সদ্য কারামুক্ত বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, অতিমাত্রায় ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ মাধ্যমে দেশের জনগণকে বিভক্ত করেছে ফেলেছে সরকার। এই বিভক্তি থেকে সহসা উত্তরণ সম্ভব নয়।
তবে এই বিভক্তি দূর করতে হলে প্রয়োজন একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। মানবজমিনকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা। গত বছরের ৮ই নভেম্বর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এলে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে কাটে ৭৬ দিন। কারাগারে থাকাকালীন তার লেখা ‘বাংলাদেশ রাজনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটির বেশির ভাগ অংশ লিখেছেন ওয়ান-ইলেভেন জমানায় প্রথমবার কারাগারে গিয়ে। এবার দ্বিতীয়বার কারাগারে গিয়ে বইটি প্রকাশ করেন। গত ২৩শে জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। সাবেক এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। এই অস্থিতিশীলতা কাটাতে না পারলে কোনভাবেই অর্থনীতির চাকা সামনের দিকে যাবে না। কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। এ দুটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে জড়িত। তাই যতদ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে তত দেশের জন্য মঙ্গল। দেশের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এই মুহূর্তে আমরা দেশী বিনিয়োগ নিয়েই চিন্তিত। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি যেখানে ১৭ শতাংশের কথা বলা হয়েছিল সেখানে ৫-৬ শতাংশের বেশি হবে না। তিনি বলেন, দেশী বিনিয়োগই হচ্ছে না। বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যদি না বাড়ে তাহলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে। সরকারের আয় কমলে স্বাভাবিকভাবে বিনিয়োগও কমে যাবে। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রতি বাজেটেই বলা হয়, এডিবিতে ৩০ শতাংশ থাকে। পরে এটা রিভাইজ করার পর দেখা যায়, ২৩-২৪ শতাংশের বেশি হয় না। যেখানে সরকারি বিনিয়োগ বেশি হচ্ছে না সেখানে বেসরকারি বিনিয়োগ গত ২০ বছরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাড়ছিল। এই প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিনিয়োগ ১ শতাংশ কমে গেছে। ২০ পয়েন্ট থেকে কমে ১৮.৯৯তে চলে গেছে। যেখানে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে সেখানে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আর বিদেশী বিনিয়োগের তো প্রশ্নই আসে না। কারণ বিদেশী বিনিয়োগ সবসময় নির্ভর করে সরকারি বিনিয়োগ ও বেসরকারি বিনিয়োগের অবকাঠামোর ওপর। প্রথিতযশা এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করতে না পারলে কোন অবস্থানেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। কারণ সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু, মানবতাবিরোধীর পক্ষে-বিপক্ষে, মৌলবাদীর পক্ষে-বিপক্ষে, আওয়ামী লীগ-বিএনপি- এভাবে জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তম্ভ বিভক্ত। বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, দেশে সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমি খালেদা জিয়ার এ কথায় বিশ্বাস করি। সংখ্যালঘু শব্দটাকে আমরা অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ করে ফেলেছি। সংখ্যালঘু শুধু আওয়ামী যেমন আছেন বিএনপিতেও আছেন। এসব ইস্যুতে দেশটা বিভক্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কোন রাষ্ট্র উন্নতি করতে পারে না যদি সেদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকে। এখন আমাদের দেশের মূল সমস্যা হলো- জনগণের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভক্তি ও হিংসা-বিদ্বেষ এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এগুলো দেশটাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে সেখান থেকে সহসা উত্তরণ সহজ হবে না। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারি দলের নেতাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, দেশটা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। এগুলো তো রাজনৈতিক বক্তব্য হওয়ার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী যশোরের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন দেশের একজন প্রধামন্ত্রী হিসেবে তার মুখে এসব কথা মানায় না। আমাদের স্বাধীনতায় জিয়াউর রহমানের যেমন অবদান রয়েছে তেমনি শেখ মুজিবুর রহমানেরও রয়েছে। তাদের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু এসব ইস্যুতে আমরা বিভক্ত হয়ে গেছি। রাষ্ট্রীয় পার্লামন্টে, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন সব প্রতিষ্ঠানই বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভক্ত সমাজকে একত্র করার জন্য দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দরকার। এই বিভক্তই বাংলাদেশের মূল আশঙ্কার কারণ। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে অর্থনৈতিক চাকাকে এগিয়ে নেয়া দুষ্কর হবে।
কারাগার জীবনের স্মৃতিচারণ করে আবদুল আওয়াল মিন্টু বলেন, প্রথমবার কারাগারে গিয়েছিলাম ওয়ান-ইলেভেন জমানায়। এবার গেলাম দ্বিতীয়বার। কারাগারে ভালই সময় কেটেছে। আমার বাসা থেকে অসংখ্য বই পাঠানো হয়েছিল। বই পড়ে সময় কাটিয়েছি। তবে বেশির ভাগ সময় কেটেছে লেখাপড়া করে। কারাগারে থাকা অবস্থায় আমার একটা বই বেরিয়েছে। বিএনপির আন্দোলনের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে গেছে বা আন্দোলন হবে না- এটা একেবারেই অবান্তর কথা। যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন রণকৌশল পরিবর্তন করা হয় তেমনি আমাদেরও আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করা হয়েছে। দিন দিন বেশি লোক আন্দোলনের পক্ষে কথা বলছে। ভোটাধিকারের অর্জনের দাবিতে অহিংস আন্দোলন কখনও স্তিমিত হবে না। এটা দিন দিন বাড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এত হাইলেবেলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আমরা দেখেছি। হাজার হাজার মিথ্যা মামলা হয়েছে। বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
কারাগার জীবনের স্মৃতিচারণ করে আবদুল আওয়াল মিন্টু বলেন, প্রথমবার কারাগারে গিয়েছিলাম ওয়ান-ইলেভেন জমানায়। এবার গেলাম দ্বিতীয়বার। কারাগারে ভালই সময় কেটেছে। আমার বাসা থেকে অসংখ্য বই পাঠানো হয়েছিল। বই পড়ে সময় কাটিয়েছি। তবে বেশির ভাগ সময় কেটেছে লেখাপড়া করে। কারাগারে থাকা অবস্থায় আমার একটা বই বেরিয়েছে। বিএনপির আন্দোলনের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে গেছে বা আন্দোলন হবে না- এটা একেবারেই অবান্তর কথা। যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন রণকৌশল পরিবর্তন করা হয় তেমনি আমাদেরও আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করা হয়েছে। দিন দিন বেশি লোক আন্দোলনের পক্ষে কথা বলছে। ভোটাধিকারের অর্জনের দাবিতে অহিংস আন্দোলন কখনও স্তিমিত হবে না। এটা দিন দিন বাড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এত হাইলেবেলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আমরা দেখেছি। হাজার হাজার মিথ্যা মামলা হয়েছে। বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
0 comments:
Post a Comment