আমরা আশা করেছিলাম, যত জটিলতার মধ্য দিয়ে হোক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে উৎসাহের মধ্য দিয়ে হয়েছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনও সে রকমই একটা পরিবেশে হবে।
কিন্তু যখন উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হলো, তখনই আমরা বেশির ভাগই নিশ্চিত ছিলাম যে সমস্যা হবে। বাংলাদেশে সংসদ রেখে নির্বাচন করা খুব কঠিন। তার পরই দুই দলের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়ে গেল। অবরোধের বেলায় দুই ধরনের শক্তি সমান্তরালে কাজ করেছে। সহিংস শক্তি কাজ করেছে, যাদের শীর্ষভাগই জামায়াত ও শিবিরের, যাদের নেতাদের বিচার হচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে। তাদের সহিংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন মিলে গিয়ে সহিংস আন্দোলনের চেহারা পেয়েছে। অপরদিকে সরকার যেভাবে দমনের প্রক্রিয়ায় গেছে, তাতেও পরিস্থিতির আরও অবনতি নিশ্চিত হয়।
এরই মধ্যে হঠাৎ করে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করল। আমাদের সময়ও আমরা তিনবার নির্বাচনের তারিখ বদলিয়ে তৎকালীন বিরোধীদের নির্বাচনে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলাম। এবারও যদি প্রয়োজনে তফসিল পরিবর্তন করে বিরোধী দলকে আরও স্পেস দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো ফল অন্য রকম হতেও পারত। কিন্তু সেদিকে মোটেই সচেষ্ট হওয়া হলো না।
সরকারি দলও ধাক্কা খেল। তারা ভেবেছিল যেসব দল নির্বাচনে যোগ দেবে, এমনকি যে বামপন্থী দলগুলো আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিল, তারাও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াল। এমনকি জাতীয় পার্টি গত পাঁচ বছর মহাজোটে থেকেও নির্বাচনে রইল না। বিশাল প্রার্থী-সংকটের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়া গণতন্ত্রের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দল এ রকম একটি ফলাফলের জন্য প্রস্তুত ছিল না। বিরোধী দলও কিছু ছাড় দিয়ে কিছু আদায় করে নির্বাচনে আসতে পারত, কিন্তু তারা আসেনি।
এখন নির্বাচনে যা-ই ভোট পড়ুক না কেন, তা এই ১৫৩ জনের নির্বাচিত হওয়ার কলঙ্কের পরিপূরণ ঘটাবে না। নির্বাচনে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়, তখন বিদেশি পর্যবেক্ষকেরাও আগ্রহ হারান। কত ভোট পড়বে, তা তাই বড় বিষয় নয়, এটা গণতন্ত্রের জন্য কতখানি সহায়ক হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
এরপর কী হবে? সরকারও বলছে এটা নিয়মরক্ষার নির্বাচন। ২৪ জানুয়ারির পরে আরেকটি সংসদ গঠিত হওয়ার পর সরকার শিগগিরই সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করার মনোবৃত্তি নিয়ে এগিয়ে আসে কি না, সেটা এখন দেখার বিষয়। সরকার যদি তা করতে পারে, তাহলে বর্তমানের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যাবে। এর পরে সরকারের প্রধান কাজ হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিরোধী দলকে নিয়ে আসার জন্য যা যা করা দরকার, তা করা। বিরোধী দলেরও দায়িত্ব রয়েছে ছাড় দিয়ে হলেও নির্বাচনে আসার। ১৯৯৬ সালে যেমন হয়েছিল, আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সংহত করা না গেলে দেশে ও বাইরে আমরা খুবই চাপের মুখে পড়ব।
এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার।
সরকারি দলও ধাক্কা খেল। তারা ভেবেছিল যেসব দল নির্বাচনে যোগ দেবে, এমনকি যে বামপন্থী দলগুলো আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিল, তারাও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াল। এমনকি জাতীয় পার্টি গত পাঁচ বছর মহাজোটে থেকেও নির্বাচনে রইল না। বিশাল প্রার্থী-সংকটের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়া গণতন্ত্রের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দল এ রকম একটি ফলাফলের জন্য প্রস্তুত ছিল না। বিরোধী দলও কিছু ছাড় দিয়ে কিছু আদায় করে নির্বাচনে আসতে পারত, কিন্তু তারা আসেনি।
এখন নির্বাচনে যা-ই ভোট পড়ুক না কেন, তা এই ১৫৩ জনের নির্বাচিত হওয়ার কলঙ্কের পরিপূরণ ঘটাবে না। নির্বাচনে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়, তখন বিদেশি পর্যবেক্ষকেরাও আগ্রহ হারান। কত ভোট পড়বে, তা তাই বড় বিষয় নয়, এটা গণতন্ত্রের জন্য কতখানি সহায়ক হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
এরপর কী হবে? সরকারও বলছে এটা নিয়মরক্ষার নির্বাচন। ২৪ জানুয়ারির পরে আরেকটি সংসদ গঠিত হওয়ার পর সরকার শিগগিরই সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করার মনোবৃত্তি নিয়ে এগিয়ে আসে কি না, সেটা এখন দেখার বিষয়। সরকার যদি তা করতে পারে, তাহলে বর্তমানের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যাবে। এর পরে সরকারের প্রধান কাজ হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিরোধী দলকে নিয়ে আসার জন্য যা যা করা দরকার, তা করা। বিরোধী দলেরও দায়িত্ব রয়েছে ছাড় দিয়ে হলেও নির্বাচনে আসার। ১৯৯৬ সালে যেমন হয়েছিল, আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সংহত করা না গেলে দেশে ও বাইরে আমরা খুবই চাপের মুখে পড়ব।
এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার।
0 comments:
Post a Comment