Home » , , , » চারুশিল্প- বাহারামের রূপবিদ্যা by মোবাশ্বির আলম মজুমদার

চারুশিল্প- বাহারামের রূপবিদ্যা by মোবাশ্বির আলম মজুমদার

Written By Unknown on Friday, January 31, 2014 | 1:00 AM

প্রতিষ্ঠান সনদ দেয়, বাহারামের সেটি নেই। তুলি ডুবিয়ে তবুও ক্যানভাসে রং মেশান তিনি। রিকশা, ট্যাক্সি, ট্রাক, লরি—এসব যানবাহনের গায়ে আঁকেন হরেক ছবি।
দুটো পয়সা জোটে। বেশ মজার এ রিকশা পেইন্টিংয়ের কাজ তিনি শুরু করেছিলেন ১১ বছর বয়সে।
‘এ মানুষটিকে একজন দর্শক হিসেবে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে দেখতাম আমি। মাঝেমধ্যে এসে ছবি সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করতেন। বিরক্ত লাগত। কিন্তু একদিন নিজের আঁকা দুটি ছবি নিয়ে এলেন আমার কাছে। সেদিনই বুঝলাম, তিনি নিছক একজন রিকশা-পেইন্টার নন, জাত শিল্পী।’ বাহারামের সম্পর্কে শিল্পী নিসার হোসেন কথা এমনই।

তাঁর জন্ম ১৯৫০-এ, ঢাকায়। আদিনাম সৈয়দ কোমার হোসেন সিরাজী।
১৫ বছর বয়সে পাকাপাকিভাবে রিকশা পেইন্টিং শুরু করেন বাহারাম। কল্পনাশক্তির প্রখরতায় প্রতিনিয়ত রিকশায় আঁকার অভ্যাসকে পরিণত করেন নতুন নতুন বিষয়ে। সিনেমার ব্যানার আঁকায় হাতেখড়ি শিল্পী আবদুল হাইয়ের কাছে। তখন পুরোনো ঢাকার আগামসি লেনে কাজ করতে যেতেন তিনি। ১৯৬০ সালের দিকে বাহারাম নায়ক-নায়িকাদের প্রতিকৃতি চিত্রের মাধ্যমে সিনেমার ব্যানার আঁকায় দক্ষতা দেখান। সেই থেকে শুরু ব্যানারের কাজ। সেই সময়কার অনেক চিত্রতারকার মধ্যে ওয়াহিদ মুরাদ, ভারতীয় সুপারস্টার দিলীপ কুমার, কিশোর কুমার আর মধুবালার প্রতিকৃতি বেশ রপ্ত হয়ে যায় তাঁর।
এরপর রুটি-রুজির সংগ্রামে অনেক এগিয়ে গেলেন বাহারাম। কিন্তু সিনে ব্যানার আর রিকশা পেইন্টিং করে তৃপ্তি মেলে না তাঁর। অন্যদিকে, ডিজিটাল ব্যানার তৈরির প্রযুক্তির কারণে ওই বাজার ছোট হয়ে এলো। এবার বাহারামের মাথায় হাত। নব্বইয়ের দশক-পরবর্তী সময়ে সংকট গাঢ় হয়। শাড়ির ডিজাইনের কাজ শুরু করেন তিনি । এ সময় সবার দৃষ্টি কাড়েন ‘বৃত্তে’র কর্মশালায় অংশ নিয়ে। শিল্পকলার মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হলেন বাহারাম।
প্রথাগত ব্যাকরণসিদ্ধ শিল্পরচনার দিকে না গেলেও প্রথা না মেনে আঁকা তাঁর ছবিগুলো দৃষ্টি কেড়ে নেয় সবার। রং, রেখা-জ্যামিতি, বুনটের ধার ধারেন না তিনি। কিন্তু জাতশিল্পী হয়ে ওঠার সব সম্ভাবনা তাঁর কাজে উপস্থিত। তাঁর দৃষ্টি দুটি—অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী। প্রচলিত মিথ এসে ভর করে ছবির বিষয়ে। এ শিল্পীর ছবির বিষয় ও ছবি দেখে একটি জায়গায় এসে থমকে যান দর্শক—ছবির প্রতিটি অবয়বের ভেতর আকৃতির পুনঃস্থাপন করেছেন তিনি। যেমন: ‘আইস অব হান্টার’ কাজটিতে মানুষের মুখের চোখ দুটি ঢেকে আছে দুই হরিণের আকৃতি—হাত ও পা খর্বকায়। ছবির জমিনে গাঢ় নীলের মধ্যে সাদা চলমান রেখা। এক অদ্ভুত ভাবনা তাড়িয়ে নেয় দর্শককে। স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে।
বাহারামের ছবির দৌড় অনেক দূর। বিষয়-ভান্ডার অফুরন্ত। বিষয়ের মধ্যে কোনো পরিবর্তনের স্লোগান হয়তো পাওয়া যায় না, কিন্তু একটি বার্তা পাওয়া যায় । শিল্পী কখনো নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিকৃতির মধ্যে হাজির করেন পশু, পাখি, প্রকৃতি। গতি তৈরি করেন বহির্মুখী ফর্ম দিয়ে। ফলে ছবির কেন্দ্রে দৃষ্টি নিবদ্ধ না হয়ে কানভাসের বাইরেও আনন্দ খুঁজে পান দর্শক।
‘এলিফ্যান্ট সোসাইটি’ ছবির মধ্যে আছে মানুষের আকৃতির ঠাসাঠাসি উপস্থিতি। জমিনে আলট্রামেরিন ব্লু। হয়তো আকাশের কথা বলেন শিল্পী। মানুষের বন্ধনকে দেখান হাতির সঙ্গে।
বাহারাম আসলে কী আঁকেন—এমন প্রশ্নের জবাবে হয়তো বলা যাবে: সমাজ, মানুষ, বোধ-বুদ্ধির অন্তর্ধান, তথাকথিত সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে চাটুকারিতা এবং অন্তর্জগতের যন্ত্রণা নির্মাণ করেন বাহারাম। প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে তিনি নন, কবে প্রতিষ্ঠানবঞ্চিত বাহারামের শিল্প ও রূপের বিদ্যা আমাদের বলে দেয়—শিল্প সাধনার বিষয়, জীবনও তা-ই। শিল্প ও জীবন এক হয়েই তৈরি হয় তাঁর ছবির জগত। বাহারামের ছবিগুলো আমাদের খুলে দিয়েছে নতুন এক দরোজা। ১১ জানুয়ারি ঢাকা আর্ট সেন্টারে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২১ জানুয়ারি।

0 comments:

Post a Comment

 
Support : Dhumketo ধূমকেতু | NewsCtg.Com | KUTUBDIA @ কুতুবদিয়া | eBlog
Copyright © 2013. Edu2News - All Rights Reserved
Template Created by Nejam Kutubi Published by Darianagar Publications
Proudly powered by Dhumketo ধূমকেতু