ভবিষ্যতেও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Monday, January 20, 2014

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখে  গত ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
গতকাল বিকালে গণভবনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেন, সবাইকে মনোনয়ন দিতে পারবো না। তবে শীতের পিঠা খাওয়াতে পারবো। তিনি ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু শত বাধা উপেক্ষা করে দেশবাসী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভাগে ৩৬টি সিট। আবেদন পেয়েছি ৮২২টি। আমি খুব আনন্দিত। এত উৎসাহ উদ্দীপনা এটাই বড় কথা। নারী জাগরণ বলতে যা বোঝায় এখানে তাই ঘটে গেছে। গণভবনের মাঠ সত্যিই ধন্য হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পার্লামেন্টে অংশ নেয়ার জন্য আপনারা এগিয়ে এসেছেন এটাই বড় অর্জন। রাজনীতি একদিনে শেষ হয়ে যায় না। যার যার এলাকায় কাজ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। বর্তমানে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা, সংসদ উপনেতা সবাই মহিলা। এটা বিশ্বে কোথাও নেই। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর মেয়েদের অবস্থান ছিল না বললেই চলে। ডিসি, এসপি, সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, সহকারী জজ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাম্বাসেডর, ওসি, ইউএনও প্রত্যেকটি পদে যেন মহিলারা পদ করে নিতে পারে তা আমরা করে দিয়েছিলাম। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করে দিই। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি। প্রথম মহিলা স্পিকার নারী করেছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একে একে সব জায়গায় যেন আমাদের বোনদের জন্য স্থান থাকে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই যোগ্য ও অভিজ্ঞ। তবে প্রার্থী অনেক, তাই সবাই সুযোগ পাবেন না। তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। সামনে উপজেলা নির্বাচন। এছাড়া পৌরসভা, সিটি করপোরেশনেও আপনারা সুযোগ পাবেন। প্রার্থী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আবেগের বশবর্তী হয়ে অথবা যোগ্যতার চেয়ে ব্যক্তিগত প্রিফারেন্স দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করবো না। যোগ্যতা অনুসারেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ড. গওহর বিজভী, এইচ টি ইমাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদা চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ, নূহ-উল আলম লেলিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ৩৬টি আসনের জন্য আওয়ামী লীগের ৮২২জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
হাসিনাকে অভিনন্দন ইংলাকের
তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। কূটনৈতিক চ্যানেলে পাঠানো অভিনন্দন বার্তায় ইংলাক সিনাওয়াত্রা আশা করেন, বর্তমান সরকার দুই দেশের সম্পর্ক আরও প্রসার ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে জানান।

‘অনেক হয়েছে এবার ক্ষান্ত দেন’- কীভাবে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হয় জানা আছে: প্রধানমন্ত্রী

Friday, January 10, 2014

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছেন, হরতাল, অবরোধ দিয়ে মানুষের জীবন ধ্বংস করা, খুন করা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ না করলে কীভাবে করতে হয় তা আওয়ামী লীগের জানা আছে। শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কাজ বন্ধ করা হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন বানচাল করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক হয়েছে এবার ক্ষান্ত দেন।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আসেননি, ভুল করেছেন। ভুলের খেসারত আপনাকেই দিতে হবে।’ তিনি বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে  যত কঠোর হওয়া দরকার, সরকার তত কঠোর হবে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়কার বিভিন্ন কথা তিনি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। সোনার বাংলা করাই আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার।’ তবে তাঁর বক্তব্যের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই ছিল বিরোধী দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা। হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতা বন্ধের জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি বারবার আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচনে না আসার জন্য ধন্যবাদ

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তিনি নির্বাচনে আসেননি। তিনি নির্বাচনে আসেননি, কারণ যুদ্ধাপরাধের দল জামায়াত আসতে পারেনি। ভালোই হলো, বাংলাদেশের মানুষকে যুদ্ধাপরাধীদের দলকে ভোট দিতে হয়নি। বিএনপি নেত্রীকে অনুরোধ করব, লাদেনের মতো ভিডিও দিয়ে, কর্মসূচি ঘোষণা করে দেশের মানুষকে যেন আর কষ্ট না দেন।’

ভোটারদের ধন্যবাদ

নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনকে।’ একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করায় তিনি নির্বাচন কমিশনকেও ধন্যবাদ জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, সেনাবাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

১২ তারিখ সরকার গঠন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন সরকার গঠন করার জন্য। এজন্য আগামী ১২ জানুয়ারি সরকার গঠনের জন্য শপথ গ্রহণ করব।’

শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কাজ বন্ধ করব

বিএনপির নেতা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক হয়েছে, এবার ক্ষান্ত দেন। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নতি অবশ্যই হবে। সঙ্গে রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধী নিয়ে বিএনপির ক্ষমতা নেই যে সেটা বন্ধ করবে।’ তিনি বলেন,  মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যত কঠোর হওয়া দরকার, সরকার তত কঠোর হবে। শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কাজ বন্ধ করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাদেনের মতো ভিডিওবার্তা দিয়ে আন্দোলনে নেমে দেশের মানুষকে কষ্ট যেন তিনি না দেন, সেটাই তাঁর কাছে অনুরোধ। কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা তা প্রতিহত করব। শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কাজ বন্ধ করা হবে।’

জবাব দিতে হবে সংখ্যালঘুদের কেন হত্যা করা হচ্ছে

খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ আর কত ধ্বংসযজ্ঞ সহ্য করবে?  তিনি বলেন, ‘জবাব দিতে হবে, কেন সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হচ্ছে?’ ২০০১ সালের নির্বাচনের পরও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, সে সময় আমরা বিরোধী দলে ছিলাম। কিন্তু এখন জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আছি। শক্ত হাতে এসব বন্ধ করা হবে। দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’

কষ্টের দিন থাকবে না

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ছেলে-মেয়েরা স্কুল যেতে পারছে না। হরতাল-অবরোধের কারণে দিনের পর দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়েছে। এ কষ্টের দিন আর বেশি দিন থাকবে না। আবার মানুষ স্কুলে যেতে পারবে। নিয়মিত কাজকর্ম করতে পারবে। কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে শক্ত হাতে প্রতিহত করব। বাংলার জনগণের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। এজন্য আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে সহযোগিতা চাই।’

অশান্তি বেগমের আক্রমণের শিকার থেকে কেউ রেহাই পায়নি

বিএনপির নেতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মনে শান্তি এলেও একজনের মনে কোনো শান্তি ছিল না। আমাদের বিএনপির নেত্রীর মনে শান্তি ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন, উনি তখন অশান্তিতে ভোগেন। আর উনার সেই অশান্তির আগুন ছড়িয়ে দেন সারা বাংলাদেশে। আবার শুরু করেন তিনি আন্দোলনের নামে খুন খারাবি, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড। উনার আন্দোলন মানে কী? উনি জনগণকে ডাক দেন। উনার ডাকে কেউ সাড়া দেয় না।’ তিনি বলেন, ‘বোমা হামলা করে বাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা শুরু করেন। সিএনজিতে ড্রাইভার যাত্রীসহ পুড়িয়ে মারেন। নিরীহ গরু। ট্রাকে গরু যাচ্ছে। সেই গরুগুলো ওই অশান্তি বেগমের আক্রমণের শিকার থেকে রেহাই পায়নি।’ তিনি বলেন, ‘রিকশাওয়ালা, গাড়িচালক কেউ রেহাই পায়নি। বারবার আলোচনার ডাক দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। আলটিমেটাম দিয়েছেন।’

তিনি যা গালি দেবেন তাই আশীর্বাদ হয়ে আসবে

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৬ সালে বিএনপির নেত্রী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এমনকি বিরোধী দলও হতে পারবে না। উনি যখন যা বলেন সেটা আওয়ামী লীগের বেলায় প্রযোজ্য না হলেও, ফলে যায় ওনার বেলায়।’ ‘তিনি যা গালি দেবেন, তা-ই আশীর্বাদ হয়ে আসবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, একটি দেশ কীভাবে চলবে সেটা ১০ জানুয়ারি এই ময়দানে বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছেন। একটি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি কীভাবে চলবে, সেটাও তিনি ওই ভাষণে বলেছেন। তাই এ দিনটি আজ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের অবস্থা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ। ওই সময় বিশ্বসভায় বাংলাদেশ সম্মান পায়। ২০০১-২০০৬ আবার চলে অত্যাচার নির্যাতন। বাংলাদেশে ৭১-এর মতো নির্যাতন করা হয়। ছোট্ট ৬ বছরের শিশু ফাহিমা, পূর্ণিমা ধর্ষণের শিকার হয়। কারণ তাদের বাবা-মা নৌকায় ভোট দিয়েছিল। এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের হাত থেকে মুক্ত করে আওয়ামী লীগ। সফলতা অর্জন করে। বাংলার মানুষের মনে তখন শান্তি ছিল। কিন্তু একজনের মনে শান্তি ছিল না। তিনি জনতার কাছে জানতে চান, ‘কার মনে শান্তি ছিল না?’ সমস্বরে সবাই জবাব দেয়, ‘খালেদা জিয়া’।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিক, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ।

অভিযাত্রায় সাড়া না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

Friday, December 27, 2013

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে কেউ বাধা দিতে আসলে তাদের প্রতিহত করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়াবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, আমার দায়িত্ব আপনাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
কোটালীপাড়ার সকল ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার বার্তা পৌছে দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহবান জানান। অন্য এমপি প্রার্থীদের শুধুমাত্র একটি আসনের জন্য কাজ করতে হয়, আর আমার তিনশত আসনের জন্য কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, জামায়াত নির্বাচনে আসতে পারবে না বলেই বিএনপি দুঃখিত হয়ে নির্বাচন করবে না। যারা মানুষের কল্যাণ চায় না, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদেরকে রুখে দাড়াতে হবে।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় কোটালীপাড়া শহীদ মিনার চত্তরে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুভাষ চন্দ্র জয়ধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মীসভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দীন নাসিম, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আব্দুল্লাহ, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ কবির, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজা মিয়া বাটু, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী এমদাদুল হক, কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু, কোটালীপাড়া পৌর মেয়র মো.ইলিয়াস হোসেনসহ জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১সালে আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন লাখো মানুষ দেখতে পাই। শুধুমাত্র আমার পরিবারের কেউকে দেখতে পাইনি। আপনাদের মাঝেই খুজে পেয়েছি আমার বাবা-মা-ভাই।
বিএনপির আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। শুধু বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারা নয় তাদের হাত থেকে গরু-ছাগলও রেহাই পাচ্ছে না। গরুভর্তি ট্রাকে আগুন দিয়ে গরুও পুড়িয়ে মেরেছে। আমরা পরিবেশ রক্ষায় লাখ লাখ গাছ লাগাই আর তারা অবাধে গাছ কাটছে। ২৯ তারিখ বিরোধী দলের ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রায় সাড়া না দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় পাকিস্তান অখুশী হয়েছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেত্রী একটি টুশব্দ পর্যন্ত করেনি। খালেদা জিয়ার প্রেস কনফারেন্সের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নাকি পাকিস্তানের নিন্দা প্রস্তাবে মর্মাহত হয়েছেন। খালেদা জিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী মানুষ মারার হুকুম দেন আর বাসায় বসে তিনি আয়েশ করে পায়েশ খান। বিএনপি নেত্রী মানুষ মারার হুকুম দেন আর জামায়াত শিবির তা পালন করে। বিএনপি’র কোন কোন নেতা পুলিশ মারার হুকুম দেন বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। মিথ্যা বলায় যদি কোন পুরস্কার থাকে তাহলে বিএনপি নেত্রীকে সে পুরস্কার দেয়া যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান বি. চৌধুরী, রব ও কাদের সিদ্দিকীর

Saturday, December 14, 2013

তফসিল স্থগিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব এবং কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
একই সঙ্গে বিরোধী নেতাকে সহিংস কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানানো হয়। গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতার প্রতি এ আহ্বান জানান তারা। বিবৃতিতে শীর্ষ এ তিন নেতা বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ধ্বংসোন্মুখ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। একদিকে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর একগুঁয়েমি এবং বিরোধী দলহীন একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে চলা, অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতার আহ্বানে বিরামহীন অবরোধ এবং কোথাও কোথাও হরতালের কারণে রাজনীতি সহিংস হয়ে উঠেছে এবং জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তারা বলেন, বিরামহীন অবরোধের কারণে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং বিশেষ মহলের উস্কানিতে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অমানবিক আচরণে হত্যাসহ ঝরে গেছে অনেক নিরীহ প্রাণ, পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে হিন্দু সম্প্রদায় সাধারণ মানুষের বিষয়-সম্পত্তি। আমরা এর কোনটাই সমর্থন করি না। তারা আরও বলেন, আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী দেশের এই পরিস্থিতিতে এবং জনস্বার্থে নির্বাচনী তফসিল স্থগিত এবং দেশ রক্ষার তাগিদে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করুন। অন্যদিকে বিরাধীদলীয় নেতার কাছে আমাদের আহ্বান, অনুগ্রহ করে আপনার কর্মীদের কঠোর নির্দেশ দিন- জান-মালের ক্ষতি থেকে নিরীহ জনগণকে রক্ষার জন্য। অহিংস শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যেমন, ‘মহাবস্থান’, সভা, সমাবেশ মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতিতে নতুনমাত্রা এবং নতুন দিক-নির্দেশনা যোগ করুন। তারা বলেন, এই দুইটি পদক্ষেপের কারণে ইতিহাস তাদের দু’জনকেই স্মরণ রাখবে। না হলে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে না।

দুই নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা

Monday, December 2, 2013

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন করে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেছেন পোশাকমালিকদের তিনটি সংগঠন বিজিএমই, বিকেএমই ও বিটিএমইএর নেতারা।

আজ সোমবার বিকেলে বিজেএমইএ ভবনে জরুরি মতবিনিময় সভা শেষে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টার দিকে হেঁটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের দিকে রওনা হন তাঁরা। যাওয়ার পথে ফার্মগেট খামারবাড়িতে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। পরে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে গণভবনে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। অন্যরা চলে যান গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার বাসার দিকে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর সভাপতির নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করবেন।

বিকেলে মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি ‘এয়ার বাকেটে’ আছে। এই সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চলমান সহিংসতার কারণে অনেক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। এর দায়ভার কেউ নিচ্ছে না।

বিএনপি ক্ষমতার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে: প্রধানমন্ত্রী

Saturday, November 30, 2013

বিএনপি ক্ষমতার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মারছে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাঁদের কোনো মানবিকতা নেই।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বাসের ভেতর আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করছে, যাত্রীসহ সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দিয়ে মানুষ মারছে। এমনকি তারা হেফাজত ও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে কোরআন শরিফও পুড়িয়েছে। যারা মানুষ পোড়ায়, কোরআনে আগুন দেয়, তারা ধর্মে কীভাবে বিশ্বাস করে?’
বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘কেন এভাবে পুড়িয়ে মানুষ মারবে? এতে তিনি কী পাচ্ছেন, কী লাভ হচ্ছে?’
শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা জনগণের অশান্তি চান। ‘“অশান্তি বেগমে”র আগুনে তো বাংলার জনগণ জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। দয়া করে আপনি (খালেদা জিয়া) মনের আগুন মনে রাখুন। ওই আগুনে বাস জ্বালিয়ে মানুষ পোড়াবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষকে আগুনে পোড়ানো বন্ধ করে রাস্তায় নামুন। দেখি কী আন্দোলন করতে পারেন। লোক ভাড়া করে, বোমা-ককটেল মেরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করবেন না। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের মারবেন না। যুব সমাজকে সন্ত্রাসী ট্রেনিং দেওয়া বন্ধ করুন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়েই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। চাইলে আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও দিতে রাজি আছি। দয়া করে মানুষ পুড়িয়ে মারবেন না। তাহলে মানুষ এর প্রতিশোধ নিবে। তখন যাবেন কোথায়? মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশের মানুষ কখন কী করে তার ঠিক নেই।’ তিনি বলেন, ‘তাদের যত ক্ষোভ সব সাধারণ মানুষের ওপর। গরিব কৃষকের কাছে শিক্ষা নিন কীভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি নিজে তাঁকে রেড ফোনে কল করেছি। আমি তাঁকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছি। আসলে উনি নির্বাচন চান না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করি, জনগণের গণতন্ত্রায়নে বিশ্বাস করি।’
বিরোধী দলের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতই চেষ্টা করুন না কেন, কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির দুই গুণ, দুর্নীতি আর মানুষ খুন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ব্যর্থ লোক আমাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দেয়, আবার রাষ্ট্রপতির কাছেও যায়। আপনারা তাহলে কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা অবস্থায়ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারলেন না। কেন তাঁরা ব্যর্থ হলেন? আপনাদের ব্যর্থতার কারণেই তো ১/১১ সরকার দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। এখন আমাদের ছবক দিতে আসেন।’

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে পুনর্মিলনী সভায় আরও বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার জীবনী নিয়ে লেখা ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নাসির উদ্দিন ইউসুফ (চলচ্চিত্র), রফিকুল ইসলাম-মরণোত্তর (ভাষা), মুশফিকুর রহিম (খেলাধুলা), সিদ্দিকুর রহমান (খেলাধুলা), মোহাম্মদ এ আরাফাত (গণমাধ্যম) এবং ঝর্ণা বেগমকে (সাহসিকতা) বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।

সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার তাগিদ : ফখরুলের কুশল জানলেও সংলাপের বিষয়ে কিছুই বললেন না প্রধানমন্ত্রী

Friday, November 22, 2013

রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে আরেকটি প্রত্যাশারও অপমৃত্যু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে কথা বললেও বহুকাঙ্ক্ষিত সংলাপ নিয়ে কিছুই বলেননি। কুশল বিনিময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেন তিনি।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপ শুরু করতে বলেছেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকে এ ধরনের তথ্য দেন।

গতকাল সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে মির্জা আলমগীর গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে শুধু কুশল বিনিময় করেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কেমন আছি এবং ম্যাডাম কেমন আছেন—এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন। তবে সংলাপের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।
সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা যোগ দেন। বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি যোগ দিতে পারেননি বলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে দেখা হয় দুই নেত্রীর। ওই সময় কুশল বিনিময়ও হয় তাদের মধ্যে।
সশস্ত্রবাহিনী দিবসের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সাবেক প্রেসিডেন্টগণ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিগণ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতগণ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যোগ দেন।
উল্লেখ্য, গত বছর সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। তবে একই অনুষ্ঠানে দুই নেত্রী যোগ দিলেও তাদের মধ্যে কোনো কথাবার্তা কিংবা কুশল বিনিময় হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
সেনাকুঞ্জে সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শুধু দেশে নয়, শান্তি মিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে জাতিসংঘেরও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনী তাদের দক্ষতার সুনাম সারা বিশ্বে রেখেছে। তারা কাজের মাধ্যমে দেশের মানুষের বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করে শুধু দেশের ভাবমূর্তি নয়, জাতিসংঘের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছে। জাতিসংঘে সেনাবাহিনী যেন তাদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারে, সেজন্য শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও দাবি করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সব বাহিনীকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সেনাবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পরে তিনি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন।
এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় সশস্ত্রবাহিনী দিবস। এ উপলক্ষে গতকাল ফজরের নামাজ শেষে সেনানিবাস, নৌঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনীর ঘাঁটির মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দিবসটির শুরুতে সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোত্সর্গকারী সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ঢাকা (সদরঘাট), নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনীর জাহাজগুলো গতকাল বেলা ১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থাকায় ঢাকা সেনানিবাসের সব রাস্তা (শহীদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে স্টাফ রোড পর্যন্ত প্রধান সড়ক) যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে সেনানিবাসে অবস্থান করা ব্যক্তি এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের বহনকারী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন গতকাল সকাল ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা এবং দুপুর দেড়টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সেনানিবাস এলাকায় বন্ধ ছিল।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে শান্তির মডেল উপস্থাপন করলেন

Saturday, September 24, 2011

বিশ্বকে পাল্টে দিতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে 'জনগণের ক্ষমতায়ন' মডেলের রূপরেখা বিশ্বনেতাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালনে এই মডেল বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তিনি বলেন, এই শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মানবিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার এবং বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দিতে বিশ্বনেতাদের সমর্থনও কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় শনিবার রাতে) জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে 'আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনে শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতা' শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ মডেল উপস্থাপন করেন শেখ হাসিনা। বরাবরের মতো প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলায় ভাষণ দিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটভুক্ত দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ভবনের সামনে শান্তি সমাবেশ করা হয়েছে। সেখানে বিএনপির নেতিবাচক ভূমিকার কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে নেতারা অভিযোগ করেন। তাঁরা বিরোধী দলের এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। এ সমাবেশে পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাসদ নেত্রী শিরীন আক্তারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে 'যেখানেই শেখ হাসিনা সেখানেই প্রতিবাদ কর্মসূচি'র আলোকে একই সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।
শেখ হাসিনা তাঁর উপস্থাপিত শান্তির মডেলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য দূরীকরণ, বঞ্চনার লাঘব, ঝরে পড়া মানুষকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই ছয়টি পরস্পর ক্রিয়াশীল বিষয় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সারা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণীত এই মডেলে গণতন্ত্র এবং উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সব মানুষকে সমান চোখে দেখা এবং মানবিক সামর্থ্য উন্নয়নের কাজে লাগানোকে তাঁর মডেলের মূল বিষয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এসব বাস্তবায়ন এবং সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।
এ লক্ষ্যে প্রতিটি রাষ্ট্রকে আন্তরিকভাবে সঠিক ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেও এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। শান্তিকেন্দ্রিক উন্নয়ন মডেল প্রয়োগের মাধ্যমে সাত বিলিয়ন মানুষের বিশ্বকে পাল্টে দেওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তাঁর সরকার। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়_মন্তব্য করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী হবে। 'আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সনদের অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ' বলেন তিনি। অতীত ভুলের সংশোধনের এটিই একমাত্র পথ এবং এর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য সুসংহত হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের ব্যাপারে নিজের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্ত্রাসের শিকার।' এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি নাইন-ইলেভেনসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'শান্তির জন্য ন্যায়বিচার প্রয়োজন, আর শান্তি হচ্ছে উন্নয়নের পূর্বশর্ত।'
১৯৬৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অন্যায্য কর্মকাণ্ডে বিশ্বে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রাণ হারানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা জোরদার করার মাধ্যমে এ ধরনের অপমৃত্যু রোধ করা যেত।
আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি আন্তরাষ্ট্র জাতিগত সংঘাত নিরসন, সন্ত্রাসবাদ দমন, আন্তসীমানা অপরাধ দমন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন, পানি ও জ্বালানি নিরাপত্তা তৈরি এবং ধনী ও গরিবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বিলোপ করাও জাতিসংঘের কাজ বলে মত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্বের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে উল্লেখ করে বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের আবেদনের প্রতি সবার সমর্থন কামনা করেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে ৩৬টি দেশের ৫২টি মিশনে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত লক্ষাধিক শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে।
জাতিসংঘের শান্তি স্থাপন কমিশনে 'ন্যাম'-এর সমন্বয়কারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সব সময়ই সংঘাত-পরবর্তী সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন এবং প্রতিকারমূলক কূটনীতির পক্ষে অভিমত দিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে 'দ্য রোল অব দ্য ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং মিশন' (ডিপিকেও)-তে পরিকল্পনা এবং কৌশল প্রণয়নে বাংলাদেশের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের কৌশল সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে মিল রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে_মন্তব্য করে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ১২ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রণীত নারী নীতিমালায় নারীর ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ, তাদের সুরক্ষা এবং জেন্ডার সমতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বিভিন্ন সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জাতীয় সংসদে ৬৪ জন এবং স্থানীয় সরকার পরিষদের সংরক্ষিত আসনে ১২ হাজার ৮২৮ জন নারী নির্বাচিত হয়েছেন।
মন্ত্রিসভায় পাঁচজন নারী সদস্যের এবং জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুজন নারী চেয়ারপারসনের অন্তর্ভুক্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলের নেতা, সংসদ উপনেতা এবং জাতীয় সংসদের একজন হুইপ নারী।'
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সব সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে সরকারের দৃঢ়সংকল্পের কথা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার কথা পুনর্ব্যক্ত করে এ লক্ষ্যে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা বিশ্বনেতাদের অবহিত করেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের এসব উদ্যোগ সফল করতে এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'উন্নত বিশ্বের বাজারে আমাদের পণ্যের অবাধ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি, বাণিজ্য বাধা অপসারণ, বৈদেশিক সাহায্যের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এসব সহায়তা আসতে পারে।'
গত মে মাসে ইস্তাম্বুলে কৃষি, জ্বালানি অবকাঠামো, পানি, অভিবাসন বিষয়ে যেসব অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। দোহা রাউন্ডের সফল সমাপ্তির জন্য মন্তারাই, প্যারিস ও ব্রাসেলসে উন্নয়ন সহযোগীরা যেসব অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়নের এখনই উপযুক্ত সময় বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের কথাও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে আমাদের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে ৩০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বে এবং এটা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয়।'
ভবিষ্যৎ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড এবং দাতাদের সহযোগিতায় ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়ান্স ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে। পাশাপাশি সরকার ১৩৪ দফা অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যার আওতায় নদী খনন, ২০ শতাংশ ভূমির বনায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম ফসলের জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্ধশতাব্দী ধরে নিজের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং নিজেকে শান্তির পক্ষের একজন নির্ভীক যোদ্ধা দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, 'অসাম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বঞ্চনা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা, নারী ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারহীনতা এবং সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে।'
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনের সভাপতি জোসেফ ডেইসকে এবং এ বছর সাধারণ অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য 'আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনে শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতা' শীর্ষক সময়োচিত প্রতিপাদ্য নির্বাচনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া তিনি বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পাওয়া নতুন রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদান জাতিসংঘের ১৯৩তম সদস্য হওয়ায় সুদানের জনগণকে অভিনন্দন জানান।
সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, অ্যাম্বাসাডর-এট-লার্জ জিয়াউদ্দিন প্রমুখ।

