Home » , » প্রধান বিচারপতি, আইন প্রয়োগ করুনঃ বিচারপতিদের সম্পদের বিবরণী

প্রধান বিচারপতি, আইন প্রয়োগ করুনঃ বিচারপতিদের সম্পদের বিবরণী

Written By Unknown on Sunday, December 5, 2010 | 3:18 PM

হিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সম্মেলনে আপিল বিভাগের বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি নিম্ন আদালতের বিচারকদের সম্পদের বিবরণ দিতে বলেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিবরণ দিয়েছেন, কেউ কেউ দেননি। আমি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আমন্ত্রণ জানাব, আপনারাও সম্পদের হিসাব দেবেন। নিম্ন আদালতের বিচারকেরা বিবরণী দেবেন, আমরা দেব না, তা গ্রহণযোগ্য নয়।’ আমরা তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম সমর্থন করি। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সম্পদের বিবরণী দেওয়ার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক উদ্যোগ নিয়েছেন। এই উদ্যোগ যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, ততই মঙ্গল।
আমরা বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬(৪) অনুচ্ছেদের আওতায় প্রণীত আচরণবিধি অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি মো. ফজলুল করিম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েই সম্পদের বিবরণী প্রকাশের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সে সময় প্রথম আলো ‘আমরা প্রধান বিচারপতির দিকে তাকিয়ে’ শীর্ষক সম্পাদকীয় লিখে তার সাধুবাদ জানিয়েছিল। তখন আইনবিদ শাহ্দীন মালিক প্রথম আলোতেই ঈষৎ বঙ্কিম-কটাক্ষে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যত দিন খুশি আমরা যেন তাকিয়ে থাকি।’ তাঁর আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়েছিল। আমরা লিখিতভাবে সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রতি তাঁর সম্পদের বিবরণী প্রদানে আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু সে আহ্বান নিষ্ফল রোদনে পরিণত হয়।
২০০৩ সালের সংশোধিত আচরণবিধিতে নির্দিষ্টভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সম্পদের বিবরণী আদায়ে প্রধান বিচারপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বলা আছে, প্রধান বিচারপতি আহ্বান জানালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা সম্পদের বিবরণী দেবেন। সুতরাং প্রধান বিচারপতিকেই তা চাইতে হবে। আর সম্পদের বিবরণী প্রকাশ মানে রাষ্ট্রপতির কাছে নয়, দেশবাসী তা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখতে চায়। আগের প্রধান বিচারপতিরা তাঁদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে অবসরে গেছেন। এই ধারার অবসান ঘটুক।
নিম্ন আদালতের বিচারকেরা জরুরি অবস্থায় সম্পদের বিবরণী দিয়েছিলেন। সেই বিবরণী ফিতাবন্দী থাকা অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট নতুন করে এবং বিস্তারিতভাবে সম্পদের বিবরণী চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের এই দৃষ্টিভঙ্গি ও নিস্পৃহতা গ্রহণযোগ্য নয়। ধারণা করি, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারক বহু আগেই তাঁদের সম্পদের বিবরণী জমা দিয়েছেন। অথচ তা যাচাই-বাছাইয়ের কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
সমাজে আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এমন জীবনব্যবস্থা ক্রমেই ‘সামাজিক’ স্বীকৃতি পেয়ে চলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা আমাদের সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত হচ্ছে। রাজনীতিকেরা আশাভঙ্গের কারণ হয়েই থাকছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তই প্রত্যাশিত। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা ইতিমধ্যে সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করেছেন। এমনকি কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন এবং তাঁদের সম্পদের বিবরণীও সুপ্রিম কোর্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে স্থান পেয়েছে। একই সঙ্গে আমরা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদেরও সম্পদের বিবরণী প্রকাশের আহ্বান জানাই। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাঁদের দায় অবসর নিলেই চুকেবুকে যায় না। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, ‘বিচারকদের মনের স্বাধীনতা মরে গেলে কোনো সংবিধান বা ধর্মগ্রন্থ দিয়ে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।’ খুবই মূল্যবান কথা। বিচারক-মনের এহেন স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর একটি উপায় হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করা।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু