Home » , » একটু খানি রক্ত ত্যাগ ।। রাছেল আল ইমরান

একটু খানি রক্ত ত্যাগ ।। রাছেল আল ইমরান

Written By Unknown on Saturday, June 4, 2011 | 8:44 PM

ক্যার- ক্যার- ক্যার! কলিং বেলটা আওয়াজ করে বেজে উঠতেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় সবুজের। কতদিন থেকে বাবাকে বলছি, কলিং বেলটা বদলাও, আওয়াজটা বড্ড বিদঘুটে। এই-ই শেষ! আর কোন অগ্রগতি নেই। নতুন বেল কেনাও হয় না। আর ব্যাটা বেল নিজের জায়গায় বসে আছে বহাল তবিয়তে। আবার শব্দ করে বেজে উঠতেই সবুজ দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল দরজার দিকে।
উঃ! বিরক্তিকর! বলতে বলতে দরজা খুলতেই সামনে দাঁড়ানো প্রিয় ব্যক্তিটিকে দেখে লজ্জা পেল সবুজ। ‘আস্সালামু আলাইকুম, মনির ভাই। আপনি ?
ওয়ালাইকুম। বিরক্তি করলাম ? একরাশ হাসি সবুজকে উপহার দিয়ে জিজ্ঞেসা করলো মনির ভাই।

না না ! ছিঃ কি যে বলেছেন ? আসলেই কথাটা আপনাকে বলিনি। বলেছি ঐ বেলটাকে, বড্ড বিচ্ছিরি আওয়াজ। আপনি আসুন তো। সাথে কে? চেনা চেনা লাগছে।
ও, শামিম। ওকে তো চেনার কথা। তোমাদের কলোনিতেই তো থাকে, তোমার ইয়ারে পড়ে। ডি- ব্লকে থাকে। বললেন মনির ভাই।
ভালো করে তাকাল সবুজ। চিনতে পেরেছে, কিন্তু ওর মুখটা কেমন যেন মলিন, চোখ দু'টো ছল ছল করছে। দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ চিন্তিত। আসুন না। হাত ধরে মনির ভাইকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যায় সবুজ, পেছনে পেছনে শামিম ও প্রবেশ করলো।
সময় নষ্ট করবো না। তোমার কাছে একটি কাজে এসেছি। একটা উপকার করতে হবে, ভাই। বসতে বসতে বললেন মনির ভাই।
কি উপকার ? বলুন। কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকাল সবুজ।
আচ্ছা তার আগে বলো, এক বছরের মধ্যে তোমার কোন বড় ধরনের অসুখ হয়েছিল ?
না- তো। কিন্তু কেন বলুন তো ?
বলছি। আচ্ছা তোমার বয়স কত হলো?
এবার আঠারতে পা দিলাম।
আর ওজন?
৪৫- ৪৬ হবে আর কি? কিহবে এসব জেনে বলুন তো?
প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন মনির ভাই।
চমৎকার। চার মাসের মধ্যে কাউকে রক্ত দিয়েছ?
না, কিন্তু আপনি কেন এসব অদ্ভদ প্রশ্ন করছেন, তা না বললে আমি আর আপনাকে কিছু বলবো না।
বলছি। শামিমের ছোট বোন রূপার অবস্থা খুবই খারাপ। ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তার সাহেব বলেছেন, আজ রাতের মধ্যে তিন ব্যাগ এবি নেগেগটিভ ম্যানেজ না করতে পারলে তার আর কিছুুই করার থাকবে না। তুমি তো জানো নেগেটিভ রক্ত পাওয়া খুব মুশকিল। আমি আগে থেকে জানতাম, তুমি এই গ্র“পের। তাই তোমার কাছে ও কে নিয়ে এসেছি।
মনির ভাইয়ের পাশে বসা শামিমের দিকে তাকালো সবুজ। ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে সে, আশাবঞ্জক কিছু শোনার অপেক্ষায়। আমি ! আমাকে রক্ত দিতে হবে ? আগে যে কোনদিন দেইনি। হতচকিত সবুজ জিজ্ঞাসা করলো মনির ভাইকে। সেটা কোন সমস্যা নয়। আজ থেকেই না হয়ে শুরু হবে। বললেন মনির ভাই।
 ইয়ে...... মানে...... রক্ত দেব ? এমনিতেই ইঞ্জেকসনে আমার খুব ভয় আর গরুর মতো একটা সুই দিয়ে আধা ঘন্টা ধরে রক্ত নিলে আমি একেবারে মরেই যাব, মনির ভাই।
যা ভাবছ, একেবারে ভুল। সময় লাগবে মাত্র পাঁচ মিনিট। তুমি কলেজে পড় আর একটা পিঁপড়ার কামড়ালে যে ব্যথা হয়, সেটাও সইতে পারবে না ? জিজ্ঞাসা করলেন মনির ভাই।
আর কাউকে পাননি ? প্রশ্ন করে সবুজ। চিন্তা করছে কোন ভাবে এড়ানো যায় কি না ? 
না, ভাই। এবার কথা বলে উঠলো শামিম। তাহলেই তো দিয়েই দিতাম। আমার নিজেরই বি পজেটিভ। আমাদের আশে পাশ কারও সাথে মেলেনি। আমার মা- বাবা সাবাই রূপার জন্য কান্না কাটি করছে। রূপা যদি মারা যায়......। কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে শামিমের, দু'চোখে অশ্র“।
শামিমের কান্নায় বিব্রত বোধ করে সবুজ। কি বলে ফেরাবে একে ? রক্ত দিতে যদি সুই ঢোকাতে না হতো তাহলে ওদের সাথে এক্ষুনি চলে যেত। নিজের দেহে সুই ঢোকাতে হবে না- না, বাবা, এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
হঠাৎ ড্রয়িং রুমে সবুজের মা প্রবেশ করলেন। আরে মনির ? কেমন আছ বাবা ? কখন  এলে ? সাথে কে ? এক সাথে অনেক গুলো প্রশ্ন করে থামলেন তিনি। ভালো ছেলে হিসেবে এলাকার মুরুব্বিদের কাছে মনির ভাই খুবই সুপরিচিত।
আমি ভালো আছি, খালাম্মা। আর এ হচ্ছে শামিম। ওর ছোট বোন রূপার অবস্থা খুবই খারাপ। আজ রাতের মধ্য তিন ব্যাগ রক্ত না দিতে পারলে হয়তো বাঁচানো যাবে না। তাই এসেছিলাম সবুজের কাছে, রক্তের জন্য।
আমার সবুজ রক্ত দেবে!! না- না- না-। কি বলছো বাবা ? ও তো খুব ছোট। প্রবল আপত্তি তোলেন সবুজের মা।
আমি সবুজের কাছে সব শুনেছি। রক্ত দেয়ার সমস্ত যোগ্যতাই ওর আছে খালাম্মা। জবাব দিলেন মনির ভাই।
তা না হয় হলো বাবা। ও কে বাদ দাও। আমার একমাত্র ছেলে সারা জীবনে কোনো কষ্ট করতে দেইনি। রক্ত দিয়ে আবার কি না কি হয় ? কোন সমস্যা হলে ? উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন খালাম্মা। সব ভুল। রক্ত দিলে কোন ক্ষতি তো হয়ই না বরং চার মাস পর পর রক্ত দেয়া শরীরের জন্য উপকারী। দেহের রক্ত কণা এমনিতেই চার মাস পর নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট না করে যদি কারও উপকারে লাগে, তাতে সমস্যা কি ? বোঝাবার চেষ্টা করেন সবুজের মা-কে।
যাই হোক বাবা। আমি মা। আমার মন মানে না। তুমি না হয় কষ্ট করে আর কোথাও খুঁজে দেখ। দোয়া করি, অবশ্যই পেয়ে যাবে। আর শোনো, চা না খেয়ে যাবে না  কিন্তু। বলতে বলতে বাড়ির ভেতরে চলে যান সবুজের মা। মায়ের দেয়া সিদ্ধান্তে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে সবুজ। যাক্ বাবা রক্ত দেয়া লাগলো না। মলিন মুখে উঠে দাঁড়ালো মনির আর শামিম।
আরে আরে। চা না খেয়ে যাচ্ছেন কোথায় ? এক্ষুনি নিয়ে আসছি, প্লিজ একটু বসেন। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে সবুজ।
তার আর দরকার নেই। অন্য দিন হবে। হাতে সময় খুব কম। দেখি, অন্য কোথাও চেষ্টা করে পাই কি না। মনির ভাইয়ের কন্ঠে হতাশা। শামিমের মুখে কোন ভাষা নেই।
আসলে....... আমি....... মানে রক্ত দিতেই চাচ্ছিলাম। কিন্তু মা না করেছেন। বোঝেন তো, মায়ের আদেশ পালন করা ফরজ। কিইবা করার আছে আমার? অজুহাত পেশ করে সবুজ।
মনির ভাই বলে ওঠেন, দেখো সবুজ। মানবিকতার অনুভূতিটা একান্তই নিজের। আর একটা জিনিস মনে রেখো, বিপদ যে কোন মুহূর্তে যে কোন ব্যক্তির ও পরই আসতে পারে। তাই মানুষকে বিপদে সহযোগীতা করলে, আল্লাহও তাকে সাহায্য করেন। আসি। ভঙ্গুর মনে সবুজদের বাসা থেকে বেরিয়ে যান মনির ভাই আর শামিম।
দরজা বন্ধ করে কতক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সবুজ। মনির ভাইয়ের বলে যাওয়া শেষ কথাগুলো খুব দংশন করছে তাকে। কিউবা ক্ষতি হতো তার ? কল্পনায় হঠাৎ সুইয়ের কথা ভাবতেই শিউরে ওঠে সে। না বাবা। এ কাজ আসলেই তার দ্বারা সম্ভব নয়। মাথা নাড়ে সবুজ। তিন দিন পার হয়ে গেছে এ ঘটনার পর। কলেজ থেকে ফেরার পথে হঠাৎ করেই সবুজের সাথে দেখা হয় মনির ভাইয়ের। আস্সালামু আলাইকুম। আরে মনির ভাই, কেমন আছেন ? জিজ্ঞাসা করে সবুজ।
ওয়ালাইকুমুস সালাম। আছি, আলহামদুলিল্লাজ। জবাব দিলেন তিনি। আচ্ছা, ওই যে আপনার সাথে এসেছিল ছেলে কি যেন নাম ? ওর বোন রূপার কি খবর? মনে পড়তেই জানতে চাইল সবুজ।
শামিমের বোন রূপা? সে তো মারা গেছে। ভাবলেশহীন মুখে জবাব দিলেন মনির ভাই। (বাকি অংশ আগামী সংখ্যায়)


0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু