানে আমাদের একঝাঁক উদ্যোমী কর্মী এ ওয়েবসাইটটি চালু রেখেছেন।
উইকিলিকসের সাংবাদিক জেমস বিল বার্তা সংস্খা এএফপিকে বলেছেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গ্রেফতার হওয়া সত্ত্বেও তাদের ওয়েবসাইট যুক্তরাষ্ট্রের আরো গোপন কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস করবে। জেমস বলেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন, সব কর্মসূচি ঠিকঠাক মতো চলবে।
উল্লেখ্য, ওয়েব সাইটটির প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের একদিন পর আরো গোপন তথ্য ফাঁস করার এ ঘোষণা দেয়া হলো।

নয়া দিগন্তের সংবাদ- তথ্য ফাঁসের জন্য অ্যাসাঞ্জ নয়, যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী : অস্ট্রেলিয়া

স্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেভিন রাড বলেছেন, উইকিলিকসে আড়াই লাখ কূটনৈতিক তথ্যপ্রবাহ ফাঁস হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী, সংবাদমাধ্যমটির প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ নন।
কেভিন রাড বলেন, এই তথ্য ফাঁসের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তিনি আরো বলেন, তথ্যপ্রবাহে তার সম্পর্কে যে সমালোচনা হয়েছে করা হয়েছে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন।
কেভিনের এ অবস্খানকে সমর্থন করেছেন প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। কেভিনের মন্তব্যেরও প্রশংসা করে গিলার্ড বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত চমৎকার কাজ করছেন।’

ছয়টি অপরাধের অভিযোগে অ্যাসাঞ্জকে লন্ডনের পুলিশ গ্রেফতার করে। সুইডেনে অ্যাসাঞ্জ এসব অপরাধ করেন জানা দেশটির সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে।
তথ্য ফাঁস হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড অ্যাসাঞ্জের উদ্দেশে ‘মোটাদাগে দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেন। অ্যাসাঞ্জও কম যান না। তিনি জুলিয়া গিলার্ডের সরকারকে লজ্জাজনকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী বলে মন্তব্য করেন।
গত কয়েক সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতার আড়াই লাখেরও বেশি গোপন দলিল ফাঁস করে দেয়। ওয়াশিংটন এ ঘটনাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ বলে মন্তব্য করেন।
বার্তাসংস্খা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কেভিন রাড বলেন, ‘আড়াই লাখ গোপন তথ্যপ্রবাহ ফাঁস হওয়ার জন্য কেবল অ্যাসাঞ্জই দায়ী নন, আমেরিকানরাও এ জন্য দায়ী।’
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু