Home » , » কবে দূর হবে এ ধরনের কুসংস্কার? পীরের প্রাণঘাতী ‘চিকিৎসা’

কবে দূর হবে এ ধরনের কুসংস্কার? পীরের প্রাণঘাতী ‘চিকিৎসা’

Written By Unknown on Sunday, December 5, 2010 | 3:17 PM

সাফল্যের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন বলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মাত্র ১৮ বছর বয়স: স্বপ্নময়, কর্মদীপ্ত এক জীবনের পুরোটাই রয়েছে সামনে। এমন সময় এ কী ঘটে গেল রিফাতের! সিলেটের আম্বরখানার এই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে কী বলে বর্ণনা করা যায়? ৩০ নভেম্বর রিফাত হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে তহুরা বেগম নামের এক নারীর কাছে নেওয়া হয়, যিনি সিলেটের জামতলা এলাকায় থাকেন এবং জামতলার ‘পীরানি’ নামে পরিচিত। তহুরা বেগম যথারীতি ঘোষণা করেন, রিফাতের ওপর জিনের আছর হয়েছে।
সেলামি হিসেবে নগদ ৭৭ হাজার টাকার বিনিময়ে পীরানি তহুরা বেগম ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া খাওয়ানো, তেলমালিশ ইত্যাদি ‘চিকিৎসা’ চালান রিফাতের ওপর সারা রাত। রিফাত গুরুতর অসুস্থ হলে ভোররাতের দিকে তাঁকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়, সেখানে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
কথিত পীরানির এই উদ্ভট ও প্রাণঘাতী ‘চিকিৎসা’, একটি গরু ও এক ভরি সোনা নিয়ে তাঁর অন্তর্ধান এবং রিফাতের মা ও মামাসহ পরিবারের লোকজনের আচরণের বিবরণ শনিবারের প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে। কোনো অজগণ্ডগ্রামের নিরক্ষর পরিবার নয়, একটি বিভাগীয় শহরে বসবাসরত বেশ সচ্ছল, শিক্ষিত একটি পরিবারের সদস্যরা কী গভীর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন, তা এ ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। রিফাতের মাসহ পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ রিফাতকে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে ওই প্রতারক ‘পীরানি’র কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের গৃহকর্মী রোকেয়া বেগমের (৩০) পরামর্শে। এটা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক যে তাঁরা নিজেদের বিচারবুদ্ধি না খাটিয়ে একজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন অশিক্ষিত নারীর পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পুলিশ রোকেয়া বেগমকে আটক করেছে। আমাদের পরামর্শ, রোকেয়া বেগম কথিত পীরানি তহুরা বেগমের দালাল কি না, তা যেন খতিয়ে দেখা হয়। কারণ জানা যাচ্ছে, সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকায় তহুরা বেগমের নিয়োজিত দালাল রয়েছে, যারা অসুস্থ ও বিভিন্ন বালামুসিবতের শিকার লোকজনকে পীরানির কাছে যেতে প্ররোচিত করে।
পীরানি তহুরা বেগমকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তিনি সম্ভবত তাঁর কোনো ভক্ত-অনুসারীর আশ্রয়ে আত্মগোপনে আছেন। সে রকম হলে আমরা তাঁর আশ্রয়দাতার বোধোদয় কামনা করি: তহুরা বেগম মোটেও পীর নন, তিনি রিফাতের হত্যাকারী। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়া উচিত। পুলিশেরও উচিত গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করা। তহুরা বেগমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। আর ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজ, পানিপড়া-তেলপড়াসহ যাবতীয় অবৈজ্ঞানিক ও ক্ষতিকর ‘চিকিৎসা’ প্রয়াসে যাঁরা বিশ্বাস করেন, রিফাতের এই মর্মান্তিক অকালমৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁদের কুসংস্কারগুলো যেন দূর হয়। 

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু