রাজনীতির খেলা, কথার খেলা আর কত দিন? এ খেলায় কে হেরেছে কে জয়ী হয়েছে তা বলে দেবে ভবিষ্যৎ। তবে এ মুহূর্তে মানুষ দেখেছে শত সংঘাতের মাঝেও বিএনপিকে ছাড়াই দশম সংসদের ভোট হয়ে গেছে।
নতুন সরকার গঠন হয়েছে। আগামী ২৯শে জানুয়ারি নতুন সংসদও বসবে। বিভিন্ন দেশ সরকারকে অভিনন্দনের পাশাপাশি সংলাপের তাগিদ দিচ্ছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছে। তার মানে কারও কাছেই এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। তবে সরকারের মন্ত্রীরা অবলীলায় বলে যাচ্ছেন নির্বাচন হয়েছে ৫ বছরের জন্য। সুতরাং ৫ বছরই সরকার ক্ষমতায় থাকবে। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে সংলাপেরও কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনারা সরকারকে ছাড় দেবে না- ইতিমধ্যে তা বলেও দেয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি দ্রুত সংলাপের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশ ছিল অন্ধকারে। সহিংসতা আর অবরোধে অচল ছিল অর্থনীতির চাকা। বর্তমানে বিএনপি সরকারকে আলোচনার সুযোগ দিচ্ছে। হয়তো তারা ক’মাস দেখবে। এর মধ্যে যদি সরকার সংলাপের উদ্যোগ না নেয় তাহলে দেশ ফের হরতাল-অবরোধের কবলে পড়বে এটা নিশ্চিত। রাজনীতির ইতিহাস তো তাই বলে। কয়েক মাস ধরে দেশে যে অশান্তি চলেছে তাতে দেশবাসী অতিষ্ঠ। তবে এ সময়ে খুনখারাবি হচ্ছে না তা নয়। গুম হচ্ছে। হচ্ছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। পরিস্থিতি আসলে কতটুকু ভাল, দেশবাসী বুঝতে পারছেন না। তবে এ মুহূর্তে রাজনৈতিক সংঘাত কম হচ্ছে। ১৫ই জানুয়ারির বেগম জিয়ার সংবাদ সম্মেলন নিয়ে দেশবাসীর মনে শঙ্কা ছিল। আবার কোন আন্দোলনে যাচ্ছেন তিনি? কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে বেগম জিয়ার নমনীয়তা দেশবাসীকে কিছুটা হলেও শান্তি দিয়েছে। স্বস্তি দিয়েছে। অবরোধ-হরতালে না গিয়ে তিনি অন্য কর্মসূচি দিয়েছেন। একতরফা পাতানো নির্বাচনে সরকারকে পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচির কথা বলেছেন। এখন সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে খোলা মন নিয়ে। সরকারকে সংলাপের, সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। মন্ত্রীদের অতিকথন বন্ধ করতে হবে। তাহলে দেশ রক্ষা পাবে। কিন্তু সরকারের লক্ষণ তো ভাল দেখা যাচ্ছে না। দেশে আগের মতো সংঘাত-সংঘর্ষ না হলেও এখন চলছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কসরত। নানা কৌশল আর কূট-কৌশলের খেলা। রাজনৈতিক খেলায়ই চলছে দেশ। এ খেলার একটাই কারণ- ক্ষমতা। গদি দখলের লড়াইয়ে কেউ হারে কেউ জেতে। ক্ষমতার বাইরে থাকা দল ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল খোঁজে। আর সরকার কৌশল খোঁজে ক্ষমতায় থাকার। ক্ষমতার বাইরে থাকারা লাগাতার হরতাল অবরোধ দিয়ে দেশের অর্থনীতি, দেশের সম্পদ ধ্বংস এমনকি মানুষ হত্যার মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। কখনও বিএনপি ও সমমনারা, কখনও আওয়ামী লীগ ও তাদের সঙ্গীয় দল দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালায়। কয়েক মাস ধরে পেট্রল বোমা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর আর জ্বালাও পোড়াওয়ের যে নজির সৃষ্টি হয়েছে তাতে দেশবাসী চরমভাবে উদ্বিগ্ন। প্রশ্ন হলো, ক্ষমতায় থাকা দল আর বিরোধী দলের এ খেলায় বলির পাঁঠা কেন হতে যাবে আমজনতা? রাজনৈতিক খেলা আর যুদ্ধে আমজনতাকে কেন মাঝখানে টেনে আনা হচ্ছে? কেন তাদের জানমালের ক্ষতি করা হচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষের জানমাল নষ্ট করার কি অধিকার আছে রাজনীতিকদের? অনেক হয়েছে। আর নয়। এবার ক্ষান্ত হোন। দেশের মানুষের কথা ভাবুন। আর এ ভাবনা থেকে সংলাপে বসুন। সমঝোতায় পৌঁছুন। দেখবেন খুব দ্রুত দেশ এগিয়ে যাচ্ছে করে। মনে রাখতে হবে ভোট জালিয়াতির পথ সঠিক নয়। জনবিরোধী কর্মসূচিও বাদ দিতে হবে। জানমাল নষ্ট আর মানুষ পুড়িয়ে মারার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। জনমুখী হতে হবে সবাইকে। দেশের মানুষ শান্তিতে বিশ্বাসী। এ শান্তিটা অন্তত দিন তাদের।
0 comments:
Post a Comment