চালকলে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বন্ধ করুন টিসিবি কার্যকর করুন __প্রধানমন্ত্রী

Sunday, January 9, 2011

দেশে খাদ্যদ্রব্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া টিসিবি কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তা কার্যকর করতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশনা দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রে জানা যায়, ঋণ পরিশোধের তাড়া না থাকায় মিল মালিকদের চাল মজুদ রাখার কারণে চালের দাম বাড়ছে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য চালকল মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি চালকল মালিকদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ না দেওয়ার এবং ঋণের পরিমাণ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন ব্যাংকগুলোকে।
সূত্র মতে, বৈঠকে শেখ হাসিনা খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের উদ্দেশে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে বলে চুপ থাকলে চলবে না, মানুষকে বাঁচাতে হবে। তিনি মন্ত্রীকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বিস্তৃত করার নির্দেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির বিষয়েও আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া চালসহ খাদ্যদ্রব্য পরিবহন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ : সূত্রে জানা যায়, বারবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও টিসিবি যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজমন্ত্রী টিসিবিকে কার্যকর করতে তাঁর মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ‘কী করা হয়েছে, তা জানতে চাই না, আমি শক্তিশালী টিসিবি দেখতে চাই।’
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা : জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্য নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। ওবায়দুল কাদের গত শনিবার বলেছিলেন, ‘মধুচন্দ্রিমাকাল শেষ, সরকারের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ।’ সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। তাঁরা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সরকারের বিরুদ্ধে এসব বক্তব্য সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তবে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ভবঘুরে ও গৃহহীন (পুনর্বাসন) আইনের খসড়া অনুমোদন : ভবঘুরে ও বাস্তুহারা লোকদের আশ্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা ভবঘুরে ও গৃহহীন (পুনর্বাসন) আইন-২০১০-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আবুল কালাম আজাদ জানান, মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা দ্বৈতকর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধবিষয়ক চুক্তি অনুমোদন করেছে।
এ ছাড়াও বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব এবং বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ব সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতির মেলবন্ধনের জন্য ৩৮ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। সোমবার ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন এবং দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা চুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। পরের দিন এ চুক্তিটি সই হবে।
বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দক্ষিণ কোরিয়া সফর, এশীয় সহযোগিতা সংলাপের (এসিডি) ৯ম মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ, ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য সংলাপের তৃতীয় বৈঠক এবং দিল্লিতে আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্মেলন বিষয়ে চারটি প্রতিবেদন মন্ত্রিসভা বৈঠকে পেশ করা হয়।
 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু